কমাশিসা : সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে সাময়িক বরখাস্ত করার আদেশ স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। তাঁর করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আজ সোমবার বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
উচ্চ আদালতের নির্দেশে আরিফুল হক দুই বছর তিন মাস পর গতকাল রোববার মেয়রের দায়িত্ব নেন। বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত মেয়রের চেয়ারে বসা ছিলেন তিনি। এর মধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ পৌঁছায়। আদেশে বলা হয়, সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় বোমা হামলার মামলায় অভিযুক্ত হওয়ায় তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। আদেশটি ঢাকা থেকে পাঠানো হয় ফ্যাক্সযোগে। এরপর বেলা দুইটার পর নগর ভবন থেকে নিজ বাসায় ফিরে যান তিনি।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের বার্তায় বলা হয়েছে, ‘আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল মামলা-৪/২০০৯) সম্পূরক অভিযোগপত্র গত ২২ মার্চ স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল সুনামগঞ্জ কর্তৃক গৃহীত হয়েছে। সেহেতু সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে স্থানীয় সরকার বিভাগ আইন ২০০৯ (২০০৯ সালের ৬০ নম্বর আইন)-এর ১২ উপধারা (১)-এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।’
বিশেষ ট্রাইব্যুনালে চলা এ মামলাটি হচ্ছে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে জনসভায় বোমা হামলার মামলা। ২০০৪ সালের ২১ জুন সুনামগঞ্জে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় বোমা হামলার ঘটনার দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর পর মেয়র আরিফুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্রে তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়।
সুনামগঞ্জের সরকারি কৌঁসুলি খায়রুল কবীর প্রথম আলোকে জানান, গত ২২ মার্চ এ মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হয় এবং ওই দিন বিচারকাজ শুরু করতে মামলাটি সিলেটের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আরিফুল এ মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিনে আছেন।
আরিফুল হক চৌধুরী ২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন। মেয়রের দায়িত্ব পালনের মাত্র নয় মাসের মাথায় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি হয়ে দুই বছর চার দিন কারাভোগ করেন। গত ৪ জানুয়ারি সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান তিনি।
২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের বৈদ্যেরবাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলায় নিহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া। ওই হত্যাকাণ্ডের প্রায় ১০ বছর পর তৃতীয় পর্যায়ের তদন্ত শেষে সম্পূরক অভিযোগপত্রে আরিফুল হককে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর কিবরিয়া হত্যা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হলে ২৮ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ গিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করে কারাবন্দী হন তিনি। ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে।
কারামুক্ত হওয়ার পর এ আদেশের বিরুদ্ধে আরিফুল হক হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট গত ১২ মার্চ সাময়িক বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করেন। পরে এ আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন। এরপর ৩০ মার্চ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাঁকে মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য চিঠি পাঠায়।
দ্বিতীয় দফায় বরখাস্তের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আজ রিট করেন আরিফুল হক চৌধুরী। এরপর আদালত তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করার আদেশ স্থগিত করেন।