মঙ্গলবার, ১৮ই মার্চ, ২০২৫ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ৪:০২
Home / অনুসন্ধান / বিশ্বজয়ী কুরআনে হাফিজরা তলিয়ে যায় কেন বিস্মৃতির অতল গহ্বরে?

বিশ্বজয়ী কুরআনে হাফিজরা তলিয়ে যায় কেন বিস্মৃতির অতল গহ্বরে?

খতিব তাজুল ইসলাম::

কুমিল্লার ছেলে বিশ্বজয়ী হাফিজ তরিকুল ইসলাম।

গত বছরের আগের বছর থেকে বিষয়টা আমার গোচরিভুত হয়। যখন দেখলাম নাজমুস সাকিবকে নিয়ে দেশের বিভিন্ন জাগায় নিয়ে তিলাওয়াত করানো হচ্ছে। হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে হাদিয়া। আমি বলেছিলাম যে, নিয়মিত লেখাপড়া ছেড়ে ছেলেটি এভাবে ওয়াজের পিছনে দৌড়াতে থাকলে তার বারটা নয় লেখাপড়ার তেরটা বেজে যাবে। অনেকে অমত পোষণ করেছেন। ভিন্ন ভাবে আমাকে দু কথা শুনিয়ে দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেননি। পরে দেখলাম তাকে লন্ডন পর্যন্ত নিয়ে আসা হয়েছে। তালে তালে মাহফিল। হল হায়ার করে মাহফিল। নাজমুস সাকিব সাহেব আসবেন। লোক দলে দলে যোগদান করে। এসে বসে সামান্য কিছু তিলাওয়াত শোনলো। তাকে কিছু বলার জন্য বললে সে শিশু মানুষ কি আর বলবে। শুরু হতো হাফিজ বানানোর কালেকশন। টাকা দেন পাউন্ট দেন…। মানুষকে তারা কত বোকা ভাবে! আসলে কি তাই? হাফিজ আব্দুল হাফিজ সাহেব শাহবাগী পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে নিয়ে যান। সত্য মিথ্যা জানিনা। শেষমেষ চাঁদার জমানো টাকা নিয়ে লোকুচুরি খেলা দেশপর্যন্ত গড়িয়েছে। তখন লম্বা একটি কলাম ও লিখেছিলাম যে, দয়া করে এই কিশোরটাকে নিয়ে আর ব্যবসা করবেন না। সে গরিব বা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। পুরস্কারের টাকা পেয়ে কি করেছে জানিনা তবে তা তার লেখপড়ায় ইনভেস্ট করা ভাল। সাকিবের ভবিষ্যত নিয়ে আশংকা প্রকাশ করেছি। তাকে নিয়ে যারা ঘুরে তাদের উদ্দেশ্যও খারাপ। তাহলে যারা গান গায় দেশে দেশে ঘুরায় আর ভক্তের টাকা কুড়ে খায় তাদের মাঝের ফারাক থাকলো কই?
বিশ্ববিজয়ী হাফেজ যারা তৈরি করেন তাদের সুনামের সাথে বদনামও এখন বিস্তর। মানুষের কাছ হতে কাড়ি কাড়ি টাকা নিয়ে বিশ্বজয়ের নেশায় শিশুদের পবিত্র কুরআন মুখস্থ করাচেছন। তারা শেখাচ্ছেন কিছু টেকনিক। প্রতিযোগিতার আয়োজকদের সাথে নিয়মিত যোযযোগ। আয়োজকের ডাক পড়লেই তারা সেখানে মেধাবী হাফিজদের নিয়ে হাজির। দেশ বিদেশের কানেকশন টিকেট পাসপোর্ট সবই তারা তড়িত আদায় করেনেন। কথা হলো হাফেজি মাদ্রাসার উদ্দেশ্য কি শুধু বিশ্বজয়ী হাফেজ তৈরি করা? মূলতঃ এখানে আছে নিয়তে গড়বড়। হুফফাজ ফউন্ডেশনের কোন হাফিজের ভবিষ্যত বলতে কিছু নেই। কিড়মিড় করে মুখস্থ করিয়ে প্রতিযোগিতার উপযোগী করে তুলা। ধরে নিলাম এই টেকনিকও একটি শিল্প। তারা এই বিভাগের পারদর্শি। সুন্দর লেহেনের হাফিজ তৈরি করছেন। বিশ্বব্যাপী পবিত্র কোরআনের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলছেন। বিভিন্ন দেশের হাফেজরা আসেন। কমপিটিশনে হার জিত আছে। বাংলাদেশের জন্য এটা একটা বিরাট অর্জন। কুরআনের চর্চা যে এদেশে খুব ভাল হয় তার একটা প্রমাণ বলা যায়। কিন্তু সত্যিই কি তাই? ১৭কোটি বাংলাদেশিরদের মধ্যে কত পার্সেন্ট এখন কোরআন চর্চা করে? প্রতিটি প্রাইমারি ও হাইস্কুলে কি কোরআন চর্চা হয়? মাত্র ৫% ছেলে মেয়েরা শুদ্ধ করে তিলাওয়াত জানে। বাকি ৯৫% শিশু কিশোর যুবক বুড়ো সহীহ করে পড়তে পারেনা। সে হিসাবে জাতীয় ভাবে কোরআন চর্চায় আমরা খুব পিছিয়ে। কেন পিছিয়ে তার কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। বাংলাদেশে ভাবটা এমন যে, গরীব এতীম অসহায়দের জন্য কেবল কোরআনের শিক্ষা। আবার কোরআনের শিক্ষার মাঝে শুধু মুখস্থ এতটুকু। যারা মক্তবে পড়ে স্কুলে চলে যায় তাদের জীবেন কোরআন জানা ও বুঝার আর কোনো সুযোগ নেই। মাদ্রাসায় যারা পড়ে তাদের ১৪ থেকে ১৬ বছর লাগে কেবল তরজমা শিখতে। আমি মনেকরি ইহা একটি ভয়াবহ খারাপ অবস্থা। পবিত্র কোরআন শিক্ষার পাইলট একটি স্কীম আমাদের হাতে নিতে হবে। আরবিকে নিজের ভাষার মতো আয়ত্বে আনার কৌশল প্রয়োগ করতে হবে। বিলেতে প্রতিটি স্কুলের শিশুরা ইংরেজি ছাড়াও আরো দু তিনটি ভাষা তারা ভাল করে শিখে। তাহলে মুসলমানদের দেশে কেন শিশুরা আরবি ভাষা শিখতে পারেনা। এই না পারার কারণ আমাদের কমজুর শিক্ষাপদ্ধতি।
যারা বিশ্বজয়ী হাফেজ বানাচ্ছেন তাদের বলবো শুধু মুখস্থ বিদ্যায় তাদের না রেখে একাডেমিক শিক্ষায়ও যোগ্য করে গড়ে তুলুন। বিশেষ করে প্রাইমারির বয়স হলে প্রাইমারির এবং মাধ্যমিকের বয়স হলে মাধ্যমিকের শিক্ষাটা যাতে পায় সেই উপায়টা যেন থাকে। আগামিতে যদি আয়োজকগণ একটি শর্ত জুড়ে দেন যে পবিত্র কোরআন মুখস্থের সাথে সাধারণ আরবী ভাষা জ্ঞান থাকতে হবে। তখন কিন্তু হুফ্ফাজ ফাউন্ডেশন সহ সকলের পাজামা ঢিলা হয়ে যাবে। আমি আশা করবো ভবিষ্যতে যেন তারা তাই করে। তাতে কোন কাজ হউক বা না হউক আরবি ভাষা শিখাটা অনেক আগাইয়া যাবে।
টাকার পিছনে দৌড়ানোর কাহিনী!
টাকার পিছনে কে নাই? পীর বুজুর্গ ওলি আলেম উলামা খুতাবা আল্লামা ওয়াইজ সকলের টাকার প্রয়োজন। হুফ্ফাজ ফাউন্ডেশন তারা একটি বিষয়ে পারদর্শি হয়েছে তাতে তাদের বাহবা দিই। পরবর্তি কাজটা করার জন্য কেউ এগিয়ে আসেন না কেন? প্রশ্ন হলো ছেলেটি যখন হাফিজ হয় তখন একমাত্র পবিত্র কোরআন মুখস্থ জ্ঞান ছাড়া তাকে আর কোনো জ্ঞান দেয়া হয়না। জানিনা তার কোনো প্রয়োজন তারা মনে করেন কি না জানিনা। এখানেই সে থমকে যায়। যারা বিশ্বজয়ী হলোনা। বিরাট পুরুস্কার পেলনা তাদের জীবনের উপায় কি? গলদটা এখানেই। দেশে বিরাজ করছে বিশৃংখল শিক্ষার পরিবেশ। একদিকে স্কুল শিক্ষা যেখানে কোরআনের নাম গন্ধ নেই। অপরদিকে আলিয়া যেখানে আছে নামের চর্চা। আর কওমিতে পড়ালেখা করে যা শিখার সে মনে করে শিখে ফেলেছে। কোরআন মুখস্থ আর কি চাই? বিষয়টা একটা ফটকাবাজির দিকে আমরা নিয়ে যাচ্ছি। এই সমস্ত টেলেন্টদের নিয়ে ভাবা গবেষণা করা। তাদের আগাইয়া দেয়ার মতো কেনো প্লাটফর্ম আছে কি? যে টেলেন্ট নিয়ে বিশ্বজয় করেছে পরবর্তি দাফে বিশ্বজয় সে কি দিয়ে করবে বলুনতো? অনেকে বলছেন আলেম হয়ে! আচ্ছা কিভাবে আলেম হয়ে বিশ্বপ্রতিযোগিতার মুকুটটি ছিনিয়ে আনবে? আমাদের কওমি বলেন আর আলিয়া সেখানে কি বিশ্বমানের লেখাপড়া হয়? বিশ্ব যদি জানতো যে, বাংলাদেশের কোরআন বিশেষজ্ঞদের দৌড় কেবল মুখস্থ বিদ্যা পর্যন্ত তখন তারা হতাশই হবে।
তাই আসুন বিশ্বজয়ের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে এসব টেলেন্টদের জন্য বিশ্বমানের কোরআন ও দ্বীন শিখার মতো পরিবেশ উপযোগী বিদ্যাপিঠের আয়োজন করি।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি কল্যাণ ট্রাস্ট- বাস্তবতা ও প্রয়োজনীয়তা

খতিব তাজুল ইসলাম: ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...