রবিবার, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১:১১
Home / অনুসন্ধান / যে কারণে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না জামায়াত

যে কারণে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না জামায়াত

মুহাম্মদ মুহিউদ্দীন কাসেমী

মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষপর্যায়ের বেশ কয়েক নেতা একাত্তরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের কারণে ট্রাইব্যুনালের রায়ে ফাঁসিতে ঝুলেছেন। দেশের অধিকাংশ মানুষ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের উল্লেখযোগ্য অংশ দলটিকে ঘৃণা করে মুক্তিযুদ্ধকালে এর নেতাদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে। মুক্তিযুদ্ধ ও দেশবিরোধী ইস্যুতে দলটি এখন কাবু হয়ে পড়েছে। দলের তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে সোচ্চার। অবশ্য যারা এ ইস্যুতে কথা বলেছেন তাদেরই বহিষ্কারের শিকার হতে হয়েছে।

সম্প্রতি জামায়াতের এক নায়েবে আমিরকে বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে বারংবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা দ্বন্দ্বটি আবার প্রকাশ্যে এসেছে। যদিও সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওই নায়েবে আমির দলেই আছেন। তবে তিনি যে নায়েবে আমিরের পদে নেই, সেটা পরোক্ষভাবে স্বীকার করে নিয়েছেন শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা।

অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও মতানৈক্যের কারণে স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত পাঁচবার সংস্কারের চেষ্টা চলেছে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের ভেতরে। প্রতিটি কোন্দল-বিভাজনের নেপথ্যে মূল ইস্যু ছিল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বা বিপক্ষে সমর্থন নিয়ে। স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশকে মন থেকে স্বীকার করে নিয়ে রাজনীতি করার পক্ষে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দলটির একটি গ্রুপ। এ পন্থিরা বিভিন্ন সময় প্রচেষ্টা চালিয়েছে তাদের মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে, কিন্তু তারা সফল হয়নি। উপরন্তু তাদের ওপর নেমে এসেছে খড়্গ, দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে তাদের। সংস্কারপন্থিদের এ আন্দোলন অন্তত দশবার দলের ভেতর বিক্ষোভের দানা বেঁধেছিল। কিন্তু সুবিন্যস্ত সাংগঠনিক কাঠামো এবং সেই কাঠামো পালনে দলটির সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতাকর্মী একনিষ্ঠ হওয়ায় এসব খবর দলের বাইরে ছড়িয়ে পড়েনি।

দলটির পক্ষ থেকে নায়েবে আমির আতাউর রহমানকে বহিষ্কারের কোনো ব্যাখ্যাও তাকে দেওয়া হয়নি। সংস্কার ইস্যুতে জামায়াতের তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পর্যন্ত দলটির সর্বস্তরে একটি বিভাজন ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের একনায়কতান্ত্রিক মনোভাব, বাংলাদেশবিরোধী চেতনা ও যোগ্যদের বহিষ্কার এসব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভ বাড়ছিল তৃণমূলে। এটি এখন এতটাই বেড়েছে যে, যে কোনো সময় দলটি ভেঙে বেরিয়ে যেতে পারেন সংস্কারপন্থিরা; গঠন করতে পারেন নতুন দল। বিশ্বস্ত সূত্র মতে, বিভাজন-সংকটে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি থাকার পরও প্রকাশ্য রাজপথে তৎপর হতে পারছে না জামায়াত; পারছে না ঘুরে দাঁড়াতে।

জানা যায়, সর্বশেষ ২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর দলের অভ্যন্তরে সংস্কার প্রস্তাব দেন জামায়াতের তৎকালীন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামান। সে সময় যুদ্ধাপরাধের দায়ে আটক অবস্থায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ৭ নম্বর সেল থেকে জামায়াতে ইসলামীর তৎকালের নেতৃত্বকে ৩৬ পৃষ্ঠার একটি চিঠি লিখেছিলেন তিনি। ‘পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে নতুন কর্মকৌশল গ্রহণ সময়ের দাবি’ শীর্ষক ওই চিঠি প্রকাশের পর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর স্ত্রী শামসুন্নাহার নিজামী দলসমর্থিত পত্রিকাগুলোয় এ দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধ মতবাদ প্রকাশ করে প্রবন্ধ লেখেন।

কামারুজ্জামান তার চিঠিতে দলের তৎকালীন পরিস্থিতি এবং সেই সাপেক্ষে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করেন। যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ রয়েছে, দলের দীর্ঘমেয়াদি সুফল প্রত্যাশায় তাদের অনুরোধ করেন নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়ার। যাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে নেতিবাচক ভূমিকা রাখা নিয়ে কোনো সমালোচনা নেই এবং যারা স্বাধীনতাউত্তর প্রজন্মÑ তাদের নেতৃত্বে নিয়ে আসার পক্ষে চিঠিতে জোর দেন তিনি। এ ছাড়া বিভিন্ন মুসলিম দেশে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ইসলামী দলগুলোর আলোকে জামায়াতকে ঢেলে সাজানোর অনুরোধ করেন তিনি সংগঠনের ভবিষ্যৎ পথচলা সুদৃঢ় করতে। এতে করে তিনি ও তার মতাদর্শীরা গোঁড়া নেতাদের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। থমকে যায় সংস্কার প্রস্তাব। সংস্কার না করলে দলের ভবিষ্যৎ-নাজুকতা নিয়ে সাত বছর আগে যে আশঙ্কা করেছিলেন কামারুজ্জামান, দলটির পরিস্থিতি বর্তমানে তারচেয়েও নাজুক। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের পাশাপাশি দলটির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সম্প্রতি আবার সংস্কারের বিষয়ে প্রাথমিক কাজ শুরু করে দলটির তুলনামূলকভাবে তরুণ নেতৃত্ব।

কামারুজ্জামানের সংস্কার ফর্মুলা নিয়ে জামায়াতের মূল সংগঠনের বাইরে নতুন একটি সংগঠন গড়ে তুলতে অনেক দিন ধরে কাজ করছেন দলের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির থেকে আসা নেতারা। এ গ্রুপটি বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি) নাম নিয়ে নতুন একটি সংগঠনের রূপরেখাও তৈরি করেছিল। মূলত তাদের টার্গেট ছিল মোড়ক পাল্টে জামায়াতেরই মতাদর্শে একটি প্যারালাল দল সচল রাখা।
নতুন মোড়কের দলে জামায়াতের ষাটোর্ধ্ব নেতাদের ঠাঁই হবে না বলেও নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে করে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা, পাকিস্তানপ্রীতি ইত্যাদি প্রশ্নে সংগঠনটিকে আর বিতর্কিত করার সুযোগ থাকবে না। অর্থাৎ দেশবাসীকে আইওয়াশ করা। কিন্তু জামায়াতের কট্টর নেতারা এ পরিকল্পনা ভেস্তে দেন; কোণঠাসা করে ফেলেন উদ্যোক্তাদের।

এরপর বেশ কিছু দিন অনেকটা থমকে ছিল সংস্কার প্রক্রিয়া। কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আবার নড়েচড়ে বসেন সংস্কারপন্থিরা। দলের নীতিনির্ধারণী মহলে তাদের দাবি প্রকাশের দায়িত্ব পড়ে দলটির নায়েবে আমির আতাউর রহমানের ওপর। সংস্কারের রূপরেখায় বরাবরের মতোই ছিল মুক্তিযুদ্ধ ইস্যুতে বিতর্কিতদের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি। জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা ও ঢাকা মহানগরের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদকের কাছে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সূত্র জানায়, আতাউর রহমানের দলীয় পদ থেকে অব্যাহতির বিষয়টি গত ৫ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয়। দলের গঠনতন্ত্রের সর্বশেষ সংশোধনী প্রকাশের মাত্র কিছু দিনের মধ্যেই কেন্দ্রীয় পদ থেকে বিচ্যুত হলেন আতাউর রহমান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। গত আট বছরের বেশিরভাগ সময়ই কারান্তরীণ থাকতে হয়েছে তাকে। আতাউর রহমানের জামাই শফিকুল ইসলাম মাসুদ শিবিরের সাবেক সভাপতি। বর্তমানে তিনি জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি জেনারেল। দলের সাধারণ নেতাকর্মীদের কাছে বর্তমানে কারান্তরীণ মাসুদের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। তাই সংস্কারপন্থি না হলেও অনেক নেতা বর্ষীয়ান আতাউর রহমানের অব্যাহতির বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি।

জামায়াতের তৃণমূল থেকে কেন্দ্র সর্বত্র এখন আলোচনার বিষয়Ñ মুক্তিযুদ্ধ ইস্যুতে দলের ভেতরে সংস্কার। এতদিন নীরব থাকা সংস্কারবাদী অংশটি চাইছে, এখনই নতুন দলের নাম ঘোষণা করে প্রকাশ্যে রাজনীতিতে আসতে।

সূত্রগুলো জানায়, আতাউর রহমানের শুদ্ধি অভিযানে কাটা পড়ার কথা ছিল বর্তমান আমির মকবুল আহমাদেরও। তিনি আমির হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর পরই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে গণমাধ্যমে। এরপর আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল খোঁজখবর নিতে শুরু করে। এসব বিষয় উল্লেখপূর্বক আতাউর রহমান একাত্তরপরবর্তী প্রজন্মের হাতেই জামায়াতের নেতৃত্ব দেওয়ার পক্ষে গুরুত্ব দেন।

সূত্র মতে, আতাউর রহমানের প্রস্তাবে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল ২৪ ঘণ্টা রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকা। জামায়াতের একেবারে ওয়ার্ড পর্যায় থেকেই ২৪ ঘণ্টার রাজনীতির বিষয়টি স্বীকৃত। দলটির কেন্দ্র থেকে ইউনিট পর্যন্ত এমন অনেক নেতাকর্মী রয়েছেন যারা ২৪ ঘণ্টাই দলের জন্য নিবেদিত; দলই তাদের বেতনভাতা দিয়ে থাকে, পালন করে তার পরিবারের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব। গঠনতন্ত্র সংশোধনকে সামনে রেখে বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান চেয়েছিলেন, ২৪ ঘণ্টার রাজনীতির বিষয়টি কার্যকর না রাখতে। আর আতাউর রহমানের প্রস্তাবে ২৪ ঘণ্টার নেতাকর্মীর সংখ্যা কমিয়ে আনার কথা বলা হয়েছিল।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা অব্যাহতির পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেন, সংশোধিত গঠনতন্ত্রের ধারা ৬-এ জামায়াতে মতবিরোধের সীমা শীর্ষক শিরোনামের ৩ উপধারায় যা বলা আছে তার সারকথা হচ্ছেÑ কোনো সদস্য (রুকন) জামায়াত গৃহীত কোনো সিদ্ধান্তে তার দ্বিমতের কথা সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থার বাইরে প্রকাশ করলে, তিনি জামায়াতের এমন পদে নিযুক্ত থাকতে পারবেন না। যার কর্তব্যই হচ্ছে জামায়াত-ঘোষিত নীতি বাস্তবায়ন কিংবা এর ব্যাখ্যাদান করা। এ কারণ দেখিয়েই আতাউর রহমানকে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, যে কোনো দলের ভেতরে রাজনৈতিক সংস্কারপ্রত্যাশীরা তাদের দাবি পূরণ না হলে দল থেকে সরে পড়ে। এটিই বহুলচর্চিত স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে। এ কারণে আতাউর রহমানের প্রস্তাবও বেশিরভাগের কাছে গৃহীত না হওয়ায় তাকেও জামায়াতের নেতৃত্বের পদ ছাড়তে হলো। জামায়াতের দাপ্তরিক ওয়েবসাইটে আতাউর রহমান নিজেও তার দেওয়া বিবৃতিতে নিজেকে নায়েবে আমির নয়, কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া ওয়েবসাইটে জামায়াতের দেওয়া এ সংক্রান্ত প্রতিবাদলিপিতে কোথাও আতাউর রহমানকে নায়েবে আমির হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি।

প্রসঙ্গত ১৯৮২ সালে ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি আহমদ আবদুল কাদের ও সেক্রেটারি জেনারেল ফরীদ আহমদ রেজা মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের অবস্থান জানতে চান। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার নয় বরং ধারণ করেই রাজনীতি করার পক্ষে মত দেন। এ নিয়ে জামায়াতের তৎকালের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের দুজনকেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়। এরপর তারা যুবশিবির নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী সময়ে আহমেদ আবদুল কাদের খেলাফত মজলিস প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তিনি এর মহাসচিব। আর ফরীদ আহমেদ রেজা ইংল্যান্ড প্রবাসী। আইএমবিডি ব্লগ নামের একটি সাইটে ‘শিবিরের
ক্রান্তিকাল : ১৯৮২ সালের কথকতা’ শিরোনামে আট কিস্তির দীর্ঘ এক রচনা লিখেছেন রেজা। এতে তিনি তৎকালীন জামায়াত নেতাদের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অটল মনোভাব এবং মুক্তিযুদ্ধ বিরোধিতায় অনড় অবস্থানের বিষয়ও তুলে ধরেন। এ কারণেই যে তাকে ও আহমেদ আবদুল কাদেরকে সে সময় অব্যাহতি দেওয়া হয়, তাও তার লেখায় উঠে এসেছে।

এরপর বিভিন্ন সময়ে দলটিতে ভাঙনের ঘটনা ঘটলেও বাইরে প্রকাশ পায়নি। সংগঠনের একজন শূরা সদস্য দাবি করেন, সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে গত ৪৬ বছরে পনেরো থেকে বিশবার দলের অভ্যন্তরে প্রচ- বিবাদ-বিভাজন সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া ২০১০ সালের শুরুতে শিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল শিশির মুহাম্মদ মনিরও সংস্কার প্রস্তাব তোলেন। তৎকালে সারা দেশে শিশির মনির ছিলেন তরুণ নেতৃত্বের কাছে খুবই জনপ্রিয়। ফলে জামায়াতের নেতারা ভীত হয়ে তাকেও সভাপতির পদে বসতে দেননি। এর প্রতিবাদে সে সময় বেশিরভাগ ইউনিটের শীর্ষ নেতাসহ সারা দেশের কয়েক হাজার শিবির নেতা পদত্যাগ করেন। মনিরপন্থি অনেককে অবশ্য সে সময় পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। এরপর শিবিরের সাধারণ সম্পাদক করা হয় ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে। তিনি তৎকালীন সভাপতি রেজাউল করিমের আর্থিক কেলেঙ্কারি ও একনায়কতান্ত্রিক মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। একই সঙ্গে সংস্কার প্রস্তাব ও জামায়াতের অবৈধ হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ করেন। এর জেরে পদত্যাগে বাধ্য করা হয় তাকে। এ সময় তার সঙ্গে আরও কিছু নেতাকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়।

স্বাধীনতার পর দলটির নায়েবে আমির মাওলানা আবদুর রহিমকে মতবিরোধের কারণে দল থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন গোলাম আযম। সূত্র জানায়, আবদুর রহিমও মুক্তিযুদ্ধ ইস্যুতে কথা বলেছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালে বিতর্কিত ভূমিকা রাখা নেতাদের জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রস্তাব রেখেছিলেন এবং সংস্কারের একটি রূপরেখা দিয়েছিলেন। আর এতেই বহিষ্কারের খড়্গ নেমে আসে তার ওপর।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের এক নেতা, যিনি আগে শিবিরের নেতা ছিলেন তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে যারা সংস্কার নিয়ে কথা বলেছেন, তাদের আর কখনো সংগঠনে পদ দেওয়া হয়নি। ২০১০ সালের দিকে সংস্কারপ্রত্যাশী নেতারা পরবর্তী সময়ে দলের রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাদের আর পদ দেওয়া হয়নি। এমনকি অনেক নেতা ক্ষোভে দেশান্তরী পর্যন্ত হয়েছেন।

আমাদের সময়ের সঙ্গে আলাপকালে জামায়াতের বেশ কয়েকজন নেতা সংস্কারের পক্ষে কথা বললেও তাদের নাম প্রকাশ না করার শর্ত জুড়ে দেন। জামায়াতপন্থি কয়েকজন বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে এ প্রতিবেদক যোগাযোগ করলে তারা এ নিয়ে মুখ খুলতে অনীহা প্রকাশ করেন। জামায়াতের দাপ্তরিক ওয়েবসাইটে দেওয়া মেইলে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে দলটির অভ্যন্তরীণ বিভেদ সম্পর্কে প্রশ্ন রাখা হলেও এর কোনো উত্তর মেলেনি।

তবে জামায়াতের রাজনীতির বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার আমাদের সময়কে বলেন, দেশের রাজনীতি মনে হয় জামায়াতমুখী হয়ে গেছে। তাদের নিয়ে এত ভাবনা কিসের? মুক্তিযুদ্ধকে যারা অস্বীকার করে, তাদের কোনোভাবেই রাজনীতির সুযোগ নেই। তাদের কেবল নিবন্ধন বাতিলই নয়, স্থায়ীভাবে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করতে হবে। জাতি হিসেবে আমাদের এগিয়ে যেতে হলে জামায়াতমুক্ত হতে হবে। তাদের চিন্তা-চেতনায় মুক্তিযুদ্ধকে গ্রহণ করে ফিরে আসার কোনো লক্ষণ নেই।

এ বিষয়ে জামায়াতের রাজনীতির পর্যবেক্ষক ও জামায়াতের মুখপাত্র দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদ আমাদের সময়কে বলেন, রাজনীতিতে অনেক কথা বলা হয়ে থাকে। অনেক পত্রিকা তাদের ব্র্যান্ডিং বাড়ানোর জন্যও গুজব ছড়ায়। তবে জামায়াতে মুক্তিযুদ্ধ বা অন্য কোনো ইস্যুতে পক্ষ-বিপক্ষ নেই। অব্যাহতির ঘটনাও অন্য একটি পত্রিকায় পড়েছি। তবে এই ইস্যুতে জামায়াত যে বিবৃতি দিয়েছে, তা-ই সঠিক বলে আমি মনে করি।

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...