শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সকাল ৬:৫৩
Home / ইতিহাস ঐতিহ্য / সমুদ্র ঈগল ৬ (ক)

সমুদ্র ঈগল ৬ (ক)

কুতায়বা আহসান :

– একদিন কাহতানী কবিলার সর্দার কা’ব বিন আমির তাঁর কেল্লা সদৃশ্য হাবেলির পারিবারিক বৈঠকখানায় বসে আছেন। অল্পক্ষণের ভেতরেই সেখানে একে একে প্রবেশ করলেন তাঁর ছেলে মুগীরা, স্ত্রী মাইসুনা, বড় মেয়ে নাবিল এবং সবার ছোট মা’আয।
– মা’আয ছিল অত্যন্ত খুবসুরত এবং সবার প্রিয়পাত্র। সে তার পিতার সাথে যেভাবে অবলীলায় কথা বলতে পারত তেমনটি কারো পক্ষে সম্ভব হতো না। তাই কারো কোনো বিশেষ কথা থাকলে এবং তা বলতে বিব্রতবোধ করলে মা’আযের সহায়তা নেয়া হতো। মা’আয দরজায় পা’ দিয়েই পিতাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো—
– আব্বু! আপনি আমাদের ডেকে পাঠিয়েছেন। কা’ব বিন আমির নিজ আসন থেকে দাঁড়িয়ে তাদের সবাইকে স্বাগতম জানিয়ে মা’আযকে লক্ষ করে বললেন: হ্যাঁ মা! আমিই তোমাদের ডেকে পাঠিয়েছি। আমি কি তোমাদের জরুরী কোনো কাজে বাঁধা দিয়েছি। হাসতে হাসতেই কথাগুলো বললেন সর্দার কা’ব বিন আমির।
– হাসীন কুমারি বালিকা মা’আয মুচকি হেসে বলল: না আব্বু! এমনিতেই জানতে চাইছিলাম।
– কা’ব বিন আমির তখন তাদের সবাইকে শূন্য আসনগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে বললেন: বস তোমরা। তোমাদের সাথে আমার জরুরী কিছু কথা আছে। ওরা সবাই বসে গেলেন। সর্দারও তাদের সাথে নিজ আসনে বসে পড়লেন।
– নীরব কয়েকটা মুহূর্ত কেটে গেল। এক সময় নীরবতা ভেঙ্গে কা’ব বিন আমিরের কন্ঠে বেজে উঠল— আমি এখানে যা বলতে চাই সে কথাগুলো তোমাদের তিনজনকে উদ্দেশ্য করে তোমাদের মাকে উদ্দেশ্য করে নয়। অতএব আশা করি তোমরা মনোযোগ দিয়েই আমার কথাগুলো শুনবে।
– শুনো! আমাদের একজন মুহসিন রয়েছেন। আসলে তিনি কেবল আমাদেরই মুহসিন নন, বরং পুরো মিল্লাতের মুহসিনই বলা যায় তাকে। তিনি মিল্লাতের খেদমতে অনেক দূরে বসবাস করছেন। আমাদের সাগর তীরের জেলে পল্লীতে তাঁর এক বুড়ো দাদু রয়েছেন। তাঁর নাম জাবির বিন মুগীস। আমার কথা হলো— তোমরা তো প্রতিদিন বিকেলে ঘোড়া দৌড়িয়ে সাগর সৈকত পর্যন্ত গিয়ে থাকো। অতএব প্রতিদিন একবার হলেও তার সাথে দেখা করো। তাঁর সুখ দুঃখের প্রতি খেয়াল রেখো। এখানে তাঁর আপনজন বলতে কেউ নেই। অথচ তিনি চলতে ফিরতে অনেকটাই অক্ষম। রোজ তোমরা এখান থেকে তাঁর জন্য খাবার নিয়ে যেয়ো। শুনো! মিল্লাতের যে আজীম মুহসিনের তিনি দাদু, তিনি দাদুর খিদমত অপেক্ষা অতি গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজে অনেক দূরে বসবাস করছেন। তাই তার পক্ষে তাঁর দাদুর দেখাশুনার দায়িত্ব আদায় সম্ভব হচ্ছে না। সুতরাং আমি চাই আমার প্রিয় সন্তানরা সেই আযীম মুহসিনের স্থলাভিষিক্ত হয়ে তাঁর দাদুর খেদমতের ভারাভার নিজেদের কাঁধে উঠিয়ে নেবে। আমি মনে করি এ দায়িত্ব নেয়াটা আমাদের উপর ফরয।
– কা’ব বিন আমির কথা বলে থামতেই মা’আয অত্যন্ত আস্থা আর নিষ্ঠার সাথে বলতে শুরু করলো—
– আব্বু! আজ আপনি যে প্রসঙ্গে কথা বলছেন তা শুনে আমার অন্তরটা আনন্দে লাফাতে চাইছে। আপনি যে বুড়োর কথা বলেছেন, যার নাম জাবির বিন মুগীস বলেছেন, তিনি যদি আমার মিল্লাতের আযীম কোনো ফরযন্দের দাদু হয়ে থাকেন তাহলে আপনি জেনে রাখুন তিনি আজ থেকে কেবল তাঁরই দাদু নন আমাদেরও দাদু! আমি ভাইয়া আর আপুর কথা বলছি না, আমার ব্যাপারে আপনাকে নিশ্চিতি দিয়ে বলছি অবশ্যই আমি প্রতিদিন জেলে পল্লীতে গিয়ে আমার সেই দাদুর খোঁজখবর নেব। প্রতিদিন সকালে তার কাছে খাবার নিয়ে যাব। রাতের খাবারও পৌঁছাবার যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাব। এবার আপনি আর কি বলতে চান বলুন।
– কা’ব বিন আমির তাঁর প্রিয়তমা কন্যার মুখে সুন্দর উত্তর পেয়ে আনন্দে আবেগে আপ্লুত হয়ে উঠলেন। বললেন: বেটি মা’আয! তোমার জবাব আমাকে পরিপূর্ণভাবে মুতমায়্যিন করে দিয়েছে। আপাতত আমার আর কোনো কথা নেই। তোমাদের কোনো কাজ থাকলে এবার তোমরা যেতে পার।
– তার এ কথা শুনে মাইসুনা, নাবিল এবং মুগীরা অন্য কামরায় চলে গেলেন। কিন্তু মা’আয তার জায়গায় বসে রইল।
– কা’ব কতক্ষণ তার দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে থেকে বললেন, মা! তুমিও যাও! ঘরে গিয়ে আরাম কর।
– জবাবে মা’আয তার পিতার দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বলতে লাগলো: আব্বু কথাটা আমি আগেও দু একবার আপনার কাছে জানতে চেয়েছি। কিন্তু প্রতিবারই আপনি পাশ কেটে চলে গেছেন।
– আমি আপনার কাছে জানতে চেয়েছিলাম একবার আমাদের হাবেলিতে বুট্রুস এবং লিসাঙ্কু নামক দুই রাহিব এসেছিলেন। তারা আপনার এবং সা‘দ চাচার সাথে দীর্ঘ আলাপ করেছিলেন। কী ব্যাপারে আলাপ করেছিলেন সেটা আমি বার বার জানতে চেয়েও জানতে পারিনি। এরপর কয়দিন আগে দেখলাম বুট্রুস নামক পাদ্রীই একা এসেছেন। লিসাঙ্কু আসেনি। উনি কই গেলেন? কেন আসলেন না? বুট্রুস আপনার সাথে কী আলাপ করলেন? এসব বিষয়ে জানতে চেয়েও আমি কোনো উত্তর পাইনি। আমি যতবারই আপনাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছি প্রতিবারই আপনি পাশ কেটে গেছেন সান্ত্বনামূলক কোনো উত্তর দেননি।
– কা‘ব বিন আমির কিছুটা ভেবে নিয়ে বললেন: আমি বিস্তারিত বলতে পারছি না। সংক্ষেপে এতটুকু জেনে নাও এই রাহিবরা আমাদের শত্র“ নন। এরা নাসারা হবার পরও আমার কল্যাণের বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখছেন। কয়েক দিন আগে বুট্রুস নামক যে পাদ্রী আমার কাছে এসেছিলেন তিনি আমাদের কল্যাণের লক্ষে সুন্দর একটা পরামর্শ দিয়ে গেছেন।
– মা‘আয কিছুটা বিদ্রুপাত্মক কন্ঠে বলে উঠল: একজন খ্রিষ্টান পাদ্রী আমাদের কল্যাণের পরামর্শ দিয়ে গেছেন। আচ্ছা আমি কি আমার স্বজাতিপ্রেমী আব্বুর কাছ থেকে সে পরামর্শটা কী জানতে পারি?

আরও পড়ুন : সমুদ্র ঈগল ৪-৫

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...