উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস দিয়েই শুরু করি। সত্য বলতে উলামায়ে দেওবন্দের রাজনৈতিক কার্যক্রম জমিয়তের মাধ্যমেই শুরু হয়েছিল। মহৎ এবং বৃহৎ উদ্দেশ্যেই গঠিত হয়েছিল প্রাচীনতম এই রাজনৈতিক সংগঠন। ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে সকলেই একনিষ্ট প্রচেষ্টার মাধ্যমে কর্মতৎপরতা চালিয়ে সফলতার দ্বারপ্রান্ত স্পর্শ করতে পারলেও পূর্ণ সফলতা অর্জন করা সম্ভব হয়নি কিছু ইজতেহাদী মতবিরোধের কারণে। অবশেষে শত বছরের সাধনার ফসল ভোগ করলো মালুরা। যারা ছিলো গাদ্দার ও দালাল, তারাই হয়ে গেলো স্বাধীনচেতী ও দামাল। ইতিহাসকে নিজের মতো করে পাল্টাতে শুরু করলো, আর আমরাও মুখে আঙ্গুল চুষে শুধু অবাক তাকিয়ে দেখলাম। তবে এটুকু সফলতা অবশ্যই পেয়েছি যে, বিদেশী শক্তিকে বধ করতে সর্বপুরি সক্ষম হয়েছি।
তখন যে বিষয়টা আমাদের পথের কাঁটা হিসেবে বাধ সাধছিলো, সেটি ছিলো শুধু মতপার্থক্য। সেখানে কোন পক্ষের সাথেই স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ছিলো বলে আমি মনে করি না। তবে অতি নগন্য কিছু লোক, যারা তেমন গ্রহণযোগ্য বা প্রসিদ্ধ ছিলো না; তারা হয়তোবা কিছু বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
যাক পরবর্তীতে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে পাকিস্থান ভূখণ্ডে নতুন পতাকা উত্তোলন করেও কাঙ্খীত সফলতা অর্জন করতে পারি নি। এমনকি নিজেদের মধ্যে দূরত্ব বেড়ে এক পর্যায়ে আমরাই একে অপরকে উদ্দেশ্য করে ফতোয়া দিতে শুরু করি। কালের বিবর্তনে আমাদের মতবিরোধের সাথে যুক্ত হতে থাকে নতুন ব্যধি। স্বার্থসিদ্ধির গর্হিত পন্থা হিসেবে আমরা রাজনীতিকেই বাছাই করে নেই। মত পার্থক্যের জের ধরে আমরা গঠন করতে থাকি একের পর এক সংগঠন। নিজের সংগঠনের প্রতি আকৃষ্ট করতে এবং অপর সংগঠনের প্রতি মানুষের অনীহা সৃষ্টি করতে ইসলামকেই পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করি। অথচ আমরা বেমালুম ভুলে যাই যে, আমরা একই ঘরের সন্তান। পানিতে কোপ দিলে যেমন নিজের হাটু বিক্ষত হয়, তেমনই ধীরে ধীরে আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে ক্ষত- বিক্ষত করতে শুরু করি।
তখন রাজনৈতিক আদর্শ থেকে আমরা দূরে চলে যাই। মনমানসিকতাও বিকৃত হয়ে যায়। শ্রুতের সাথে আমরাও ভাসতে শুরু করি। সঠিক পথ ছেড়ে ভিন্ন পথে সফলতা খুঁজতে আরম্ভ করি। এক পর্যায়ে আমরাই আমাদের ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাই।
আমি ব্যক্তিগতভাবে এখনও পূর্ণ আশাবাদী যে, এখনও যদি আমরা আমাদের মূল আদর্শে ফিরে যাই, যদি ঐক্যের আবদ্ধে আজও নিবন্ধিত হই; ইনশাআল্লাহ বিজয় আমাদেরই হবে।