বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ দুপুর ১:১৯
Home / কুরআন / ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও আল কুরআন

ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও আল কুরআন

আরিফ আজাদ

ফরেনসিক সাইন্সের জগতে ফিঙ্গারপ্রিন্টের যে কতোটা গুরুত্ব সেটা ব্যক্তি মাত্রই এবং এই ফিল্ডে নিয়োজিত সবাই খুব ভালোমতোই অনুধাবন করতে পারে। পৃথিবীর বুকে যতোটা পুলিশ এজেন্সি রয়েছে, তাদের প্রত্যেকের ‘Criminal History’ ফাউন্ডেশনের মূল বেইসিসটাই হচ্ছে এই ফিঙ্গারপ্রিন্ট।

ফিঙ্গারপ্রিন্টের ইতিহাসটি বেশ পুরোনো নয়। ১৮৭০ সালে ফ্রেঞ্চ এন্থ্রোপোলজিষ্ট Alphonse Bertillon অপরাধী সনাক্তকরণের একটা পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। পদ্ধতিটি ছিলো এরকম, – প্রত্যেকটা আলাদা আলাদা ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের রেকর্ড সংগ্রহ করা এবং পরবর্তীতে প্রয়োজনে এই রেকর্ডগুলো মিলিয়ে ব্যক্তি সনাক্তকরণ। দীর্ঘ ৩০ বছর ফরেনসিক মহলে এই পদ্ধতি বেশ ভালোমতোই গৃহীত হয়। কিন্তু গোলমাল বাঁধে ১৯০৩ সালে। আমেরিকার ক্যানসাসের একটি কারাগারে Will West নামের এক লোককে Alphonse Bertillon এর উদ্ভাবিত পদ্ধতি অনুসরণ করে ক্রিমিনাল কেইসে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এর কিছুদিন পরে তারা আবিষ্কার করে ঠিক Will West এর মতোই এক লোক কারাগারে রয়ে গেছে। Will West এর সাথে সেই লোকের এতোটাই মিল ছিলো যে কারাগারের সব লোক দিন দুপুরে ভূত দেখার মতোই চমকে গেলো। কি ব্যাপার? এই লোককে তো কিছুদিন আগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিলো। তাহলে এই লোক আবার ফিরে আসলো কিভাবে? তারা কারাগারের ‘Criminal History’ চেক করলো। দেখলো, এই লোকের নাম Will West নয়, William West. কিন্তু Alphonse Bertillon কর্তৃক উদ্ভাবিত পদ্ধতি মতে রেকর্ডকৃত, মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ব্যক্তি Will West এর সকল শারীরিক তথ্য এবং William West এর রেকর্ড করা সকল শারীরিক তথ্য শুধুই এক নয়, হুবহু এক। এরকম আশ্চর্যজনক ঘটনা দেখে সবাই খুব অবাক হয়ে গেলো। কিন্তু, কেবলমাত্র একটা জিনিস দেখে বুঝা গেলো যে Will West এবং William West একক কোন ব্যক্তি নয়, আলাদা আলাদা ব্যক্তি। যা দেখে বুঝা গেলো সেটা হলো ফিঙ্গারপ্রিন্ট। এরপর থেকেই ফরেনসিক সাইন্সে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের রেকর্ডকৃত এভিডেন্সের চেয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্টের প্রায়োরিটি অনেক অনেক বেশি। পৃথিবীতে বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষ বাস করে। কিন্তু, একজন ব্যক্তির আঙুলের ছাপ (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) কখনোই অন্য আরেকজনের সাথে ম্যাচ হয় না।
আধুনিক বিজ্ঞানের সুবর্ণ সময়ে বসেও বাঙালীদের যখন ভোটার আইডি কার্ডের জন্য এবং সিম রেজিষ্ট্রেশানের জন্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেওয়া লাগে, তখন নিশ্চই এর প্রয়োজনীয়তা এবং অথেনটিসিটি নিয়ে প্রশ্ন থাকার কথা না।
পৃথিবীতে ক্রিমিনাল সনাক্তকরণের সবচে যুগান্তকারী পদ্ধতিই হলো এই ফিঙ্গারপ্রিন্ট।

এইবার সূরা ক্বিয়ামাহ থেকে নিচের দুটি আয়াত দেখি।

‘Does man think that We will not assemble his bones?’
[ মানুষ কি মনে করে যে, আমি তার হাড়গুলোকে একত্রিত করতে পারব না?] ‘Yes. [We are] Able [even] to proportion his fingertips.’
[অবশ্যই আমি (আল্লাহ) তাদের আঙুলের ডগা (ফিঙ্গারপ্রিন্টের অংশ) পর্যন্ত বানিয়ে দিতে সক্ষম] – Al Qiyamah 3-4

আয়াত দুটিতে দুটি সুক্ষ্ম ব্যাপার লক্ষ্যণীয়। প্রথমত, খেয়াল করলে বুঝা যায়, এই আয়াতের লক্ষ্য সেই সব মানুষ, যারা অবাধ্য, পাপী, অবিশ্বাসী। অর্থাৎ, আল্লাহর হুকুম আহকাম না মেনে যারা (আল্লাহর বিধানমতে) অপরাধী, ক্রিমিনাল। কারন, এর পরের আয়াতেই বলা আছে মানুষের পাপের কথা। বলা হচ্ছে- ‘But man desires to continue in sin’
[কিন্তু মানুষ তার আগামী দিনগুলোতেও পাপাচার করে যেতে চায়]

তাহলে এই আয়াতের টার্গেট অডিয়েন্স বুঝা যাচ্ছে তারাই, যারা বিশ্বাস করতে চায়না যে মৃত্যুর পরে শরীর মাটির সাথে মিশে যাওয়ার পরে আল্লাহ তাদের আবার (পরকালে) জীবিত করতে সক্ষম। শরীয়াহর দৃষ্টিকোণ থেকে এরা হচ্ছে ক্রিমিনাল ক্যাটাগরির লোক।

এবার দেখুন, এই ক্রিমিনালদের চিহ্নিত করার জন্য আল্লাহ উপমা দিয়ে ঠিক কিসের উদাহরণ টানলেন?
আল্লাহ বললেন, – তারা মনে করছে আমি তাদের মিশে যাওয়া হাঁড়গুলো একত্র করতে পারবো না? বস্তুত, আমি তাদের আঙুলের ডগা (জনে জনে চিহিত করার জন্য) পর্যন্ত তৈরি করতে সক্ষম।’
অর্থাৎ, ফাঁকি দেওয়ার কোন চান্সই নেই।

দুনিয়াতে ক্রিমিনাল ধরার সর্বোৎকৃষ্ট পদ্ধতির উপমাটি ব্যবহার করেই আল্লাহ বুঝালেন যে অপরাধ করে ফাঁকি দিয়ে পার পেয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নাই।
কথা হলো, ১৮৭০ সালে দিকে আবিষ্কৃত ফরেনসিক সাইন্সের এই জিনিস ১৪০০ বছর আগে মুহাম্মদ (সাঃ) মরুভূমির বালুতে ঠিক কোথা থেকে পেলেন?

আরিফ আজাদের ফেসবুক টাইমলাইন থেকে

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...