সাইমুম সাদী
ধাপ-১:
প্রথমে টার্গেটকৃত দেশের সরকারের কোন মন্ত্রীকে (বিশেষ করে অর্থমন্ত্রীকে) টাকার লোভ দিয়ে দালাল বানানো হয়। এরপর তার মাধ্যমে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সেবাখাতগুলোকে (যেমন:পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ) প্রাইভেটাইজেশন করতে বলা হয়। এ খাতগুলো প্রাইভেটাইজেশন হয়ে গেলে সরকারকে নিজ দেশীয় সম্পদকেই উচ্চমূল্য দিয়ে কিনতে হয়। পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ সেক্টরে বিদেশীরা বিনিয়োগ করে প্রচুর টাকা বিদেশ নিয়ে যায়।
ধাপ-২:
বিনিয়াগকারীদের আকৃষ্ট করতে ব্যাংকে সুদের হার বাড়িয়ে দেয় হয়। তখন ঐ দেশের জনগণ প্রোডাক্টিভ কোন খাতে বিনিয়োগ না করে ব্যাংকে টাকা জমা করে সুদ খাওয়াকে বেশি ভালো মনে করে। এতে শিল্পসেক্টরে ধস নামে, কমে যায় প্রোপার্টির মুল্য। দেশের অর্থনীতি দুর্বল হতে থাকে।
ধাপ-৩:
এধাপে সরকারকে বুদ্ধি দেওয়া হয়, ভর্তুকি কমিয়ে গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির দাম বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। সরকার গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির মূল্য বৃদ্ধি করা মাত্র তৈরী হয় জনঅসস্তোষ। সেই জনসন্তোষে ঘি ঢালে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ’র মালিক সম্রাজ্যবাদীরা। শুরু হয় দাঙ্গা। সরকার টিয়ারগ্যাস, ট্যাংক ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে পড়লে জনগণ তাদের বিনিয়োগ তুলে নেয়, ফলে শূণ্য হয়ে পড়ে ব্যাংকগুলো। দেওলিয়া ঘোষিত হয় রাষ্ট্র। এ পর্যায়েও রাষ্ট্রের কোষাগারে কোন টাকা থাকে না, থাকে শুধু বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ’র ঋণের বোঝা। এই ঋণের সুযোগে দেশটিকে নাকে রশি দিয়ে ঘোরাতে থাকে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ।
ধাপ-৪:
এ পর্যায়টি সম্রাজ্যবাদী বিনিয়োগকারীদের জন্য খুবই সুখকর । দেশের কঠিন মুহুর্তে তারা পানির দামে ঐ দেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদগুলো কিনে নেয়। কথিত মুক্তবাজার অর্থনীতির নাম দিয়ে ঐ দেশের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় বিদেশী সম্রাজ্যবাদীদের হাতে, রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা বলে কিছু থাকে না। চর্তুথ ধাপের শেষে এসে রাষ্ট্রীয় বড় বড় সম্পদের মালিকের নাম যখন ইউরোপ-আমেরিকান তখন আইএমএফ-ওয়ার্ল্ডব্যাংকের এতদিনের কূটনামীর সফলতা অনুধাবন করা যায়।
আমরা দেখেছি, এ উপমহাদেশে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ব্যবসা করতে এসে আমাদের ২০০ বছর পরাধীন করেছিলো। মুক্তবাজার অর্থনীতির নামে তারা এ অঞ্চলে অনেক যুদ্ধও পরিচালনা করে। এখন সম্রাজ্যবাদীরা কৌশল পাল্টেছে। তারা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মত যুদ্ধ করে না, তারা বানিয়েছে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ ঋণ দেওয়ার নাম করে গলায় এমন দড়ি পেছিয়ে দেয় যে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা হারানো ছাড়া কোন উপায় থাকে না। উপরের এই ৪টি ধাপ মেনেই সম্রাজ্যবাদীরা বিশ্বের অনেক দেশ অর্থনৈতিকভাবে দখল করে নিয়েছে।