গতকালকে শাপলার বর্বোরোচিত ঘটনার ভিডিও দেখলাম। আহ! কি নির্মম কাহিনী। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় ওরা পুলিশ না অমানুষ । এ দেশের শান্তিকামী উলামা, ছাত্রজনতার উপর নির্যাতন কোনভাষায়ই ব্যক্ত করে শেষ করা যাবে না। সারাটা রাত এই ভিডিওগুলো বারবার দেখেছি এবং প্রতিবারই আঁতকে ত্তঠেছি। অনেকবার অশ্রু মুছে মুছেই নতুন করে প্লে করেছি। কিন্তু এক পর্যায়ে ভিডিওগুলো দেখতে গিয়ে আত্মসম্মান বাঁধা হয়ে দাঁড়াল।
এই ভিডিওগুলো আমাদের জন্য অবমাননা ও লজ্জাক্ষর। এগুলো আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম দেখলে আমাদেরকে ধিক্কার দেবে এবং বলবে আমরা নবীপ্রেমের নামে নবীর অবমাননা করেছি। থু থু দেবে আমাদের নেতৃত্ব ও প্রজ্ঞার উপর।
আমাকে গালি দেওয়ার আগে ভিডিওগুলো একবার দেখে নেবেন। দেখবেন, কত অসহায় ছিলাম আমরা। নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য আমরা হন্য হয়ে ছুটেছি। কখনো নিজ কানে কখনো পুলিশের পায়ে ধরেছি। আমরা নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য অসহায়ের মত চিৎকার করেছি। কোনভাবেই বুঝা যাচ্ছিল না এখানে কিছু ইমানদার জড়িত হয়েছেন নবীর ভালবাসায় ।
যারা শাহাদাত বরণ করেছেন তাদের ব্যাপারে তো কিছু বলার দরকার নেই । কেন এমন হল?
১) আমাদের আন্দোলন সাহাবীওয়ালা নিয়মে হবে দূরের কথা আকাবিরি নিয়মেই হয় নি। কবে কোথায় আমাদের আকাবিররা এভাবে অসহায়ের মত ময়দান থেকে পালিয়েছেন ইতিহাসে দেখাতে পারবেন? গাছের ঢালে ঝুলেছেন। কালো পানিতে বন্দি হয়েছেন তবুও পিছপা হন নি । লেনদেন আতাতের প্রশ্নই তো ছিল না । আর আমরা লাখ লাখ থাকার পর ও মরলাম কাতারে কাতার পালাইলাম লাখে লাখে ।
২) আমরা বক্তৃতার মোজাহিদ, মাঠের না। আমরা মঞ্চ থেকে নেমে কর্মীদের কাছে জানতে চাই, কেমন হল আমার বক্তৃতা?
৩) আমাদের জিহাদে ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া ঢুকে যায় এটাও একটা বড় সমস্যা।
৪) কর্মীদের জানান দেয়া হয় না, কোন পরিস্থিতে কি করতে হবে? খোদার কসম! শাপলার এই কর্মীদের যদি বলে দেয়া হত, কঠিন পরিস্থিতি আসলে লড়াই করো তবুও অসহায়ের মত মার খেয়ো না। দেখতেন বানের পানির মত ভেসে যেত এই নাফরমানের দলেরা।
আমি আরো কিছু অন্যান্য দলের ভিডিও দেখেছি; কিন্তু নির্মমতার পরও তারা জায়গায় লড়াই করে শহিদ হয়েছে, তবুও কাপুরুষের মত পলায়ন করেনি। এরকম ভিডিও দেখলে শাহাদাতের প্রেরণা জাগে । কিন্তু এগুলো থেকে শুধু অসহায়ের গ্লানি জাগে।
ভাবছিলাম আগামী প্রজন্ম যাতে আমাদেরকে ভুল না বুঝে তাই মাদরাসার সিলেবাসে শাপলার কাহিনী স্থান পাবে। যাতে পরের প্রজন্ম জানতে পারে, আমাদের পূর্বসূরীদের সরলতাকে পুঁজি করে সরকার ও বিরোধী দল কি পৈশাচিক ব্যবহার করে।
শাপলার আন্দোলনে খুব বুদ্ধি খাঁটিয়ে কওমি উলামাদের মাঠে নামানো হয়। কিছু ঘরের কিছু বাইরের লোক ছিল । ওদের কারণেই বারবার মন্ত্রী-এমপি পাঠানোর পরও ভাল ফল আসে নি। এমনকি ব্লগার গ্রেফতার করেও কাজ হয় নি । অবশেষে সবি হল মন্দ পথে।
আসলে শাপলা নিয়ে কিছু লেখা বা বলা আমার জন্য সাজে না । আমি তো হেফাজতের কোন মিটিংয়ে ছিলাম না । তারও একটা কারণ আছে। ফতোয়ার আন্দোলনে আমি জননিরাপত্তা আইনের সরকারের মামলার নির্যাতনের শিকার ছিলাম। কিন্তু ৪ দল ক্ষমতায় যাওয়ার পর ইসলামী ঐক্যজোট ভেঙ্গে যাওয়া এবং বি.বাড়িয়ার শহিদদের নিয়ে কথা না বলা ইত্যাদি বহু কারণে নেতৃত্বের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলি। তারপর জমিয়ত, মজলিস ভেঙ্গে যাওয়ায় পরিবেশটা আরো খারাপ হয়ে যায়; যেমন শাপলার প্রায় গাজীদের অবস্থা। প্রকাশ্য কিছু না বললেও আড়ালে চলে শুধু থুথু নিক্ষেপ। এরপর থেকে কারো আওয়াজে বেহুশ হয়ে দৌড় দেই না, নিজ সামর্থের বাইরে যাই না। অবস্থান থেকেই লড়ে যাই।
ইয়া আল্লাহ ! এই তো কিছু দিন আগেও আমরা নির্লোভ সফল আন্দোলন দেখেছি; কিন্তু এখন একি হচ্ছে? কেন হচ্ছে? আর কি আমরা আকাবিরি চেতনা ফিরে পাব না ? ক্ষমা কর! ক্ষমা কর! ক্ষমা কর আমি অধমকে।
লেখক : মুহাদ্দিস ও কলামিস্ট