যে সমস্ত আলেমরা রাজনীতি করে না তারা রসগুল্লা হুজুর, বলেছেন শায়খুল হাদীস আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক সাহেব দাঃবাঃ। হযরত এ কথা দ্বারা কি উদ্দেশ্য নিয়ে নিয়েছেন, তা আল্লাহ ভালো জানেন। তবে আমি যা দেখছি, যে সমস্ত হুযুররা রাজনীতি করেন না, তারা অতীত কিছুটা হলেও স্মরণ রাখেন। চাই তারা যে গুল্লাই হোক। আর যারা রাজনীতি করেন তারা অতীত ভুলে যান খুব দ্রুত! ধুসর অতীত নয়; বরং একেবারে সদ্য অতীত হওয়া বেদনাদায়ক ঘটনাকেও ভুলে যান!
বাংলাদেশের ইতিহিাসে তাওহীদি জনতার সবচেয়ে বেদনাবিধুর ট্রাজেডি হল শাপলা ট্রাজেডি। এইতো বছরদুয়েক আগের ঘটনা। কিন্তু সেই ক্ষত থেকে এখনো রক্ত ঝরে। নিরীহ মুসলমানদের এত তাজা খুনকে হয়ত হজম করতে কেঁপে উঠেছিল বাংলাদেশের পবিত্র মাটি। কারা ছিল এর নেপথ্যে? গোপনে গাঁটছাড়া কারা কাদের সাথে বেধেছিল? সেগুলো বেশি দিন জাতির সামনে গোপন থাকেনি।
শাপলার এমনই এক খলনায়ক এখন কুতবে বাঙাল! কেউ কেউ লিখেন, শাপলা চত্ত্বরের বীর সিপাহসালার! কালো রাতের পরের দিন সংবাদ পেলাম যে, তার লাশ পাওয়া গিয়েছে ম্যানহুলে! আহারে! বেচারার জন্য কত দোয়া করেছিলাম!পরে খবর পেলাম, ওনি লাখো জনতাকে গুলির মুখে ফেলে লন্ডন চম্পট! হামলা হবে! মানুষ মরবে! সবই জানতেন! তাতে তাদের কি? তাদের তো উদরপূর্তি হয়েছে বেশ! কয়েকদিন আমোদ ফুর্তি করার জন্য তাই চলে গিয়েছিলেন বিলেতে!
ঘৃণার থুথু তখন থেকে শুরু। কারণ মুসলমানদের ইতিহাসে কাফেরদের চেয়ে গাদ্দাররা বেশি ক্ষতি করেছে! দেশে ফিরার পর তিনি নিরাশ্রয়। এখন কেউ আর তার লাঠি নাটক দেখতে দাওয়াত দেয় না! নিরুপায় হয়ে তিনি যোগ দিলেন প্রাচীনতম একটি ইসলামী দলে! পুরো উড়ে এসে জুড়ে বসলেন! প্রথমেই মনে হয় সহ-সভাপতি! ব্যস, কেল্লা ফতেহ! শুরু হল ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো!নামের পিছনে ট্যাগ লাগানো।
মুসলমান হলে হাদীসে আছে, অতীতের সকল গোনাহ মাফ হয়ে যায়। দল পরিবর্তনের কারণে রাতারাতি তিনিও পাল্টে গেলেন! গতকাল যিনি শাপলার খলনায়ক, আজকে তিনি শাপলার বীর সিপাহসালার! রাজপথের লড়াকু যোদ্ধা! এখনতো মাশাআল্লাহ ফখরে বাঙাল! কখন জানি আবার শায়খুল ইসলাম বা মুফাক্কিরে ইসলাম হয়ে যান কিনা, সম্ভাবনা একবারে অযৌক্তিক নয়!
ফারুক সাহেব দা.বা.! যারা রাজনীতি করে না, তারা রসগোল্লা। মানলাম আপনার কথা টিক; কিন্তু যারা রাজনীতি করেন, আবার বিপদে বিলেতে চম্পট! আশা করি এদেরকে আপনি একটি লকব দান করবেন!
বর্তমানে যারা ইসলামী রাজনীতির কর্ণধার, তাদের শিষ্যরা যে কি পরিমাণ সভ্য, তা আমি দেখলাম কিছুদিন আগে। হেফাজতের ঢাকা মহানগরীর সমাবেশ নিয়ে লালবাগ এবং বারিধারার কামড়াকামড়ি দেখে। কেউতো আল্লামা নূর হুসাইন ক্বাসেমীর বিরূদ্ধে পোস্ট করেছেন!
ভাই, তোমার একটু কলম কাঁপলনা! কার বিরূদ্ধে লিখছ? তুমি জান না কি তার মাকাম? মুধুমাত্র রাজনৈতিক মতানৈক্যের কারণে এমন মহিরুহের বিরূদ্ধেও আমাদের কলম এখন দুর্বার!
কেউ আবার লালবাগের কিরুদ্ধে লিখেছেন দু’হাত খোলে! লালবাগী আর শাহবাগী এক! এ বিষয়ে কবিতাও লিখে তার কাব্য প্রতিভার জানান দিলেন! এখনতো মাশাআল্লাহ শুরু হয়েছে দল পাল্টানোর হিড়িক!
আগে শোনতাম, পেটের চিন্তায়, মামলা থেকে বাঁচার জন্য মানুষ আওয়ামীলিগ থেকে বিএনপিতে যোগ দেয়। আবার ক্ষমতা পাল্টালে তিনিও দল পাল্টান! এখনতো জমিয়ত থেকে খেলাফত, খেলাফত থেকে জমিয়তে যোগ দেওয়ার হিড়িক! তাদেরকে যেভাবে স্বাগত জানানো হয়, দেখে মনে হয় মুসলমানদের হারানো খেলাফত বুঝি আবার প্রতিষ্ঠা হয়ে গেল!
ফারুক সাহেব দা.বা.! আমরা রসগুল্লা মানলাম! কিন্তু যে ইসলামী রাজনীতি তাদের কর্মীদের বেয়াদব এবং সংকীর্ণমনা করে দেয়, একই ধারার দুটি দলের কর্মীদের সহাবস্থান শেখায় না। কর্মীরা মনে করে জমিয়ত, খেলাফতের ভিন্নতা হল হক বাতিলের। অথবা জোট-বেজোট যেনোই হকের মাপকাঠি। এমন ইসলামী রাজনীতিকে আমরা মনেপ্রাণে ঘৃণা করি।
আমায় ভেবোনা পর,আমি তোমাদের লোক
সাফ সাফ বলি কথা যা হবার তাই হোক।
রেজাউল করীম আবরার
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামেয়া আবু বকর সিদ্দীক রা. যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।
১২.১০.২০১৫ ঈসায়ি