তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর বইমেলা আসলেই বাংলাদেশের নানা প্রান্ত থেকে ফোন পাই “ভাইয়া! বইমেলায় আপনাদের স্টল আছে?” এ প্রশ্নের উত্তর কী করে দিই বলেন। কীভাবে বলি নাই। আমার চোখের সামনে তো এখনো ভাসছে কলেজ-ভার্সিটির ছেলে-মেয়েসহ নানা স্তরের নানা ক্রেতার উপচে পড়া ভিড়। শুধু আমাদের স্টল কেন, আমাদের সাফল্যতা দেখে পরবর্তী বছর এমদাদিয়া লাইব্রেরীও স্টল দিয়ে ব্যাপক সাফল্যতা পেয়েছে। ইসলামি জ্ঞান নিয়ে যারা সারা বছর চর্চা করেন, পড়েন, জানেন বইমেলায় তাদের কথা ভিন্ন। অপরদিেক সাধারণ মানুষ যারা ইসলামি জ্ঞান চর্চার জন্য তেমন কোনো বই পান না, তারা যখন বইমেলায় আমাদের মত এরকম নির্ভরযোগ্য ইসলামি প্রকাশনাগুলো দেখতে পায় তখন তারা যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এখনকার অবস্থা কি রকম জানি না। বাট ‘ছুটির দিনে মেলায় উপচে পড়া ভিড়’ এরকম শিরোনাম সে সময়ের জন্য বেশ খাটে। হ্যাঁ, বইমেলা এলে প্রতিবছরই যাই। দু-একটা ইসলামি প্রকাশনা যারা আছে তাদের খোঁজ নিয়ে জানি বেশ সেল হচ্ছে।
তারপর আপনারা স্টল পেলেন না কেন? জানতে চাইলে তিনি জানান, বর্তমান সরকার যে বছর ক্ষমতায় এসেছিল, সে বছর আমরা আবেদন করলে আমাদের স্টল দেয়নি। পরবর্তী করেছি, তখনও দিলো না। তারপরের বছরেও দিলো না। কেন দিলো না বা দিচ্ছে না? এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা দেয় নি।
ঠিক এরকম তথ্য পাওয়া গেল বাংলাবাজারের ইসলামি টাওয়ারে অবস্থিত দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে প্রকাশনা শিল্প ধরে রাখা প্রতিষ্ঠান নাদিয়াতুল কুরআন প্রকাশনার ম্যানেজার এনায়েতুল্লাহ মাহমুদের কাছ থেকে।
এনায়েতুল্লাহ মাহমুদ বলেন, বেশ কয়েক বছর আবেদন করেও স্টল পাই নি। কি কারণে দিচ্ছে না আমাদের তার সুস্পষ্ট কোন ব্যাখ্যাও দেয় নি।
ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন? এ প্রশ্ন রাখলে তিনি জানান, ব্যাখ্যা চাওয়ারও তো কোনো সুযোগ নেই। তাই আমরা ভেবে নিতে বাধ্য হয়েছি যে, ইসলামি প্রকাশনা বলে আমাদেরকে স্টল দিচ্ছে না।
একই প্রশ্ন রাখা হয় ইসলামি প্রকাশনার অভিজাত মুদ্রণ ও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বাংলাবাজারের ইসলামি টাওয়ারে অবস্থিত মাকতাবাতুল আশরাফের স্বত্ত্বাধিকারী বিশিষ্ট আলেম, মুহাদ্দিস মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান খান এর কাছে।
তিনি জানান, আওয়ামী লীগের এর আমলে (সম্ভবত) ১৯৯৮ সালে প্রথম আমরা অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আমরা স্টল পাই। লাগাতার ৫ বছর আমাদের মাকতাবাতুল আশরাফ এর স্টল বইমেলায় ছিল। সে সময়ের উজ্জ্বল স্মৃতির কথা উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ইসলামি বইয়ের প্রতি বাঙালি পাঠকদের প্রবল ঝোঁক প্রত্যক্ষ করি তখন। নিজের ভেতরেও তাই ভালোলাগা কাজ করতো ইসলামি বইগুলো সবধরনের পাঠকদের হাতে তুলে দিতে পেরে। সেখানকার প্রায় ইসলামি বইয়ের সব ক্রেতাই সাধারণ (নন আলেম) মানুষ। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ- ভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে অধ্যাপক, নামী-দামি ব্যক্তিদের চাহিদা দেখি প্রশংসনীয়। এমনও হইছে মেলার শেষ রাতের সময় শেষের পরে ফিরে আসার মনস্থে আমরা গুছিয়ে নিচ্ছিলাম বইগুলো। ঠিক এমন মুহূর্তে এক শিক্ষিত ভদ্র লোক আমাদের বইগুলো ঘেঁটে ঘেঁটে দেখে সকল বইয়ের দুইটি করে কিনে নিলো। এতো বই কেনার কারণ জিজ্ঞেস করলে জানালো, ‘আমি মেলার স্টলগুলোতে ঘুরে ঘুরে দেখেছি, লেখায়, কাগজে, মানে এ প্রকাশনার বইগুলো ব্যতিক্রম ও স্বাচ্ছন্দ। নিজের পারিবারিক পাঠাগারে সংরক্ষণে তাই নিয়ে নিলাম’।
তারপর তিনি বিষন্নতার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত ক্ষমতার মাঝামাঝিতে (সম্ভবত ২০০৩ এর মেলায়) আমাদের স্টল বরাদ্দ দেয়া থেকে বিরত থাকে বাংলা একাডেমি। আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হই। ব্যর্থ হই পরবর্তীতে আওয়ামী সরকার এলেও। যতবারই আবেদন করেছি ততবারই আমাদের আবেদনকে গ্রাহ্য করে নি। শেষমেষ যখন দেখলাম আবেদন করে লাভ নাই, তখন আর আবেদন করে নিজেকে আর ছোট করতে যাইনি।
আপনাদের আবেদনগুলো কেন গ্রহণ করছে না? মেলায় স্টল দেয়ার জন্য যে যোগ্যতা বা শর্তের প্রয়োজন তা কি নেই আপনাদের? এ প্রশ্ন রাখলে তিনি জানান, মেলায় স্টল দেয়ার জন্য সকল যোগ্যতা বা শর্তের আওতাধীনে আছি আমরা। বছরে আমাদের ১৫ টি থেকেও বেশি বই প্রকাশিত হয়। শুধু ১০০ কেন আমাদের নিজস্ব বই কয়েকশ। বইয়ের মানগত লেখা, ছাপা থেকে শুরু করে ট্রেডলাইসেন, টিন সার্টিফিকেট বা ইনকাম টেক্সেও আমাদের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ নাই।
মোহাম্মদী লাইব্রেরী প্রকাশনার ম্যানেজার ইয়াছিন তোরাব জানান, আমাদের বইয়ের লেখার মান, ছাপার গুণগত মান ইত্যাদি ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগও যদি দিতো, তাহলে আমরা তা শুধরে নিতাম। তিনি আরো বলেন, আমাদের মোহাম্মদী স্টল সবসময়ই রাস্তায় ছিল। আমরা খুশি মনে গ্রহণ করে নিয়েছি। স্টল বন্ধ করে দেয়ার পর এমন কত বছর গেছে যে, অপেক্ষার প্রহর গুণে গুণে ভাবতাম, শুরুর দিকে দিছে না, হয়তো মেলার শেষ দিকেও অাবেদন গ্রহণ করতে পারে আমাদের। কারণ, অনেক সময় আবেদন ঝুলে থাকতো, মাঝ বা শেষের দিকে কারো কারো আবেদন গ্রহণ করার তালিকা উঠতো। অপেক্ষা করতে করতে আমরা মেলার শেষ দিনও আশা ছাড়িনি। হয়তো শেষ দিন দিবে এ আশায় বুক বাঁধতাম। পুরো মাস না পারি মেলার অন্তত শেষের দিনেও যদি ইসলামি বইগুলো পাঠকের হাতে তুলে দেয়া যায়।
বাংলা একাডেমি বা মেলা কর্তৃপক্ষ ডিরেক্টলি কি আপনাদের আবেদন ‘না’ করে দেয়? এ প্রশ্ন উঠালে প্রকাশকদের বিভিন্ন উত্তর পাওয়া যায়। মাকতাবাতুল আশরাফের স্বত্ত্বাধিকারী জানান, হারানো স্টল পাওয়ার জন্য আমরা পরিচিত উচ্চ পদস্থ লোকদের দারস্থ হই। তাঁরা একাডেমিকে স্টল দেয়ার জন্যে সুপারিশ করলে জানাতো, বাংলাবাজারের প্রকাশনা বাংলাবাজার পুস্তক প্রকাশক সমিতি দেখে। তাদের মারফত হয়ে আবেদন করতে বলেন।
তিনি বলেন, পুস্তক প্রকাশক সমিতি আসলে কিছুই না। বরং একাডেমির মাধ্যমেই সরাসরি আবেদন গৃহীত করা হয়। এ বিষয়ে (প্রতিবেদক নিজেও) বাংলাবাজার লিয়াকত এভিনিউর দু-তলায় অবস্থিত পুস্তক প্রকাশক সমিতির সাথে আলাপ করলে তারা জানান, ‘না, পুস্তক প্রকাশক সমিতির মাধ্যম হতে হয় না। বরং সরাসরি বাংলা একাডেমির মাধ্যমেই আবেদন গৃহীত করা হয়’।
মাকতাবাতুল আশরাফের স্বত্ত্বাধিকারী আরো জানান, সকল ধরনের শর্ত ইত্যাদি পুরা করার পরেও কখনো কখনো তারা (একাডেমি) বলতো, ঠিক আছে। কিন্তু লটারিতে আপনাদের নাম আসে নি এ বলে পাশ কাটাতো। অভিজাত প্রকাশনার এ মালিক আরো বলেন, পরে আমরা গোপনসূত্রে জানতে পেরেছি, লটারিতে ইসলামি প্রকশনাগুলোর নামই রাখা হয় নি।
মোহাম্মদী লাইব্রেরী ও নাদিয়াতুল কুরআন বলেন, নিজেদের পরিচিত উচ্চ পদস্থ লোকদের দিয়ে কাজ চালালে জানতে পারি, ‘তারা (একাডেমি) আমাদের নাম পরিবর্তন করতে বলে, ইসলামি নাম এখানে (মেলায়) চলতে পারবে না’ বলে ব্যক্ত করে।
নাম পরিবর্তন করার সুযোগ বা ইচ্ছে আছে? জানতে চাইলে তারা দৃপ্ততার সাথে জানায়, ঐতিহ্যবাহী এসব প্রকাশনার নামকে শুধুমাত্র একটি মাসের জন্য পরিবর্তন করে দিতে পারি না। সমগ্র বাংলাদেশ এক নামে চিনে আমাদের প্রকাশনাকে। বছর বছর ধরে চলে আসছে এ নামেই।
মাকতাবাতুল আশরাফের প্রকাশক বলেন, আমাদের বই মদীনা পাবলিকেশন্সের পরিবেশনায় কলকাতা বইমেলায়ও যায়। এমন কোনো বছর যায় নি যে, দু-একটা বই ফিরে এসেছে।
আলাপ করা হয় মাকতাবাতুস সাহাবা, মাকতাবাতুল হেরাসহ বাংলাবাজারের আরো কয়েকটি ইসলামি প্রকাশনার সাথে। তাদের সবার বক্তব্য প্রায় একই।
মাকতাবাতুস সাহাবা প্রকাশনার স্বত্ত্বাধিকারী মুরশিদ হাসান জানান, যেহেতু আমাদের নামিদামি কয়েকটি প্রকাশনা আবেদন করে পিছু পিছু ঘুরেও কোনো লাভ হয় নি, তখন আবেদন করার কোনো ভরসা পাই নি।
ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত পুস্তক সমিতির সাবেক সভাপতির সাথে এ নিয়ে আলাপ করলে তিনি জানান, ‘ইসলামিক নাম দেখলে আবেদন গ্রহণই করবে না’। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকাশক বলেন, ‘বামপাড়ার প্রভাবে বইমেলায় ইসলামি প্রকাশনা ঢুকতে দেয় না’।
বাংলাবাজারের প্রকাশনা জগতের বিভিন্ন লোকদের কাছে জানা গেল, বইমেলা কর্তৃপক্ষের কিছু লোক ইসলামিক স্টলগুলোর কথা উঠলেই ‘এখানে ইসলামিক স্টল থাকবে কেন!’ বলে চিল্লিয়ে ওঠেন। ভদ্রভাবে কোনো কোনো কর্তৃপক্ষ এভাবে যুক্তি তুলে ধরেন যে, ‘আপনাদের জন্য তো ইসলামিক ফাউন্ডেশন বইমেলা আছে। তাছাড়া আপনারা হুজুর মানুষ, দেখেনই তো এখানকার পরিবেশ আপনাদের অনুকূলে না, ইসলামি প্রকাশনা হিসেবে আপনাদের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন বইমেলাই অনুকূল, সুন্দর পরিবেশ’।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বইমেলা বিষয়ে বাংলাবাজারের ইসলামি প্রকাশনাগুলোর কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বইমেলা তো আর জাতীয় বইমেলার মত না। একুশে বইমেলা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার। সবধরনের পাঠক-ক্রেতা সেখানে যায়। প্রকাশকদের সারা বছরের স্বার্থক ফসল আসে একুশে বইমেলা থেকে। প্রকাশনা হিসেবে আমাদেরও তো অধিকার আছে সেখানকার স্টল বরাদ্দের জায়গা পাবার। ইসলামিক-অনইসলামিক বিভাজন তৈরি করবে কেন! বাণিজ্য মেলা তো ইসলামিক-অনইসলামিক বিভাজনে বিভাজ্য না। টুপি, পাঞ্জাবী, বোরকাও তো পাওয়া যায়। ইসলামিক পোশাকের দোকানদার তো বাণিজ্যমেলা কর্তৃপক্ষ বলে না যে, আপনাদের জায়গা এটা না, ইসলামিক বানিজ্যমেলাই আপনাদের অনুকূল জায়গা। তাছাড়া, ফাউন্ডেশনের মেলার কথা কয়জনেই বা জানে। না আছে তার কোনো প্রচারণা, না আছে মিডিয়ার উদ্যোগি কাভারেজ। না আছে মেলার কোনো পরিবেশ। যারা জায়গা পাচ্ছে তাদের স্টলও নান্দনিক না। অগোছালো। এরকম অব্যবস্থাপনায় ক্রেতাদের আগ্রহ থাকে কী করে!’
তারপরও কি আপনারা ফাউন্ডেশনের বইমেলায় স্টল দেন? এরকম প্রশ্ন তুললে মাকতাবাতুল আশরাফের স্বত্ত্বাধিকারী জানান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বইমেলা যদিও অগোছালো, দায়সারা গোছের, তবুও সেখানে ক্রেতাদের চাহিদা বিবেচনা করে স্টল নিতাম। কিন্তু ২০১৫ থেকে আমরা ফাউন্ডেশনের বইমেলায়ও স্টল দিই না। কেন দেন না? বললে জানান, ‘ কি আর বলবো, বলতে খুবই লজ্জা এবং দুঃখ লাগে, বেশ কযেকবছর যাবত বেদআতি প্রকাশনাদের অগ্রাধিকার দেয়া শুরু হয়েছে। এই অগ্রাধিকারের বিষক্রিয়া এতটাই মারাত্মক যে, আমাদের প্রকাশনাগুলোকে তারা লটারির বাইরে রেখে তাদের প্রকাশনাগুলোকে ভালো ভালো জায়গায় স্টল দেয়ার পর জায়গা খালি থাকলে আমাদের দিতো। তাছাড়া, এই বইমেলায় কোনো নিরাপত্তা নেই, বইচুরি হয় ঘন ঘন। সব মিলিয়ে আমাদের ভরসার স্থল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বইমেলা থেকে আমরা মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছি’।
একুশে বইমেলা বা ফাউন্ডেশনের মেলায় স্টল দেয়ার ইচ্ছা আছে কি? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফাউন্ডেশনের বইমেলা দলীয়মুক্ত, পরিবেশ ভালো হলে স্টল দিবো। আর একুশে বইমেলায় স্টল দেয়ার সম্পূর্ণ যোগ্যতা তো আমাদের আছেই। উনারা যদি আমাদের সুযোগ দেন তাইলে অবশ্যই আমরা বইমেলায় স্টল নিতে সম্পূর্ণ রাজি’। বাংলাবাজারের ইসলামি প্রকাশনার অভিজাত মুদ্রণ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের এই মালিকের ইচ্ছা লালনের ন্যায়ই অন্যান্য ইসলামি প্রকাশনাগুলোর একান্ত বাসনা বাঙ্গালি জাতিসত্ত্বার অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশনা শিল্পের অধিকার হিসেবে তাদের জন্যও স্টল বরাদ্দের আবেদন গ্রহণ করে সর্ব স্তরের বাঙ্গালী পাঠক-পাঠিকার হাতে ইসলামি বই তুলে দেয়ার সুযোগ প্রদান করা হোক। ইসলামিক-অনইসলামিক বৈষম্যের শিকারে যেন তারা পরিণত না হয়।
পাঠকদের চাহিদা মূল্যায়ন বিবেচনা করে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষেকে ইসলামি প্রকাশনাগুলো আওয়ার ইসলাম মারফতে বিনিত আহবান জানায়।
একুশে বইমেলায় ইসলামি প্রকাশনা বলতে গেলে নাই। একটা সময়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহি প্রকাশনা মোহাম্মদী লাইব্রেরী, এমদাদিয়া লাইব্রেরী, অভিজাত প্রকাশনা মাকতাবাতুল আশরাফসহ অনেক ইসলামি প্রকাশনাগুলো অমর একুশে বইমেলায় স্টল বরাদ্দের সুযোগ দেয়া হয়েছিল, এখন নাই, দেয়া হচ্ছে না, কেন হচ্ছে না?
এ বিষয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক জনাব শামসুজ্জামান খান এর সেলফোনে বারবার কল দিলেও রিসিভ না হওয়ায় বাংলা একাডেমির পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল হাই এর সেলফোনে কল দেয় হয়। তিনি জানান, ‘বইমেলায় স্টল নেয়ার জন্য যারা আবেদন করে, তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী তাদের স্টল দেয়া হয়। বাংলা একাডেমি তাদেরকে স্টল না দেয়ার অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে না’।
আপনারা কি ‘ইসলামি প্রকাশনার জায়গা এটা নয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বইমেলা তাদের জায়গা’ এরকম যুক্তি দেখিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এখন বাংলা একাডেমিতে নাই, আমি রিটার্ন। তারপরও যেহেতু আপনি প্রশ্ন তুলেছেন তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে বলতে চাই- ‘প্রত্যেকটা মানুষ ধর্মের কাছে দুর্বল। আমরা মুসলমান। এদেশের নব্বই ভাগ আমরা। অমর একুশে বইমেলা আমাদের সবার। দেশের সবধরণের পাঠকের চাহিদা পূরণ করার জায়গা বাংলা একাডেমির গ্রন্থমেলা। এখানে ইসলামি প্রকাশনা থাকবে না এটা অনুচিত। এই অনুচিত কাজ বাংলা একাডেমি করতে পারে না। যে সমস্ত অভিযোগগুলো তোলা হয়েছে তা বাংলা একাডেমি করবে না বলে আমার বিশ্বাস। তাছাড়া বইমেলা সংক্রান্ত নীতিমালা চেঞ্জ হয়েছে। হয়তো তারা এই নীতিমালার আওতাধীনে পড়ে নি। আপনি এ বিষয়ে এখনকার নীতিমালার সদস্য সচিব জালাল আহমেদ এর কাছ থেকে নীতিমালাটা সংগ্রহ করে দেখুন, এ নীতিমালাতে তারা আছে কী না। ধন্যবাদ আপনাকে, আমাকে স্মরণ কররার জন্য।
একটু পর সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদকে ফোন দিলে তিনি জানান, ‘ইসলামিক-অনইসলামিক এ ধরনের বৈষম্য বাংলা একাডেমি সৃষ্টি করে না, ধর্মভিত্তিক বিভাজন হিসেবেও বাংলা একাডেমি কাউকে স্টল দেয় না। বাংলা একাডেমি আবেদনকৃত প্রকাশনাগুলোর যোগ্যতা দেখে স্টল বরাদ্দের সুযোগ দেয়। বইয়ের গুণগত মান, ৫ বছরে কমপক্ষে নিজস্ব ৫০ টা বই এবং যে বছরে আবেদন করছে সে বছরে ২০টা বই ছাপছে কি না তা দেখে। এ বিষয়গুলো তো আমরা দেখি না, বইমেলার জন্য আমাদের কমিটি আছে। সে কমিটিতে পুস্তক প্রকাশনা সমিতির সাধারণ সম্পাদক থাকে, প্রতিনিধি থাকে। সকলের মূল্যায়ন বিবেচনায় যে সমস্ত প্রকাশনগুলোর নাম আসে তাদের স্টল দেয়া হয়’।
কিন্তু স্যার! ‘তারা তো আপনাদের দেয়া শর্তের আওতাধীনে আছে, অনেক ইসলামিক প্রকাশনার বইয়ের গুণগত মান, বছরে বা পাঁচ বছরে যে কটা বই থাকা শর্ত তার সবই আছে’ জানালে তিনি বলেন, সেটা তো আপনি দেখলে হবে না। কমিটির চোখে পড়তে হবে। তাহলে কি আপনারা বা ইসলামি প্রকাশনার জায়গা এটা নয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বইমেলা এরকমটা কি আপনারা বলেন, জানত চাইলে তিনি জানান, দেখুন এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই। এ ধরনের কোনো কথা কেউ বলেছে বলেও আমাদের জানা নেই। আমরা বিষয়টা দেখব। আর যে সমস্ত শর্তের কথা বললেন, তা নেই। একুশে মেলায় স্টল নেয়ার জন্য যা প্রয়োজন তা আগেই বলেছি ধন্যবাদ আপনাকে’।
আওয়ার ইসলামের সৌজন্যে।