কমাশিসা আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: নারীদের অধিকার নিয়ে নতুন এক আদেশের ফলে দ্রুতই বদলাতে শুরু করেছে সৌদি আরবের প্রেক্ষাপট।
ইসলামি শরীয়া অনুযায়ী কোনো বাধা না থাকলে নারীরা সাবালিকা হওয়ার পর স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবেন এই আদেশের ফলে। পুর্বের নিয়মমতো অভিবাবকের অনুমতির অপেক্ষাও করতে হবেনা আর নারীদের। গত বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে সৌদি বাদশাহ সালমানের রাজকীয় আদেশ জারি হয়েছে।
এতদিন কড়া ইসলামিক অনুশাসনে নারীদের আপাদমস্তক পর্দায় ঢেকে রাখার নিয়ম ভেঙ্গে নতুন এই আদেশকে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা ।
সৌদি আরবের নারীদের ভ্রমণ, পড়ালেখা অথবা বিয়ের জন্য পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নিতে হতো। বাবা, স্বামী অথবা ছেলে এই অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। সৌদি আরবের নারী অধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ ছিলো এটা নারীর অধিকার নিশ্চিতের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা। এই বাঁধা পেরুতে রক্ষনশীল সৌদি প্রশাসনের বিরুদ্ধে গোপনে ও প্রকাশ্যে অনেক আন্দোলন হয়েছে এতকাল।
বেশ কিছু ক্ষেত্রে নারীদের ওপর নিয়ন্ত্রণ শিথিল করার উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি আরব। এখন থেকে সরকারি চাকরি, পড়ালেখা ও স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে নারীদের পরিবারের পুরুষ অভিভাবকের অনুমতির প্রয়োজন হবে না।
দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ নতুন একটি ফরমান জারি করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, পড়ালেখা, স্বাস্থ্যসেবা ও সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে নারীদের আর পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নিতে হবে না।
বিশ্বের অন্যতম এই রক্ষণশীল দেশটিতে নারীদের জীবনযাপন করতে হয় পুরুষ অভিভাবকের অধীনে। সেখানে নারীরা গাড়ি চালানোর অনুমতি পায় না। এ ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় পা থেকে মাথা পর্যন্ত কালো কাপড় পরতে হয় নারীদের।
নারী অধিকার বিভিন্ন বিষয়ে মন্ত্রী পরিষদের সাধারণ সচিবালয় কর্তৃক উত্থাপিত ওই প্রস্তাব অনুমোদনের পর সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ ২২ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে উত্তীর্ণ করা সৌদি আরবের ২০৩০ সালের লক্ষ্যের মধ্যে একটি।
স্থানীয় ওকাজ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিউম্যান রাইটস কমিশনের সভাপতি বন্দর বিন মোহাম্মদ আল-আইবান এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, সাধারণ নাগরিকদের প্রতি বাদশাহ সালমানের ভালোবাসার নিদর্শন এটি। সৌদি আরবের জনসংখ্যার অর্ধেক নারীরা সমাজের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের অংশীদারিত্বের মূল্যায়ন অত্যন্ত ইতিবাচক।
আরব নিউজকে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি আরও বলেন, নতুন এই আদেশে পুরুষতান্ত্রিক অভিভাবকত্ব প্রত্যাহার করা হয়েছে। একজন পুরুষের অভিভাবক দাবি করার আইন সংশোধন করা হলো। এতে করে আর শরীয়া আইন নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না; কারণ আমরা পুরোপুরি সক্ষম বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এর আগে ২০১১ সালে সৌদির প্রয়াত বাদশাহ আবদুল্লাহ দেশটির শূরা কাউন্সিলে সরকারি উপদেষ্টা হিসেবে নারীদের নিয়োগের অনুমতি দেওয়ার মধ্য দিয়ে এই প্রবণতা শুরু হয়। সৌদি নারীরা এখন পৌরসভা নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন। এ ছাড়া ছোটখাটো কাজ, আতিথেয়তার কাজ করতে পারেন। ২০১২ সালে সৌদি নারীরা প্রথমবারের মতো অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।