আলী হাসান তৈয়ব
কওমি সনদের স্বীকৃতি নিয়ে জল অনেক ঘোলা হয়েছে। আমরাও বহু কালি ও কথা খরচ করেছি। সবশেষ ভার্চুয়াল জানা গেল স্বীকৃতি ঘোষিত হতে যাচ্ছে ১১ এপ্রিল। একবার ঘোষিত হওয়া স্বীকৃতি সামনে অগ্রসর না করে কেন নতুন করে আবার ঘোষিত হবে? কওমিকে নিয়ন্ত্রণে দেশি ও আন্তর্জাতিক ইসলামবিরোধী শক্তির ক্রমর্বধমান চাপ সত্ত্বেও সরকার কেন স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে? এবং শাপলার অভিঘাত আর প্রতিনিয়ত ব্রাক্ষণ্যবাদিদের আস্ফালন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় এ স্বীকৃতি ভষিষ্যতে কোন দিকে নিয়ে যাবে ইত্যাকার বহু প্রশ্ন সত্ত্বেও আমি স্বীকৃতির পক্ষে। যেমন ছিলাম শুরু থেকেই। কারণ শুরু থেকেই আমার নগণ্য উপলব্ধি হলো-
১. স্বীকৃতি কারও করুণা নয়; আমাদের প্রাপ্য। প্রত্যেক নাগরিকের শিক্ষা ও মেধা বিকাশের ব্যবস্থা করা এবং সুন্দর ভবিষ্যত গড়ার সুযোগ করে দেয়া রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব। সংসদে যখন জাতীয় বাজেট ঘোষণা হয় সেখানে শিক্ষার জন্য যে বিশাল বরাদ্দ থাকে তাতে কওমিশিক্ষার্থীদের জন্য ভাগ থাকবে না কেন? এদের বাবা-মায়ের করের টাকা কি নেই ওই বাজেটের টাকায়?
২. কুরআন বলছে, রাসূল (সা.) এসেছেন সারা পৃথিবীর জন্য রহমত স্বরূপ। আল্লাহ তাকে প্রেরণ করেছেন সারা পৃথিবীতে সব ধর্মের ওপর ইসলামের বিজয় কেতন ওড়াবার জন্য। এর জন্য দরকার চিন্তা ও পড়াশোনার সাব আমরা নিজেদেরকে নবীর ওয়ারিশ বানাতে চাই। অথচ সীমিত থাকতে চাই ভারত-পাকিস্তান কিংবা সর্বোচ্চ উপমহাদেশে। এর বাইরে আমরা তাকাতে চাই না। কেন এর বাইরে পৃথিবীর কোথাও কি কুরআন-হাদিসের চর্চা নেই? কোথাও কি কোনো আলেম, মুফতি, মুহাদ্দিস নেই? বিশ্বে ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের নতুন নতুন যা চর্চা ও উন্নতি ঘটছে তার কতভাগ এই তিনদেশে? সোজা কথায় ইসলামী শিক্ষার বিশ্বায়ন চাই। স্বীকৃতি পেলে আজ না হোক একদিন সেটা করা সম্ভব হবে।
৩. পরিবর্তিত বিশ্ববাস্তবতা হলো খুব বেশি দিন এভাবে সরকারি খবরদারির বাইরে এত বিশাল জনগোষ্ঠী থাকতে পারবে না। ক্রমশ আলেমদের প্রভাব কমে আসছে। ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে। ইসলামকে নিত্যনতুন অমূলক প্রশ্নে জর্জরিত করা হচ্ছে। ভয়াবহ ভবিষ্যতের ইঙ্গিত বিচক্ষণমাত্রই দেখতে পাচ্ছেন। এমতাবস্থায় সরকারের সঙ্গে আড়ি করে দীর্ঘদিন চলতে গেলে অস্তিত্বই হুমকিতে পড়তে পারে। তাই আজ ন্যূনতম স্বীকৃতি হলেও আগামীতে নিজেদের মতো করে অনেক অধিকার আদায়ের পথ খুলবে।
৪. আমাদের শিক্ষার ব্যবস্থাপনায় এমন কিছু অব্যবস্থাপনা আছে যা আমরা কেউ সমর্থন করি না। সবাই প্রশ্ন তুলি এসব নিয়ে। যেমন কেউ সিলেবাসে বিভিন্নতা। মিসর, দেওবন্দ, লিবিয়া ও সৌদি থেকে এসে যে যার মতো সিলেবাসে প্রতিষ্ঠান চালু করছেন। এ ধরনের সমস্যা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ছাড়া সমাধান সম্ভব নয়। স্বীকৃতি হলে এসব করা সম্ভব হবে।
একটি প্রশ্ন
একটা প্রশ্ন মনে ঘুরপাক খাচ্ছে, যারা শাইখুল হাদিস (রহ.) এর নেতৃত্বে স্বীকৃতির জন্য একদা একাট্টা হয়েছিলেন, স্বীকৃতিকে অপরিহার্য ভেবেছিলেন তারা আজ এর বিরুদ্ধে জোরালোভাবে দাঁড়িয়েছেন! তাঁদের সেদিনের অবস্থান কি ভুল ছিলো নাকি তাঁরা কেবল ক্ষমতার চেয়ারওয়ালা পরিবর্তনে একে সমর্থন করতে পারছেন না?
একটি প্রস্তাব
যেসব বন্ধু-শ্রদ্ধেয়জন স্বীকৃতি-পরবর্তী ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত হয়ে সম্ভাব্য নানা আশঙ্কা তুলে ধরছেন, তাদের প্রতি আমার সবিনয় নিবেদন, মনে হয় এসব শঙ্কা মাথায় রেখেই শেষ পর্যন্ত সব মহলের কওমি মুরুব্বিরা এখন মোটামুটি এক হয়েছেন। এমতাবস্থায় আমরা যে এলোপাতাড়ি জল্পনা-কল্পনায় সমস্যা তুলে ধরছি তা কোনো সমাধানের পথ খুলবে কি? তাছাড়া স্বীকৃতির বাইরে থাকাও কি অনেক প্রশ্ন ও শঙ্কাপূর্ণ নয়?
তারচেয়ে চলুন শুধু সম্ভাব্য সমস্যা তুলে না ধরে সেগুলো প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায় নিয়ে আলোচনা করি। করি বৃদ্ধিবৃত্তিক তর্ক ও পর্যালোচনা। চলুন নানা প্লাটফর্মে স্বীকৃতি নিয়ে পরস্পর গোলটেবিল, সেমিনার ইত্যাদি আয়োজন করি। আছেন কেউ আগ্রহী ও উদ্যোক্তা?
লেখকের ফেসবুক টাইমলাইন থেকে