লাথি-ঘুষিতে রাস্তায় পড়ে যান।
লন্ডন প্রতিনিধি :: লন্ডনে আবারো হামলা হয়েছে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সদ্য অবসরে যাওয়া বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের ওপর, যিনি দায়িত্বের শেষ দিনগুলোতে আলোচনায় ছিলেন নানাভাবে।
স্থানীয় সময় বুধবার রাতে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে নেমে বাড়িতে যাওয়ার আগে বেথনাল গ্রিনের ইয়র্ক হলে দুর্গাপূজার একটি মণ্ডপে যান শামসুদ্দিন চৌধুরী। সেখান থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার আগে কয়েকজন যুবক তার ওপর হামলা চালায়।
সাবেক এ বিচারপতির মেয়েও এ সময় তার সাথে ছিলেন। তার ধারণা, ‘বিএনপির লোকেরাই’ তার বাবার ওপর এ হামলা চালিয়েছে।
তাৎণিকভাবে ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত শুরু করলেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
হামলার ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর ফেইসবুকে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন শামসুদ্দিন চৌধুরীর মেয়ে। বিডিনিউজ।
তিনি লিখেছেন, হঠাৎ একজন তার বাবার কাছে এসে জানতে চান তিনিই শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক কি না। জবাব না পেয়ে এরপর সে মারধর শুরু করে।
‘হঠাৎ টের পেলাম এক লোক বাবার গা ঘেঁষে হাঁটা শুরু করল, কাউকে বলেÑ ‘এই লোকই কি সে?’ তাকে দেখার সাথে সাথে আমি পেছন থেকে বাবাকে আড়াল করার চেষ্টা করলাম। সে তখন বাবার সামনে চলে গেল, জিজ্ঞেস করলÑ ‘আপনি কি জাস্টিস শামসুদ্দিন চৌধুরী’?
‘জবাব না দিয়ে বাবা সরে যাওয়ার চেষ্টা করলে আরো কয়েকজন আমাদের দিকে এগিয়ে এল এবং এরপর বাবাকে মারতে শুরু করল।’
একপর্যায়ে বিচারপতি শামসুদ্দিনের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় হামলাকারীরা। মেয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করলেও হামলাকারীদের লাথি আর ঘুষিতে একপর্যায়ে রাস্তায় পড়ে যান শামসুদ্দিন চৌধুরী।
তার মেয়ে লিখেছেন, প্রায় ৩০ সেকেন্ড ধরে তারা দুইজন সাহায্যের জন্য চিৎকার করলেও আশপাশের কেউ এগিয়ে আসেনি।
হামলার ঘটনার পরপরই দৌড়ে ইয়র্ক হলে ফিরে আসেন বিচারপতি শামসুদ্দিন। এ সময় তাকে বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল বলে প্রত্যদর্শী এক সাংবাদিক জানান।
কিছুণের মধ্যে ঘটনাস্থলে পুলিশ এলে তাদের কাছে ঘটনার বিবরণ দেন বাংলাদেশের এ সাবেক বিচারক। এ সময় তিনি নিজের বিস্তারিত পরিচয় পুলিশের সামনে তুলে ধরেন।
বিডিনিউজের প থেকে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে যোগাযোগ করা হলে পুলিশের একজন মুখপাত্র জানান, হামলার বিষয়টি তারা জানেন এবং একটি ফোন চুরির বিষয়েও তারা শুনেছেন। তবে তাৎণিকভাবে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
হামলাকারীদের পরিচয় জানা না গেলেও বিচারপতি শামসুদ্দিনের মেয়ে ফেইসবুকে লিখেছেন, ‘এ গাট্টাগোট্টা বখাটেরা আমার বাবাকে চেনে না। কোনো সন্দেহ নেই, বিএনপির সন্ত্রাসী বাহিনীর নির্দেশনা পেয়েই তারা এসেছে।’
স্ট্যাটাসের শুরুতেই তিনি লিখেছেন, ‘লন্ডনে নেমেই আমরা হামলার শিকার হলাম, যে শহরে আরামে বসবাস করছেন তারেক জিয়া, তার মা বিএনপি প্রধানও এখন এ শহরেই অবস্থান করছেন।’
এর আগে ২০১২ সালের ২৭ জুন লন্ডনে অজ্ঞাতপরিচয় দুই বাঙালি যুবক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর ওপর হামলা চালিয়েছিল।
২০০১ সালের ৩ জুলাই বাংলাদেশের হাইকোর্ট বিভাগে নিয়োগ পাওয়া এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী গত সেপ্টেম্বরে আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে অবসরে যান।
এর কয়েক দিন আগেই প্রধান বিচারপতির অভিশংসন চেয়ে রাষ্ট্রপতির বরাবরে একটি চিঠি পাঠান বিচারপতি শামসুদ্দিন, যা গণমাধ্যমে আলোচনায় আসে।
এর আগে ‘কটু মন্তব্যের কারণে’ তার অপসারণ চেয়ে ২০১২ সালে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছিলেন এক আইনজীবী। আদালতে স্পিকারকে নিয়ে বিচারপতি শামসুদ্দিনের এক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কয়েকজন সংসদ সদস্যও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তুলেছিলেন।
হাইকোর্টের বিচারক থাকাকালে সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী, কর্নেল তাহেরের গোপন বিচার, বিজিএমইএ ভবনসংক্রান্ত মামলাসহ বহু আলোচিত রায় তার হাত দিয়ে আসে।
তিনি প্রধান বিচারপতির অভিশংসন চেয়ে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দেয়ার পর এর নিন্দা জানিয়ে বিএনপি বলেছিল, বিচারপতি শামসুদ্দিনের পদপে ‘বিচার বিভাগের ওপর আঘাত’।
সম্প্রতি নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সংবর্ধনায় বিচারপতি শামসুদ্দিন মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে ‘ইতিহাস বিকৃতি’ ঘটিয়েছেন বলেও বিএনপির অভিযোগ।