খতিব তাজুল ইসলাম :
বাংলাদেশের সবক’টি রাজনৈতিক দলের মনোভাব ঠিক এমনই বলা যায়। তারা সুষ্ঠু একটি নির্বাচন কামনা করেন। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এদেশে আরো অনেক হয়েছে কিন্তু তা কোনো সমাধান নিয়ে আসতে পারেনি। ক্ষমতার হাত বদলই যদি সকল শান্তির মূল উৎস হয়, তাহলে অতীতে হাত বদল কি কম হয়েছে? এরপরও জাতি কেনো শান্তি পেলনা? রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কোনো সূত্রেও তো একথার উল্লেখ নেই যে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনই একটি দেশের সকল সমস্যার একমাত্র সমাধান। যতক্ষণ পর্যন্ত সব দল মিলে একটা কমন ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো সমাধান নেই। কমন ইস্যু বলতে জাতীয় ইনট্রেস্টে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। ১৯৭৫’র পটপরিবর্তনের পর যে উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছিলো, তার একটা সুরাহা মোটামোটি হয়েছে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচারের মাধ্যমে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়টাও একটা চূড়ান্ত ফয়সালার দিকে চলমান। তাহলে বাকি রইলো কি? যুদ্ধাপরাধের বিচার বা বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচারটা কিন্তু জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে হয়নি। আওয়ামীলীগ একপ্রকার গায়ের জোরেই করেছে। স্বচ্ছতার বিরাট একটা ফাঁক রয়ে গেছে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়ার মাঝে। এছাড়া তাদের কোনো উপায়ও ছিলোনা। প্রশ্ন হলো, এসব বিচারের মাধ্যমে কি রাজনৈতিক সংকটের ফয়াসালা বা সমাধান এসেছে? না, এসেছে বলে মনে হয়না। দৃশ্যপট পরিবর্তনের সাথে সাথে জঞ্জাল আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠার সমূহ আশংকা বিরাজমান।
এখানে আছে ৭২ এর সংবিধান পুণঃপ্রবর্তনের বিষয়। আওয়ামীলীগ ভারতের চাপে হয়তো একপ্রকার জেদে ১৯৭২’র সংবিধান ফিরিয়ে এনেছে। এখানে চিন্তার বিষয় হলো, ১৯৭২’র সংবিধানে আসার সাথে সাথেই কি বাংলাদেশের উন্নতি তরান্বিত হয়েছে বা হওয়ার কোন কেরেশমা আছে? একদিকে গণতন্ত্র অপরদিকে সমাজতন্ত্র, সাথে আছে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ। এসব কিন্তু দেশের সংখ্যাগরিষ্ট জনগণের কোনো ম্যান্টেড নিয়ে বসানো হয়নি। চাপিয়ে দেয়া এইসব মূলনীতিও একটা ফ্যাক্টর।
বুঝলাম, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির এসবে কোনো বিরোধ নেই। তাহলে সমাধান অত্যাসন্ন তো হওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু না, তা সুদূর পরাহত। আছে রাজনৈতিক কুঁটচাল। বিশেষ ক্ষমতা বলে জারি করা কালো আইন কেউ ওঠাতে চায়না। কারণ, সকলেই তার প্রতিপক্ষকে এই কালো আইন দিয়ে ঘায়েল করতে চায়। আছে প্রধানমন্ত্রীর হাতে অসীম ক্ষমতা। যা হাসিনা খালেদা কেউই হারাতে চায় না। আছে ঘেরাটুপে বন্দী বিচার বিভাগের বিষয়। বিচারকদের দিয়ে পছন্দের রায় কামাতে তারা বিচার বিভাগকে পূর্ণ স্বাধীন করে না। আছে পুলিশকে রাজনৈতিক মকসুদে ব্যবহার করার ঘৃণ্য মানসিকতা। আছে প্রশাসনকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করার কলাকৌশল। শিক্ষা, প্রশাসন সব জাগায় চলে রাজনৈতিক নিয়োগ বাণিজ্য। আছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রভাব বিস্তারের নামে ছাত্র নামধারী লাঠিয়ালদের লালন-পালন। আছে ঠিকাধারী সিন্ডিকেট মিশন। এসব গুরুত্বপুর্ণ বিষয়ে কোনো প্রকার আলাপ আলোচনা নেই। দেশের আপামর জনসাধারণের কল্যাণের ব্যাপারে, দেশের সার্বিক উন্নতি, অগ্রগতির বিষয়ে, আইনের শাসন কায়েম হওয়ার বেলায় কোনো প্রকার উচ্চবাচ্য নেই। না আছে হরতাল-আন্দোলন না করার কোন প্রকার অঙ্গীকার, না আছে ধর্মঘটের নামে জ্বালাওপোড়াও ভাংচুর ছেড়ে দেয়ার শপথ! তাহলে সমাধান আসবে কিভাবে? শুধু নিরপেক্ষ নির্বাচন হলেই সার- একথার প্রমাণ কী? এসব বিষয়ে কোনো প্রকার অঙ্গীকার ব্যতিরেকে ভোটের আলাপন, নির্বাচনের স্বচ্ছতা, নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে আলোচনা আইওয়াশ ছাড়া কিছুই নয়। তাই সকল দল মিলে আগে এসব বিষয়ের উপর ইত্তেফাক হওয়া জরুরি। নির্বাচন কমিশনের নামে বেহুদা বকওয়াস আর কিছু নির্বচনী আইনের মারপ্যাঁচ এবং ক্ষমতার হাত বদলে কোনো কল্যাণ নেই, আসবেও না। আশা করাটাও প্রচন্ড বোকামী বৈ কিছু নয়।
:
লন্ডন ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭