মঙ্গলবার, ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৩:১৯
Home / প্রতিদিন / নিষিদ্ধ হচ্ছে কোচিং নোট গাইড

নিষিদ্ধ হচ্ছে কোচিং নোট গাইড

কোচিং ব্যবসা, শিক্ষকদের প্রাইভেট পড়ানো এবং নোট ও গাইড বই নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এছাড়া সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে নিয়ন্ত্রণ আরোপ এবং অপ্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধ বা অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত করা হবে। সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টিউশনসহ অন্যান্য ফি আরোপ করতে পারবে না। নকলে সহায়তা বা প্রশ্ন ফাঁসে সহায়তা করলে পেতে হবে শাস্তি। শিক্ষার্থীকে শারীরিক নির্যাতন করলে বেতন বন্ধ বা চাকরি যাবে শিক্ষকের।

এমন বিভিন্ন বিধান রেখে শিক্ষা আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের জন্য শিগগিরই তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, শিক্ষা আইনের খসড়া আমরা প্রায় চূড়ান্ত করেছি। এর ওপর মতামতের জন্য দেড় মাস আগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ফিরলে আমরা তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাব।

এর আগে শিক্ষা আইন মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের জন্য গত বছরের ডিসেম্বরে আরেকবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছিল। তখন কোচিং-প্রাইভেট ও নোট-গাইড বৈধতা দেয়ার মতো বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে- এমন আপত্তি উঠলে সেটি ফেরত আনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মতামত নেয়। প্রস্তাবিত আইনে একটি তফসিলসহ ৫১টি ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ১৩ পৃষ্ঠার এ আইনে শিক্ষার কয়টি স্তর ও কোন স্তরের মেয়াদ কত বছর তা উল্লেখ নেই। গত ডিসেম্বরের খসড়ায় প্রাক-প্রাথমিক (শিশুশিক্ষা) দুই বছর মেয়াদি, চার থেকে ছয় বছর বয়স পর্যন্ত উল্লেখ ছিল। বর্তমান জাতীয় শিক্ষানীতিতে প্রাথমিক শিক্ষা প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণী, মাধ্যমিক শিক্ষা হবে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত। এরপর উচ্চশিক্ষার স্তর।

কোচিং-প্রাইভেট নিষিদ্ধ : আগের খসড়া আইনে কোচিং-প্রাইভেটকে ‘ছায়া শিক্ষা’ নামে উল্লেখ করা হয়েছিল। নতুন খসড়ার ২৪নং ধারার ১নং উপধারায় বলা হয়েছে, এ আইন জারির পর সব ধরনের কোচিং নিষিদ্ধ হবে। যে কোনো প্রকার কোচিং সেন্টার পরিচালনা, কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা শাস্তিযোগ্য হবে। ২নং উপধারায় বলা হয়েছে, শিক্ষক কোনো শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না। ৩ নম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের লিখিত সম্মতি নিয়ে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। ১ নম্বর উপধারা লংঘনে অনধিক ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা ছয় মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। ২ নম্বর উপধারা লংঘন করলে সরকারি শিক্ষকদের বিরুদ্ধে চাকরিবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। বেসরকারি শিক্ষকদের ক্ষেত্রে নিবন্ধন ও এমপিও বাতিল এবং চাকরিচ্যুত করা হবে।

নোট-গাইড নিষিদ্ধ : কোনো ধরনের নোট বা গাইড বই মুদ্রণ, বাঁধাই, প্রকাশ ও বাজারজাত করা দণ্ডণীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে। নোট-গাইড ক্রয় বা পাঠে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বাধ্য করলে বা উৎসাহ দিলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক বা প্রতিষ্ঠানপ্রধান বা ব্যবস্থাপনা কমিটির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিধান লংঘনে অনধিক ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা এক বছর কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে।

অপ্রয়োজনীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হবে : শিক্ষা আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো এলাকায় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার প্রয়োজনীয়তা নাই বলে সরকারের কাছে প্রতীয়মান হলে তা পাশের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত, অন্যত্র স্থাপন বা বিলুপ্ত করতে পারবে। এর আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করে কয়েক বছর পরিচালনার পর সক্ষমতা প্রমাণিত হলে সরকারের স্বীকৃতি মিলত। কিন্তু প্রস্তাবিত আইনে সরকারের পূর্ব অনুমোদন ছাড়া দেশি-বিদেশি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা যাবে না।

এতে নিবন্ধিত সংস্থা, ট্রাস্ট পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিষয়াদি পৃথক ব্যাংক হিসাবে চলবে। কোনো অবস্থায়ই এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের অর্থ ট্রাস্ট বা সংস্থার হিসাবে যাবে না। এতে স্থানান্তরিত অর্থ উদ্ধার এবং এ বিধান লংঘনের জন্য দায়ীদের অনধিক ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা এক বছর কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। কিন্তু বর্তমানে ফাউন্ডেশনের অধীনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের হিড়িক পড়েছে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের বিষয়টি আইনে স্পষ্ট করা হয়নি।

প্রশ্ন ফাঁস : পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনে পরীক্ষার্থীকে সহায়তা করা বা প্রশ্ন ফাঁসের সংশ্লিষ্টতা দণ্ডনীয় অপরাধ হবে। এ বিধান লংঘনে অনধিক ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা ছয় মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে।

আরও যা আছে : প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা বাধ্যতামূলক এবং এটা শিশুর অধিকার। তবে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক বলা হয়নি। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুরা মাতৃভাষায় লেখাপড়া করবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে নিজ নিজ ধর্ম, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাঙালি সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নিজ নিজ সংস্কৃতির বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
মাধ্যমিক শিক্ষার স্তর সরকার নির্ধারণ করবে। এ স্তরে সাধারণ, মাদ্রাসা এবং কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ধারা থাকবে। সব ধারায় বাংলা, ইংরেজি, বাংলাদেশ স্টাডিজ, গণিত ও আইসিটি বাধ্যতামূলক।
বাংলা মাধ্যম ও ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের টিউশনসহ অন্যান্য ফি সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড অনুমোদন দেবে। এছাড়া কোনো ফি নেয়া যাবে না। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফি সরকার প্রণীত আইন/বিধি দ্বারা নির্ধারিত হবে। এ বিধান লংঘন করলে প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন/পাঠদানের অনুমতি বাতিল হবে এবং দায়ীদের অনধিক ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা এক বছর কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে।
উচ্চশিক্ষা স্তরের সব ধরনের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বেতন ও ফি সরকার বা সরকারের নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের থেকে অনুমোদন করে নির্ধারণ করতে হবে। সব শিক্ষার্থী অভিন্ন গ্রেডিং ব্যবস্থায় মূল্যায়িত হবে। শিক্ষক, কর্মচারী ও কর্মকর্তার নিয়োগবিধি থাকবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সব আয়-অনুদান প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে জমা হবে। সরকার নির্ধারিত আর্থিক নীতিমালা অনুযায়ী ব্যয় করতে হবে। এ বিধান লংঘনে অনধিক ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা এক বছর কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে।
খসড়ায় বলা হয়, বিদেশি কারিকুলামের আওতায় পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠ্যক্রমে সাধারণ ধারার সমপর্যায়ের বাংলা, বাংলাদেশের অভ্যুদয়, বাংলাদেশ স্টাডিজ ও সরকার নির্ধারিত বিষয়গুলো বাধ্যতামূলকভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। নইলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাতিল হবে। এ বিধান লংঘন করলে অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড ভোগ করতে হবে। আগের খসড়া থেকে এতে অর্থদণ্ড এক লাখ টাকা কমানো হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীকে কোনোপ্রকার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা যাবে না; করা হলে শিক্ষকের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এজন্য এমপিও বাতিল ও চাকরিচ্যুত করা যাবে। সরকার কওমি মাদ্রাসার মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় নীতিমালা বা বিধিমালা তৈরি করবে বলে খসড়ায় উল্লেখ আছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। -যুগান্তর

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...