বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১০:০৮
Home / কর্মসংস্থান / কমাশিসার ২১ দফা : (৩য় দফা)

কমাশিসার ২১ দফা : (৩য় দফা)

hadith-books কমাশিসাখতিব তাজুল ইসলাম :: 

ইসলামি শিক্ষা (মাদরাসা শিক্ষা) ও জাগতিক শিক্ষা (স্কুল শিক্ষা)কে দশম শ্রেণির পর আলাদা করুন। ইবতেদাইয়্যাহ ও মুতাওয়াসসিতা তথা প্রাইমারি ও নিম্নমাধ্যমিক বিভাগকে অধিক গুরুত্ব দিন।

এখানে বিষয়বস্তু দুটি। প্রথমতঃ সমন্বিত সিলেবাসে যখন শিক্ষাদান চালু হবে, তখন দশম তথা মেট্রিকের পর কওমি মাদরাসায় আর জাগতিক বিষয় রাখার দরকার থাকেনা। কারণ উপরের দিকে যত উঠা হবে ততো সাবজেক্ট বা বিষয়বস্তু বাড়তে থাকবে। একেকটি ফন বা বিষয়ের পুরো কিতাব সারা বছর নিয়মিত সবক দিয়েও যেখানে শেষ করা যায় না, সেখানে বাড়তি চাপ হিতে বিপরীত হতে পারে। সকল ছাত্রের পক্ষে তা কুলিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না। অন্য কথায় বলা যায় যে, কওমি মাদরাসার মূল মাকসুদ যেহেতু আলেম, ফক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুয়াল্লিম, মুবাল্লিগ তৈরি করা,  তাই দশম পর্যন্ত সমন্বিত সিলেবাসে পড়লে অধ্যয়নকারীগণ জাগতিক বিষয়ে চলনসই জ্ঞান অর্জনে সক্ষম হয়ে যাবে। পাশাপাশি চাইলে কলেজ ভার্সিটিতে ভর্তি  হয়ে সে তার নিজের মতো করে উচ্চতর ডিগ্রিও গ্রহণ করে নিতে পারে, যেহেতু তার হাতে আছে সরকারি সার্টিফিকেট।

আরেকটি বিষয়ও আমরা খোলাসা করে বলতে চাই যে, ১০ম শ্রেণির পরীক্ষা হবে অধ্যয়নকারীর টার্নিং পয়েন্ট। আসাতেজায়ে কেরামের সুপরামর্শে সে সিদ্ধান্ত নিবে, তাকে কোন পথে যাওয়া উচিৎ। সবাই টাইটেল পাশ করতে হবে- এই ধারণার যবনিকাপাত হওয়া দরকার। জরুরীয়াতে দ্বীন ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত হলেই আদায় হয়ে যায় । তারপর শুধু তারাই কওমিতে পড়বে যারা ভাল ফক্বীহ, আলেম, মুফাসসির, মুহাদ্দিস, মুবাল্লিগ হওয়ার উপযুক্ত। ছানোভিয়্যাহ ফযিলত ও টাইটেলসহ অন্যান্য বিভাগ সমূহ পড়ুক মনের মাধুরি মিশিয়ে।  তবে দশম শ্রেণিতে অকৃতকার্য হলে উপরের ক্লাসে উঠার পথ চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে। যারা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রকৌশলী, ডিজাইনার, বিজ্ঞানী, দার্শনিক, ভাষাবিদসহ মাদরাসায় নয় এমন বিষয়ে পারদর্শিতা বা ডিগ্রি অর্জন রতে চায় , তারা কলেজ ভার্সিটির দিকে পা বাড়াক।

আজকাল সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রাইমারি ও নিম্নমাধ্যমিক স্কুলগুলোতে লেখাপড়ার মান বেশ ভালো নয়। বেসরকারি স্কুলগুলোতে কিছুটা থাকলেও সেখানে অভিভাবকদের গুনতে হয় প্রতি মাসে লম্বা লম্বা খরছ। মাদরাসাগুলোতে কিন্তু চাইলে অতি অল্প খরচে এরচেয়ে ভাল ও উপযুক্ত পরিবেশে শিক্ষা দেয়া সম্ভব। স্কুলের লটরপটর উদাম পরিবেশে ছাত্র-ছাত্রীদের মনমানসিকতা ও মেধা উড়ন চন্ডি অবস্থা! আরো ছাত্র রাজনীতির ঘৃণ্য পরিবেশ তো আছেই। অভিভাকগণ সন্তানদের নিয়ে সবসময় বিচলিত থাকেন। তাই বলবো, কওমি মাদরাসায় স্কুল শাখা উপার্জনের রাস্তা যেমন খুলবে তেমনি ভাল উচ্চ ফ্যামিলির সন্তানারাও এসে ভীড় জমাবে।  দ্বীনী শিক্ষার বিস্তৃতিও ঘটবে সন্দেহ নেই।

ভাল করে বুঝার চেষ্টা করুন- যে রীতিমত আরবি ইবারত পড়তে জানে না, বাংলা-উর্দু তরজমাই যার সম্বল। শুদ্ধ করে দুই তিন লাইন আরবি লিখতে অপারগ। আরবি ভাষায় কথোপোকথন অনেক দূরের কথা; হাদিস-তাফসিরের কিতাবসমূহ নিজে পড়ে অর্থ জানার উপায় নাই। প্রতিটি পরীক্ষায় অর্ধেক বিষয়ে অকৃতকার্য। এমন পরিস্থিতিতে আমরা কেমন মুয়াল্লিম, মুফাক্কিরে ইসলাম, টাইটেল পড়নেওয়ালা আলিম উপহার দিচ্ছি? ইলমের বেইজ্জতি আর কিসে হবে বলুন? এই অহেতুক তরক্কী আজ কওমির কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কওমি শিক্ষাকে আর আমরা এভাবে গলাটিপে হত্যা করতে দিতে পারি না। একটি সম্ভাবনাকে আর বিপর্যয়ের মুখে পতিতে হতে দেখতে চাই না।

দ্বিতীয়ত : ইবতেদাইয়্যাহ ও মুতাওয়াসসিতা তথা প্রাইমারি ও নিম্নমাধ্যমিক বিভাগকে অধিক গুরুত্ব দিন।

কেনো গুরুত্ব দিব তার ব্যাখ্যা দরকার। আগে আমাকে জানতে দিন যে, কেনো আমরা মক্তব ও মুতাওয়াসসিতা খোলার পর থেকে টাইটেলের স্বপ্ন দেখা শুরু করি? বোখারি পড়ানো হবে, সিহাহ-সিত্তার দারস হবে, মুহাদ্দিসীনগণের পদভারে মাদরাসা মুখরিত হবে। শনৈ শনৈ বাড়বে ছাত্র তার সাথে আয়ও, সুনাম-সুখ্যাতি যেন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে !

বাস্তবে কি হচ্ছে তাই? না মোটেই না। হাক্বীক্বত দেখার আলোকে বলছি, কোনো কোনো মাদরাসার টাইটেল ক্লাস হয়েছে গলার ফাঁস। খোলার পর বন্ধ করাতো যায় না। রক্ষা করা কঠিন; চলছে ইজ্জতের টানাটানি। চৌদ্দ জামাতের কোথাও মধ্যখানের দুই তিন ক্লাস নেই। যদি থাকে তিনজন চারজন করে ছাত্র। আর উপরের ফজিলত ও দাওরায়ে হাদিসের জামাতে দেড়জন আড়াইজন করে! কিছু আছে নিয়মিত, কিছু অনিয়মিত। খাতায় নাম আছে; কিন্তু উপস্থিতি নেই। তাই তাকে অর্ধেক ছাত্র হিসেবে ধরা যায়! শুনেছি, কর্তৃপক্ষ মোবাইল, জামা-কাপড়, মাসিক ভাতা দিয়ে উপরের জামাতে ছাত্রদেরকে ধরে রাখতে কসরত করে যাচ্ছেন। যে অকৃতকার্যরা এবারত পড়তে পারে না এমন ছাত্রদের টেনে-হেচড়ে ধরে রেখে কি ফলাফল দাঁড়াচ্ছে তাহলে? ভাল ছাত্ররা ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শহরের বড় বড়  মাদরাসায় চলে যায় টাইটেলের পরীক্ষা দিতে।

হাদিস কে পড়াবেন? নামের নয় কাজের মুহাদ্দিসের আকাল শুরু হয়েছে এখন বাংলাদেশে। কোনো কোনো হাদিসের উসতাজ একসাথে ৪-৫টি মাদরাসায় বোখারি শরিফের দারস দেন। মজার ব্যাপার হলো, বোখারি শরিফের ১ম অংশ নিয়েই মারামারি-কাটাকাটি। তাহলে ২য় অংশ কি বোখারির হাদিস নয়? আর সিহাহ-সিত্তা’র বাকি ৫ কিতাবের উসতাজের মর্যাদা নিয়েও আলোচনা নেই। এমনকি পবিত্র কুরআনের তাফসির কে পড়াবেন তাতে কারো যায় আসে না। চরম একটি ভেলকি ছাড়া আর কি তাতে?

আমরা স্পষ্ট করে বলবো, এভাবে অনর্থক ভেলকিবাজির টাইটেলের স্বপ্ন দেখা ছাড়ুন। আল্লাহকে ভয় করুন। দ্বীনের গুরুত্ব বেশি ফাউন্ডেশনে। ভিত্তি মজবুত করুন। ইবতেদাইয়্যাহ ও মুতাওয়াসসিতাকে অধিক গুরুত্ব দিন। প্রাইমারি ও নিম্নমাধ্যমিক বিভাগকে গুরুত্ব সহকারে পরিচালনা করুন। গ্রামে গ্রামে, ইউনিয়নে ইউনিয়নে একেকটি মক্তব, নিম্ন ও উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলুন। সমন্বয়সাধিত সিলেবাস শুরু হলে সুনামও পাবেন, আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে আসবে। ইসলামের মূল দাবীকে পুরণ করার জন্য আল্লাহপাক আপনার শান বাড়িয়ে দিবেন ইনশাআল্লাহ।islamic books

আজ বাংলার আনাচে কানাচে ‘আশা’ ‘ব্র্যাক’ ‘প্রশিকা’রা কি করছে? সকালের মক্তব ছিনতাই করে নিয়েছে। আর আমরা টাইটেলের স্বপ্নে বিভোর। বাংলাদেশে ইসলাম ও মুসলমানিত্ব টিকিয়ে রাখার একমাত্র উপায় হচ্ছে উপযুক্ত সমন্বয়সাধিত উন্নত ইবতেদাইয়্যাহ ও মুতাওয়াসসিতা বিভাগসমূহের বিস্তার ঘটানো।

লেখক : খতিব ও চিন্তক

আরও পড়ুন :

১ম দফা : একক কওমি শিক্ষাবোর্ড বাস্তবায়ন করুন।

২য় দফা :  আধুনিক শিক্ষার সমন্বয় সাধিত সিলেবাস প্রণয়ন করুন।

৩য় দফা : ইসলামি শিক্ষা (মাদরাসা শিক্ষা) ও জাগতিক শিক্ষা (স্কুল শিক্ষা)কে দশম শ্রেণির পর আলাদা করুন। ইবতেদাইয়্যাহ ও মুতাওয়াসসিতা তথা প্রাইমারি ও নিম্নমাধ্যমিক বিভাগকে অধিক গুরুত্ব দিন।

৪র্থ দফা : আধুনিক আরবি ভাষাশিক্ষা ব্যবস্থা চালু করুন; বাংলা ইংরেজির গুরুত্ব দিন।

৫ম দফা : মানসিক ও শারীরিক টর্চারমুক্ত সৌহার্দপূর্ণ পাঠদান ব্যবস্থার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ইসলামী তাহযিব-তামাদ্দুনে  আগ্রহী করে গড়ে তুলুন।

 

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...