শামস::
বিবর্তনবাদের প্রচারকরা এর প্রচারে উগ্রতার আশ্রয় নিলেও তত্ত্ব হিসেবে বিবর্তনবাদ বেশ উদার, কারণ এর মধ্যে সবকিছুকেই জায়গা দেয়া যায়। ধর্ষণের অসাধারণ ব্যাখ্যা দেয়া হয় বিবর্তনবাদের আলোকে! ধর্ষণ পুনঃউৎপাদনের জন্য খুব কার্যকরী মাধ্যম! অপরদিকে পুনঃউৎপাদনের সহায়ক নয় বরং ক্ষতিকর হয়েও সমকামিতা বিবর্তনবাদে জায়গা করে নেয় অন্যান্য প্রাণী বিশেষ করে প্রাইমেট বা বানরদের আচরণের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে। ইম্পেরিয়াল কলেজের বায়োলজির অধ্যাপক ভিনসেন্ট সাভোলাইনেন বংশবৃদ্ধির অন্তরায় সমকামিতা তাই অভিহিত করেছেন ডারউইনের প্যারাডক্স হিসেবে।
ভোগবাদে সমকামিতা একটি পণ্য, অপরদিকে পশুপাখির আচরণের ধারাবাহিকতায় বিরাজমান একটি শখ! ১৩০ টার মত পাখির মধ্যে (এর মধ্যে লেইসান আলবাট্রসের ৩১% এর মধ্যে মেয়ে-মেয়ে ও গ্রেলাগ গিজ এর ২০% এর মধ্যে ছেলে-ছেলে) সমকামিতার প্রধান কারণ প্যারেন্টিং এর চাহিদা কম থাকা। পরিবার ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতাহীনতা বা এককথায় অসামাজিকতা সমকামিতাকে শখে পরিণত করে। যুক্তরাজ্যের এক্সটার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইভলুশনারী জেনেটিসিস্ট এল্যান মুর মানুষের সমকামীতাকেও সেভাবেই দেখেছেন।
যে তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এখন ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালানো হয় সেই তামাককেই ইউরোপিয়ান ডাক্তাররা (১৫’শো শতকে) মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে ও ক্যান্সারের নিরাময়কল্পে সেবন করার পরামর্শ দিতো। তাছাড়া আমেরিকান গৃহযুদ্ধের সময় তামাক চাষে উৎসাহ দান করা হতো, কারণ এই তামাক চাষের দ্বারা তারা ফরাসীদের কাছ থেকে করা ঋণ পরিশোধ করতে পারত। তামাক ব্যবসায়ীরাও তাদের ব্যবসাকে নির্ঝঞ্ঝাট রাখতে পেরেছিল শক্তিশালী লবিস্ট গ্রুপদের দ্বারা। আপাত যে তামাককে একসময় উপকারী বলে ধরা হয়েছিল সেটা ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। আবার স্বার্থ হাসিলের জন্য কিংবা ব্যবসায়িক লাভের জন্যও ক্ষতিটাকে ঢাকতে বিভিন্ন ধরণের ব্যাখ্যা দাড় করানো হয়, লবিস্ট গ্রুপকে তাদের পক্ষে প্রচারণা চালানো হয়। এর সাথে যুক্ত হয় ভোগবাদী প্রপাগান্ডা মেশিনগুলো। নগ্নতার মধ্যে যেরকম আধুনিকতা থাকে সমকামিতার পক্ষাবলম্বনের মধ্যেও থাকে সভ্যতার অহমিকা! ফলে এর কিছু প্রচারক ও সমর্থকও আনাচে-কানাচে পাওয়া যায়। গ্লোবাল ওয়ারমিং নিশ্চিত ক্ষতিকর জেনেও শুধুমাত্র ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিলের জন্য এর বিপক্ষে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয় (গ্লোবাল ওয়ার্মিং- সভ্যতার খোলসে অমানবিকতা!) সমকামিতার বিরুদ্ধাচারণকেও এখন পাশ্চাত্য মিডিয়া, একাডেমিক পরিসরে একেবারেই সহ্য করা হয় না! অথচ ১৯৭৩ সালের আগে একে মানসিক অসুস্থতা হিসেবেই দেখা হতো। ১৯৭৩ সালে আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল এসোসিয়েশন (APA) সমকামীতাকে মানসিক অসুস্থতা থেকে অব্যহতি দেয়।
তাহলে দেখা যাক সমকামীতার সাথে স্বাভাবিক যৌন জীবণের তুলনামূলক চিত্রটি কেমন:
১. সমকামিতার সমর্থনে যে পশুপাখির সমকামিতার দোহাই দেয়া হয় তাতে ঘাপলা আছে। দেখা গেছে পিতামাতার সান্নিধ্য কম থাকা পশুপাখিদের সমকামিতার অন্যতম একটি কারণ। একজন সমকামি পুরুষ মানুষের সন্তানের গে হবার সম্ভবনা যেখানে ২০ ভাগ যেখানে স্বাভাবিক হার মাত্র ২-৪%।
২. ইন্টারনেশনাল জার্নাল ও এপিডিওলজিতে প্রকাশিত ১৯৮৭ এর শেষ দিকে এবং ১৯৯২ এর প্রথম দিকে এক জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে সমকামী ও উভকামীরা অস্বাস্থ্যকর জীবণযাপন করে এবং তাদের গড় আয়ু স্বাভাবিকের চেয়ে কম।
৩. ইস্টার্ণ সাইকোলজিক্যাল এসোসিয়েশনে প্রকাশিত “Federal distortion of the homosexual footprint” এ ড: পল ক্যামেরুন দেখিয়েছেন পুরুষ ও মেয়ের বিবাহসম্পর্ক আয়ুষ্কাল বাড়িয়ে দেয় যেখানে সমকামিদের ক্ষেত্রে আয়ুষ্কাল ২৪ বছর কম। পল ক্যামেরুন ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল, কানাডিয়ান মেডিক্যাল এসোসিয়েশন জার্নাল, পোস্টগ্রাজুয়েট মেডিক্যাল জার্নাল এর সম্পাদনা করে থাকেন। তার নিজের ৪০ টার মত আর্টিকেল আছে সমকামিতার উপর। ১৯৯০ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে ডেনমাকর্কে স্বাভাবিক যৌনাচারীর গড় আয়ু যেখানে পাওয়া গেছে ৭৪, সেখানে ৫৬১ গে পার্টনার এর গড় আয়ু পাওয়া যায় ৫১! সমকামী মহিলাদের ক্ষেত্রেও এই গড় আয়ুর হার কম, আনুমানিক ২০ বছর কম! অপরদিকে ধুমপায়ীদের ক্ষেত্রে এই আয়ুষ্কাল কমে যাবার হার মাত্র ১ থেকে ৭ বছর!
৪. স্বাভাবিক যৌনাচারের চেয়ে সমকামিদের অবসাদ ও ড্রাগে আসক্তির সম্ভবনা প্রায় ৫০গুন বেশী। তাছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে সমকামিদের মধ্যে আত্নহত্যার প্রবণতা ২০০গুণ বেশী। সমকামি পুরুষদের মধ্যে এই প্রবণতা আরো বেশী। সমকামি লেসবিয়ান, গে ও উভকামিদের মধ্যে নিজেদের ক্ষতি করার প্রবণতাও থাকে বেশী।
৫. সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল ও প্রিভেনশন এর মতে সমকামিদের মধ্যে এইডস নামক রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভবনা সবচেয়ে বেশী। ২০০৬ সালে এক জরিপে দেখা গেছে ৫৬০০০ নতুন এইচ আই ভি আক্রান্তের মধ্যে ৫৩% গে অথবা সমকামি। তাছাড়া গে’দের মধ্যে যারা এইডসে আক্রান্ত তাদের মৃত্যুঝুঁকি অন্যন্য এইডস আক্রান্তদের থেকে ১৩গুন বেশী।
৬. সমকামিতা সিফিলিস এর মত রোগ ছড়াতেও ব্যাপকভাবে দায়ী। যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটাতে ২০০৮ সালে সিফিলিস ৪০ভাগ বেড়ে যাবার কারণ উদঘাটনে সমকামিতার সম্পর্ককে পাওয়া যায়। ২০০৮ সালে মিনেসোটার ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ এ ১৫৯ টি সিফিলিস এর ঘটনা পাওয়া যায়, এর মধ্যে ১৫৪টিই ঘটে পুরুষের মধ্যে আর এর মধ্যে ১৩৪ জনই আরেকজন পুরুষের সাথে যৌনক্রিয়া করেছে বলে স্বীকার করে।
৭. কিছু কিছু রোগ আবার ‘গে রোগ’ নামের খ্যাতি ইতিমধ্যেই পেয়ে গেছে, এরকই একটি হল ‘স্টাপ স্টেইন’. একসময় ধারণা করা হয়েছিল এটা সাধারণ জনগণের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
৮. সমকামিতা যৌনবাহিত আরো অনেক রোগের প্রসার ঘটানোর জন্য দায়ী। কারণটা উদ্ঘাটনে দেখা গেছে, ২৪ ভাগ গে’র গড়ে পার্টনারের সখ্যা ১০০, ৪৩ ভাগ গে’এর পার্টনার ৫০০’রও বেশী, ২৮ ভাগ গে’এর পার্টনার ১০০০ এরও বেশী।
সমকামিতা বিবর্তনবাদের দোহাই দিয়ে একাডেমিক লেভেলে এক ধরণের প্রশ্রয় পায়। কিন্তু সেসব গবেষণায় যে জরিপের ডাটা ব্যবহার করা হয় সেগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ থাকে। সমকামিদের সমানাধিকারের পক্ষে প্রচার চালানো যুক্তরাজ্যের গ্রিফিথ ভন উইলিয়াম থেকে জানা যায় সমকামিদের নিয়ে গবেষণায় সমকামীরা স্বেচ্ছায় সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকে। তাছাড়া ১৯৯৩ সালে চালানো গবেষণায় সমকামিতার জন্য জিনের সাথে যে সংযোগ দেখানো হয়, নতুন গবেষণায় তা মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়। অথচ সমকামিতার ব্যাপারে জিনের ভুমিকাকে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ বলে ধরা হত।
অনেক বিজ্ঞানী গে জিন পাবার ব্যাপারে দাবীও করেছিলেন। কিন্তু দেখা যায় তাদের সেসব দাবী শেষপর্যন্ত অসার বলেই প্রতীয়মান হয়েছে। সমকামিতা যদি জিনগতই হবে তাহলে সমকামি পুরুষ ও মহিলার যমজ সন্তানদের ১০০ ভাগ সমকামি হবার কথা। অথচ যমজ সন্তানদের উপর গবেষণার চিত্র থেকে এটা ভুল বলেই প্রতীয়মান হয়। অনেক গবেষণায় আবার এভাবে দেখানো হয় যে সমকামি সন্তান জন্মদানকারী মা সন্তান জন্ম দেয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশী উর্বর হয়। কিন্ত গবেষকরা এও স্বীকার করেছেন যে এটা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়। আর তাছাড়া সমকামিতার কারণ উদঘাটনে এই প্রচেষ্টা যদি পুনঃগবেষণা দ্বারা প্রমাণিত হয়ও তার হার খুব কম। পরে ২০০২ সালে নাফিল্ড কাউন্সিল অব বায়োএথিক্স জিন ও আচরণ নিয়ে তাদের রিপোর্টে, লিঙ্গ নির্ধারণে জিন ও জীববিজ্ঞানের গবেষণা নিয়ে সমস্যার কথা স্বীকার করে এবং গবেষণাকে সতর্কতার সাথে দেখা উচিত বলে মতামত দেন।
দূ:খজনকভাবে পাশ্চাত্য মিডিয়ায় সমকামিতা পক্ষে যে অতিরিক্ত মাতামাতি তার প্রতি পাল্লা দিতে গিয়ে অনেক বিজ্ঞানীই নিজেদের তথ্যকে অনাবশ্যকভাবে হাইলাইট করতে গিয়ে পুরো বিষয়টিকে ভুলভাবে উপস্হাপন করে ফেলছেন। শুধু গে’জীনই নয় সমকামিতাকে মস্তিস্কের কোন অংশের নিউরণের কিছু ভিন্নতা হিসাবে দেখানোর প্রয়াস চালানো হয় যা শেষ পর্যন্ত তা সেরকম সাফল্য পায়নি। এছাড়া সমকামিতার সাথে মাতৃগর্ভকালীন হরমোন নি:সরণের যে যোগসুত্রের প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছিল তাও ঠিক নয় বলে প্রমাণিত হয়।
সমকামীতা একটি অত্যাধিক ভোগবাদিতার উপকরণ। তাছাড়া পরিস্থিতিও এর বিকাশ ও পরিপুষ্ট হবার জন্য দায়ী। স্বাভাবিক যৌনসম্ভোগের উপায় না থাকলে সমকামীতা হয়ে উঠে অপরিহার্য যৌনাচার। সেজন্যই সৈনিকদের মধ্যে এর প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করার মত! ইউএলসিএ এর আইন স্কুলের উইলিয়াম ইনস্টিটিউটের গবেষণালব্দ ফলাফলে জানা যায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে আনুমানিক ৬৬,০০০ সমকামি ও উভকামি আছে! ২০০৯ এর গ্যালপ জরিপেও জানা যায় যুক্তরাষ্ট্রের ৬৯% লোক সমাকামিদের সেনাবাহিনীতে কাজ করাকে সমর্থন করে! ইংল্যান্ডের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানী রবিন ডানবার মনে করেন যুদ্ধ ও শিকারে সমকামিতা পুরুষ গোত্রকে সংগঠিত রাখতে সাহায্য করে। প্রাচীন গ্রীসে স্পার্টানদের এলিট সৈন্যদের মধ্যে সমকামিতাকে উৎসাহিত করা হত। গ্রীক স্পার্টান ছাড়াও অন্য গ্রীক শহর থেবেস, এথেন্সেও সমকামিতার উদাহরণ পাওয়া যায়। থিবেনদের এলিট ফোর্স ৪০ বছর যাবত বিরাজমান ছিল। এছাড়া জাপানিজ সামুরাইদের মধ্যেও সমকামিতার অস্তিত্ব ছিল বলে জানা যায়। কির্কপ্যাট্রিকও ম্যালানেশিয়ার সাম্বিয়া উপজাতিদের মধ্যেও এই সমকামিদের প্রমাণ পাওয়া যায়। সাম্বিয়ারা প্রতিবেশী গোত্রগুলোর সাথে প্রায়ই যুদ্ধবিবাদে জড়িয়ে পড়ত আর তা করত শত্রুপক্ষের মাথার খুলি সংগ্রহের জন্য। সৈন্যদের মধ্যে সমকামিতা তাদের বন্ধনকে মজবুত করত যা তাদের প্রতিরক্ষার জন্য ছিল খুব গুরুত্বপুর্ণ। তবে প্রফেসর ডানবার সত্য কথাটি বলতে ভুলেননি যে সমকামিতা রাজনীতির প্যাচে আটকে আছে যাকে যাকে আরো গবেষণার মাধ্যমে অবমুক্ত করা প্রয়োজন।