বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৫:৫২
Home / অনুসন্ধান / কওমি স্বীকৃতি ও একটি পর্যালোচনা

কওমি স্বীকৃতি ও একটি পর্যালোচনা

ফারহান আরিফ::

স্বীকৃতি পেয়ে আনন্দিত কওমি ও কওমিপ্রেমী সবাই। দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে ঠিক,আমাদের কাজ আরো বাকি আছে। আমরা এতকাল স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য কেন স্বপ্ন দেখছিলাম,স্বীকৃতিটা কেন আমাদের প্রয়োজন ছিল সেই বিষয়টাও মাথায় রেখে বিচক্ষণতার সহিত স্বীকৃতিকে কাজে লাগিয়ে স্বপ্ন পূরণের পথ প্রশস্ত করতে হবে ধীরে ধীরে। স্বীকৃতি পেয়েছি, এখন আর অন্যরা আমাদেরকে হেয় করতে পারবেনা,আমাদেরকে রাষ্ট্রের কাছে মূল্যহীন সনদের ছাত্র বলতে পারবেনা। শুধু এই বিষয়টাকে এভারেস্ট জয় মনে করলে চলবেনা। এখন আমাদের কাজ হল আগামি শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার  আগে আমাদের সিলেবাস সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া। পরামর্শ স্বরূপ বলতে চাই, তেরো সদস্যবিশিষ্ট্য কমিটিতে এদেশের ইসলামি ও আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষীত কওমিপ্রিয় দুই-তিনজন শিক্ষাবিদককে রাখলে কেমন হয়? যারা স্থান কাল পাত্র বেধে জাগতিক শিক্ষাব্যবস্থার সিলেবাস প্রণয়নে সহায়তা করবেন।যেহেতু কওমিদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল আমাদের স্বকীয়তা অক্ষুণ্ণ রেখে আমাদেরকে স্বীকৃতি দেওয়া হোক, সরকারি কোন প্রকার হস্তক্ষেপ যেন কওমি মাদ্রাসাকে স্পর্শ করতে না পারে।  এই বিষয়ে প্রবল  ইস্তেকামত ও নিজেদের অবস্থান মজবুত  থাকার ফলেই সরকার বাধ্য হয়ে কওমির স্বকীয়তা  অক্ষুণ্ণ রাখার ওয়াদা দিয়ে স্বীকৃতি প্রদান করেছে।
কিন্তু স্বকীয়তার কথা বলে যদি দিলেবাস/পাঠ্যসূচির মধ্যেও কোন প্রকার সংস্কার আমরা না করি তাহলে আমরা আমাদের স্বপ্ন পূরণে কিন্তু ব্যর্থ হব। আমাদের মাথায় থাকতে হবে আমরা কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে স্বীকৃতি এনেছি। মুল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত এই ঘৃণ্য  প্রবাদ থেকে রেহাই পেতে কিন্তু আমরা স্বীকৃতি আনিনি। এদেশের সুনাগরিক হিসাবে  শিক্ষার অধিকার পাওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা পাওয়ারও অধিকার আমরা রাখি। আমরা যদি যোগযোপগী পাঠ্য তালিকা আমাদের কওমি শিক্ষাব্যবস্থায় প্রণয়ন না করি তাহলে কিন্তু ভবিষ্যতে সনদের স্বীকৃতি প্রাপ্ত হলেও সরকারি সুযোগ সুবিধায় সবার থেকে পিছিয়ে থাকতে হবে আমাদেরকে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে যে, কলেজ ইউনিভার্সিটি আর সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার তারতম্য। রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধায় কলেজ ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টরা অগ্রাধিকার পায় আগে, আর মাদ্রাসা ওয়ালারা পায় পরে।সব স্তরেই কিন্তু বেশ তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে মনমত ভাল কোন সাব্জেক্ট মিলেনা। সেখানেই যদি এত পার্থক্য চলে , আমাদের বেলায় কি হবে চিন্তা করেছেন? আমরাও এদেশের সুনাগরিক, এদেশে আমাদেরও দখলদারিত্ব আছে,আমাদেরও রাষ্ট্রকর্তৃক সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা ভোগ করার বা পাওয়ার অধিকার আছে। শুধু তাই নয় কওমির এই প্রজন্মও এ ধরনের স্বপ্ন দেখে,যারা নতুন আসবে তারা আমাদের কাছে দাবীই করে ফেলবে যে,আমাদের সরকারি সুযোগ সুবিধা পাওয়ার সুযোগ করে দিন। সুতরাং সোয়া দুইশত বছর পর স্বীকৃতি পাওয়ার পর যদি এদেশের সব ক্ষেত্রে বিচরণ করার ক্ষেত্র তৈরি করতে না পারি এটা হবে আমাদের ভুল সিদ্ধান্ত, যুগ ও সময়ের চাহিদা অনুভব না করতে পারার অদক্ষতা। এখানে আমি কাউকে মোটেই খাটু করছিনা,উদাহরণ দেওয়ার নিমিত্তে আমাকে বলতে হল। আমরা যখন কোর্টকাছারিতে যাই আমাদের চেতনাসম্পন্ন কোন উকিল কোর্টে দাঁড়িয়ে লড়াই করার মত কেউ দেখিনা, মিডিয়াতে কওমির বড় ধরনের কোন সাংবাদিক চোখে পড়েনা, মেডিকেলে যান, সস্ত্রবাহিতে যান কোন ডিপার্টমেন্টই কওমির লোক পাওয়া যায়না। আমরাও চাই কওমি থেকে এই ধরনের লোক বের হোক।

আমরা ধর্ম কর্মের  বাহিরে কোন জিনিস ভাবিনা,অথচ অতীতের সোনালি যুগ তালাশ করলে দেখা যায় রাষ্ট্রীয় পরিচালনা থেকে শুরু করে  সামাজিক,রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক,সর্বক্ষেত্রে মুসলমানরা সমান ভাবে অবদান রেখেছেন। আর মধ্যযুগে এসে আমাদের আকাবিররা ধর্ম কর্মকে বেঁছে নিয়ে বাকি সব ছেড়ে দিলেন অন্যদের হাতে। কেন এটা ছেড়ে দিলেন অন্যদের হাতে,তার মানে ওরাকি ভুল করে আসছিলেন? না আমরাও তা ছেড়ে দিয়ে ভুল করছি? পবিত্র ধর্মগ্রন্থ  আর ইসলাম কি শুধু ধর্ম কর্মের  কথাই বলে? ভালভাবে কোরআন রিসার্চ করলে দেখা যায় যে, বিজ্ঞান থেকে শুরু করে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সুস্থ্য সাংস্কৃতিক, দর্শন, উদ্ভিদ, প্রাণী, কলা, কৌশল, আবিষ্কার ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞানবিজ্ঞানের অফুরন্ত ভাণ্ডার রয়েছে। আমরা কোনদিন কি ভেবেছি এই গুলো দখল করতে অথবা আমাদের বাস্তব জিবনে তা চর্চা করতে? আমরা কোরআন পড়ি ইবাদত আর সুওয়াবের জন্য কিন্তু গবেষণা করিনা। আমরা মধ্যযুগে কোথায় এক ভুল করে এসেছি হয়ত এটাকে আমরা অনুমানও করতে পারছিনা। কবে আমরা তা বুঝতে পারব কত যুগ লাগবে আল্লাহ মালুম। আমাদের আকাবিররা যদি সেই সব সুযোগকে হাত ছাড়া না করে আজ অবধি লেগে থাকতেন,আমাদের রাজনৈতিক জীবন, সামাজিক জীবন, শিক্ষাব্যবস্থা সব কিছুই অন্যরকম থাকত। আমাদেরকে কেউ আজ  অবহেলার চোখে দেখতনা। আমরা আমাদের নিজস্ব সত্বায় সর্বক্ষেত্রে সর্বমহলে অসম্ভব অবদান রাখতে আজ অবধি সক্ষম থাকতাম।  সুতরাং অতীতকে নিয়ে চিন্তা করে সময় নষ্ট করার প্রয়োজন নাই। মোটকথা এটা আগে আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিলনা। এখন আমরা ইচ্ছা করলেই সব স্থানে সব পাত্রে  বিচরণ করার ক্ষেত্র তৈরি করতে সক্ষম হব ইনশাআল্লাহ ।
আমরা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যদিয়েই সব কিছুতে আংশ নিতে পারব। আমরা ইচ্ছায় অনিচ্ছায় হলেও আমাদের দীর্ঘদিনের স্থায়ী সিলেবাসের সাথে জেনারেল শিক্ষাব্যবস্থার দিলেবাস সংযোজন  করা চাই। আমরা নিজেরাই এই কাজ করতে পারব আশা করি। স্বকীয়তার শর্ত দিয়ে আমরা সরকার বাহাদুরের কাছ থেকে স্বীকৃতি এনেছি,দাওরায়ে হাদীদকে স্নাতকোত্তর মান দিয়েছে। এই মান নিয়ে করবেনটা কি?  যদি মান সমান অভিজ্ঞতা না থাকে, তাহলে মানের সনদ নিয়ে কিছু করা যাবেনা। দাওরায়ে হাদীস ফাস করে এই সনদ দিয়ে না পারবে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি  হতে ,না পারবে দেশের কোন সরকারি  কর্মসংস্থানে  যোগ দিয়ে কাজটা করতে। জাগতিক শিক্ষা আর কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যাবস্থায় আকাশ পাতাল ব্যাবধান। সুতরাং সিলেবাসে হাত দেন, খুব অপ্রয়োজনীয়  কিতাবাদি বাদ দিয়ে মূলধারার পাঠ্যবিষয় সংযোজন করেন প্লিজ। সংযোজনের ফলে পাঠ্যপত্রের তুলনায় খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া কিতাবগুলোকে বাদ দিতে হবে। জেনারেল শিক্ষাব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ পাঠ্যপুস্তক সর্বস্থরে বাধ্যতামূলক প্রণয়ন করতে হবে। উচ্চতর বাংলা,ইংরেজি, সমাজবিজ্ঞান,রাষ্ট্রবিজ্ঞান,যুক্তিবিদ্যা, ইতিহাস,দর্শন,কারিগরি, তথ্যপ্রযুক্তি, কলা, পরিসংখ্যান ইত্যাদি প্রণয়ন করুন।
ভুলে গেলে চলবেনা আমাদের অনেক আশা ও ইচ্ছা আছে,মনে প্রচুর যন্ত্রণা আছে। আমাদেরকে অবহেলা,কোন কিছু করতে না পারার যন্ত্রণা কে উপশম করতেই দেখিয়ে দিব এদেশের সব স্থানে সব পাত্রে বিচরণ করে। আমাদের স্বকীয়তার দিকে গভীর দৃষ্টি রেখে অত্যান্ত সাহসিকতা ও চ্যালেঞ্জিং মনোভাব নিয়ে একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ  মোকাবেলা করতে হবে কওমি চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে। নামকাওয়াস্তে জেনারেল সাব্জেক্ট রাখলে চলবেনা। সর্বস্থরে বাধ্যতামূলক জেনারেল পাঠ্যসূচী রাখতে হবে। আজ কওমি মাদ্রাসা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়ায় বহুদলের বহু মতের ঘুম হারাম হয়েগেছে। কোমরে কাপড় বেধে সমালোচনা  করার সিরিজ  বক্তব্য প্রদান করে কওমির জাতীয় দোশমন হিসাবে নিজেকে চিহ্নিত করছেন। আজ প্রতিয়মান হচ্ছে কারা কওমি প্রেমীক আর কারা কওমি বিরোধী। আর যে বা যারাই ইচ্ছায় অনিচ্ছায় অপ্রত্যাশিত সমালোচনা করে কওমির সনদ রুখতে ব্যর্থ চেষ্টা করছেন,আমি সেই মহা পুরুষ দেরকে জানিয়ে দিতে চাই, কওমির সন্তানরা এদেশে কচুরিপানার মত ভেসে আসেনি। তারা এই দেশের এই মাটির সন্তান,এইদেশের  নাগরিক। সবার মত শিক্ষার অধীকার তাদের ও আছে। আর এই শিক্ষা অধীকার হল সকল বাঙালির মৌলিক অধিকারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। সুতরাং আর সমালোচনা করে অতি বোকার পরিচয় দিবেন না। কোন লাভ হবেনা। যেটা হয়ে গেছে সেটাকে স্থায়িত্ব দিতে যত ধরনের ত্যাগ শিকার করতে হয় কওমিরা তা করতে পিছপা হবেনা ইনশাআল্লাহ।

লেখকঃফারহান আরিফ
সিনিয়র প্রতিনিধি কমাশিসা।
শিক্ষার্থী এম,সি কলেজ।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...