১- শাহ আবদুস সালাম ছালিক::
বেফাক এর যুগ্মমহাসচিব, মালিবাগ জামিয়া’র সিনিয়র মুহাদ্দিস, বিশিষ্ঠ লেখক “আল্লামা আবুল ফাতাহ মোঃ ইয়াহইয়া সাহেব ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে আছেন। উনার ছোট ভাই, লালবাগ জামিয়ার মুহাদ্দিস মুফতী তৈয়্যেব হোসাইন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
হযরতের সূস্হতা কামনায় সকলই দোয়া করি।
২- সমীউর রাহমান মুসা::
ইলমে দ্বিনের আকাশ থেকে ঝরে গেল আর ও একটি নক্ষত্র ঢাকা মালিবাগ জামিয়ার প্রবীণ মুহাদ্দিস, বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের যুগ্মমহাসচিব আল্লামা আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আর নেই। তিনি আজ সকালে কাকরাইল ইসলামি ব্যাংক হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
৩- কবি মুসা আল হাফিজ::
শায়খ আবুল ফাতাহ ইয়াহইয়া ( রাহ)!
আপনার মনে বহু বেদনা ছিলো হে প্রিয়,হে দরদী! আপনার চেতনায় দাহ ছিলো,চোখে অশ্রু ছিলো,তপ্ত দীর্ঘশ্বাস ছিলো, শুন্যতা পূরণের অনবরত প্রয়াস ছিলো।আমি আপনাকে ভালোবাসতাম,ভালোবাসি। সময়কে সবচে’ ভালো পন্থায় কাজে লাগিয়ে আপনি সফর শেষ করেছেন। আমার জন্য আপনার মহব্বত এবং দোয়া ছিলো,এটা আমার কম পাওয়া নয়।শেষ বিদায়ের আগে আপনার সাথে দেখা করবো,করবো বলে করা হলো না।আফসোস! আপনাকে চিনেনি আপনার সমাজ,বুঝেনি আপনার বেদনা।করার কিছুই নেই।এখানে এমনই হয়,এখানে এমনই হয়েছে, এখানে এমনই হয়ে চলছে।
হে বরেণ্য! ইর্ষা হয় আপনার প্রতি।কাজ করে করে নিরবে চলে গেছেন। হিংসা,কুৎসা, মিথ্যা, প্রোপাগান্ডা, প্রিয়দের আঘাত আর জখমের এই বৃহৎ বিরান ভূমি থেকে চলে গেছেন।এখান থেকে চলে যাওয়ার ডাক পাওয়াই এক সময় প্রতীক্ষার বিষয় হয়ে উঠে।আপনাকে সেই প্রতীক্ষা বেশি দিন করতে হয়নি।
প্রিয়!
আমি জানতাম আপনার লালনীল স্বপ্নগুলোর কথা। জানতাম, আপনার মঞ্জিল।কতো পুষ্প দিয়ে আপনি সাজিয়েছিলেন ব্যথাগুলোকে? কতো রঙধণু দিয়ে রাঙিয়েছিলেন দরদগুলোকে? রক্তক্ষরণ আপনাকে আরো প্রদীপ্ত করতো।কোথায় পেতেন এতো প্রাণশক্তি? ইর্ষা হতো, মুহতারাম,ইর্ষা হতো।
আল্লাহ আপনাকে শেষ ঠিকানায় আরামে রাখুন। রাখুন প্রেমের মাধুরিতে,নিরুপদ্রব স্বপ্নের মৌতাতে। আহা! সেই ঠিকানা।দিন দিন আরো বেশি কাম্য হয়ে উঠছে।
৪- Mohammad Shamsul Hoque Siddique ::
ببالغ الحزن والأسى تنعى مجموعة بنغلاديش العربية وفاة العالم الشرعي الجليل الأستاذ أبو الفتح محمد يحيى الذي كان مربيا فاضلا وباحثاً قديراً أنتج العديد من الأبحاث العلمية المعمقة في مجال الاقتصاد الإسلامي ، وعلوم الحديث والسياسية الشرعية. فقد كان رحمه الله صاحب فكر وثاب ينفذ به إلى الأعماق فيفهم الواقع المعاش من خلال تمحيصه للماضي البعيد ولمِّ الشتات. فبوفاته فقدت الأوساط الشرعية وعائلة التعليم القومي ببنغلاديش واحدا من منتجي المعرفة، ورمزا من رموز الفكر الإسلامي المستنير.
تغمده الله بواسع رحمته وأسكنه فسيح جناته وألهم أهله وذويه الصبر والسلوان. وإنا لله وإنا إليه راجعون.
৫- মুফতী ফয়জুল্লাহ::
মাওলানা আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া রহ
“আলোর মিনার
আল্লামা আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া রহ.
রফীকে আ’লা’র ডাকে সাড়া দিয়েছেন।
ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউ’ন।
বাদ এশা মালিবাগ মাদ্রাসায় নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
গবেষক, দেশবরেন্য ইসলামী চিন্তাবিদ, বহু অবিস্মরণীয় গ্রন্থ প্রণেতা, জামিয়া মালিবাগের নন্দিত, বিদগ্ধ, প্রবীণ মুহাদ্দিস,বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার সহকারি মহাসচিব, হক ও হক্কানিয়তের পতাকাবাহী, খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ, ঐতিহাসিক, বর্ষীয়ান আলেমেদ্বীন আল্লামা আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া সাহেব রহ. আজ (২০/০৫/২০১৭) সকাল সাড়ে দশটার দিকে ঢাকার একটি হাসপাতালে মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়েছেন। ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউ’ন।
গবেষক,ক্ষণজন্মা, বিচক্ষণ, চিন্তাশীল, রসবোধসম্পন্ন, আমাদের অত্যন্ত আপনজন, শ্রদ্ধাস্পদ, আল্লামা আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া সাহেব রহ.ভয় ভীতি বিদায় করে ঈমানী বলে বলীয়ান হয়ে ন্যায়, ইনসাফ ও সত্যের পক্ষে কথা বলার প্রশিক্ষন দিতেন। ঐতিহাসিক সব বিষয় নিয়ে আসতেন কথায় কথায়।
কওমি মাদরাসা শিক্ষাধারার এই মেধাবী আলেম আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইসলামি অর্থনীতির আধুনিক রূপায়ন দেওবন্দের ইতিহাস ঐতিহ্য ও অবদানসহ অনকেগুলো গবেষণাগ্রন্থের লেখক।
বেফাক প্রকাশিত অনেক গ্রন্থ ও বেফাকের বহু পাঠ্য বইয়ের সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বেফাকের নতুন সিলেবাস প্রণয়নসহ বেফাকের আজকের এই অবস্থানের পেছনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
তিনি লালবাগ জামেয়ার মুহাদ্দিস, ইসলামী ঐক্যজোটের যুগ্ম মহাসচিব, খ্যাতিমান আলেম ও লেখক, মুফতী তৈয়্যেব হোসাইন এর বড় ভাই। আমরা তাঁকে বড় ভাই বলেই ডাকতাম। আমাদের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তাঁর সাথে পরামর্শ করেই গ্রহণ করতাম।
সজীব কণ্ঠের অধিকারী, প্রাণবন্ত একজন মানুষ ছিলেন তিনি। যিনি আমাদের পেলে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠতেন, স্নেহ আর মমতায় বুকে টেনে নিতেন, দু’আ দিতেন, অভয় দিতেন, অনুপ্রাণিত করতেন, পরামর্শ দিতেন, শান্তনা দিতেন, সাহস দিতেন, অনুপ্রেরণা যোগাতেন, উদ্বুদ্ধ করতেন, উজ্জীবিত করতেন, মায়া-মমতা, ভালবাসায় আপন করে নিতেন, কাছে টানতেন। দুনিয়ার অন্যতম এই নকীব আজ নেই। তিনি নেই বলতেই বুকটা হাহাকার করে উঠে।
একে একে সবাই চলে যাচ্ছেন। এ মনিষীকে বছরের পর বছর দেখেছি। কথা বলায়, পথচলায়, দ্বীনের জন্য রাজপথে। সব দিকে এখন শুন্য শুন্য লাগে। মনে হাহাকার জাগে। ভয় হয়,বড় ভয় হয়। বেদনায় নীল হয়ে যায় হৃদয়। তাঁর কথা মনে হলে মুহূর্তেই বাঁধা টপকাতে চায় দুটি চোখ। তিনি জান্নাতুল ফেরদাওসবাসী হোন মহান রবের করুণাছায়ায়।
হযরত মরহুম রহ.’র জন্য আমি মহান আল্লাহর শাহী দরবারে বিনম্র ফরিয়াদ করছি, আল্লাহ!আপনি আপনার এই প্রতিবাদী,সাহসী, মুখলিস আলেম বান্দাহকে আপনার রহমতের শীতল চাদরে আবৃত করে চিরস্থায়ী জান্নাতের মেহমান করে নিন। আমীন।
আল্লামা আল্লামা আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া সাহেব রহ.’র ইন্তেকালে আমি গভীর ভাবে শোকাহত। আমি তাঁর মাগফিরাত কামনা করছি এবং হযরত মরহুমের শোক সন্তপ্ত পরিবার, আত্মীয়,স্বজন, তাঁর ছাত্র এবং শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমাবেদনা জানাচ্ছি।”
৬- ওয়ালীউল্লাহ আরমান::
মাওলানা আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া রহ
“হজরত মাওলানা আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া: আমাদের মনের মণিকোঠায় চিরস্মরণীয় হয়ে রইবেন
নব্বই দশকে ঢাকায় লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন মেধাবৃত্তিক কাজে প্রথমসারির দুটি নাম ছিলো মালিবাগ এবং চৌধুরীপাড়া মাদরাসা৷ চৌধুরীপাড়ার খ্যাতি মূলতই হজরত মাওলানা ইসহাক ফরিদী রহঃ কে ঘিরে৷ মালিবাগ মাদরাসার সুখ্যাতির পেছনে অনেকগুলো নাম৷ আল্লামা কাজী মু’তাসিম বিল্লাহ রহঃ এর নেতৃত্বে সর্বগূণে গূণান্বিত একঝাঁক প্রখর মেধাবী আলেম৷ কিতাবী যোগ্যতার পাশাপাশি মাতৃভাষা বাংলায় তাদের চমৎকারিত্ব চুম্বকের মতো টানতো ছাত্রদেরকে৷
দুচোখে আকাশছোঁয়ার স্বপ্ন নিয়ে দেশের সবচে মেধাবী মাদরাসা পড়ুয়ারা মালিবাগে ভর্তির সুযোগ পেতো৷ একঝাঁক পরশপাথরতুল্য উস্তাযের নিবিড় পরিচর্যায় তারা একেকজন ইলম, আমল, লেখনি এবং বাকপটুতায় ইর্ষণীয় যোগ্যতার চূড়ায় পৌঁছে যেতো৷ পরশপাথরের মাঝে মাওলানা আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া সাহেবের নাম আলাদাভাবে উচ্চারিত হতো৷
২০০১-এর অক্টোবরে ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ এর আয়োজনে তিনদিন ব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালায় মুখ্য আলোচক হিসেবে তিনি দুটি সেশনে আলোচনা পেশ করেন৷ আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো সেগুলো মনের মাঝে গেঁথে নিই৷ সময়ক্রমায় বিভিন্ন সময় মুহতারামের কাছে গিয়ে উপকৃত হবার মওকা মেলে৷
একদশক পূর্বে নতুনবাগ জামিয়ায় শিক্ষকতা জীবনের প্রথম বছরেই তার লিখিত ‘দেওবন্দ আন্দোলন: ইতিহাস, ঐতিহ্য অবদান’ বইটি পড়ানোর দায়িত্ব পাই৷ তিনি নতুনবাগ জামিয়ার অন্যতম মুরব্বী এবং মিশকাত শরীফের উস্তায হিসেবে মাঝেমাঝে মাদরাসায় আসেন, আমিও তার সাহচর্যে নানাবিষয়ে জ্ঞানার্জনে নিজ ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করার উপলক্ষ পাই৷
বেফাকের সাধারণ পাঠ্যসূচী এবং মুদ্রিত বইয়ের অসংগতি ও দুর্বলতা প্রসঙ্গে আলাপকালে খোলামনে এমন উৎসাহ ও প্রেরণামূলক কথা বলেন, উপস্থিত সকলকে বিমুগ্ধ করে৷ তিনি আত্মসমালোচনা করে এমনও বলছিলেন, “তরুণ আলেমদেরকে মাতৃভাষা চর্চায় অগ্রসেনানীর কাজ করতে হবে৷”
মুহতারামের সাথে একজন দেওবন্দী আলেমের শতবর্ষ পূর্বে মুদ্রিত একটি বইর পুনঃসম্পাদনা এবং পরিমার্জনার কাজ করার দুর্লভ সুযোগ হয়েছে আমার৷ ওই সময় তার অকপট আচরণ তার প্রতি আমার মুগ্ধতার মাত্রা বহুগূণে বৃদ্ধি করেছে৷ গত দেড়দশকে সাক্ষাত হলে কখনো ‘মাওলানা’ ছাড়া সম্বোধন করেননি৷
তার কাছে আমার কৃতজ্ঞতার আরেকটা বড় কারণ হচ্ছে, ২০০৮ এর সেপ্টেম্বরে ছাত্র জমিয়তের সভাপতি হিসেবে আমার সভাপতিত্বে আরজাবাদ মাদরাসা মিলনায়তনে প্রথম কেন্দ্রীয় তরবিয়তী জলসায় তিনি টানা দুইঘন্টা আলোচনা এবং প্রশ্নোত্তরপর্বে অংশ নেন৷ তার লেখা অনেকগুলো ইসলামী ছাত্র সংগঠনে সিলেবাস হিসেবে পড়ানো হয়৷
ইলমে হাদীসের পাশাপাশি অর্থনীতি, বিচারব্যবস্থা, রাষ্ট্র বিজ্ঞান প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গবেষণাধর্মী এবং তত্ত্ব ও তথ্যবহুল অসাধারণ কিছু বই তিনি লিখেছেন৷ যা তাকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে৷
আজ তিনি মাওলায়ে কারীমের ডাকে দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন৷ আমার স্মৃতিপটে আঁকা ইতিহাসের পাতাগুলো একে একে সামনে আসছে, আর তার প্রতি সম্মান ও কৃতজ্ঞতায় মাথা নুয়ে আসছে৷ আল্লাহ তাকে জান্নাতে উঁচু মর্যাদা দেন, সেই মিনতি করি কায়মনোবাক্যে৷ ”
৭- শাকির ইহতিশাম::
মাওলানা আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া রহ
“জানিস, আমি গত বিশ বছর কাউকে জেনেশুনে কষ্ট দেইনি এবং কারো হকও নষ্ট করিনি।
হুজুর নিজেই আল্লামা লকবটি পছন্দ করতেন। কেন করতেন জানি না। ক্লাসে সব ইমামদের মতামত ব্যাখ্যার পরও চোখ টিপ দিয়ে, অদ্ভুত মুচকি হেসে হুজুর বলতেন, এটা আল্লামার নিজস্ব মত।
লাজনাতুত ত্বলাবা নিয়ে হুজুরের স্বপ্ন আর মেহনতের কথা আমাদেরকে প্রায়ই বলতেন। বলতেন স্বপ্নভঙ্গের নিদারুণ হাকিকতও।
প্রায়ই আক্ষেপ করতেন, ইসহাক ফরিদী বেঁচে থাকলে আমাদের স্বপ্নটা হয়তো পূর্ণতা পেতো। আমি একা হয়ে গিয়েছি।
দরসে ইচ্ছে করেই আধুনিক নানা বিষয়ের অবতারণা করতাম আমরা। কখন যে সময় শেষ হয়ে যেতো, টের পেতাম না। এমনও হয়েছে, হুজুর একই বিষয়ে তিনঘণ্টা দরসে আলোচনা করেছেন। খেলাফত, রাজতন্ত্র এবং গণতন্ত্র নিয়ে বিস্তর আলোচনা তো এখনো কানে বাজে।
বলতেন, কী-সব কিতাব পড়িস তোরা। মাসআলার কোন উপমাই তো এ যমানায় এসে বুঝার উপায় নেই। তাই হুজুর মাসআলার সব’চে আধুনিক উপমাটাই প্রদান করতেন।
একজন লেখক-গবেষক হিসেবে হুজুরের পরিকল্পনা ছিলো, সচরাচর আলেমরা যে বিষয়ে কলম ধরেন না, সে বিষয়ে তিনি লেখবেন। তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, আইন-আদালত, ইতিহাস, হাদীসের মূলনীতি, তাসাউফের নিগূঢ়তত্ত্ব নিয়ে, এমনকী জীবনের বিশেষ দিক নিয়েও হুজুরের গবেষণাধর্মী গ্রন্থ দেখা যায়। অবসরে লেখতেন কবিতাও।
বলতেন, এখন তো ছেলেরা না পড়েই লেখালেখিতে আসে। অথচ আমার এমনও হয়েছে, একপৃষ্ঠা লেখতে এক হাজার পৃষ্ঠা পড়তে হয়েছে।
হেসে মন্তব্য করতেন, লেখালেখির শুরুতে নিজের কতো মূল্যবানগ্রন্থ ফাউণ্ডেশনে আল্লামা (হুজুরের উস্তাদকে এ লকবে সম্বোধন করতেন।)-র নামে কোরবান করে দিয়েছি। তোরা এখন, কয়েকটা লেখা জমা হলেই বই বের করতে উদগ্রীব হয়ে যাস।
২০০১ সালে হাইকোর্টের ফতোয়া বিরোধী রায় আলেম- উলামা এবং জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছিলো। সময়ের পরিক্রমায় সে রায় বাতিল হয়। এর পেছনে মূল ভূমিকা ছিলো হুজুরের ফতোয়া-ফিকহ-হাদীস গ্রন্থটি। যা তিনি জুরিদের সামনে পেশ করেন পরিচিতি ও প্রমাণের জন্য। মুফতি আমিনী রহঃ-এর নির্দেশনায় তিনি এটা প্রস্তুত করেন।
তখন পড়তেন ফরিদাবাদ মাদরাসায়। পাঠ্যসূচির সব’চে কঠিন
কিতাব মুখতাসারুল মা’য়ানি পরীক্ষা। হুজুরের পরীক্ষার খাতা আসে তৎকালীন মালিবাগ মাদরাসার মুহতামিম কাজী সাহেব রহঃ-এর কাছে। এতো চমৎকৃত হন খাতা দেখে। বুঝেও ফেলেন, এ ছেলের ভেতর কিছু আছে। তখন থেকে কাজী সাহেবের নজরে নজরে। পরবর্তীতে মালিবাগে দাওরায়ে হাদীস চালু হলে হুজুর ছিলেন প্রথম ব্যাচের ছাত্র।
হুজুরের বাবা ছিলেন, ময়মনসিংহের বড় মাদরাসা জামিয়া ইসলামিয়ার মুহতামিম। হুজুরের বাবা দেওবন্দে পড়ার সময় স্থানীয় এক পাহাড়ে ইবাদাত করাকালে ইয়াহয়া আঃ-এর বুযুর্গির কথা মনে করে আপ্লুত হন। নিয়ত করেন, বড় ছেলের নাম রাখবেন ইয়াহয়া। পরবর্তীতে খুব সচেতন ও উপস্থিত মেধার কারণে উস্তাদ নাম দেন, আবুল ফাতাহ।
হুজুর আমাদেরকে রসিকতাকরে বলতেন, জীবনে অন্যায়ভাবে কারো কাছে নত হইনি। এমনকী পুরো ছাত্রজীবনে আমাকে আটবারের বেশি বিভিন্ন মাদরাসা থেকে ঠুনকো কারনে বহিষ্কার করা হয়েছে। অথচ আমার কোন দোষ আজও পর্যন্ত কেউ খুঁজে পায়নি। হক ও বাস্তব কথা বলার কারনেই আমাকে প্রায়ই এমন দুর্ভোগ পোহাতে হত। এখন তাদের সামনে গেলে আমাকে আসন দেয়ার জন্য নিজেরা প্রতিযোগিতা শুরু করে।
কী আশ্চর্য! আগামিকাল হুজুরের কাছে পড়া মুসলিম শরীফ ২য় খণ্ডের পরীক্ষা।
@ মালিক হুজুরের অনাকাঙ্খিত গোনাহগুলি ক্ষমা করে দিন, কবরকে শীতল করে দিন, জান্নাতে উঁচু মাকাম দান করুন,আমীন!”
৮- আব্দুল্লাহ আল মাসুম::
মাওলানা আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া রহ
“আহ! মালিবাগ জামিয়ার আরো একটি ফুলের বিদায়!
জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ, ঢাকা-১২১৭। বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী মাদ্রাসা। বড়-বড় আলেমদের স্মৃতিবিজাড়িত মাদ্রাসা।
মালিবাগ মাদ্রাসা সত্যিই একটি ‘বাগ’ (বাগান)। বহু ফুলের সমাবেশ ঘটেছে এ ‘বাগে’। ঝরেও গেছে বহু ফুল। এখনও কিছু আছে। সেই ঝরে যাওয়া ফুলের মিছিলে আজ যোগ হল-আরেকটি ফুল।
আল্লামা আবুল ফাতাহ মো.ইয়াহইয়া…রহ.। অ-নে-ক কষ্ট হল। হাত কেঁপে উঠল ‘রহ.’ লিখতে। আজ বেলা সাড়ে দশটায় ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হসপিটালে ইন্তেকাল করেছেন। আজ বাদ ইশা জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগে জানাযা হবে ইনশাআল্লাহ।
একজন সৃজনশীল গবেষক আলেমকে আমরা হারালাম। মানুষ জীবনে একটি পিএইচ.ডি করে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে করে গেছেন বহু পিএইচ.ডি। তাঁর নাামের আগে ‘ড.’ লাগানো হয় না। তবে তিনি সত্যিকার অর্থে একজন ‘ড.’ছিলেন।
চাষ করা ক্ষেতে তিন চাষের বিশ্বাসী ছিলেন না। বরং নতুন ক্ষেতে চাষ করতেন। যেসব বিষয়ে কারো কলম ধরার সুযোগ হয় না। অথচ তা প্রয়োজনীয়। সেসব বিষয়ে তিনি আজীবন লিখে গেছেন।
তিনি তাঁর যুগকে পার করে লিখেছেন। ইসলামী অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি, বিচার নীতি, সমাজ বিজ্ঞান ইত্যাদি জটিল বিষয়ে একশ-দু’শ নয়; ৪০০-৫০০পৃ.ব্যাপি একেকটি গ্রন্থ লিখে গেছেন।
এই মাত্র কিছু দিন আগে, ‘সমাজ বিজ্ঞানের ইসলামী রূপরেখা’ বইটি লেখা সম্পন্ন করেছেন। আল্লাহর শুকর, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বইটির বিভিন্ন রেফারেন্স, তথ্য হুযুর আমাকে বলতেন, আমি সংগ্রহ করে দিতাম।
বইটির প্রথম সূচীগুলো হুযুর আমাকে দিয়ে বলেছিলেন, এই সূচীর উপর আরবী ভাষায় কী কী বই আছে বের করুন। আমি অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে বইটির বেড়ে উঠার বিভিন্ন মুহূর্তের সাথে লেগে থাকতাম। আমার স্বার্থ ছিল, হুযুর থেকে লেখা-লেখির আন্দায শেখা।
একদিন সময় করে লেখা-লেখির কিছু কৌশলও আমাকে বলেছিলেন। বইটির পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত হওয়ার পর আমাকে ও হযরতের ভাই মাও.ফখরুল ইসলাম ভাইকে পুরো বইটি নযরে ছানী করতে দিলেন। মাত্র দুই সপ্তাহ (সম্ভবত) হবে, বইটির উপর দৃষ্টি বুলিয়ে, কাজ শেষ করে হযরতের কাছে পাঠিয়েছি।
আফসোস, হযরত বইটির মুদ্রিত কপি দেখে যেতে পারেননি। আল্লাহ তাআলা হুযুরকে জান্নাতে উঁচু মাকাম নসীব করুন। আমীন।”