মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ :
‘জগতটাকে জগতের মতো ভাবতে গিয়ে অজাগতিক ভাবনাগুলো গুলিয়ে যাচ্ছে। পুরোটাই যেনো একরকম সার্কাস। কে কতোটা বেশি চমকপ্রদ কসরত দেখাতে পারে, তার মহড়া চলছে রোজ। আমার কোনো কসরত নেই। নেই সার্কাস পার্টিও। টিকেট কাটা দর্শকের মতো তাকিয়ে আছি কেবল। মনের আনন্দে হাসি। উল্লাসে লাফিয়ে উঠি।’
কথাগুলি অমর একুশে বইমেলা ২০১৭’য় প্রকাশিতব্য গল্পগ্রন্থ ‘সার্কাসসুন্দরী’র অংশবিশেষ৷ লিখেছেন একাধারে তিনবার সুনীল সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ও কবি সালাহ উদ্দিন মাহমুদ৷ সমসাময়িক সমস্যা, প্রেম-প্রতারণাসহ সামাজিক অবক্ষয়ের ওপর লেখা ১৩টি গল্প স্থান পেয়েছে বইটিতে। প্রতিটি গল্পই জনপ্রিয় দৈনিক, অনলাইনে প্রকাশিত।
কবি সালাহ উদ্দিন মাহমুদ মূলত সমকালীন তরুণ কবিদের অন্যতম একজন৷ গেলো এক যুগেরও বেশি সময়কাল ধরে উভয় বাংলার শ্রেষ্ঠ কবিতা ম্যাগাজিনগুলোয় বেরিয়েছে তার অংসখ্য কবিতা৷ তাই তার গদ্যে সহজেই একটা লিরিকাল ভাব কাজ করে৷ বইটিতে পাঠক গদ্য-পদ্যের মিশেলে এক অনন্য মুগ্ধতা উপলব্ধি করবে অনায়েসেই৷
তারুণ্যদীপ্ত জনপ্রিয় কবি হলেও গল্প, প্রবন্ধ, নাটকের প্রতি বেশ দুর্বল মনে হয় সালাহ উদ্দিন মাহমুদকে। ২০০৩ সালে প্রথম লেখা প্রকাশের দীর্ঘ এক যুগ পর গ্রন্থাকারে নিজের লেখা প্রথম প্রকাশের বাসনা এবার আলোর মুখ দেখছে৷ বইটিতে লেখক আজকের জনজীবনকে একটা সার্কাসের সঙ্গে উপমা দিয়েছেন৷ যেখানে না আছে কোনো কিছুর বাস্তবতা; রঙখেলার মতোন অনেকটা ঘটে যাচ্ছে যত্রতত্র৷ কথায় বা কাজে না আছে কোনো অসংগতির সমাধান; কেবল উচ্চবাচ্যে কিংবা বক্তব্যে বড় বড় গালগপ্পের মহড়া-উৎসব চারদিকে৷ সেসব থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে জাগিয়ে তুলেছেন মানব-মস্তিষ্ককে৷
সমাজের নষ্ট শ্রেণির নারীজীবনের মুক্তিকাহিনিও বেরিয়ে এসেছে গল্পের ভেতরকার গল্প হিসেবে৷ বইটির প্যারায় প্যারায় রয়েছে হালের ঘৃণ্য চিত্র৷ ছোট ছোট বাক্যে কাহিনির অভিনব মোড়, নাটকীয়তায় বইটি পাঠকপ্রিয়তা পাবে নিঃসন্দেহে৷ জোড়ালো ব্রেক, মোড়সত্ত্বেও তবু কতো সহজিয়া আদলে অকপটে লিখেছেন তিনি—‘…বলতে বলতেই আমার ফলা ধরা হাতে সজোরে চাপ দিলো একটা। চামড়া ভেদ করে ঢুকে গেলো চার ইঞ্চি। কোনো চিৎকার নেই। সুন্দরীর মুখে স্বর্গের হাসি। আমি হতবাক। সুন্দরীর দেহটা এলিয়ে পড়ছে আমার কোলে। আমি নির্বোধ সহকারীর মতো সাহায্য করে যাচ্ছি তার সার্কাসে৷ একটা চিৎকার করেছিলাম কেবল। ঘুম ভাঙার পরে কপালের ঘাম মুছে ঘরের আলো জ্বালতে জ্বালতে শুনি ফজরের আজান। দরোজা খুলে বাইরে এসে দেখি আলোয় রাঙা নতুন পৃথিবী। নতুন আকাশ। শুধু আমিই সেই পুরোনো মানুষ। হিংস্র জানোয়ার। সুন্দরীর রক্তমাখা দেহ ভেসে ওঠে ফের চোখের সামনে। তবু আমি হেঁটে চলি অজানা গন্তব্যে।’
আল নোমানের করা নান্দনিক প্রচ্ছদের গল্পগ্রন্থ সার্কাসসুন্দরী প্রকাশ করেছে দোয়েল প্রকাশনী৷ ১৫০ টাকার বইটি পাওয়া যাবে মেলার ৩২৮ নম্বর স্টলে৷