বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ৯:০২
Home / কওমি অঙ্গন / হেফাজতের আন্দোলনকে রাজনৈতিক রূপ দেয়ার চেষ্টা চলছে: আল্লামা আহমদ শফী

হেফাজতের আন্দোলনকে রাজনৈতিক রূপ দেয়ার চেষ্টা চলছে: আল্লামা আহমদ শফী

কমাশিসা : সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে গ্রিক দেবী থেমিসের মূর্তি স্থাপনের প্রতিবাদ ও অপসারণের দাবিতে হেফাজতে ইসলামের প্রতিবাদ কর্মসূচীকে কতিপয় ইসলাম বিদ্বেষী ও স্বার্থান্বেষী মহল থেকে রাজনৈতিক রূপদান বা অপব্যাখ্যার চেষ্টা করা হচ্ছে অভিযোগ করে নিন্দা জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমীর শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী।

তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলাম ঈমান-আক্বীদা ভিত্তিক অরাজনৈতিক একটি সংগঠন। আমরা প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বার বার বলে আসছি, আমাদের আন্দোলন কাউকে ক্ষমতায় বসানো বা নামানোর জন্য নয়। আমরা মুসলমানদের ঈমান-আক্বীদা, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নৈতিক আদর্শ সমুন্নত রাখতে চেষ্টার পাশাপাশি আদর্শিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের প্রতিবাদে কথা বলি।

পাশাপাশি আমরা দেশের স্বাধীনতা, জাতীয় স্বার্থ এবং নাগরিক অধিকারের বিরুদ্ধে যে কোন দেশি-বিদেশী অপতৎপরতা প্রতিহত করতে অরাজনৈতিক অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করি। আমাদের রাজনৈতিক কোনই অভিলাষ নেই। সুতরাং সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গন থেকে গ্রিক দেবির মূর্তি অপসারণের চলমান প্রতিবাদ আন্দোলনকে রাজনৈতিক রূপ দেওয়ার কোন সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, ইসলাম নির্মূলবাদি চক্র হেফাজতের ঈমান-আক্বীদার আন্দোলনের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার ও রাজনৈতিক রূপদানের অপচেষ্টায় লিপ্ত। আলেম সমাজ ও তৌহিদী জনতাকে এসব অপপ্রচার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।

হেফাজত আমীর কেন্দ্রীয় নির্দেশনার বাইরে আবেগ তাড়িত হয়ে কোনরূপ সিদ্ধান্তমূলক বক্তব্যদান থেকে বিরত থাকার জন্য সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাদেরকে নির্দেশ দেন।

তিনি বলেন, আমাদের যে কোন দুর্বলতা ও অসর্তক বক্তব্য লুফে নিতে ইসলাম নির্মূলবাদিরা শ্যেন দৃষ্টিতে অবলোকন করছে। এমনকি কোন কোন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীও নিজেদের অপরাধ বা ব্যর্থতা ঢাকতে হেফাজতের কাঁধে দায় চাপাতে চায়। তিনি বলেন, হেফাজতের নেতা-কর্মী ও সাধারণ তৌহিদী জনতাকে এসব বিষয়ে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। গতকাল (১৪ মার্চ) মঙ্গলবার বিকেলে সংবাদপত্রে প্রদত্ত বিবৃতিতে হেফাজত আমীর উপরোক্ত কথা বলেন।

হেফাজত আমীরের প্রেসসচিব মাওলানা মুনির আহমদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে আল্লামা শাহ আহমদ শফী আরো বলেন, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে ন্যায় বিচারের প্রতীক দাবী করে গ্রিক দেবির মূর্তি স্থাপন বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত বিচারালয়ের সামেন এই মূর্তি স্থাপনের কোনই সুযোগ নেই। কারণ, বাংলাদেশের ৯২ ভাগ মানুষ পবিত্র ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। অবশিষ্ট জনসংখ্যার মধ্যে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বী রয়েছেন। ইসলাম ধর্মে তো নয়ই, এমনকি হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রীস্টান ধর্মমতেও গ্রিক দেবীতে বিশ্বাসের সুযোগ নেই। এটা সম্পূর্ণই আদর্শিক আগ্রাসন ও ফ্যাসিবাদি আচরণ। ঈমান-আক্বিদার স্থান থেকে গ্রিক দেবি অপসারণের প্রশ্নে কোন মুসলমানেরই চুপ থাকার সুযোগ নেই। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গন থেকে গ্রিক দেবি থেমিসের মূর্তি অপসারণের এই আন্দোলনে দলমত নির্বিশেষে সকল নাগরিকের শামিল হওয়া জরুরী।

হেফাজত আমীর বলেন, কতিপয় রাজনৈতিক নেতা ও ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদিকে দেখা যায়, উলামা-মাশায়েখকে ইসলামের জ্ঞান দিতে। সাংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকেও দেখা গেছে গ্রিক দেবির ইস্যুতে দেশের শীর্ষ আলেমদেরকে ধর্মীয় জ্ঞান দিতে ও ইসলামের অপব্যাখ্যা করতে। সরকার ও প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বে থেকে ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের এমন অপতৎপরতা চরম নিন্দনীয়। তিনি বলেন, ডাক্তার না হয়ে অপারেশন থিয়েটারে ছুরি হাতে রোগির দেহে অস্ত্রোপাচারের মতো জঘন্য অপরাধ এটা। হেফাজত আমীর এ পর্যায়ে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, জাতির উপর জবরদস্তিমূলক কোন ভিনদেশী মতাদর্শ চাপিয়ে দিতে চাওয়া মানে আগুন নিয়ে খেলা করা। আদর্শিক আগ্রাসন চাপিয়ে দিয়ে টিকে থাকার কোন ইতিহাস বিশ্বে নেই। বরং আগ্রাসীদেরকেই এক সময় না এক সময় এ জন্য চরম মূল্য দিতে হয়। সুতরাং বাংলাদেশেও যে বা যারা আদর্শিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে, তাদের উচিত ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে সতর্ক হওয়া।

বিবৃতিতে হেফাজত আমীর সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের ৯২ ভাগ মুসলমানের ধর্মীয় বিশ্বাস, আদর্শিক আনুগত্য এবং অত্র অঞ্চলের গৌরবময় ইতিহাসের প্রতি সম্মান দেখিয়ে অবিলম্বে সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গন থেকে গ্রিক দেবির মূর্তি অপসারণ করুন। অযথা একটা সংকট তৈরি করবেন না। সুপ্রিম কোর্টে ন্যায় বিচারের প্রতিক হিসেবে আগে থেকে দাড়ি-পাল্লা বিদ্যমান ছিল। সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গনে কোন শিল্পকর্ম স্থাপন করতে চাইলে প্রয়োজনে সেখানে শৈল্পিকরূপ দিয়ে দাড়ি-পাল্লা অথবা ঐতিহ্য ও বৃহৎ মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে যাতে বিরোধ না হয় সে রকম কী স্থাপন করা যায় সেটা নিয়ে আলোচনা করুন। আমরা আপনাদেরকে সহযোগিতা করব।

তিনি বলেন, সরকার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই দেশ শাসন করছে একথা সব সময় বলে থাকে। সুতরাং সরকারের দায়িত্ব গণমানুষের মতামত ও ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ দেখিয়ে গ্রিক দেবি থেমিস অপসারণসহ সকল ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ড বন্ধ করা। গণমানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত হয়, এমন কিছু করার অধিকার আমাদের সংবিধানেও দেওয়া হয়নি। সুতরাং সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে ন্যায় বিচারের প্রতীক বলে গ্রিক দেবি থেমিসকে চাপিয়ে দেওয়ার যে কোন চেষ্টা সকল বিচারেই ফ্যাসিবাদ ছাড়া কিছু নয়।

তিনি বলেন, দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ অব্যাহত রাখব এবং ব্যাপকভাবে গণমত তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাব।

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...