ফুজায়েল আহমাদ নাজমুল::
যুক্তরাজ্যে কলেজসেরা হয়েছে মুহাম্মদ শাকির হোসেন। সে খেলাফত মজলিস যুক্তরাজ্য শাখার সহ-সভাপতি মাওলানা সাদিকুর রহমান ভাইয়ের গর্বিত সন্তান। প্রথমে সাদিক ভাইয়ের মুখ থেকে তাঁর ছেলের কৃতিত্বের কথা শুনি। পরে দেখতে পাই দেশ-বিদেশের মিডিয়ায় শাকিরকে নিয়ে মাতামাতি।
বাংলাদেশের এক পাড়াগাঁয়ে থেকে বৃটেনে আসা শাকির চমকে দিয়েছে সাদা চামড়ার মানুষদের্। এটা ছোট কথা নয়। আজ বাঙ্গালী কমিউনিটির পক্ষ থেকে তাকে সম্বর্ধনা দেয়ার দাবী রাখে। আমি মনে করি একটি সম্বর্ধনা তাকে আরো অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এমন একটি আয়োজন আমাদের বাঙ্গালী সন্তানদেরও প্রেরণা যোগাবে। শাকির বৃটেনে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে। এজন্য আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। তাকে অভিনন্দন।
টাওয়ার হ্যামলেটস কলেজ শিক্ষার্থীদের ভর্তি করতে পূর্ব লন্ডনের রাস্তায় রাস্তায় যে বিলবোর্ড টাঙিয়েছে, তাতে শোভা পাচ্ছে শাকিরের ছবি। কলেজের প্রকাশনাগুলোতেও প্রকাশিত হয়েছে তার বদলে যাওয়ার গল্প। এসব দেখে সত্যিই আনন্দ লাগছে।
উল্লেখ্য যে, মোহাম্মদ শাকির হোসেন টাওয়ার হ্যামলেটস কলেজ থেকে সম্প্রতি এ লেভেল সমমান ‘ডিপ্লোমা ইন ইনফরমেশন টেকনোলজি’ বিষয়ে কলেজের সেরা ফল করেছে। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন (ইউসিএল) থেকে সে ভর্তির প্রস্তাব পেয়ে এ বছরই ‘ইনফরমেশন টেকনোলজি ফর বিজনেস ম্যানেজমেন্ট’ বিষয়ে স্নাতক পর্ব শুরু করেছে সেখানে।
২০১২ সালের শেষের দিকে পরিবারের সঙ্গে লন্ডনে আসে শাকির। শাকির কুরআনে হাফিজ। সিলেটের গোলাপগঞ্জের একটি কওমি মাদরাসায় কিতাবি লাইনে সামান্য পড়ালেখা। বাবার কাছে লন্ডন যখন আসে তখন এরচেয়ে বেশি কিছু তার জানা ছিলোনা। মাত্র চার বছরের প্রচেষ্টায় শাকির মাতিয়ে দিলো বৃটেনকে। শুরুতে ‘রেডব্রিজ হিল হাইস্কুলে’ ইয়ার ১১-এ (এসএসসি সমমান) ভর্তি হয়। ইংরেজি জানতো না। স্কুলে গিয়ে বেশ অসহায় অবস্থায় পড়তো। সেখানে কয়েক মাস কাটানোর পর ভোকেশনাল কোর্সে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৩-১৪ সেশনে টাওয়ার হ্যামলেটস কলেজে “ডিপ্লোমা ইন আইটি”–তে ভর্তি হয়। টাওয়ার হ্যামলেটস কলেজের শিক্ষকেরা ভর্তির যাচাইমূলক পরীক্ষা শেষে হতাশ হয়ে আইটি বিষয়ে ‘লেভেল ওয়ান’ থেকে শুরু করতে বলেন শাকিরকে। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ না যেতেই নিজের চেষ্টা আর একাগ্রতায় শিক্ষকদের নজর কাড়তে শুরু করে সে। তখন তাকে ‘লেভেল টু’তে উত্তীর্ণ করে দেওয়া হয়। এই শ্রেণিতে এক বছরের কোর্সে ৯টি ইউনিটের প্রতিটিতে ‘ডবল ডিসটিঙ্কশন স্টার’ (সর্বোচ্চ গ্রেড) অর্জন করে শাকির। আর দুই বছরমেয়াদি ‘লেভেল থ্রি’র ১৮টি ইউনিটের পরীক্ষায় গড়ে ‘ট্রিপল ডিসটিঙ্কশন স্টার’ (সর্বোচ্চ গ্রেড) পেয়ে তাক লাগিয়ে দেয় সবাইকে।
শাকিরের অনুভূতি জানতে চাইলে সে বলে – ইচ্ছা আর একাগ্রতা থাকলে অনেক কিছু্ অর্জন সম্ভব। অবশ্য নিজের এই অর্জনের জন্য বাবা-মায়ের সচেতনতা আর কলেজশিক্ষকদের বাড়তি যত্নকে অস্বীকার করতে পারিনা। মাত্র তিন বছরে সবকিছু আমূল বদলে গেল—মন্তব্য করেন শাকির বলে, যুক্তরাজ্যে বেড়ে ওঠা তার বয়সী অনেক শিক্ষার্থী পড়ালেখাকে পাত্তা না দেওয়ায় ছিটকে পড়েছে।
যত দূর সম্ভব আমি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই। আর একজন ভালো মানুষ হওয়াটাই আমার জীবনের লক্ষ্য। অন্যের জীবনকে বদলে দেওয়ার জন্য কিছু করতে পারলে সেটাই হবে সার্থকতা।
ভাতিজা শাকির! এগিয়ে যাও সফলতার মঞ্জিলের শেষ সীমানায়। তোমার জন্য অনেক অনেক দুয়া ও ভালোবাসা রইলো।