সময় থামে না! শুধু চলে আর চলে। সেটা থেমে থাকার ও জিনিষ নয়। জীবনের এই অনন্ত প্রবাহে ফেলে আসা সব স্মৃতিগুলো হৃদয়ের রঙিন পর্দায় ভেসে বেড়ায় চলমান ছবির মতো…। বড় ভালো লাগতো দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ, পলাশ, শিমুল ডালে আগুনঝরা ফাল্গুন। হাতছানি দিয়ে ডাকত আমার শ্যামল প্রকৃতি, স্বচ্ছ নীল আকাশ আর শরতের কাশফুল দেখে থমকে দাঁড়াত আমার এ অবুঝ মন। আহ! কত সুন্দর এই পৃথিবী! কত সুন্দর এই বাংলার পায়ে চলা মেঠো পথ।
সেদিন ছিলো শুক্রবার। আমার ছোট্ট বোন মারজানা আমাকে বললো- আপু, চলেন! আজ আমাদের পাশের বাসায় তা’লীম হবে…..যদিও আমি ছিলাম স্কুল-কলেজ পড়ুয়া এক মেয়ে। স্বাভাবিক ইংলিশ মিডিয়াম মাইন্ড ছিলো। কিন্তু ধর্মের প্রতি ছিলো আমার খুবই অনুরাগ। ইসলামিক পত্রিকা এবং বইগুলো পড়ার অভ্যাস ছিল আগে থেকেই। এবং বর্তমানে ফেসবুকে অনেক ইসলামি লেখকদের লেখাপড়ার জন্য অপেক্ষায় থাকি।
তখন ছিল বর্ষাকাল। টিপ-টপ বৃষ্টি ঝরছিল। রাস্তায় ছিলো পানি, তা মাড়িয়ে অনেক কষ্ট করে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে রওনা হলাম তা’লীম শোনার জন্য। যদিও মনটা ছিলো আমার খুবই সৌন্দর্যপ্রিয় ও পরিচ্ছন্ন। তবুও শুধু আল্লাহর কথা শোনার জন্য অপরিচ্ছন্ন রাস্তার কষ্টটুকুও বরদাশত করে নিলাম।
ভিজতে ভিজতে কিচ্ছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম। বাসার ভিতরে ঢুকেই চমকে উঠলাম। ছোট্ট বোন মারজানার মতো ছোট্ট ছোট্ট মেয়েরা কুরআন শরীফ পড়ছে। ওয়ায্যুহা ওয়াল্লাইলি ইজা ছাজা….
আহ! কী মধুর, কী অনির্বচনীয় সে ধ্বনি। মেয়েগুলোর এ আয়াতগুলো শুনে, তিলাওয়াতের মোহনীয় মূর্ছনায় আমি অভিভূত হয়ে গেলাম। মনে হচ্ছিল এ যেন জান্নাত থেকে নেমে আসা কোন অপার্থিব শব্দধ্বনি। মূহূর্তের মধ্যে মনটা প্রশান্তিতে ভরে গেলো এবং আমার কাছে তা সারা পৃথিবীর সৌন্দর্য মনে হলো।
তারপর তা’লীমে শরীক হলাম। সেদিনের সেই তেলাওয়াতের বেহেশতী সুধা কী মধু ঢেলে দিয়েছিল আমার অন্তরে, তা ব্যক্ত করার ভাষা আমার জানা নেই। এতে তখন মনের ভিতর জ্বলে উঠলো অনুশোচনার আগুন। তাই আমি পৃথিবীর আকর্ষণকে পিছনে ফেলে ঝাঁপিয়ে পড়লাম পবিত্র কুরআন শিক্ষার ময়েদানে। দুর্গম গিরি পাড়ি দিয়ে, ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ পথ অতিক্রম করে, অন্তরে লালিত স্বপ্নকে লাত্তি মেরে, দীপ্তশপথ বুকে নিয়ে দুর্নিবার এক কাফেলার সাথে মিলিত হলাম।
খান থেকেই শুরু হলো আমার দ্বীনের সাধনা। পেলাম আমি পবিত্র কুরআন। যা সঠিক দিকনির্দেশক হিসেবে গ্রহণ করলাম। এবং তাঁর আকর্ষণীয় শব্দবিন্যাস ও মহান শিক্ষা আমাকে করেছে বিমুগ্ধ, দিয়েছে বেঁচে থাকার উদ্দীপনা ও দ্বীনদারী!
ছিলাম যতদিন অন্ধকারে আলোকেই মনে হত অন্ধকার, চোখের পর্দা সরে গেছে আজ দেখি-বুঝি সব পরিস্কার। জানি-মানি আল্লাহ এক, রাসুল আল-আমীন, আল্লাহ তোমার শুকরিয়া আদায় করি বুঝতে দিয়েছ দ্বীন…..।
আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করেন এবং আমার বিগত দিনের সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেন। আমীন