দেওবন্দ, ভারত থেকে :
তার শিক্ষাজীবন আরম্ভ হয় হাকিমুল উম্মত হজরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবি রহ.-এর খলিফা হজরত মাওলানা মাসিহুল্লাহ খান রহ.-এর মাদরাসা মিফতাহুল উলুম জালালাবাদে৷ এরপর ১৯৪২ থেকে ১৯৪৭ সাল অবধি হাদিস, তাফসিরসহ নানা বিষয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন বিশ্বখ্যাত ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে৷
দেওবন্দ থেকে পড়াশোনা শেষ করে ফিরে যান নিজ এলাকায়৷ যোগ দেন কর্মজীবনে৷ আরম্ভ করেন অধ্যাপনা৷ নিজ উস্তাদ হজরত মাসিহুল্লাহ খান রহ.-এর মাদরাসা মিফতাহুল উলুমে লেগে যান যথারীতি৷ টানা আটটে বছর মেহনত করে গড়েন হাজারো ছাত্র, তরুণপ্রতিভা৷ পাকিস্তানের বিশ্বখ্যাত আলেমেদীন ও বিচারপতি শাইখুল ইসলাম মুফতি তাকি উসমানির মতো ব্যক্তিরা তার ছাত্র হিসেবে গর্ববোধ করেন৷
এরপর শাইখুল ইসলাম হজরত মাওলানা শিব্বির আহমদ উসমানি রহ. প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের সিন্ধ এলাকার কেন্দ্রীয় ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলুম টাণ্ডোলা ইয়ারে নিয়ে আসা হয় তাকে৷ এখানে তিন বছর অধ্যাপনার কাজে নিয়োজিত থাকার পর তিনি পাকিস্তানের প্রসিদ্ধ ও সবচে বড় ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলুম করাচির অধ্যাপনায় যোগ দেন৷ আর এখানেই তিনি একনাগাড়ে দশবছর ধরে হাদিস, ফিকহ, তাফসির, দর্শন, ইতিহাস ও আরবিসাহিত্যের পাঠদান করেন৷ এ সময়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবেও তিনি একটি বছর পাকিস্তানের তখনকার সময়ের প্রসিদ্ধ আলেম হজরত মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুফ বানুরির মাদরাসা করাচির বানুরি শহরের জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়ায় বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান করেন৷
পাকিস্তান এসে আর ফিরে যাননি মাতৃভূূমি ভারতে৷ অপরকে জ্ঞান দান ও নিজে জ্ঞান আহরণের ক্ষেত্রে তার আগ্রহ ছিলো প্রবল৷ এতো বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনার কাজে নিয়োজিত থাকার পরও তিনি সদা ভাবতেন আরও নতুন কিছু নিয়ে৷ সেই ধারায়ই ১৯৬৭ সালের ২৩ জানুয়ারি মোতাবিক ১৩৮৭ হিজরির শাওয়াল মাসে পাকিস্তানের করাচিতে প্রতিষ্ঠা করেন ‘জামিয়া ফারুকিয়া’ নামে বিখ্যাত ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান৷ সেই থেকে আজ অবধি তার এই নিরলস ও একনিষ্ঠ প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠানটি সাফল্যের শীর্ষ চূড়ার মুখ দেখেছে৷
শাইখুল হাদিস হজরত মাওলানা সালিমুল্লাহ খান ছিলেন প্রখর মেধা, দূরদর্শী চিন্তা ও অস্বাভাবিক বিচক্ষণতার অধিকারী৷ সেজন্যই ১৯৮০ সালে পাকিস্তানের মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া পাকিস্তান’-এর প্রধান শিক্ষাসচিবের দায়িত্বে নিয়োজিত হন তিনি৷ দায়িত্ব লাভের পর তিনি পাকিস্তানের মাদরাসাসমূহের শিক্ষা, চরিত্র ও শিষ্টাচারগত যে উন্নতি এবং শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে যে পদক্ষেপ আঞ্জাম দিয়েছেন, তা পাকিস্তানের ইতিহাসে বিরল, উপমাহীন৷ তার হাত ধরেই বিশ্বমানের শিক্ষাসনদ স্বীকৃতি লাভ করে পাকিস্তানের মাদরাসা শিক্ষার্থীরা৷ ধর্মীয় শিক্ষা সনদের মান এমএ, বিএ, ইন্টারমিডিয়েট, মডেল, প্রাইমারির সমমানে দেয়া আরম্ভ হয়৷ আজ অবধি তা পূর্ণ বহাল রয়েছে৷
এমনকি প্রথমদিকে এই শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দেশটির হাতেগোনা কয়েকটি মাদরাসা সংযুক্ত ছিলো৷ এছাড়াও হাজারো মাদরাসা ছিলো এই বোর্ডের বাইরে৷ সেগুলির বহু মাদরাসাকেই তিনি নিজ কর্ম দক্ষতায় বোর্ডের অধীনে আনতে সক্ষম হন৷ ফলে ২০০৭ সাল অবধি এই শিক্ষা বোর্ডে সংযুক্ত হয় পনেরো হাজারেরও অধিক মাদরাসা৷ এ কারণেই আজ পাকিস্তানের অন্যতম একটি ধর্মীয় প্লাটফর্ম হিসেবে ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া পাকিস্তান’কেই সারা দেশে গণ্য করা হয়৷ ফলে পুরো পাকিস্তানেই একই সিলেবাসে সমস্ত মাদরাসা পরিচালিত হয়৷ তার এমন সাফল্যপূর্ণ মহান দায়িত্ব আঞ্জাম দেবার ফলে ১৯৮৯ সালে বোর্ডটির সদর হিসেবে ঘোষণা করা হয় তাকে৷ ইন্তেকালের পূর্ব অবধি তিনি পূর্ণ দক্ষতার সঙ্গে অধ্যাপনার পাশাপাশি বোর্ডটির চেয়ারম্যান হিসেবেই দায়িত্ব পালন করছিলেন৷