মাত্র দু-আড়াই বছর পূর্বে শীয়ারাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধ কথা বলা ছিল চরম অপরাধ। একদল মুসলমানের ধারণা ছিলো, যে, এই শীয়ারাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বলার অর্থই হচ্ছে- ইসরাইল-আমেরিকার দালাল হওয়া। তখন মুনাফেক ইরানি প্রেসিডেন্টও আমেরিকা-ইসরাইল সম্পর্কে এমন বায়বীয় হম্বিতম্বি করতো যে, তখন মনে হত যে, এই ইরানই হচ্ছে মুসলিমউম্মাহের একমাত্র অভিভাবক, এরাই আমেরিকা-ইসরাইলের একমাত্র প্রধান শত্রু। যদিও আজপর্যন্ত আমেরিকা ইরানের প্রতি একটি ফুলও ছুড়ে নি।
মুনাফেকদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, এরা সব সময় চায় যে, তাদের চেহারা সর্বদা মুখোশে আবৃত থাকুক, কিন্তু তাদের অপছন্দ সত্ত্বেও আল্লাহ তাদের সে মুনাফেকি প্রকাশ করে দেন। এমনিভাবে আল্লাহ সুবহানু ওয়া তা’আলা সময়ের ব্যবধানে মুনাফেক ইরানের মুখোশ খুলে দিলেন।
শুধু ইরান যে, মুনাফেক ছিলো এরকম নয়। বরং এই শীয়া গোষ্ঠীই হচ্ছে মুনাফেক। আপনি যদি শীয়াদের ইতিহাস পড়েন তাহলে সহজেই এদের পরিচয় জানতে পারবেন।
আমরা অবশ্যই জানি, নবীজী যখন মক্কায় ছিলেন তখন কোনো মুনাফিকের উপদ্রব ছিল না। কিন্তু যখন মদীনায় গেলেন, তখন দলে দলে ইয়াহুদীরা বাহ্যিকভাবে ইসলাম গ্রহণ করে, আর ভিতরে মুনাফিকি লালন করে। এসব মুনাফিকরা উহুদ যুদ্ধে, খন্দক যুদ্ধে এবং তাবুক যুদ্ধসহ মুসলমানদের বিভিন্ন দুর্দিনে নিজেদের মুনাফিকি চুড়ান্তভাবে জাহির করে।
খলীফায়ে রাশিদ হযরত উসমান রাযি. এর সময় আব্দুল্লাহ বিন সাবা নামে এক ইয়াহুদী ইসলাম গ্রহণ করে । কিন্তু সে তার পুর্বসুরীদের মতো মুনাফিকিই করতে লাগল। তার মৃত্যুর পর তার অনুসারীরা ইতিহাসের পারস্য ইরান-ইরাকে চলে যায়, সেখানে তারা অগ্নিপুজকদের ধর্মের অনুসারে নতুন ধর্ম সাজায়। এবং ইয়াহুদী-খৃষ্টানের মতো কুরআনের বিকৃতি সাধনে লিপ্ত হয়। এবং যুগে যুগে মুনাফিকি করতে থাকে ।
কিন্তু যখুনি আমরা ঐক্যের স্বার্থে তাদের সাথে এক হয়েছি তখুনি তারা আমাদেরকে পিছন থেকে ছুরিকাঘাত করেছে !
১০৯৯সালে বায়তুল মুকাদ্দসকে ক্রুসেডারদের হাতে কে তুলে দিয়েছিল? এইতো শীয়া সম্রাজ্য ফাতেমি শাসকরা। তাদের কাপুষতা এবং গাদ্দারির কারণেই সেদিন ৭০ হাজার মুসলিমের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল নবীদের শহর জেরুজালেম। এজন্যে জেরুজালেমে ক্রুসেডাররা মুসলিম ও ইয়াহুদীদের গণহারে হত্যা করলেও কোনো শীয়াকে হত্যা করে নি !!
পরবর্তীতে যখন সুলতান ইমাদুদ্দীন জঙ্গি, তদ্বীয়পুত্র সুলতান নুরুদ্দীন জঙ্গি এই ক্রুসেডারদের মোকাবেলায় ময়দানে নেমে আসেন তখন শীয়া মাফিয়াবাহিনী হাসান বিন সাবাহের দল সুলতান নুরুদ্দীন জঙ্গিকে বিষ খাইয়ে হত্যা করে ! এরপর যখন সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবি নেতৃত্বে আসলেন তখন এই মাফিয়াবাহিনী তাকে চার চার বার গুপ্ত চালিয়ে হত্যা করতে ব্যর্থ হয় । এমনকি তারাতো একবার এই মহান সুলতানকে আহত করে ফেলে । তাই সুলতান বাধ্য হয়ে এই ফাতেমি সাম্রাজ্যের উচ্ছেদ করেন এবং এই ভয়ঙ্কর মাফিয়াবাহিনীর মূলোৎপাটন করেন। যখন তিনি এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন তখন তাকে অনেকে বলল – আপনি ক্রুসেডারদের ছেড়ে শীয়াদের বিরুদ্ধে লড়ছেন ? তখন জবাবে তিনি বললেন – “আমি আমার পিছন শীয়াদের জন্যে ছেড়ে কক্ষনো ক্রুসেডারদের মুখোমুখি হবো না!” এভাবে ১২ ভাগে বিভক্ত সিরিয়ার মুনাফিকদের শিকড় উপড়ে ফেলেন । এতে সুলতানের পাচটি মূল্যবান বছর নষ্ট হয়। তারপর না ১১৯১ সালে বায়তুল মুকাদ্দসকে উদ্ধার করেন ।
তাতারিরা যখন বাগদাদ আক্রমণ করে তখন শীয়া উজির ইবনে আলকামীর বিশ্বাসঘাতকতায় ১২৫৮ সালে আব্বাসি খেলাফতের পতন হয় ।তাতারিদের মধ্যেও উজীর ছিল শীয়া যার নাম নাসিরুদ্দীন তুসি। সেদিন ১৬ লক্ষ মুসলমানকে নির্বিচারে হত্যা করলেও কোনো শীয়াকে হত্যা করে নি এই হিংস্র তাতারিরা ( দেখুন, ইসলামের ইতিহাস/নজিবাবাদি )।
আধুনিক ইরানের গোড়াপত্তনকারী শীয়া সফবি বংশের শাসক শাহ ইসমাঈল উসমানি সালতানাতের বিরুদ্ধে মারাত্মক চক্রান্তে লিপ্ত হয়, ফলে উসমানি সুলতান সেলিম ১৫০৩ সালে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বাধ্য হন। যখন উভয় বাহিনী মুখোমুখি হয় তখন উসমানিদের মুখে ছিল ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি, আর শীয়াদের ধ্বনি ছিল ‘শাহ’ শাহ’। দেখুন- আলখিলাফাতুল উসমানিয়াহ পৃঃ ২৫৩ ও তারীখে ইসলাম /নজিবাবাদি)
গাদ্দার মীর জাফর ছিল একজন শীয়া, টিপু সুলতানের গাদ্দার উজির মীর সাদিক ছিল একজন শীয়া, শাহ আব্দুল আযীয মোহাদ্দিসে দেহলবির অপমানকারী মীর্যা নযফ ছিলো একজন শীয়া। (দেখুন- উলামায়ে হিন্দ কা শানদার মাযী)
বাংলাদেশে গণহত্যা পরিচালনাকারী জুলফিকার আলী ভুট্টো ছিলো একজন শীয়া, আমেরিকার পা চাটা কুকুর পারভেজ মোশাররফ হচ্ছে একজন শীয়া।
দেখুন না, আজকের জালিম বাশার আল আসাদকে কে সহযোগিতা দিচ্ছে ? এই তো শীয়া হিজবুল্লাহ এবং শীয়া রাষ্ট্র ইরান। এই শীয়ানেতা আহমদিনেজাদ তালেবানের পতনের পর বলেছিলেন, এটা আহমদ শাহ মাসুদের শাহাদতের বিজয়…! ইতিহাস খুজে দেখুন, শীয়ারা কোনো দিন আমাদের বন্ধু ছিল না। আজকের এই শক্তিশালী ইরান, এতগুলো নির্যাতিত মুসলিমদেশ থাকতে বাশারের মতো জালিমের পাশে কেনো দাড়াল… ?
যখন বাইরাইনের জনতা মাঠে নামল তখন ইরান জনতার পাশে দাড়াল, কারণ বাহরাইনের ৭০% নাগরিক শীয়া। আর শাসক হচ্ছে সুন্নি ।
আর সিরিয়ার ক্ষেত্রে এর ঠিক উলটো , কারণ বাশার আল আসাদ হচ্ছে শীয়াদের কট্টর প্রকার নুসাইরি শীয়া। আর সিরিয়ায় হচ্ছে মাত্র ১২% শীয়া।
হিজবুল্লাহই বা কেনো পাশের দেশ ইসরাইল ছেড়ে সিরিয়ায় ১৯ হাজার যোদ্ধা মোতায়ন করল? তারপরও কি মুনাফিকদের চিনতে ভুল করব? ওদের সাথে কি আবার একতার হাত বাড়িয়ে নিজেদের বিপদ ডেকে আনব?
এই শীয়াদের সাথে ত্রিশ বছর পর ঐক্যের হাত বাড়ালেন ড. মুরসি। কিন্তু যখন তাকে উৎখাত করা হলো, তখন তারা কী করল ?
যখন মিসরে গণহত্যা চালানো হল তখন তাদের ভূমিকা কী ছিলো?
অথচ জালিম কুলাঙ্গার বাশারকে তো সাহায্য দিয়েই যাচ্ছে…! যার ফল স্বরূপ সিরিয়ায় আমরা এখনো শীয়াগোষ্ঠীও রাশিয়ার দ্বারা গণহত্যা দেখতে পাচ্ছি ।
মোটকথা আমাদের সুদিনে তারা ঐক্যের কথা বলে, আর আমাদের দুর্দিনে তারা নিজেদের আসল প্রকাশ করে পিছন থেকে ছুরিকাঘাত করে…!
আমি জানি, অনেকেই বলবেন – আমরা মুসলমান শীয়া-সুন্নী কোনো বিভেদ মানি না! আমি বলব – … যখন শীয়ারা একের পর আমাদের ইসলামের শ্রেষ্ঠ দুই সাহাবী হযরত আবু বকর এবং হযরত উমর রাযি. কে গালি দিয়ে যায় তখন কিছুই আসে যায় না ?
আর হযরত আয়েশা রাযি: সম্পর্কে বিশ্রী কথা-বার্তা বলে তখন কিচ্ছু কওয়া যায় না?
যখন আমরা ওদের মুখোশ খুলে দেই তখন হয়ে যাই ঐক্য বিনষ্টকারী।
আমি তাদেরকে বলি আজ যদি কেউ আপনার মা-বাপকে গালি দিত তখন আপনি কী করতেন … অথচ যাদের বছরের পর বছর চলে যায় এই মহানব্যক্তিদের গালি দিয়ে, যারা তাদেরকে গালি দেওয়া সোয়াব মনে করে তাদের বিরুদ্ধে লিখতেই আপনাদের গায়ে এত জ্বলা শুরু হয়ে যায় !! এরপরও যদি কেউ বলে আমরা ঐক্য বিনষ্টকারী, তাহলে ধরে নিতে হবে সে এমন দল করে যে দলের প্রতিষ্ঠাতা একজন সাহাবা সমালোচক। যেহেতু শীয়াদের সাথে সাহাবা সমালোচনায় তাদের মিল, তাই শীয়াদের বিরুদ্ধে বললেই তাদের গাত্রদাহ শুরু হয়ে যায়।
আমাদের কথা শুধু ইরানের বিরুদ্ধে নয় বরং সব ধরনের শীয়াদের বিরুদ্ধে– চাহে সে ইরানে হোক, পাকিস্তানে হোক, ইয়েমেন হোক, সিরিয়ায় হোক বা লেবাননে হোক। কারণ প্রতিটি শীয়াই মুনাফিক, আর অধিকাংশ শীয়াই কাফির ।
ইরানের বিরুদ্ধে লিখলেই তারা টেনে নিয়ে আসেন সৌদী আরবকে। এটা সত্যিই আশ্চর্যের বিষয় একটি দালাল রাজ পরিবার দ্বারা কীভাবে একটি দেশের জনগণকে মূল্যায়ন করা যায় ? সৌদী রাজ পরিবার দালাল হয়ে গেলেই কি সারা দেশবাসী দালাল হয়ে গেলো ?
যদি এভাবে হয়, তাহলে আমাদের দেশের সরকার তো নাস্তিকবান্ধব সরকার! তাই বলে কি দেশের সব মানুষ নাস্তিক হয়ে গেলো?
মনে রাখুন, আরবের কয়েকটি দালাল পরিবার দ্বারা সমগ্র আরববাসীকে মাপবেন না ! কেননা নবীজী বলেছেন, তোমরা আরববাসীকে তিন কারণে ভালোবাস, কেননা আমি আরবী, কুরআন আরবী এবং জান্নাতিদের ভাষা আরবী …
পক্ষান্তরে সব শীয়ারাই মোনাফিক… তাই শীয়াদের বিরুদ্ধে বললে সৌদী আরবকে টেনে নিয়ে আসা চরম মূর্খতা বৈ কিছু নয়…
ইতিহাস সাক্ষী শীয়ারা কোনোদিন ইসলামের কল্যাণ বয়ে আনেনি। এমনকি এক মুষ্ঠি মাটিও ইসলামের জন্য জয়লাভ করে নি! এ হল তাদের সাথে আমাদের একতার ইতিহাস ! তারপরও কি আমরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেব না। জেনে রাখুন, যে জাতি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না সে জাতির মুক্তি অসম্ভব। এজন্যেই আল্লাহ তাআলা কুরআনে ফেরআউন-নমরূদসহ পূর্ববর্তী উম্মতের ইতিহাস এনেছেন । যাতে আমরা তা থেকে শিক্ষা নিতে পারি।
তারপরও কি আমাদের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার সময় আসে নি?
লেখক : লেখক ও প্রাবন্ধিক