বুধবার, ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১:০৭
Home / প্রতিষ্ঠান / অন্তরের আলোয় উদ্ভাসিত হাফিজ কলিম সিদ্দিকী

অন্তরের আলোয় উদ্ভাসিত হাফিজ কলিম সিদ্দিকী

 

hafij-k.siddiki-Komashisha

আবুল মুহাম্মদ ::

জন্ম থেকে নেই চোখের জ্যোতি। অন্তরে তার জ্ঞান আহরনের অদম্য পিপাসা। প্রবল মনোবল আর অসাধারণ গুনাবলী দিয়ে তিনি এখন সকলের নয়নের মনি। সকলের চোখের তারায় তারায় তাকে নিয়ে অনাগত দিনের সোনালী স্বপ্ন। তিনি হচ্ছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৩নং ওয়ার্ডের মাছিমপুর এলাকায় অবস্থিত জামিয়া মাছুমিয়া ইসলামিয়া মাছিমপুর মাদরাসার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিস্ময় বালক হাফিজ কলিম সিদ্দিকী। মাদরাসার প্রিন্সিপাল হযরত মাওলানা হাফিজ নাজমুদ্দিন কাশিমী আর ওস্তাদদের কোমল পরশে আর স্নেহ মাখা পরিচর্যায় কলিম সিদ্দিকী আজ একটি ফুটন্ত ফুল। চোখের তারায় আলোর ঝিলিক নেই তাতে কি? অন্তরের আলোয় উদ্ভাসিত কলিম সিদ্দিকীর বুকে আজ লালিত হয়েছে মহাগ্রন্থ আল কোরআনের বাণী। অন্তর থেকে নিঃসৃত সুললিত কন্ঠে হাফিজ কলিম সিদ্দিকীর তেলাওয়াত শুনে আজ বিমুগ্ধ মানুষ। অবাক বিস্ময়ে অনেক সুস্থ মানুষ কলিম সিদ্দিকীর প্রতি আল্লাহ তালার অপার মহিমার বিষয়টি তাকিয়ে দেখেন। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অহংকার জামিয়া মাছুমিয়া ইসলামিয়া মাছিমপুর মাদরাসার শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধার ঢালি নিয়ে আসেন অনেক গর্বিত মানুষ। যেসব মানুষ গড়ার কারিগররা পাথরে ফুল ফোটাতে কার্পন্যবোধ করেননি। চোখের আলোর বদলে অন্তরের আলো দিয়ে হাফিজ কলিম সিদ্দিকীকে গড়ে তোলার প্রয়াস চালান। শুরু হয় এক নতুন অভিযাত্রা। শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম মেধা আর দুরদর্শিতায় পবিত্র কোরআন বুকে ধারন করতে সক্ষম হন কলিম সিদ্দিকী। শিক্ষকদের উসিলায় অন্ধ কলিম কে অকাতরে মেধা আর জ্ঞান দান করেন মহান আল্লাহ তায়ালা। শিক্ষদের প্রত্যাশা সেই দিন আর দুরে নয় যেদিন মেধায় প্রজ্ঞায়, জ্ঞানে গুনে কলিম সিদ্দিকী বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। আবারো প্রমাণিত হবে অদম্য স্পৃহা, দৃঢ় মনোবল আর আন্তরিক পৃষ্টপোষকতা মানুষকে সাফল্যের চূড়ায় প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। জন্মান্ধ হাফিজ কলিম সিদ্দিকী মেঘালয়ের পাদদেশ সোনাই নদীর তীর ছাতক উপজেলার প্রান্তিক গ্রাম দুনবাড়ী বাজার এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে জামিয়া মাছুমিয়া ইসলামিয়া মাছিমপুর মাদরাসার হিফজ শাখায় ভর্তি হন। এরপর শুরু হয় তার পথচলা। শিক্ষকগণ অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে তার লকজী ভূল, তাজবীদ ও ইয়াদের দুর্বলতা সহ অন্যান্ন ক্রুটি বিচ্যুতি দুর করে সহীহ তিলাওয়াত যোগ্য করে গড়ে তুলেন। ফলে চঐচ কুরআনের আলো জাতীয় হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা ২০১৫এ অংশগ্রহণ করে সেরা দশে স্থান লাভ করে দেশ বিদেশের মানুষকে অবাক করে তুলেন কলিম সিদ্দিকী। এ প্রতিযোগিতায় এক লক্ষ দশ হাজার টাকা পুরস্কার এবং উস্তাদ সহ উমরাহ করার সুযোগ লাভ করেন। বর্তমানে জামিয়া মাছুমিয়া ইসলামিয়া, মাছিমপুর মাদরাসার কর্তৃপক্ষ তাকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত করছেন। তার ভবিষ্যৎ জীবন উজ্জ্বল করার জন্য উন্নত পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন। জামিয়া মাছুমিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল হযরত মাওলানা হাফিজ নাজমুদ্দীন কাসিমী এ প্রসঙ্গে বলেন জন্মান্ধ হাফিজ কলিম সিদ্দিকীকে বিশ্বমানের হাফিজ ও আলিম হিসাবে তৈরী করতে গুরুত্বসহকারে আমরা কাজ করছি। তার সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে আমাদের পক্ষ থেকে সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

এ প্রসঙ্গে হাফিজ কলিম সিদ্দিকী বলেন আমি মহান আল্লাহর দরবারে শুকুর আদায় করছি। আমার উস্তাদগণ ও জামিয়া মাছুমিয়া ইসলামিয়া মাছিমপুর মাদরাসার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমার উস্তাদগণ আমাকে বিশ্বমানের আলিম হিসাবে গড়ে তুলতে কাজ করছেন। আপনারা দোয়া করবেন যেন আমি আমার উস্তাদ গণের প্রত্যাশা পুরণ করতে পারি। আমাদের গ্রামগঞ্জে এমন কত কলিম ঘুরে বেড়ায়, পরিচর্যা ও সুযোগ সুবিধার অভাবে তারা তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ পায় না। দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যদি খুজে খুজে এমন বালক বালিকাদের পাশে দাঁড়ান তাহলে আরো কত সহস্র কলিম সিদ্দিকী হয়তো বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারতো বিষ্ময় বালক জন্মান্ধ কলিম সিদ্দিকীকে উপহার দেয়ায় জামিয়া মাছুমিয়া ইসলামিয়া মাছিমপুর মাদরাসাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

লেখক: বার্তাসম্পাদক, দৈনিক শ্যামল সিলেট

About Abul Kalam Azad

এটাও পড়তে পারেন

চলতি সংসদ অধিবেশনে কওমি সনদ পাশের সম্ভাবনা!

আবদুল্লাহ তামিম: ‘কওমি মাদরাসা সমূহের দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল)-এর সনদকে আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এর ...