সকল তারিফ আল্লাহ তায়ালার জন্য। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক নবি সা. এর উপর। মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন; তোমরা সর্বোত্তম জাতি মানবজাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের প্রেরণ করা হয়েছে।
তিনি আরো ইরশাদ করেন; মুমিনদের প্রত্যেক দল থেকে একটা ছোট দল কেন আল্লাহর রাস্তায় বের হয় না যেন তারা তাফাক্কুহ ফিদ দ্বীন অর্জন করতে পারে এর পর ফিরে এসে তাদের কওমকে সতর্ক করতে পারে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন; নিশ্চয় আল্লাহর বান্দাদের মাঝে ওলামারা তাকে ভয় করে।
নবি সা. ইরশাদ করেছেন; ইলম দুই প্রকার । এক. অন্তরের ইলম। এটা ইলমে নাফে। দুই. যবানের ইলম। এটা বান্দার বিরুদ্ধে আল্লাহর দরবারে দলিল হবে। মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস:৩৪৩৬১।
আস্সালামু আলাইকুম ইয়া ওরাছাতুল আম্বিয়া! আস্সালামু আলাইকুম ইয়া ওরাছাতুল আম্বিয়া! ওলামায়ে কেরামের জন্য এর চেয়ে মর্যাদার বিষয় আর কি হতে পারে যে, তারা ওরাছাতুল আম্বিয়া। ওয়ারিছ বলা হয় বিগত ব্যক্তির সমস্ত দায়-দায়িত্বের হকদার হওয়া। আমাদের মর্যাদার জন্য এটাই যথেষ্ট যে আমরা আম্বিয়ায়ে কেরামের ওয়ারিছ। ওরাছাতের উদ্দেশ্য হল, প্রত্যেক ওয়ারিছের মিরাছ তার হকদারের কাছে যথাযতভাবে পৌছে দেয়া। এ পৌছে দেয়ার নামই তাবলীগ।
এই ‘উনওয়ানে’র উপর মেহনত, এই শিরোনামে নকল-হরকত উম্মতের সব তবকাকে জাহালাত থেকে উদ্ধার করবে। ইলম নূর। জাহালাত জুলমতের উপর জুলমত। আমাদের সর্বপ্রথম দাওয়াতের মাকসাদ সম্পর্কে অবগত হওয়া জরুরি। দাওয়াত-তাবলীগের কাজ কোন দ্বীনী ইদারা থেকে অমুখাপেক্ষী হয়ে করা সম্ভব নয়। মুহাম্মাদ সা.এর প্রেরণের উদ্দেশ্য হল সমস্ত উম্মতকে জাহালাত থেকে মুক্ত করা। নবি সা. এক হাদিসে নিজেকে পরিচয় করিয়েছেন ‘মুয়াল্লিম’ হিসেবে।
ইরশাদ করেছেন; বুয়িছতু মুয়াল্লিমান। অপর এক হাদিসে নিজের পরিচয় দিয়েছেন ‘মুবাল্লিগ’ হিসেবে। ইরশাদ করেছেন; বুয়িছতু মুবাল্লিগান। মুয়াল্লিম আর মুবাল্লিগের মধ্যে পার্থক্য শুধু এতটুকু, যে তলবহীন মানুষের মাঝে দ্বীন পৌছায় তাকে মুবাল্লিগ বলে । আর যে তলব সম্পন্ন ব্যক্তিদের মাঝে দ্বীন পৌছায় তাকে মুয়াল্লিম বলে। তাবলীগ এবং তালীমের মাঝে এছাড়া আর কোন পার্থক্য আমার জানা নেই। এদুয়ের মাঝে তা‘আরুয থাকার তো কোন প্রশ্নই আসে না। এ দু‘য়ের মাঝে কোন বৈপরিত্য থাকলে নবি সা. এর দুই আমলের মাঝে বৈপরিত্য সাব্যস্ত হবে, যা অসম্ভব। এজন্য দাওয়াত-তাবলীগের কাজ করার পূর্বে এ সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা থাকা জরুরী। দাওয়াতের কাজ সম্পর্কে অসম্পূর্ণ ধারণা এ কাজের পরিধিকে সীমাবদ্ধ করে দিবে।
ইলিয়াছ রহ. বলতেন; এই মেহনত দ্বারা আমাদের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র মানুষের নামায-রোযা ঠিক করা নয়। একাজের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হল নবি সা. এর আনিত পূর্ণাংগ দ্বীন জ্বীবন্ত করা। প্রাথমিক পর্যায়ে নামায-রোযার শিক্ষা মক্তবে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের আলিফ বা শেখানোর মত। রাসূল সা. এর যুগে মদিনা ইলমের নগরী ছিল। নবি সা. সাহাবায়ে কেরামের জামাত বিভিন্ন অঞ্চলে প্রেরণ করতেন ইলম শিক্ষাদেয়ার জন্য। সাহাবাদের জামাত ইলমের জামাত ছিল।
হাদীসে এসেছে রাসূল সা. নাজরান অধিবাসীদের অনুরোধে ৭০জন নির্বাচিত সাহাবাদের একটি জামাত প্রেরণ করেন তাদের দ্বীন শেখানোর জন্য। নাজরানের লোকেরা বিশ্বাসঘাতকতা করে সাহাবাদের হত্যা করে। পবিত্র কোরআন ইলম শেখার উদ্দেশ্য ব্যক্ত করেছে, ‘ইনযারে কাওমের’ মাধ্যমে। ‘লি এতা ফাক্কাহু ফিদ দিন’ এর দ্বারা খাছভাবে উলামায়ে কেরাম উদ্দেশ্য। আল্লাহ তায়ালা উক্ত আয়াতে সব আলেমকে এক সাথে বের হতে নিষেধ করেছেন। যাতে কাযা, ফতোয়া ইত্যাদি উম্মতের মাকামি চাহিদা পূরণে সমস্যা না হয়।
প্রাসংঙ্গিক একটা কথা বলি, আমরা কোন সময় তাশকীলের ক্ষেত্রে এমন ইছরার করবো না বা এমনভাবে তাশকীল করবো না, যাতে দ্বীনের অন্য কোন শোবার কাজকে হালকা সাব্যস্ত করা হয়। অথবা অন্যান্য শো‘বার উপর দাওয়াতের কাজকে প্রাধান্য দেয়া হয়।
মুহতারাম ওলামায়ে কেরাম! আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া নিজের জন্য লাযিম অন্যের এতেবারে মুতা‘আদ্দী। আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে উম্মতের বিভিন্ন হালত দেখে মাকামী লোকদের বুঝানো সমঝানো। আয়াতে বর্ণিত নফর দ্বারা আসল মাকসাদ ময়দানে কিতালে দাওয়াত দেয়া। খুব কম সংখ্যক গাযওয়াতেই কতল হয়েছে। হযরত খালেদ বিন ওয়ালিদ রা. রোমকদের বিরুদ্ধে লড়ায়ের ময়দানে উপস্থিত। উভয় বাহিনী সারিবদ্ধ। রোমক সেনাপতি জারযাকে খালেদ রা. ময়দানেই দাওয়াত দিলেন। আল্লাহ তায়ালা বান্দার দিলের অবস্থা দেখেন। উম্মতের হেদায়াতের ব্যাপারে কার অন্তরে কতটুকু ফিকির রয়েছে। রোমক বাহিনী যুদ্ধ ময়দানে সারিবদ্ধ। এদিকে তাদের সেনাপতিকে আল্লাহ তায়ালা হেদায়াতের নেয়ামত দান করেছেন। জারযা খালেদ রা. এর তাবুতে গিয়ে গোছল করে কালিমা পড়ে ঈমান গ্রহণ করে। এরপর এই যুদ্ধেই সে শহিদ হয়ে যায়।
সাহাবায়ে কেরাম ময়দানে কিতালেও উম্মতের হেদায়াতের ফিকির করতেন। নফরের মাকসাদ প্রত্যেক উম্মতের এ‘তেবারে তার থেকে জাহালাত দূর করা। আমরা কোরআন-হাদিসের কোথাও এ কথা পাইনি যে দ্বীনের অন্যকোন শাখার কাজ অপেক্ষা দাওয়াত-তাবলীগের কাজ মুকাদ্দাম। আযানের বিষয়টিই ধরুন, মসজিদের প্রায় মুসল্লীই আমরা আযান দিতে পারি। একটা সহজ আমল। কিন্তু এটা কোন মামুলী আমল নয়। রাসূল সা. মুআজ্জিনকে হাদিস শরিফে আমানতদার হিসেবে ঘোষণা করেছেন। কেননা আযানের উপর দুটি ফরয নির্ভর করে। নামায ও রোযা।
ওমর রা. কাছে রাসূলের মুআজ্জিন বেলাল রা. ছুটি চাইলেন। ওমর রা. বললেন তোমার পরিবর্তে কে আযান দিবে এটা নির্ধারন করার পর ছুটি। অতপর মসজিদে কোবার মুআজ্জিন সা‘দ বিন কুরয রা. কে তার স্থলাভিষিক্ত করে বেলাল রা. ছুটি গ্রহণ করেন।
অতএব, দাওয়াতের কাজের জন্য দ্বীনের কোন কাজকে ছেড়ে দেয়া দাওয়াত-তাবলীগের মাকসাদ নয়। বরং দাওয়াতের মাকসাদ হল দ্বীনের সমস্ত শাখাগুলোকে জীবন্ত করা। একজন বুখারী পড়ান বা তিরমীযি পড়ান তাকে এ কথা বলাতো সম্ভবই নয় যে আপনি দাওয়াত-তাবলীগে বের হয়ে যান। হ্যা! যদি তার স্থলে উত্তম কোন বিকল্প পাওয়া যায় তখন দাওয়াত-তাবলীগের কাজে বের হতে পারে।
রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন; আল্লাহ তায়ালা আমাকে যা দিয়ে প্রেরণ করেছেন তার দৃষ্টান্ত এমন প্রচুর বৃষ্টির মত যা এমন এক ভূমিতে পতিত হয়েছে যার কিছু উর্বর পানি গ্রহণ করে এবং প্রচুর শস্য, ঘাস উৎপাদন করে। আর কিছু অনুর্বর জমি যা পানি গ্রহণ করে না শস্য উৎপাদন করে না। পানি আটকে রাখে এর দ্বারা আল্লাহ মানুষকে উপকৃত করেন। আর কিছু ‘কিআন ভূমি’ যা পানি ধরে রাখে না শস্যও উৎপন্ন করে না। ….। সহীহ বুখারী, হাদিস:৭৯।
উল্লেখিত হাদিসে রাসূল সা. নিজ সত্তাকে প্রচুর বৃষ্টির সাথে তুলনা করেছেন। বৃষ্টি আল্লাহ তায়ালার বিশেষ রহমত। পবিত্র কোরআনে বৃষ্টিকে তিন নামে অভিহিত করা হয়েছে। ১. রহমত ২. তহুর ৩.মোবারক।
কৃষকরা জানেন সেচের মাধ্যমে উৎপাদিত ফসল আর বৃষ্টির পানিতে উৎপন্ন ফসলের মধ্যে অনেক ব্যবধান হয়। রাসূল সা. নিজেকে বৃষ্টির সাথে তুলনা করে একথা বুঝিয়েছেন যে তিনি সমস্ত উম্মতে সজীবতা আনয়ন,উম্মতকে জাহালাত মুক্ত করার জন্য রাসূল সা. এ জগতে আগমন ঘটেছে। এই মিসালের মাধ্যমে ইলমের ওরাছাতকে উত্তমভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন। বৃষ্টি সবাইকে উপকার পৌছায়। যে বৃষ্টি প্রত্যাশী তাকেও যে বৃষ্টি প্রত্যাশী নয় তাকেও। এমনি রাসূলের দাওয়াত সবার জন্য আম ছিল। আবু হুরাইরার জন্য যিনি দাওয়াত কবুল করে বড় মুহাদ্দিস হয়েছিলেন। আবার আবু জাহল আবু তালেবের প্রতিও যারা ইসলাম গ্রহণ করেনি। আমি আবারও বলছি নফর দ্বারা উদ্দেশ্যে উম্মতকে জাহালাত মুক্ত করা। সব স্তরে দাওয়াত পৌছে দেয়া।
ইলিয়াস রহ. বলতেন, আমি এ কাজের কোন নাম রাখিনি। আমি একাজের কোন নাম রাখলে তাহরীকে ঈমান নাম রাখতাম। দাওয়াতের প্রথম মাকসাদ হল,একীনের পরিবর্তন। অর্থাৎ আল্লাহর উর্প ঈমান আনার নির্দেশ সাহাবায়ে কেরামের তরিকায় বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঈমানের শক্তি ও প্রবৃদ্ধি অর্জন করা
রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন; আমার একটি বাণী হলেও অনুপস্থিতদের কাছে পৌছে দাও। এর দাবি রাসূলের ঘরের বাণী বাইরের লোকদের কাছে পৌছানো । মুহতারাম ওলামায়ে কেরাম! আপনারা তালেব। আওয়াম মাতলুব। হযরত ওমর রা. বলেছেন; যদি তিন বস্তু দুনিয়ায় না হত তাহলে আমি দুনিয়ায় থাকা পছন্দ করতাম না। ১. আল্লাহর রাস্তায় নফর। ২. লম্বা লম্বা সেজদা ৩. ওলামায়ে কেরামের মাজালিস।
সহজ ভাষায় বললে দাওয়াত, তালীম,ইবাদাত। তালীমের মাধ্যমে প্রথম উদ্দেশ্য ঈমান বানানো। ঈমানের ভিত্তিতেই সমস্ত আমলের সওয়াব অর্জিত হওয়া , আমল মাকবুল হওয়া মারদুদ হওয়া নির্ভরশীল। ইলিয়াস রহ. বলতেন, আমি এ কাজের কোন নাম রাখিনি। আমি একাজের কোন নাম রাখলে তাহরীকে ঈমান নাম রাখতাম। দাওয়াতের প্রথম মাকসাদ হল,একীনের পরিবর্তন।
অর্থাৎ আল্লাহর উর্প ঈমান আনার নির্দেশ সাহাবায়ে কেরামের তরিকায় বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঈমানের শক্তি ও প্রবৃদ্ধি অর্জন করা।
দাওয়াত-তাবলীগে বলা হয় মসজিদের মেহনতে ঈমান তৈরি হয়। এখন এভাবে যদি কেউ প্রশ্ন করে যে তাহলে অন্য কোন মেহনতে কি ঈমান তৈরী হবে না। এভাবে প্রশ্ন উঠালে সব কথার মাফহুমে মুখালেফ বের করলে কোন কাজ করাই সম্ভব হবে না। আমাদের গাশতের অন্যান্য কাজের মাকসাদ মানুষকে ঈমানী ফাসাদ থেকে বাচাঁনো। দাওয়াতের মাধ্যমে অন্য কোন কাজকে হালকা করা বা তারদীদ করা উদ্দেশ্য নয়। আমাদের মাকসাদ উম্মত যেন সাহাবাদের তরিকায় ঈমানী মেহনত করতে শিখি। ইমাম মালেক রহ. এর ঐতিহাসিক বাণী, এই উম্মতের পরবর্তীদের সংশোধন ঐভাবেই হতে পারে যে ভাবে পূর্ববর্তীরা সংশোধন হয়েছিল। ভায়েরা আমার ! কোন বিষয়ের তাযকীর অন্যান্য বিষয়ের তারদীদ নয়। আমাদের মাকসাদ হল দ্বীনী কাজের বর্তমান রেওয়াজী তরিকার কারণে উম্মত যেন সালাফের তরিকা ভুলে না যায়।
সাহাবা যেভাবে ঈমান এনেছেন, ঈমানী মোযাকারা করেছেন সে তরিকা উম্মতের মাঝে যিন্দা করা। তায়াল বিনা নুমিনু ছাআতান। তায়াল বিনা নুমিনু ছাআতান বলে সাহাবাগণ ঈমানী মোযাকারা করতেন। এই দাওয়াত-তাবলীগের প্রত্যেকটি কাজ রাসূল সা. এর পবিত্র সীরাত এবং সাহাবাদের জীবন চরিত থেকে নেয়া হয়েছে। সাহাবাদের তরিকা এত পূর্ণাঙ্গ যে কেয়ামত পর্যন্ত সকল বিষয় সাহাবাদের জীবনীতে পাওয়া যায়। কেননা সাহাবায়ে কেরাম কেয়ামত পর্যন্ত সমস্ত উম্মতের জন্য আদর্শ। এটা এজন্য বলছি যে অনেকে প্রশ্ন করেন ঈমান আনার কি আর কোন তরিকা নেই। ঈমান শেখার তরিকা তাবলীগে পাওয়া যায়। ঈমান পাওয়ার এটা একটা তরিকা মাত্র।
ভায়েরা ইলম আমলের জন্য । সত্তাগতভাবে ইলম মাকসাদ নয়। কিন্তু আল্লাহর তাওহীদের বয়ান করা সত্তাগত মাকসাদ। গায়বের আলোচনায় ঈমান তাযা হয়। মুশাহাদাতের মাধ্যমে আমলে দূর্বলতা আসে। আমল কবুল হওয়ার জন্য ২ শর্ত। ১.ঈমান ২. ইলম। যে ইলম ও ঈমান চায় আল্লাহ তায়ালা তাকে তা অবশ্যই দান করবেন। আমাদের দায়িত্ব হল উম্মত যেন আমাদের সোহবত থেকে মাহরুম না হয়। বর্তমান যুগে মিডিয়া উম্মতকে উলামাদের সোহবত থেকে বঞ্চিত করে দিয়েছে। এটা উম্মতের অনেক বড় মাহরুমী। হোম সার্ভিসে পণ্য পৌছানোর মত ইলম আমাদের ঘরে বসেই পাওয়া যায়। অথচ ইলমের জন্য সফরের অনেক ফযীলতের কথা হাদিস শরিফে এসেছে। গর্তের পিপড়া, সমুদ্রের মাছ তালেবে ইলমের জন্য দোয়া করে। ফেরেশতারা তাদের সম্মানে নূরের পর ঝুকিয়ে দেন।সালাফের তরিকার আলোচনার মাধ্যমে প্রচলিত তরিকা আপনা আপনিই প্রত্যাখ্যাত হয়ে যাবে। হযরত ইবনে মোবারক রহ. ৬মাস ইলমের মাশগালায় আর ৬ মাস আল্লাহর রাস্তায় কাটাতেন।তার ইলমের হালকার অবস্থা ছিল তার ছাত্র সংখ্যা এত বিপুল ছিল যে তার হাচির জবাবের আওয়াজ এত উচু হয়েছিল যে বাদশাহ মনে করেছিল তার রাজ্যে আক্রমন হয়েছে।
সালাফের সর্বযুগে এটা চালু ছিল যে ইলম আহলে ইলম থেকে হাছিল করা হত। ছোট-বড় সকল বিষয়ে। বর্তমানে আমাদের মাঝে একটা রোগ প্রবলভাবে দেখা যাচ্ছে যে আমরা মসজিদের বিভিন্ন আমলকে আমাদের তাবলীগী কাজের প্রতিবন্ধক মনে করি। অথচ ইলম ও কোরআন শিক্ষা মসজিদেরই কাজ। যার ইলমের সাথে সম্পর্ক নেই তার দ্বীনের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। এটা বঞ্চিত হওয়ার আলামত। ইলমের মধ্যে তাহাম্মুলের সিফাত অনেক জরুরী।
আমি দুবছর পর পর কাফেলাসহ হজ্ব করি। হারামাইনের সব দরস থেকে ইস্তেফাদা করি। একদিন এক শায়খ তাবলীগের খুব সমালোচনা করছিল। আমি শায়খের একেবারে সামনে বসা ছিলাম। কারণ উস্তাদের সামনে বসা ইলমের যিয়াদতির আলামত। বয়ানের পর যে ছাত্র ইবারত পড়ছিল তার কাছে আমি শায়খের খুব প্রশংসা করলাম । এরপর কথা প্রসংগে আমি তার কাছে আমার পুরা পরিচয় তুলে ধরলাম। সে ছাত্র তার শায়খের কাছে আমার কথা আলোচনা করল। পরদিন শায়খ ক্লাসে এসে প্রথম যে কথা বললেন তা হল; এই দাওয়াত ইলাল্লাহ থেকে যে মাহরুম থাকবে সে সমস্ত কল্যাণ থেকে বঞ্চিত থাকবে। এই কাজ করনেওয়ালা থেকে ভুল হওয়া বিরল নয়।
নামাযে কেরাত ভুলের জন্য কি করণীয় এ সম্পর্কে যাল্লাতুল কারী নামে স্বতন্ত্র অধ্যায়েয় রয়েছে। কোন ব্যক্তির ভুলের কারণে পুরা জামাতকে অথবা কাজকে অভিযুক্ত না করা।
হ্যা! যিম্মাদারদের দায়িত্ব কারো ভুল হলে শুধরে দেয়া। আল্লাহ তায়ালা আপনাদের উম্মতের মুকতাদা বানিয়েছেন। মুক্তাদি এসে গেছে এখন আপনাদের এসে ইমামতি করতে হবে। যাদের ভুল হবে তাদের শাফকাতের সাথে শিক্ষা দেয়া উচিত। রাসূল সা. হাদিসে নিজেকে অভিহিত করেছেন পিতৃতুল্য শিক্ষক হিসেবে । আমাদের সবার ইসলাহের ক্ষেত্রে কল্যাণকামিতার সাথে কাজ নেয়া উচিত।
মসজিদে নববীতে এক ব্যক্তি পেশাব করছিল সাহাবাগণ তাকে ফেরাতে গেলে তিনি নিষেধ করেন। এরপর পেশাব শেষ হলে তিনি তাকে নরমীর সাথে বুঝালেন। সে রাসূলের এই তরিকে তালিম তার ক্বাওমের কাছে নিয়ে যায় । তালিম শাফকতের সাথে না হলে ইসলাহ হয় না। ওমর রা. এর যুগে এক ব্যক্তি বাসায় মদ পান করলে উকি দিয়ে তাকে দেখে তিরস্কার করলে সে ওমর রা.কে বলল’; আমি অপরাধ করেছি একটি কিন্তু আপনি অপরাধ করেছেন ৩টি। ওমর রা. এই কথা আর কারো সাথে বলেননি। কিন্তু লজ্জার কারণে ঐ ব্যক্তি তার দরবারে উপস্থিত হয়নি। বহুদিন পর উপস্থিত হলে তিনি তাকে অভয় দিয়ে বললেন; আমি তোমার কথা কারো কাছে বলিনি। সে বলল; আমিও সেদিনের পর আর মদ পান করিনি। আমাদের আকাবিরদের মাধ্যমে এ উপমহাদেশকে সারা দুনিয়ার ইলমের মাকসাদ বানিয়েছেন।
সবাইকে আমরা ইলম শিখাব । এটা তখন সম্ভব হবে যখন আমরা বাইরে সফর করে তাদের হালত জানতে পারব। ইলম নিয়ে সফর করার মাধ্যমে ইলমের মাসারিফ সম্পর্কে জানা সম্ভব হবে। যেমন ধনী ব্যক্তি মাল নিয়ে গরীবের মধ্যে সফর করে তার মাসারিফ সম্পর্কে জানতে পারে।
আলী রা. বলেন; না বুঝে কোরআন পড়ার মধ্যে কোন খায়র নেই। সব ওয়াদা- ওয়ীদ ঈমানের উপর। আমরা মিথ্যা সংবাদ পড়ে একে অন্যকে শোনাই । পরস্পরে মোযাকারা করি। কিন্তু কোরআন পড়ে একথা বলি না যে আমি আজকে অমুক ঘটনা পাঠ করেছি
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ইলম দুই প্রকার ১. যবানের ইলম ২ অন্তরের ইলমে। প্রথম প্রকার ইলম তার বাহকের বিপক্ষে দলিল হবে । তার বিপদের কারণ হবে।দ্বিতীয় প্রকার ইলম হল ইলমে নাফে । যা তার জন্য এবং সমাজের জন্য উপকারে আসে।পবিত্র কোরআনের হক হল, তাদাব্বুরের সাথে তেলাওয়াত করা। আমাদের জন্য জরুরি হক্কানী ওলামায়ে কেরামের কাছে জিজ্ঞেস করে ভাল ভাল তাফসির মোতাআলায় রাখা। হক্কানী ওলামায়ে কেরামের তাফসীরের মজলিসে বসা।
আলী রা. বলেন; না বুঝে কোরআন পড়ার মধ্যে কোন খায়র নেই। সব ওয়াদা- ওয়ীদ ঈমানের উপর। আমরা মিথ্যা সংবাদ পড়ে একে অন্যকে শোনাই । পরস্পরে মোযাকারা করি। কিন্তু কোরআন পড়ে একথা বলি না যে আমি আজকে অমুক ঘটনা পাঠ করেছি । অমুক বিষয় জানতে পেরেছি। অথচ এ সংবাদ চূড়ান্ত সত্য। আমাদের উচিত হল সবার সাথে তার সম্মান বজায় রেখে আচরণ করা। প্রত্যেকের হক জানা। যে যেই মর্যাদার তার সাথে সেই অনুযায়ী ব্যবহার করা।
দাওয়াত-তাবলীগ কোন দ্বীনি শো‘বার মোয়ারেয নয়। দুশমন যদি আমাদের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করতে চায় তাহলে এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। সম্মিলিত ভাবে এর প্রতিরোধ করতে হবে। কোরআন নাযিল হওয়ার সময় এক শ্রেণির মানুষ কেউ যাতে কোরআন শুনতে না পারে এ জন্য চেষ্টা করতো। এই দলের লোক এখনও আছে । বরং আগের তুলনায় আরো প্রকট আকারে আছে। যতক্ষণ পর্যন্ত দ্বীনি মেহনতের সাথে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পারস্পরিক মোয়ামালা তাবিলে হাসানের সাথে না হবে ততদিন এই উম্মতের মধ্যে ইজতিমায়িয়্যাত তৈরী হবে না।
সূরা হুজুরতে ফাসেক কোন সংবাদ নিয়ে আসলে কি করণীয় এ ব্যাপারে বলা হয়েছে। এ অনুযায়ী আমল করতে হবে। আমাদের আকল ও ফাহমের সাথে কাজ করতে হবে।সাহাবী যিনা করে এসে রাসূলের কাছে স্বীকারোক্তি দিলেন । এরপরও রাসূল তার সাথে সুধারণার মোয়ামালা করেন। বলেন; হয়তো তুমি চুমু খেয়েছ অথবা স্পর্শ করেছ। এর মাধ্যমে মুসলমানের কাজের ইতিবাচক তাবিলের হুকুম দেয়া হয়েছে। আপনাদের কাছে দরখাস্ত ১ সাল লাগিয়ে উম্মতের হালত পর্যবেক্ষণ করুন। উম্মত আপনাদের জন্য আপনারা উম্মতের জন্য।
গ্রন্থনা: মুহাম্মাদ দিলাওয়ার হুসাইন-
দৈনিক বিশ্ব ইজতেমা/বাংলার ধ্বনি ডটকম-এর সৌজন্যে