২০১৬ সালের দাখিল পরীক্ষায় ফল বিপর্যয়, ১০ জনের চেয়ে কম শিক্ষার্থী ভর্তিসহ নানা কারণে ৫০৮ মাদরাসা বন্ধ করতে যাচ্ছে সরকার।
প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে গত ১০ জানুয়ারি মঙ্গলবার এসব মাদরাসা সুপারদের কারণ দর্শিয়ে পত্র দিয়েছে মাদরাসা অধিদপ্তর। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৫টি বিষয়ের তথ্যসহ জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জবাব সন্তোষজনক না হলেই চূড়ান্তভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে মাদরাসা।
বিষয়টি স্বীকার করে মাদরাসা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, শুধু ফল বিপর্যয় ও কম শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার কারণেই কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়নি। মাদরাসা শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য ফলাফলে পিছিয়ে থাকা প্রতিষ্ঠানকে আরো ভালো ফল করার জন্য সতর্ক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যাদের আরো ভালো ফল করার সুযোগ ছিল কিন্তু তারা কাঙ্ক্ষিত ফল করতে পারেনি। এসব প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে আরো ভালো ফল করতে পারে এ কারণে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
কারণ দর্শানো নোটিশ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৬ সালের দাখিল পরীক্ষায় কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার রবিউল আউয়াল দাখিল মাদরাসা থেকে মাত্র ৫ শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ২ জন। একই জেলার নওদা খারারা নেছারিয়া দারুচ্ছুন্নাত দাখিল মাদ্রাসা থেকে ৪ জন অংশগ্রহণ করে ২ শিক্ষার্থী পাস করেছে। লালমনিরহাটের বদশাহ দারুচ্ছুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসা থেকে ৩ জন অংশগ্রহণ করে ১ জন শিক্ষার্থী পাস করেছে।
রাতিপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা থেকে ২ শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে ১ শিক্ষার্থী পাস করেছে। একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পরেনি এমন মাদরাসাও রয়েছে। এভাবে সারা দেশে অর্ধ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দাখিল পরীক্ষার ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে। অথচ এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ সরকার প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে। এসব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি এবং পাঠদানের অনুমতি নিতে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করার অভিযোগ রয়েছে। অনেক আমলাও শিক্ষানুরাগী হতে নিজ এলাকায় মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু বছরের পর বছর ফল বিপর্যয় ঘটছে। সন্তোষজনক হারে শিক্ষার্থীও ভর্তি হচ্ছে না। এসব কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভুঁইফোড় মাদ্রাসা বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
কারণ দর্শানো পত্রে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকার মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে শিক্ষা খাতে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে জাতীয় স্কেলে ২০১৫ অনুযায়ী শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন দ্বিগুণ করা হয়েছে। অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীদেরও যথাযোগ্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। তার পরেও দাখিল পরীক্ষার ফল বিপর্যয় ও কম শিক্ষার্থী ভর্তি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মাদরাসা এবং মাদরাসার শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, যেসব মাদরাসা থেকে ২০১৬ সালে দাখিল পরীক্ষায় ১০ জনের কম শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে, পাসের হার ৫০ ভাগের নিচে, ৯ জনের কম শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে এই ধরনের ৫০৮টি মাদ্রাসাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। পত্রে মাদরাসাগুলোর শ্রেণিভিত্তিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা, ২০১৬ সালের দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী কম কেন, বিগত তিন বছরের দাখিল পরীক্ষার ফল, মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা, প্রতি বছর শিক্ষক-কর্মচারীর জন্য সরকারি আর্থিক অনুদান/সরকারি বেতন-ভাতাদি বাবদ ব্যয় এসব তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে উল্লিখিত তথ্যের ব্যাখ্যাসহ কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদরাসা ও কারিগরি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাদরাসা) একেএম জাকির হোসেন ভূঞা বলেন, মন্ত্রণালয়ের রুটিন ওয়ার্ক অনুযায়ী মাদরাসা সুপারদের কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কিছু মাদরাসা এমপিওভুক্ত, বাকিগুলো পাঠদানের অনুমতিপ্রাপ্ত। শোকজের জবাব সন্তোষজনক না হলে মাদরাসার এমপিও ও পাঠদানের অনুমতি বাতিল করা হবে বলে তিনি জানান।
এর আগে গত ২৩ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদানের অনুমতির পর শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি, এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের অনুমোদন বাতিল এবং ২০১৬ সালে এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষায় শতভাগ ফেল করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিও এবং পাঠদানের অনুমতি বাতিল করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে মাউশি ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডগুলোকে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে পরিপত্র জারি করে। -খোলা কাগজ