বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সন্ধ্যা ৭:৪৪
Home / আন্তর্জাতিক / কে এই ডোনাল্ড ট্রাম্প?

কে এই ডোনাল্ড ট্রাম্প?

আবুল হুসাইন অলেগাজী :

বিশ্বজুড়ে আলোচিত নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে গত ৪ জানুয়ারী বিবিসি বাংলা ‘কে এই ডানাল্ড ট্রাম্প?’ শিরোণামে লিখেছে, “জন্ম নিউ ইয়র্কে ১৯৪৬ সালে। বাবা ছিলেন রিয়াল এস্টেট ব্যবসায়ী। তিনি নিজেও এই খাতে সফল। কিন্তু তার রয়েছে হরেক রকম পরিচয়।ব্যবসায়ী ছাড়াও তিনি মিস ইউনিভার্সের স্পন্সর ছিলেন দীর্ঘদিন। তাতে তার নামযশ ও অর্থ-বিত্ত হয়েছে অনেক।এপ্রেনটিস্ট নামের একটি রিয়ালিটি টিভি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ছিলেন। রেসলিং ম্যাচ উপস্থাপনা করেছেন। বেশ কবার নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করেছেন। কিন্তু আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন। মামলা ঠুকেছেন এবং মামলা খেয়েছেন। এখন তার ৫৮ তলা একটি ভবন রয়েছে। স্পোর্টস ক্লাব, শেয়ার বাজারে পুঁজি, সবমিলিয়ে ৯ শত কোটি ডলার সমপরিমাণ সম্পদের মালিক। রাজনীতিতে তার কোন অভিজ্ঞতাই নেই তবুও যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলা হয় নিজের সম্পর্কে প্রচার তিনি খুব ভালভাবে করেন। তাই পাচ্ছেন সেলেব্রিটির মতো মনোযোগ। তবে সেই মনোযোগের সবটাই সুখের নয়। সে দেশে মুসলিম দের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করা উচিত এমন বক্তব্য দিয়ে হাততালি যেমন পেয়েছেন, আবার ব্যাপক সমালোচিতও হয়েছেন। সম্প্রতি সোমালিয়ার জিহাদি গোষ্ঠী আল-শাবাব তাদের একটি প্রচারণামুলক তথ্যচিত্রে ট্রাম্পের এই বক্তব্য জুড়ে দেয়। এর পরও পিছু হটেন নি তিনি; বরং উল্টো বলেছেন, দেশের জনগণ তার এই সাহসিকতার জন্য প্রশংসা করছে। তার ভাষায়, সমস্যাটিকে অনেকেই এড়িয়ে গেছেন। প্রতিবন্ধী এক সাংবাদিককে ব্যঙ্গ করে সমালোচিত হয়েছেন। রিপাবলিকান দলের এক নারী রাজনীতিবিদকে কুৎসিত বলেছেন আবার সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের সাথে ঝগড়া করেছেন। প্রায় নিয়মিতই এরকম নানান বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে আলোচিত এবং সমালোচিত এমনকি অনেকের হাসির খোরাকও হচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন কমেডিয়ানরা নিয়মিত তাকে নিয়ে ঠাট্টা করে। এর আগে বেশ কবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন কিন্তু কখনোই শেষ পর্যন্ত দাঁড়ানো হয়নি। তবে এবার বেশ শক্তভাবে এগুচ্ছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন ক্ষমতা আর প্রচারে ব্যাপক আগ্রহী ট্রাম্প অনেকটাই আত্মপ্রেমী। সেখান থেকেই হয়ত তার প্রেসিডেন্ট হবার স্বপ্ন।”


ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনীতি প্রসঙ্গে উইকিপিডিয়া লিখেছে, “ট্রাম্প স্ব-বিরোধী পন্থায় বিভিন্ন সময়ে তাঁর রাজনৈতিক বিষয়ক পাণ্ডিত্য এবং অবস্থান বর্ণনা করেছেন। পলিটিকো ট্রাম্পের রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখা করেছেন “সারগ্রাহী, তাৎক্ষণিক উদ্ভাবনকারী এবং প্রায়শ স্ব-বিরোধী” হিসেবে। ট্রাম্প পূর্বে তাঁর রাজনৈতিক দলকে তালিকাভুক্ত ও সম্মিলিত করেছেন রিপাবলিকান পার্টি, ইনডিপেন্ডেস পার্টি এবং ডেমোক্রেটিক পার্টির সাথে।” তাঁর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রচারকার্য ২০১৬ প্রসঙ্গে উইকিপিডিয়া লিখেছে, “ট্রাম্পের অভিবাসন বিরোধী রাজনীতি তাঁকে তাঁর শ্রমিক-শ্রেণীর সমর্থকদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয় করে তুলেছিল। তাঁর প্রস্তাবিত নীতি এবং যুক্তরাষ্ট্রে রাজ্যসমূহ নিয়ে তাঁর বিবৃতি তাঁকে জনমত বিচারে রিপাবলিকান ফ্রন্ট-রানারে এগিয়ে রেখেছে। তাঁর কিছু বক্তব্য বেশ কিছু রাজনীতিবিদ এবং মূলধারার সংবাদ-মাধ্যম কর্তৃক বিতর্কিত বলে বিবেচিত হয়েছিল। রাজনৈতিক শুদ্ধতা (চড়ষরঃরপধষ পড়ৎৎবপঃহবংং) থেকে নিবৃত্তিই হলো তাঁর প্রচারকার্যের মূল বিষয়। ট্রাম্পের বেশিরভাগ বক্তব্যই হলো অভিবাসন এবং সীমান্ত রক্ষা, অবৈধ অভিবাসীদের নির্বাসন, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকান সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ এবং অবৈধ মুসলিম অভিবাসীদের উপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ নিয়ে। অধিকাংশ অবৈধ অভিবাসীরা মেক্সিকান-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে বলে তাঁর অভিমত। রিপাবলিক পার্টিতে তাঁর প্রার্থীতা নিয়ে অনেক বিরোধিতা ও মতবিরোধ থাকলেও ট্রাম্পের মনোনয়ন প্রার্থীতা সফল হয়েছে মূলত ব্যাপক মিডিয়া কাভারেজে ও প্রচারের দরুন। তিনি বেশ কয়েকবার উদ্ধত এবং বিতর্কিতমূলক বক্তব্য রেখেছিলেন, যা মূলত তাঁর শ্রমিক-শ্রেণীর সমর্থকদের আকর্ষিত করেছিল। ট্রাম্পের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা তাঁকে “বিভেদ সৃষ্টিকারী”, “দায়িত্বজ্ঞানহীন” এবং “উৎপীড়ক” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ট্রাম্প অনেক গণ্যমান্য সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ[ এবং মনোনয়নপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীদের বক্তব্যের মাধ্যমে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন। যারা ট্রাম্পকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন কিংবা ট্রাম্প যাদের সাথে মতানৈক্যে পৌছাতে পারেন না, তাদের নিয়ে ট্রাম্পকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে বাগাড়ম্বরপূর্ণ টুইট করতে দেখা যায়। ট্রাম্প তাঁর অভিবাসন নীতির মাধ্যমে আনুমানিক ১১ মিলিয়ন অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে নির্বাসিত করা এবং মেক্সিকান-যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে একটি সু-দৃঢ় দেওয়াল নির্মাণের প্রস্তাবনা রাখেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মেক্সিকোর সাবেক প্রেসিডেন্ট ফেলিপ কালডেরন বলেন যে, “এরকম গো-মূর্খ দেওয়াল নির্মাণের জন্য আমরা এক পয়সাও খরচ করতে আগ্রহী নয়। এবং এই ধরনের প্রস্তাবনা সম্পূর্ণই অর্থহীন।” ট্রাম্প মধ্য-প্রাচ্য ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইসিসের উপর আক্রমণাত্মক বোমাবর্ষণের আহ্বান জানিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি মসজিদে গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারী উপর পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করেছে। ধর্ম নিয়ে ট্রাম্পের বহু দৃঢ় বাগাড়ম্বরপূর্ণ বক্তব্য রয়েছে। সন্ত্রাস এবং মুসলিম সম্প্রদায়কে একাত্ম করে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এমনকি বেন কার্সন এবং টেড ক্রুজের খ্রীষ্ট ধর্মে তাদের বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এছাড়াও তিনি যুদ্ধরত মার্কিন সেনা সদস্যদের দেখাশোনা, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীকে সুদৃঢ়করণ এবং বাণিজ্যিক চুক্তিগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিকদের অনুকূলে আনার বিষয় নিয়েও বক্তব্য রেখেছিলেন।”

যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম প্রবেশনের উপর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাবনা
এ ব্যাপারে বাংলা উইকিপিডিয়া লিখেছে, “সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার প্রতিক্রিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্প বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের দেশের প্রতিনিধিরা উপলব্ধি করতে পারছে আসলেই কি হচ্ছে, তত দিন অব্দি মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে”। তাঁর এই ধরনের বিতর্কিত বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তেও সমালোচনা কুড়িয়েছিল। তাঁর এই বক্তব্যের প্রতিবাদে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, ফরাসী প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়েল ভালস্, সৌদি রাজপুত্র আল-ওয়ালিদ বিন তালাল এবং কানাডার বিদেশ মন্ত্রী স্টিফেনি ডিয়ন এবং পাশাপাশি রিপাবলিকান পার্টির সভাপতি রেইন্স প্রিবাস, রিপাবলিকান হাউস স্পিকার পল রায়ান, রিপাবলিকান সিনেট ম্যাজোরিটি নেতা মিচ ম্যাককোনেল প্রমুখ আরো অন্যান্য নেতারা নিন্দা জানিয়েছিল। যুক্তরাজ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য একটি পেটিশ্যানের আয়োজন করা হয়, যেখানে ৫,৪০,০০০ মানুষ স্বাক্ষর করেন। খোদ ট্রাম্পের দল রিপাবলিক পার্টির অনেক সদস্যরা এই বলে ট্রাম্পের বিরোধিতা করেছিল যে, মুসলিমদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাবনা রিপাবলিকান পার্টির রক্ষণশীল মূল্যবোধ, মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সু-প্রাচীন অভিবাসী ঐতিহ্য নীতির পরিপন্থী। ট্রাম্পের সমালোচকরা তাঁর বিরোধিতা করে কিছু জিনিস নির্দিষ্ট করে বলেছেন যে, তাঁর প্রস্তাবনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাস-বিরোধী অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম জোটভূক্ত দেশগুলোকে নিরুৎসাহিত করতে পারে এবং তাঁর এই বক্তব্য বরং আইসিসকে সহায়তা করতে পারে মুসলিম বিশ্বাসকে পুঁজি করে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাদের অপপ্রচার চালানোর জন্য। ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকেই ট্রাম্প ইসরায়েলে একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন। ইসরায়েলেও তাঁর কিছু জমি রয়েছে। ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও উন্মোচন করেছিলেন যেখানে ট্রাম্পকে ২০১৩ সালে ইসরায়েলের নির্বাচনে বেনজামিন নেতানিয়াহুর হয়ে নির্বাচনী প্রচারণা করতে দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু মুসলিমদের নিয়ে ট্রাম্পের ঐ বিতর্কিত বক্তব্যে নেতানিয়াহুসহ বহু ইহুদি নেতাও এর বিরোধিতা করেছিলেন। ৮৪ জন নেসেট (ইসরায়েলের পার্লামেন্ট)সদস্য যাদের অনেকেই মুসলিম ছিল, তাঁরা একটি পেটিশ্যানে স্বাক্ষর করে নেতানিয়াহুকে ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাৎ না করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিল। নেতানিয়াহুর উপর রাজনৈতিক চাপ বেড়ে যাবে ভেবে পরবর্তীতে ট্রাম্প নিজেই ইসারেয়েলে ভ্রমণ এবং নেতানিয়াহুর সাথে সাক্ষাৎ মুলতবি করেন। ফক্স নিউজের এক বিতর্কানুষ্ঠানে যখন ট্রাম্পকে তাঁর মুসলিম প্রবেশ বিরোঢী প্রস্তাবনার সম্ভাব্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় (আনুমানিক ১,০০,০০০ মুসলিম অভিবাসী প্রতি বছর প্রবেশানুমতি দেওয়া হয়), ট্রাম্প তখন উল্লেখ করেন, বেলজিয়াম এবং ফ্রান্সের অবনতির জন্য তাদের মুসলিম অভিবাসন দায়ী। ট্রাম্প আরো বলেছেন যে, ব্রাসেলসে বাস করা “নরকে” বাস করার সমতুল্য হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের এই ভয়ানক অবস্থার জন্য মুসলিম অভিবাসন অন্যতম কারণ। মুসলিম অভিবাসনের উপর ট্রাম্পের বিতর্কিত বক্তব্যকে কেন্দ্র করে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের ই-পেটিশ্যান ওয়েবসাইটে “ব্লক ডোনাল্ড জে ট্রাম্প ফ্রম ইউকে এন্ট্রি” নামের একটি পেটিশ্যান খোলা হয়। ডিসেম্বর ১১ সকাল ৫ টার মধ্যেই স্বাক্ষর সংখ্যার সর্বোমোট সংখ্যা দাঁড়ায় ৫,০০,০০০ এর চেয়েও বেশি। জানুয়ারীর ১৮ তারিখে যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সে ট্রাম্পের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা যায় কি না এ নিয়ে বিতর্কের আয়োজন করা হয। কিন্তু সেই বিতর্ক ফলপ্রদ হয়নি। কারণ, যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্যদের নিষেধাজ্ঞা আরোপের আইন পাস করার কোনরূপ ক্ষমতা নেই। তবে তিন ঘন্টার চেয়েও বেশি চলা এই বিতর্কে সংসদের উভয় পক্ষের সদস্যদের ট্রাম্পকে “পাগল” এবং “জঘন্য” হিসেবে আখ্যায়িত করতে শোনা যায়।” উল্লেখ্য, ট্রাম্প ইতোমধ্যেই ইয়েমেন, ইরাক, ইরান, সিরিয়া, লিবিয়া, সুদান ও সোমালিয়া থেকে আমেরিকায় অভিবাসন প্রত্যাশীদের সেদেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।

পারিবারিক জীবনঃ নামকাওয়াস্তে বিয়ে করলেও মিঃ ট্রাম্প মূলত একজন জেনাকারী তথা মুক্তযৌনতায় ভৎবব ংবী বিশ্বাসী মানুষ। এ ব্যাপারে বাংলা উইকিপিডিয়া লিখেছে, “ট্রাম্প জীবনে তিনবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তাঁর ব্যক্তিগতজীবন ব্যাপকভাবে মিডিয়া কাভারেজ অর্জন করেছিল। ট্রাম্প মডেল ইভানা জেলনিকোভাকে ৭ এপ্রিল, ১৯৭৭ সালে নিউ ইয়র্ক শহরের মার্বেল কলেজিয়েট চার্চে বিয়ে করেন। তাদের তিন সন্তান: ডোনাল্ড ট্রাম্প, জুনিয়র (জন্ম: ডিসেম্বর ৩১, ১৯৭৭) এবং এরিক ট্রাম্প (জন্ম: জানুয়ারী ৬, ১৯৮৪) এবং কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্প (জন্ম: অক্টোবর ৩০, ১৯৮১) রয়েছে। ট্রাম্পের স্ত্রী ইভানা ১৯৮৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন। তাঁর স্ত্রী ইভানা ট্রাম্প ১৯৮৯ সালে স্পাই ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পকে “দ্য ট্রাম্প” হিসেবে সম্বোধন করার পর থেকেই ট্রাম্পের এই নামটি ব্যাপকভাবে মিডিয়া জগতে আলোড়ন ফেলে। ১৯৯০ এর প্রথম দিকে ইভানার সাথে ট্রাম্পের বৈবাহিক সম্পর্ক সামান্য উত্থান-পতন দেখা দেয়। কারণ, সেই সময় ট্রাম্প অভিনেত্রী মার্লা ম্যাপলসের সাথে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পরেছিল। শেষে ১৯৯১ সালে ইভানা আর ট্রাম্পের বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। ট্রাম্প আর অভিনেত্রী মার্লা ম্যাপলস্ ১৩ অক্টোবর, ১৯৯৩ সালে একটি কন্যা শিশুর জন্ম দেয়।এর দুই মাস পরে ডিসেম্বর ২০, ১৯৯৩ সালে তারা দুইজন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। কিন্তু ১৯৯৭ সালের মে মাসে তারা আলাদা হয়ে যায় এবং ১৯৯৯ সালের জুন মাসে তাদের বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। ট্রাম্প ১৯৯০ এর মাঝামাঝি সময়ে মডেল কারা ইয়ঙ্গের সাথেও প্রণয়ে জড়িয়ে পরেন। এছাড়া রাজকুমারী ডায়ানার প্রতিও ট্রাম্পের অনুরক্তি ছিল। ট্রাম্প ১৯৯৭ সালে তাঁর বই “দ্য আর্ট অব কামব্যাক”-এ লিখেছিলেন, “আমার শুধু একটি অনুতাপই রয়েছে যে আমি কখনও ডায়ানা স্পেন্সারকে প্রণয় প্রার্থনা করার সুযোগ পায় নি”। তিনি আরও বলেন, “তাঁর (ডায়ানা) সাথে আমার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎ হয়েছিল…। তিনি একজন প্রকৃত রাজকুমারী- একজন স্বপ্ন বালিকা (ড্রিম ল্যাডি)।” ট্রাম্প ১৯৯৮ সালে স্লোভেনিয়ান-বংশোদ্ভুত মডেল মেলানিয়া নসের সাথে প্রণয় সম্পর্কে জড়িয়ে পরেন এবং ২০০৫ সালের জানুয়ারীর ২২ তারিখে ফ্লোরিডার পাম বিচ দ্বীপে বেথেসডা-বাই-দ্য-সি এপিসকোপাল চার্চে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ২০০৬ সালে ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করেন এবং একই বছর ২০০৬ সালে মিলেনিয়া এবং ট্রাম্প, ব্যারন উইলিয়াম ট্রাম্প নামের একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। ট্রাম্পের সাতজন নাতি-নাতনি রয়েছে। যার মধ্যে পাঁচ জন হলো তাঁর পুত্র ডোনাল্ড জুনিয়রের (কাই ম্যাডিসন, ডোনাল্ড জন ৩য়, ট্রিস্টান মিলস, স্পেন্সার ফ্রেডেরিক এবং ক্লো সোফিয়া) এবং বাকি দু’জন হলো তাঁর কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্পের (অ্যারাবেলা রোজ এবং জোসেফ ফ্রেডেরিক)।”

ধর্মীয় দর্শন

ডোনাল্ড ট্রাম্প নাস্তিক নন, তিনি একজন বক/ভ- ধার্মিক। এ ব্যাপারে বাংলা উইকিপিডিয়ার ভাষ্য হলো, “ট্রাম্প হলেন একজন প্রেসবিট্যারিয়ান চৎবংং নরঃ অৎরধহ । ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে সেভেন হান্ড্রেড ক্লাবকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “আমি একজন প্রোটেস্ট্যান্ট, একজন প্রেসবিট্যারিয়ান এবং অনেক বছর ধরে গির্জার সাথে আমার একটি ভাল সম্পর্ক রয়েছে। আমি মনে করি ধর্ম একটি বিস্ময়কর জিনিস। আমি মনে করি আমার ধর্ম অপরূপ”। নির্বাচনী প্রচারকার্যের ডোনাল্ড তাঁর শ্রোতাবৃন্দদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন তাঁর বই “দ্য আর্ট অব দ্য ডিল” হলো তাঁর দ্বিতীয় পছন্দের গ্রন্থ এবং তিনি আরো বলেন, “তোমরা কী জানো আমার প্রথম পছন্দের বই কোনটি? বাইবেল! কোন কিছুই বাইবেলের সমতুল্য নই”। ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেছিলেন যে, হলি কম্যুনিয়নে অংশগ্রহণ করার সময় তিনি ঈশ্বরের কাছে তাঁর পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেননি। তিনি আরো বলেন, “আমি মনে করি.. আমি যদি কোন ভুল করি, আমি চেষ্টা করবো সেই ভুল শোধরানোর জন্য। আমার ভুল সংশোধনের জন্য আমি কখনও ঈশ্বরের শরণাপন্ন হই না”। ট্রাম্পের সাথে টনি পারকিন্স এবং রালফ্ রিডের মত বহু ইভাঞ্জেলিক্যাল এবং খ্রীষ্টান নেতার সাথে ভাল সম্পর্ক রয়েছে। ২০১৬ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি পদে প্রচারের সময় তিনি গ্রীক অর্থোডোক্স পাদ্রী ইমান্যুয়েল লেমেলসনের কাছ থেকে আশীর্বাদ গ্রহণ করেন। কিন্তু পোপ ফ্রান্সিস দাবি করেছেন যে, অভিবাসন নিয়ে ট্রাম্পের মতাদর্শ খ্রীষ্টীয় শিক্ষার পরিপন্থী। তিনি বলেছেন, “একজন ব্যক্তি যে সম্পর্কের সেতু নির্মাণের পরিবর্তে শুধু বিভেদের দেওয়াল নির্মাণের কথা চিন্তা করে, সে কখনও সত্যিকারের খ্রীষ্টান হতে পারে না। এটি গসপেল পরিপন্থী”। তাঁকে নিয়ে পোপ ফ্রান্সিসের সমালোচনাকে ট্রাম্প “মর্যাদাহানিকর” হিসেবে উল্লেখ করে আরো বলেছেন যে, মেক্সিকান সরকার তাদের রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে পোপকে ব্যবহার করছেন। ট্রাম্প আরো বলেন, “কারণ তারা (মেক্সিকান সরকার) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে শেষ করে দেওয়ার পন্থা অবিরত রাখতে চায়”। ট্রাম্প আরো বলেন যে, যদি কখনও আইসিস ভ্যাটিকান আক্রমণ করে তবে পোপ এই বলে তাঁর অনুতাপ প্রকাশ করবেন যে, যদি ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য প্রার্থনা করতাম, তবে এই ধরনের ঘটনা কখনও হতো না। ইহুদি-আমেরিকান সম্প্রদায়ের সাথেও ট্রাম্পের সু-সম্পর্ক রয়েছে। ২০১৫ সালে একটি ইহুদি দৈনিক পত্রিকা অ্যালজেমেইনার জার্নালের এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে “অ্যালজেমেইনার লিবার্টি অ্যাওয়ার্ড” পুরষ্কার গ্রহণকালে ট্রাম্প বলেন, “শুধু ইহুদি নাতি-নাতনিই নয়, আমার ইহুদি কন্যাও রয়েছে (ইভাঙ্কা তাঁর স্বামী জ্যারেড কুশনারের সাথে বিয়ের পূর্বে ইহুদি ধর্মে দিক্ষিত হয়েছিল) এবং আমি খুবই গর্বিত এটি নিয়ে তাঁর (ইভাঙ্কার) ইহুদি হওয়ার কথা ছিল না কিন্তু তবুও আমি খুশি যে সে ইহুদি হয়েছে”।”

এতক্ষণ ধরে যা উল্লেখ করা হলো, তাতে এটি স্পষ্ট যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন প্রকাশ্য বক/ভন্ড ধার্মিক এবং তার চিন্তাধারার নৈতিক কোনো ভিত্তি নেই। সে একজন দাম্ভিক ভোগবাদী। তবে মজার বিষয় হলো, ট্রাম্প তার এ দাম্ভিকতার জন্য খোদ তার দেশ ও স¤প্রদায়ের কাছেই সমালোচিত হয়ে নিন্দা কুড়াচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্সির ইতিহাসে তার মত নিন্দিত কোনো ব্যক্তি আর দেখা যায়নি । আমেরিকায় অভিবাসন প্রত্যাশীদের সেদেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে গাল্ফের একমাত্র দরিদ্র দেশ ইয়েমেনকেই অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। অথচ টুইন টাওয়ার হামলায় ইয়েমেনের কোনো নাগরিক অংশগ্রহণ করেনি। ওখানে ১৯ হামলাকারীর ১৫ জনই ছিল সৌদী, দুইজন আমিরাতী, একজন মিসরী ও একজন লেবাননী। ইরাক, ইরান, সিরিয়া, লিবিয়া, সুদান ও সোমালিয়ার কোনো নাগরিক ওই হামলায় অংশগ্রহণ করেনি। অভিবাসন প্রত্যাশীদের সেদেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন সব মুসলিম দেশগুলোকেই বেঁেচ নিয়েছেন, যেগুলো থেকে আমেরিকা অর্থনৈতিক ভাবে উপকৃত হয় না। কারণ, পূজিবাদী তথা কর্পোরেট শোষক রাষ্ট্র আমেরিকার নীতি সবসময় আবর্তিত হয় বৈষয়িক লাভ-ক্ষতিকে কেন্দ্র করে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের মত একজন ভয়ঙ্কর কর্পোরেট তাগুত মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে বিজয়ী হওয়াতে আমি বিস্ময়ের কোনো কিছু দেখি না। কারণ, এরকম প্রকাশ্য বক/ভ- ধার্মিক ও কর্পোরেট তাগুতের সংখ্যা আমাদের মুসলিম ও আরব দেশগুলোতে প্রচুর। প্রকাশ্যে না হলেও মনে মনে আমাদের মুসলিম ও আরব দেশগুলোর কর্পোরেট তাগুতেরা নারী, মদ ও সিল্ক-সোনার বৈধতয় বিশ্বাসী। পেট্রোডলার ফিতনাজনিত প্রাচুর্য্যরে ভারে এক সময়ের উট-ছাগলের রাখালরা বর্তমানে জেনা করতেও বিদেশভ্রমণে যায়। এদের ব্যাপারে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছেন-
عن أبى ثعلبة الخشنى عن أبى عبيدة بن الجراح ومعاذ بن جبل رضى الله عنهما، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : ্রإن الله بدأ هذا الأمر نبوة ورحمة وكائنا خلافة ورحمة وكائنا ملكا عضوضا وكائن عنوة وجبرية وفسادا فى الأمة يستحلون الفروج والخمور والحرير وينصرون ويرزقون أبدا حتى يلقوا اللهগ্ধ. أخرجه الطيالسى (ص ৩১ ، رقم ২২৮) ، وأبو يعلى (২/১৭৭ ، رقم ৮৭৩) ، والبيهقى فى الكبرى (৮/১৫৯ ، رقم ১৬৪০৭). قال الهيثمى (৫/১৮৯) : فيه ليث بن أبى سليم ، وهو ثقة ، ولكنه مدلس ، وبقية رجاله ثقات .
অর্থ- হযরত আবু উবাইদা ও মুআয রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “এ বিষয়টাকে (ইসলামি শাসনকে) মহান আল্লাহ সূচিত করেছেন নুবুওয়াত ও দয়ার মাধ্যমে। এরপর সেটি খিলাফতে রূপান্তরিত হবে। এরপর সেটি ক্ষমতা আকড়ে ধারণকারী রাজতন্ত্রে রূপান্তরিত হবে। এরপর সেটি জোর-জবরদস্তি ও ফাসাদ সৃষ্টিতে রূপান্তরিত হবে। ওরা (জোর-জবরদস্তি ও ফাসাদ সৃষ্টিকারিরা) فروج যোনী (বিয়ে ছাড়া), خمور মদ ও حرير রেশম/সিল্ককে বৈধ মনে করবে। তবে এরপরও তারা আমৃত্যু শত্র“র উপর বিজয় লাভ ও (চাহিদামত) জীবিকাপ্রাপ্ত হবে।” মুসনদে তয়ালিসী (২২৮), মুসনদে আবু ইয়ালা (৮৭৩) ও বাইহাকীর সুনানে কুবরা (১৬৪০৭)
উল্লেখ্য, হাদীসের ব্যাখ্যাকারী আলেমদের মতে এ হাদীসে যে দুর্বৃত্ত শাসকদের কথা ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, তাদের থেকে উদ্দেশ্য মরওয়ান-এজিদের মত খুনী ও লুটেরা শাসকেরা। মারওয়ান-এজিদের পথের বর্তমান পথিকেরা শত্র“র বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা দূরে থাক; বরং তাদের মনোরঞ্জনেই ব্যস্ত।

শেষ কথা
ইয়েমেন, ইরাক, ইরান, সিরিয়া, লিবিয়া, সুদান ও সোমালিয়ার কোনো নাগরিক আমেরিকার নাগরিকত্ব লাভ করতে না পারলে ইসলামের কোনো ক্ষতি নেই। সকল খাঁটি মুসলমানের উচিত, স্বাবলম্বী ও আত্মমর্যাদাবোধের অধিকারী হবার চেষ্টা করা। মুসলমান দুনিয়াতে ভোগ-দখল ও সুখবিলাস করার জন্য বেঁচে থাকে না। এটি ভূয়া মুসলিম তথা জিন্দিক ও মুনাফিকের চিন্তা। কাফিরদের সামনে মাথানত করা মুমিনের কাজ নয়; منافق মুনাফিক, مريض القلب মরীদুল কল্ব ও مُرجف মুরিজফদের কাজ। আমাদের রিজিক ও ইজ্জতের মালিক ও দাতা মহান আল্লাহ; কোনো কাফির-তগুত নয়। সুতরাং অভিবাসন هجرة প্রত্যাশী মুসলিম দেশগুলোর নাগরিকদের উপর ডোনাল্ড ট্রাম্পের মত একজন খবীছের দেশে প্রবেশে বাধা আসাতে আমাদের পেরেশান হবার কিছুই নেই। মহান প্রভু আমাদেরকে নফস, শয়তান ও মানব তাগুতদের বিরুদ্ধে জিহাদে দৃঢ়পদ রাখুন।

ইআম

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...