শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১:২৮
Home / প্রতিদিন / কুরআন-হাদিসে মাজহাব : প্রসঙ্গ আহলে হাদিস

কুরআন-হাদিসে মাজহাব : প্রসঙ্গ আহলে হাদিস

majhabএহসান বিন মুজাহির ::

(১ম কিস্তি)
কুরআন-হাদিস থাকতে মাযহাব কেনো এমন প্রচারণা শোনা যাচ্ছে সর্বত্র! ইন্টারনেট-ফেসবুকে নামধারী আহলে হাদিস সম্প্রদায় ও নব্য সালাফীরা মাজহাবেরর বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। আহলে হাদিস নামধারী লা-মাযহাবীদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে কিছু সরলমনা মুসলমান মাজহাব-তাকলিদ অনুসরণ থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। তথাকথিত আহলে হাদিস সম্প্রদায়ের যুক্তি হলো, ‘কুরআন-হাদিস থাকতে মাজহাব কেনো মানবো’! এরকম আরো বিভিন্ন মনগড়া দলিল-প্রমাণ ও যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে সরলমনা মুসলমান সম্প্রদায়কে মাজহাব অনুসরণ থেকে বিরত রাখার পেছনে সর্বশক্তি ব্যয় করছে। ভণ্ড আহলে হাদিস সম্প্রদায় তাকলিদ মানাকে শিরক বলেও ফাতোয়া দেয়। অথচ মাজহাব মানা ওয়াজিব যা কুরআন-ও বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

মাজহাব নব্য আবিস্কৃত কোনো বিষয় নয়; বরং রাসুল সা. সাহাবায়ে কেরামগণের যুগেও তাকলীদ তথা মাজহাব ছিল। প্রত্যেক সাহাবায়ে কেরামই ছিলেন এক একজন মুজতাহিদ। রাসুলুল্লাহ সা.’র যুগে সাহাবায়ে কেরামগণ মাসলা-মাসাইলসহ যে কোন সমস্যার সম্মুখিন হলে রাসুল সা.-এর কাছে যেতেন এবং সে ব্যাপারে রাসুলকে জিজ্ঞাসা করতেন। রাসুল সা. নিজেই হাদিসের মাধ্যমে সব কিছুর সমাধান দিতেন।

পৃথিবীতে যত মাজহাব আছে সব মাজহাবই সৃষ্টি হয়েছে কুরআন-সুন্নাহ থেকে। প্রসিদ্ধ মাজহাব চারটি। যে কোন একটি মানলেই মাজহাব মানা হয়ে যাবে। মাজহাব মানার মাঝেই রয়েছে সফলতা। না মানার মধ্যে রয়েছে পথভ্রষ্টতা।

মাজহাব পরিচিতিঃ মাযহাব শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে পথ, মত, ধর্ম, বিশ্বাস ইত্যাদি। মাযহাব, ইজতিহাদ, তাকলীদ শব্দগুলো আমাদের সমাজে বহুল পরিচিত। বিশেষ করে মাযহাব শব্দটিই সর্বাধিক পরিচিত ও প্রসিদ্ধ। ইজতিহাদ শব্দটি আরবী। অর্থ হল চেষ্টা করা, উদ্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা।

পরিভাষায় ইজতেহাদ বলা হয়, যে সকল হুকুম-আহকাম কুরআন ও হাদীসের মধ্যে অস্পষ্ট রয়েছে। মুজতাহিদ স্বীয় মেধা ও গবেষণার মাধ্যমে সেগুলো আহরণ করবেন। আর সে আহরণকারীকে বলা হয় মুজতাহিদ বা গবেষক। আর মুজতাহিদদের মত ও পথকেই বলা হয় মাযহাব। মুজতাহিদ গবেষণার মাধ্যমে যা অর্জন করেছেন এবং সে অনুযায়ী আমল করেছেন, তাঁর সেই আমল অনুসরণ করার নামই হল মাযহাব। মাযহাব অনুসরণ কারার নাম হল তাকলীদ। আর যিনি অনুসরণ করেন তিনি হলেন মুকাল্লিদ।

তাকলিদ পরিচিতিঃ তাক্বলীদের আভিধানিক অর্থ হল ইত্তেবা বা অনুসরণ। পারিভাষিক অর্থ হল, যিনি কুরআন ও হাদিস গবেষণা করে তা থেকে হুকুম-আহকাম গ্রহণ করতে অক্ষম, তার জন্য এমন ব্যক্তি থেকে হুকুম-আহকাম জেনে নেয়া যে ব্যক্তি এ বিষয়ে অধিক জ্ঞানী তথা পারঙ্গম। আর এ ব্যাপারে অধিক জ্ঞানী হলেন ফুক্বাহায়ে কেরাম তথা মুজতাহিদ। উদ্দেশ্য হল সেই ব্যক্তির কাছ থেকে আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের হুকুম জেনে নিয়ে সঠিকভাবে দ্বীনের আনুগত্য করা তথা আমল করা। তবে বিষয়টি আবার এমনও নয় যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পরিবর্তে ঐ ব্যক্তিকে বিধানদাতারূপে গ্রহণ করা। অতএব, তাক্বলীদ শিরক নয়, বরং ওয়াজিব একটি বিধান।

তাক্বলীদ হচ্ছে, ধর্মীয় অনুসরণের যোগ্য মুত্তাক্বী খাঁটি কোন বুযুর্গ তথা প্রসিদ্ধ মুজতাহিদগণের কথা ও কাজকে এই অবস্থার ভিত্তিতে গ্রহণ করা যে, তিনি কথা বা কাজ অবশ্যই কুরআন ও হাদিসের আলোকেই বলেছেন। সেই মুজতাহিদদের কথা মেনে নেয়া তথা সে অনুযায়ি আমল করাই হল তাকলীদ। (শরহে হুসামী)।

কুরআন ও হাদিসে তাকলিদঃ রাসূলের যুগেও তাক্বলীদ ছিল। সাহাবায়ে কেরাম রাসূলের কাছ থেকে তাকলীদ গ্রহণ করেছেন। তাঁরা একে অন্যের তাক্বলীদ করেছেন। সাহাবাদের তাক্বলীদ গ্রহণ করেছেন তাবেয়ীগণ। আর তাবেয়ীগণের তাক্বলীদ গ্রহণ করেছেন তবে-তাবেয়িগণ। বর্তমানেও আমরা তবে-তাবেঈগণের তাক্বলীদ অনুসরণ করছি। পবিত্র কুরআন-কারীমেও তাক্বলীদের কথা এসেছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং আনুগত্য করো রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমর তথা জ্ঞানী”। (সূরা নিসা ৫৯)

এ আয়াতে মহান রাব্বুল আলামীন ও রাসূল সা.’র আনুগত্যের সাথে উলিল আমর তথা জ্ঞানীদের আনুগত্য করার কথাও উল্লেখ করেছেন। ‘উলিল আমর’ শব্দটির দ্বারা কুরআন সুন্নাহর ইলমের অধিকারী, ফক্বিহ ও মুজতাহিদ ইমামগণকেই বুঝানো হয়েছে। রইসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.সহ সকল মুফাস্সিরে কেরাম এ মতের স্বপক্ষে রয়েছেন।

মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, যদি তোমরা না জানো, তবে যারা জানে, অর্থাৎ জ্ঞানী তথা মুজতাহিদদের কাছে জিজ্ঞাসা করো। (সুরা নাহল ৪৩) 

সূরা আম্বিয়া- ৭)। এ আয়াত দ্বারা জানা গেল যে, শরীয়তের বিধি-বিধান জানে না এরূপ মুর্খ ব্যক্তিদের উপর আলেমগণের অনুসরণ করা ওয়াজিব। আর এই অনুসরণ করাকেই তাকলিদ বলে। (তাফসিরে কুরতবি)। (অসমাপ্ত)

লেখক: সাংবাদিক, কলাম লেখক

https://www.facebook.com/ahsan.mujahir

আরও পড়ুন : শেষ কিস্তি

About Abul Kalam Azad

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...