বৃহস্পতিবার, ২রা মে, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৩:০৭
Home / প্রতিদিন / কুরআন-হাদিসে মাজহাব : প্রসঙ্গ আহলে হাদিস।

কুরআন-হাদিসে মাজহাব : প্রসঙ্গ আহলে হাদিস।

Ehsan Bin _Komashishaএহসান বিন মুজাহির ::

(শেষ কিস্তি) 

হাদিসে তাকলীদ: হজরত  হোজাইফা রা. কতৃক বর্ণিত রাসুল (সা:) ইরশাদ করেন, ‘জানি না আর কত দিন আমি তোমাদের মাঝে থাকবো; তবে আমার পরে তোমরা হযরত আবু বকর রা. ও হযরত ওমর রা. এদু’জনকে ইত্বেবা করে যাবে। (তিরমিজি শরীফ)

সাহাবি ও তাবেয়ীদের যুগে মাজহাব শব্দটির প্রচলন হলেও তাঁরা মুজতাহিদ সাহাবীদের কাছ তাকলীদ; করতে বলে অনেক প্রমাণ রয়েছে। (আহসানুল ফতওয়া ১ম খণ্ড, ৪১৫ পৃ.)

ইমাম দারেমী রচিত ‘সুনান’ কিতাবে বর্ণিত আছে যে, হজরত উমর রা. এ আইন জারী করেন যে, যে মাসয়ালায় রাসুলুলাহ সা.’র হাদীস পাওয়া যাবে না সেক্ষেত্রে হযরত আবু বকর রা.’র ফতেয়ার ওপর আমল করতে হবে। যদি আবু বকর রা.’র ফাতোয়ায় না পাওয়া যায় তাহলে আলেমদের পরামর্শের দ্বারা যে রায় গৃহীত হবে সে রায় কার্যকর করতে হবে। অথচ হযরত ওমর রা.ও ছিলেন একজন মুজতাহিদ এবং যাবতীয় গুণাবলীর পরিপূর্ণ অধিকারী তা স্বত্ত্বেও জীবনভর আবু বকর রা.’র তাকলীদ করেছেন এবং তাঁর ফাতওয়া মোতাবেক রায় দিয়েছেন। উক্ত উদহারণ দ্বারা পরিস্কার হয়ে গেল যে, সাহাবারা ইজতিহাদী মাসয়ালা-মাসাইলের ক্ষেত্রে সমকালীন খলীফাদের মাজহাব মেনে চলতেন।

মাযহাবের সংখ্যা : সারা দুনিয়াজোড়ে প্রসিদ্ধ চার মাজহাবের অনুসারীদের অস্তিত্বই বেশি পাওয়া যায়। মাজহাবের মধ্যে প্রসিদ্ধ মাজহাব হল চারটি।

     ১.  ইমামা আবু হানিফা রাহ.’র মাযহাব। (মৃত্যু ১৫০ হিজরী বাগদাদ করাগার)

     ২. ইমাম মালিক রাহ.’র মালেকী মাযহাব।  ( মৃত্যু ১৭৯ হিজরী মদীনা)

      ৩.  ইমাম শাফেয়ী রাহ.’র শাফেয়ী মাযহাব। (মৃত্যু ২০৪ হিজরী মিশর)

       ৪. ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহ.’র হাম্বলী মাযহাব। (মৃত্যু ২৪১ হিজরী বাগদাদ)

এই চার মাজহাবই উৎসারিত হয়েছে কুরআন সুন্নাহ থেকে। কুরআন এবং হাদিসের মধ্যে যে মাসলা-মাসায়িলগুলো সরাসরি উল্লেখ নেই সেই সমস্ত মাসলা-মাসায়িলগুলোকে মূল উছলের ওপর ভিত্তি করে কুরআন এবং সুন্নাহ থেকে চুল-ছেড়া ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন মাযহাবের ইমাম তথা মুহতাহিদগণ। যেহেতু এই চারটি মাযহাব-ই কুরআন এবং হাদিস থেকে সৃষ্টি হয়েছে তাই চরটিকেই সঠিক ও হক মনে করতে হবে। চার মাযহাবের যে কোন একটিকে অনুসরণ করলেই মাযহাব মানা হয়ে যাবে। চার মাযহাবকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অস্বীকার করা কুরআন এবং হাদিস অস্বীকারেরই নামান্তর।

আমলের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট একটি মাহাব : আমলের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট মাজহাবকে অনুসরণ করতে হবে। চিকিৎসকার ক্ষেত্রে যেভাবে আমরা কোনো নির্দিষ্ট  ডাক্তারের শরণাপন্ন হই এবং প্রেসক্রিপশন অনুযায়ি তার দেয়া ঔষধ সেবণ করি, তেমনি রুহের চিকিৎসার জন্যও অনেক আলেমের মধ্য থেকে একজন আলেমকেই নির্বাচন করতে হবে। তাই মাজহাব মানার ক্ষেত্রে যার মাজহাবই অনুসরণ করবো সর্বদা তাঁর মাযহাবই অনুসরণ করতে হবে। সাহাবায়ে কেরামগণ রাসুল সা.’র ইন্তেকালের পরে ইজতিহাদী মাসয়ালার ক্ষেত্রে এক খলীফারই তাকলীদ করেছেন। হাকিমুল ইসলাম মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রাহ. বলেন, একাধিক মাযহাব মানলে বা মানার অনুমতি দিলে মানুষের ধর্ম পালন একটা খেলনার বস্তুতে পরিণত হয়ে যেত। কারন প্রত্যেকেই প্রত্যেকের সুবিধামত মাজহাব অনুসরণ করবে।

যেমন-হানাফী মাযহাবের এক ব্যক্তি প্রচণ্ড শীতের সময় টাণ্ডা পানি দিয়ে ফজরের সময় ফজরের নামাজ পরার জন্য ওযু করে আসলো নামাজ পরার আগেই হঠাৎ তার শরীরের ক্ষত থেকে রক্ত বেরিয়ে গড়িয়ে পড়লো তাহলে আমাদের মাযহাব তথা ইমাম আবু হানিফা রাহ.’র মতে তার ওযু নষ্ট হয়ে যাবে। আবার ওযু করে  এসে নামাজ পরতে হবে। তখন সেই ব্যাক্তি বললো আমি এখন ইমাম শায়েয়ী রাহ.’র মাযহাব অনুসরণ করবে।

অতএব আর ওযুর দরকার নেই। কিছুক্ষণ পরে ব্যাক্তিটি আবেগে কোন মহিলার শরীর স্পর্শ করলো তাকে বলা হলো এবার তো শাফেয়ী মাযহাব অনুযায়িই ও আপনার ওযু ভেঙ্গে গেছে তখন সেই ব্যাক্তি জবাব দিলেন এখন আমি আবার হানাফী মাযহাব অনুসরণ করবো কাজেই দ্বিতীয়বার ওযু প্রয়োজন নেই। সুবিধাবাদি লোকদের দিক বিবেচনা করেই ফুকাহায়ে কেরামগণ যে কোন একটি মাযহাব অনুসরণ করা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। (তিরমিযি ও ইসলাহুর রুসুম-২১)

হযরত শফি রাহ. বলেন এটা প্রকৃতপক্ষে একটা শৃঙ্খলামুলক ব্যবস্থা। এর উদ্দেশ্য দ্বীনী ক্ষেত্রে নিয়ম ঠিক রাখা এবং মানুষকে কুপ্রবৃত্তি থেকে বাচিয়ে রাখা।

ভিন্ন মাযহাব হওয়ার কারণ : আসলে ইজতিহাদী মাসলা-মাসায়িল নিয়েই ভিন্ন মাযহাবের সৃষ্ঠি হয়েছে। যে মাসলা-মাসায়িলের ব্যাপারে সরাসরি কুরআন এবং হাদিসে  দলীল প্রমাণ রয়েছে অথবা যে সব বিষয়ে সব ওলামাদের ইজমা তথা ঐকমত্য রয়েছে সে সব বষয় ইজতিহাদের কোনো দরকার নেই। এ ক্ষেত্রে মাযহাবের কোন প্রয়োজন পরে না। কারন এব্যাপারে সরাসরি আয়াত বা হাদিসেই আছে।

 হাদিস বিশারদ ও ইমামগণও মাযহাব অনুসরণ করেছেন :  ইমাম বুখারী রাহ. শাফেয়ী মাযহাব অনুসরণ করেছেন। ইমাম মুসলিম রাহ. শাফেয়ী, ইমাম নাসাই রাহ. শাফেয়ী, ইমাম আবু দাউদ রাহ হাম্বলী/শাফেয়ী, মিশকাত প্রণেতা শাফেয়ী, ইমাম নববী রাহ. শাফেয়ী, ইমাম বগভী রাহ. শাফেয়ী, ইমাম ত্বাহাবী রাহ. হানাফী, ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. হাম্বলী, শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রাহ. হানাফী, ইমাম ইবনে কায়্যিম রাহ., ইমাম আবদুল বার ও ইমাম বাত্বাল রাহ. মালেকী, ইমাম হালাবী, ইমাম বদরুদ্দিন আইনী রাহ. হানাফি মাযহাবের ছিলেন। (সমাপ্ত)

লেখক : সাংবাদিক, কলাম লেখক

https://www.facebook.com/ahsan.mujahir

আরও পড়ুন : ১ম পর্ব

About Abul Kalam Azad

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...