বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ দুপুর ২:৫৮
Home / দারস / আমি আল্লাহ কে দেখলাম, তিনি তাঁর হাতের তালু আমার দুই কাঁধে রাখলেন

আমি আল্লাহ কে দেখলাম, তিনি তাঁর হাতের তালু আমার দুই কাঁধে রাখলেন

ড. আবদুস সালাম আজাদী :

জীবনে আল্লাহর পথে চলতে চলতে মানুষ যতই বিপদের সামনে আসে আল্লাহর এক এক গুণবাচক নামের প্রকাশ কিন্তু ঘটতে থাকে নানান ক্ষেত্রে। তিনি রাকীব, কঠোর পর্যবেক্ষক, এটা আমি নিজেই বুঝেছি জীবনের অনেক ক্ষেত্রে। তিনি লাতীফ, খুব ই কোমল, দয়াদ্র। এটা আমি বুঝেছি আমার জীবনের বিভিন্ন বাঁকে। তিনি আযীযুন যুন্তিক্বাম, শক্তিশালী; অপরাধীর উপর থেক প্রতিশোধ নেন।

নানা ভাবে তাঁর গুণ গুলো আপনি পাবেন। আপনি অহঙ্কার করে দেখুন, আল্লাহর চাদর নিয়ে টান মারার মজাটা সংগে সংগে পেয়ে যাবেন। পাপাচারে বিভোর হলে আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে দেখবেন কিভাবে আপনাকে আযাবে আলীম বা যন্ত্রণাদায়ক কষ্টের স্বাদ পাইয়ে দিচ্ছেন।
খুব কষ্টে আছেন, সামনে ঘোর আঁধার ছেয়েছে, ‘সবদিকে বন্ধ দুয়ার’ দেখছেন, হয়তঃ শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়ে ফজরের আলো নেয়ার অপেক্ষায় কাত হয়েছেন, ফেনায়িত ব্যাথায় ঘুমের রাজ্য এসে আপনাকে ঢেকে ফেলেছে, আপনি আল্লাহ কে দেখতেও পারেন স্বপ্নে। স্বপনে আল্লাহকে দেখা যায়। তবে বলা যাবেনা আপনি যেভাবে দেখেছেন ঐ ভাবেই তিনি, বা ঐ রকম তিনি। আপনার এই ঘনঘোর দূর্দিনে আল্লাহ কে যেমন ভাবে দেখতে চেয়েছেন তিনি হয়ত সেভাবেই দেখা দিয়েছেন।

একদিন আমাদের নবী (সা) ফজরের সালাতে আসতে বিলম্ব করছেন। সাহাবীগণ ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠলেন, কেও কেও সূর্যের চোখ ও দেখতে পাচ্ছেন বলে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছেন। এমন সময় তিনি সালাতের জন্য প্রস্তুত হতে নির্দেশ দিলেন। সংক্ষেপে সালাত আদায় হলে বললেন, যে যেভাবে আছো, সারিতে তোমরা ঐভাবেই থাকো। সবার দিকে ফিরে দাঁড়ালেন মহানবী (সা)। বললেনঃ “আজকে সালাতে আসতে কে বেঁধে রেখেছিলো একটু শোন।

“আমি রাতে তাহজ্জুদের জন্য উঠলাম, অযু করে আমার সামর্থ্য অনুযায়ী সালাত আদায় করলাম। সালাতের মধ্যেই আমি একটু ঘুমের ঘোরে চলে যাই।। তখন বুঝতে পারি আমার উপর কিছুটা ভারী ভারী লাগছে। সহসা দেখলাম তিনি আর কেও নন, তিনি সুমহান ও শ্রেষ্ট নিয়ামতের আধার আমার রাব্ব। এসেছেন সবচেয়ে সৌন্দর্যের বিভা নিয়ে।
“বললেনঃ মুহাম্মাদ!,

“বললামঃ এই তো আমি আপনার ই কাছে, ও আমার রাব্ব।
“তিনি বললেনঃ উপরের সভাষদেরা কি নিয়ে বিতর্ক করছে জানো?
“আমি বললামঃ আমার রাব্ব, আমি তো জানিনা। তিনবার এই রকম প্রশ্ন করা হলো, তিন বারেই হলো একই উত্তর দেয়া।

“এর পর দেখলাম তিনি তাঁর হাতের তালু আমার দুই কাঁধে রাখলেন। আমি তাঁর আংগুলের শীতলতা দুই স্তনের মধ্যখানে অনুভব করলাম। এরপর আসমান যমিনের সকল কিছুই আমি বুঝতে পারলাম।

“তিনি এবার বললেনঃ মুহাম্মাদ!
“বললামঃ এই তো আমি আপনার ই কাছে, ও আমার রাব্ব।
“তিনি বললেনঃ উপরের সভাষদেরা কি নিয়ে বিতর্ক করছে জানো?
“আমি বললামঃ আমার রাব্ব, ওরা গুনাহ কিভাবে মুছে ফেলা যায় তা নিয়ে কথা বলছে।
“তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ কিভাবে?
“বললামঃ জামাআতে সালাত আদায়ের জন্য হেঁটে আসলে, সালাত আদায়ের পরে মসজিদে বসে কিছু সময় কাটালে, খুব সমস্যার সময়ে পানিতে সুন্দর করে ধুয়ে অযু করলে।
“তিনি বললেনঃ আর কি?
“আমি বললামঃ মানুষকে খাওয়ালে, নরম করে কথা বললে, মানুষের ঘুমিয়ে থাকার সু্যোগে গভীর রাতে সালাতে মগ্ন হলে।
“তিনি বললেনঃ মুহাম্মাদ, তুমি আমার কাছে চাও।

“আমি বললামঃ আমার আল্লাহ, আমি তোমার কাছে কল্যানময় কাজের সামর্থ্য চাই, খারাপ কাজ ছাড়ার শক্তি চাই, দরিদ্রদের ভালোবাসার সুযোগ চাই। আমাকে মাফ করে দাও, আমাকে দয়া কর। যদি আমার জাতি কে ফিতনায় ফেলে পরীক্ষা নিতে চাও, ফিতানায় জড়ানোর আগেই তুমি আমাকে মরণ দিয়ো। ও আল্লাহ, আমি তোমার ভালোবাসা চাই। তোমাকে যে ভালোবাসে, তাকেও ভালোবাসতে দিয়ো আমাকে। যে কাজ আমাকে তোমার ভালোবাসার নিকটতর করে তাও যেন ভালো লাগে আমার”।

এরপর আমাদের রাসূল (সা) বললেনঃ এই স্বপ্ন সত্যই, এটা তোমরা শিখে নাও, পরে অন্যদেরকেও শিখায়ে দাও।

তিরমিযী ইবনে আব্বাস থেকে, আহমাদ মুয়ায ইবন জাবাল থেকে হাদীস টি বর্ণনা করেছেন। আবু রাফে’, জাবির ইবন সামুরাহ ও আবু উবাইদাহ থেকেও হাদীস টার বর্ণনা এসেছে। ইমাম তিরমিযী এই হাদীস টাকে ইমাম বুখারীর কাছে বর্ণনা করে সহীহ কিনা জানতে চান, ইমাম বুখারী একে সাহীহ বলেছেন। এই জন্য ইমাম তিরমিযী একে হাদীসুন হাসানুন সাহীহ বলেছেন।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...