শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৪:২৪
Home / পরামর্শ / কওমি মাদরাসা সংস্কারে খতিবে আজম আল্লামা সিদ্দীক সাহেব রহঃ এর চিন্তাধার

কওমি মাদরাসা সংস্কারে খতিবে আজম আল্লামা সিদ্দীক সাহেব রহঃ এর চিন্তাধার

দারুল উলূম দেওবন্দ
দারুল উলূম দেওবন্দ

জুলফিকার মাহমুদী ::

(প্রথম পর্ব)

খতিবে আজম আল্লামা সিদ্দীক সাহেব রহঃ ছিলেন বাংলার জমীনে কওমি মাদরাসা শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনের প্রথম অগ্রপথিক৷ তিনি শাহ ওলিউল্লাহ রহঃ চিন্তাধারায় কওমি মাদরাসা শিক্ষাকে জাগ্রত করতে ছিলেন বদ্ধপরিকর ৷ তিনি আন্তরিকতার সাথে কওমি শিক্ষাকে সংস্কারের আওয়াজ দিয়েছিলেন৷ প্রথমে তিনি ‘”মাদরাসা শিক্ষাক্রম বিকাশের ধারা ” নামক সুদীর্ঘ এক প্রবন্ধ লিখেন ৷ প্রবন্ধটি প্রথমে “দৈনিক আজাদ ” মাসিক মদীনা ” মাসিক আত -তাওহীদে প্রকাশিত হওয়ার পর মুসলমানদের মধ্যে বিপুল আলোড়ন সৃষ্টি করে৷ পরে প্রবন্ধটি পুস্তক আকারে প্রকাশিত হয় ৷ আমি তার সারসংক্ষেপ উল্লেখ করবো ইনশাআল্লাহ ৷

প্রাথমিক কথা : বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র ৷ এর অধিবাসী নব্বই জনই মুসলিম ৷ তাদের রয়েছে ইসলাম নামে পুর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা৷ বাংলাদেশর রাষ্ট্রিয় শাষণব্যবস্থায় এ জীবন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন হয়নি ৷ তার কারণ হচ্ছে, মুসলমানগণ পুর্ণাঙ্গ ইসলামী শিক্ষায় অজ্ঞতার প্রভাব, সাথে আছে নাস্তিক্যবাদী, জড়বাদী শিক্ষার প্রচার, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ প্রতিষ্ঠা ৷

বাংলাদশে দু’টি বিপরীতমুখি শিক্ষা চালু আছে ৷ একটি হচ্ছে জাতীয় শিক্ষা নামক পাশ্চাত্য শিক্ষা আর অপরটি হচ্ছে মাদরাসা শিক্ষা নামক ধর্মীয় শিক্ষা৷ মাদরাসা শিক্ষা আবার দু ‘টি ধারায় পরিচালিত একটি হচ্ছে। প্রথমটি হচ্ছে সরকারী প্রভাবমুক্ত, রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে যুক্তহীন কওমী মাদরাসা, অপরটি হচ্ছে সরকারী আলীয়া মাদরাসা ৷ এই ত্রিমুখী শিক্ষাধারা নিজ নিজ ত্রুটি ও অপূর্ণাঙ্গতার দরুন পুর্ণাঙ্গ ইসলামী শিক্ষার ভূমিকা পালন করতে পারছেনা ৷

জাতীয় শিক্ষায় পাশ্চাত্য জড়বাদী দর্শন ও ভাবধারা থাকায় ইসলামী শিক্ষার সাথে সম্পর্ক নেই বললেও চলে ৷ অপরদিকে আলিয়া মাদরাসা শিক্ষায় মিশ্র পাঠ্যরীতির প্রবর্তনে মৌলিক ইসলামী শিক্ষা গৌন হওয়া ও ইসলামী ঐতিহ্যগত পরিবেশ না থাকায় এটিও ত্রুটিমুক্ত নয় ৷ আর কওমি মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামী মৌলিক বিষয় থাকলেও প্রয়োজন অনুযায়ী আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়াবলী না থাকায় এটিও পুর্ণাঙ্গ শিক্ষা ব্যবস্থা বা যুগোপযোগী বলা যায় না ৷ এ শিক্ষা ব্যবস্থায় মাতৃভাষা ও সাহিত্য চর্চা, ইসলামকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠা করার মানসিকতা নেই বললেও ভুল হবে না ৷

তাই উলামায়ে কেরামকে এক ও অভিন্ন হয়ে ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থাকে ব্যক্তি জীবন থেকে রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত পুর্ণাঙ্গ ইসলামী ভাবধারায় সাজাতে হবে ৷ এর জন্য চাই সংস্কার ও ঐক্য ৷ নিন্দা জানাই ঐসব মুসলমানদের যারা নিজ স্বার্থে ইসলামী মৌলিক বিষেয়র প্রতি চিন্তা না করে ফুরুআতে দ্বীনের আদনা বিষয় নিয়ে ঐক্যপ্রক্রিয়া নষ্ট করেন ৷ আল্লাহ আমাদের সকলকে সহিহ বুঝার তৌফিক দান করুন ৷

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা যেহেতু ত্রুটিযুক্ত তাই বর্তমান বিজ্ঞানের যুগে প্রতিযোগিতায় ঠিকে থাকা বা নাস্তিক্যবাদী শিক্ষার আগ্রাসন মোকাবেলা করতে ব্যর্থ ৷ ইসলামকে সর্বজনীন করতে পুরোপুরি ব্যর্থ না হলেও ব্যর্থতার পাল্লা অনেক ভারী ৷ ১৫-১৬ বছর লেখাপড়া করেও ইসলামের মৌলিক বিষয়ে পুরোপুরি স্ট্যন্ডার্ড করতে ব্যর্থ না হলেও দিনদিন ব্যর্থতার পাল্লা দ্রুতই ভারী হচ্ছে ৷

তাই দারসে নেজামীর নামে অন্ধ অনুসরণ না করে মৌলিক বিষয়াবলী ঠিক রেখে শাহ ওলিউল্লাহ রহঃ চিন্তাধারায় আমাদের উলামায়ে কেরামকে এগিয়ে আসা উচিত ৷এক্ষেত্রে অনেকেই জাতীয় শিক্ষার আদলে ত্রিধারার শিক্ষা ব্যবস্থাকে একতত্রীকরণের প্রস্তাব করেন ৷ এখানে বিষয়টি বর্তমানে সম্ভব বা উচিত কি না ভেবে দেখার বিষয় রয়েছে ৷ আমি মনে করি যদিও এটি ইসলামী রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড ৷ ইসলামী শিক্ষা মুসলমানের অধিকার; কিন্তু আজ এ রাষ্ট্র ব্যবস্থা রোগাক্রান্ত ৷ তাই হিতে বিপরীত হতে পারে। বিধায় বর্তমানে একত্রীকরনের প্রস্তাব আমি উচিত মনে করি না ৷ হ্যাঁ, তবে কাজ চালিয়ে নিতে হিকমতের সাথে এগুতে হবে ৷ এ জন্য কিছু মানুষ ইসলামী শিক্ষায় পুর্ণাঙ্গ পাণ্ডিত্য অর্জন করে ঐ রাষ্ট্রযন্ত্রে ঢুকতে হবে৷ আর তা অবশ্যই ইসলাম ও মুসলমানদের সার্থকতায় ৷

About Abul Kalam Azad

এটাও পড়তে পারেন

কওমীর নিউ ভার্সন এবং রাষ্ট্র থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসন!

সৈয়দ শামছুল হুদা: বাংলাদেশের একটি আলোচিত অন্যতম রাজনৈতিক দলের নাম ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সরকারে থাকা ...