সিলেটের ইখওয়ানুল উলামা সমবায় সমিতির পর এবার ফেয়ার মিডিয়া লিমিটেড’র সীমাহীন কেলেঙ্কারীর দাস্তান!
ইসলামী সমাজ কায়েমের নামে ঈমান ধংসের কর্মসুচি। আলেমের লেবাছে জালেমদের খেয়ানতের খতিয়ান!
কমাশিসা অনুসন্ধান ডেস্ক: ‘গণমাধ্যমে সততা ও স্বচ্ছতার প্রতীক’- এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ব্যবসায় নেমেছিল ফেয়ার মিডিয়া লিমিটেড। তাদের প্রথম প্রজেক্ট ছিল ‘সাপ্তাহিক লিখনী’ । তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করা ঐ পত্রিকাটি কওমি অঙ্গনে বেশ সাড়াও ফেলেছিল । হেফাজতের আন্দোলনের পক্ষে এবং বাংলাদেশে ইসলামি রাজনীতির ভবিষ্যৎ কেমন হবে তার রূপরেখা পরিস্কার করতে বেশ ভালো ভূমিকাও রেখেছিল । কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে উন্নীত কওমি ঘরানার এমন একটি পত্রিকা হঠাৎ করেই কোন পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই কেন বন্ধ হয়ে গেল সেটা সবার কাছেই অস্পষ্ট এবং রহস্যময়। প্রাথমিকভাবে সবাই এটাকে অর্থনৈতিক দীনতা বলে ধারণা করলেও অনেকের সন্দেহ এর পেছনে বড় ধরণের কোন ঘাপলা রয়েছে। অর্থ কেলেঙ্কারি, অভ্যন্তরীণ কোন্দল অথবা কোন নির্দিষ্ট সিন্ডিকেট এই প্রতিষ্ঠানটিকে হঠাৎ করেই ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য করেছে। এরকম একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেখানে শতশত মানুষের শেয়ার বিনিয়োগ রয়েছে তারা যখন কোন প্রকারের আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে নিজেদের গা ঢাকা দেয়ার চেষ্টা করে তখন স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহের ভীত মজবুত হয়ে দাঁড়ায়। অনাস্থার বিষ শাখা-প্রশাখা ছড়ায় আরো কিছু বিষয়ের গভীরে|
সাপ্তাহিক লিখনী বন্ধ হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে। অভিযোগ রয়েছে, এই দীর্ঘসময়ে কোম্পানীটি তাদের শেয়ার-হোল্ডারদের সাথে আনুষ্ঠানিক কোন মতবিনিময় করেনি। কোম্পানীর কার্যক্রম নিয়েও অফিসিয়াল কোন আলাপ-আলোচনা করেনি করোর সঙ্গে। তাদের সাথে কেউ যোগাযোগ করতে চাইলে কর্তারা একে অন্যের দিকে ডাইভার্ট করে দেন। নির্ধারিত অফিস শাওন টাওয়ার ফ্লোর ৬ এবং (১৮ পুরানা পল্টন, পল্টন প্লাজা-৫তলায়) বন্ধ রেখে (দরোজার সামনে ময়লার ঝুড়ি রেখে) গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছেন । অফিশিয়াল ফোন নাম্বারগুলি অফ করে রেখে গ্রাহকদের হয়রানি করা এবং দুর্ব্যবহারের কথাও উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ।
ফেয়ার মিডিয়া লিমিটেডের শ্লোগানের পরিপন্থি এসব কর্মকাণ্ডের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান গাজী আতাউর রহমানের মুখোমুখি হয়ে জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, “আমরা একটি ভালো উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু যে কোন কারণেই হোক আমাদের কোম্পানী ব্যবসায় লস করেছে। আর শর্তানুযায়ী প্রতিষ্ঠানের সাথে সাথে শেয়ার হোল্ডারদেরও লসটা মেনে নিতে হবে। এই নিয়ে কারো আপত্তি থাকার প্রশ্নই উঠে না”। শেয়ার-হোল্ডারদের সাথে দুর্ব্যবহার এবং লসের বিষয়টি স্পষ্ট করে না জানানোর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি চেহারা বিদঘুটে করে বলেন, “লস মানেই তো লস! সেখানে আর কোন কথা আছে নাকি? লাভ-লসের হিসাব যদি এতই দরকার হয় আপনার, তাইলে আমি ইমতিয়াজ আলমের (ভাইস চেয়ারম্যান) নাম্বার দেই, আপনি তার সাথে কন্টাক্ট করে জেনে নেন”।
এরপর তার কথা অনুযায়ী এই প্রতিবেদক কথা বলেন ইমতিয়াজ আলমের সাথে। তিনি বিরক্তির স্বরে জানান, ফেয়ার মিডিয়ার সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি সব হিসাব গাজী আতাউর রহমানকে বুঝিয়ে দিয়ে চলে এসেছেন। ‘শেয়ার হোল্ডারদের টাকা কী অবস্থায় আছে’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতি হাজারে এখন ১১৭ টাকার মত পাওয়া যাবে। তবে এই টাকাটা কোত্থেকে এবং কবে গ্রাহকদের কাছে হস্তান্তর করা হবে সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে না পারলেও শেয়ার-হোল্ডারদের কাছে তিনি জোরগলায় অনুরোধ করেছেন, তারা যেন বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন। দুর্নীতিবাজদের ব্যাপারে সবাই যেন সোচ্চার হন | তখন বিষয়টির দৃষ্টি আকর্ষণ করে গাজী আতাউরকে প্রশ্ন করা হলে তিনি এ সম্পর্কে কোন সদুত্তর দেয়া থেকে বিরত থাকেন ।
এরপর বিষয়গুলো নিয়ে কথা হয় ফেয়ার মিডিয়া লিমিটেডের আরেকজন ভাইস চেয়ারম্যান মুহিব খানের সাথে। তিনি দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, “আমাদের কোম্পানী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আমি বলবো এটা আমাদের ব্যর্থতা। তবে অফিসিয়ালী এ বিষয়টি সবাইকে জানানোর দরকার ছিল। আমি আমাদের মিটিংয়ে কথাটি তুলেছিলাম। তারপরও কেন যে লুকোচুরি হচ্ছে সেটা বোধগম্য নয়” লসের খতিয়ান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “হাজারে দেড়শ’ টাকার মত অবশিষ্ট আছে এখন। তবে কোম্পানীর কার্যক্রমের ব্যাপারে খুব বেশি কিছু আমি জানি না”।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফেয়ার মিডিয়ার একজন কর্মচারী জানিয়েছেন, “ব্যবসায় লস হয়েছে এটা যেমন সত্য তেমনি অনেক দুর্নীতিও যে হয়েছে এটাও সত্য। একটি নির্দিষ্ট ইসলামি রাজনৈতিক দলের নেতারা যেহেতু এখানে আছেন তাই তাদের কর্মীরা ভুক্তভোগী হলেও মুখ খুলছেন না। বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে শুরু থেকেই”।
সবকিছু মিলিয়ে এই প্রতিবেদক যখন বিষয়টির গতিবিধি খেয়াল করছিলেন তখন বাস্তবচিত্র দেখা গেছে আরো ভয়াবহ। প্রসঙ্গটি তুলতে গেলেই যেন মুখ শুকিয়ে যায় সবার। ফেয়ার মিডিয়ার অধিকাংশ শেয়ার ক্রয়কারী হচ্ছেন চরমোনাই পীরের দলীয় কর্মী। তাদের দলের নেতৃবৃন্দ যেহেতু এখানে কর্তৃত্ব করছেন তাই স্বাভাবিকভাবেই এখানকার অনিয়মের বিরুদ্ধে তারা উচ্চবাক্য করছে না। যার ফলে বিচ্ছিন্নভাবে যারা এখানে শেয়ার কিনে প্রতারিত হয়েছেন তাদের কথাগুলি কোথাও কেউ লিখছেন না। বলছেন না। কিন্তু কথা হল, কওমি অঙ্গনের এই ধরণের অস্বচ্ছতা এবং দুর্নীতিগ্রস্থ লেনদেন জাতির কাছে কি আমাদেরকে লজ্জিত করবেনা? সততা ও স্বচ্ছতার সাইনবোর্ড লাগিয়ে নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে লুকোচুরি খেললে কি খুব বেশি ইজ্জত বেড়ে যায় আমাদের ?