ঘটনাস্থল থেকে সাবের চৌধুরী: হবিগঞ্জ সদরের তিন মসজিদের ভেতরে কুরআন শরীফে আগুন লাগিয়েছে কে বা কারা। মসজিদ তিনটি হলো- হবিগনজ শহরে প্রবেশের আগে ভাদৈ মসজিদ, ভাঙ্গাপুল মসজিদ এবং ধুলিয়াখালের কাছে আমতলি মসজিদ।
ভাদৈ মসজিদের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মসজিদের ইমাম সাহেব আসর নামাজের আযান দেওয়ার জন্য মসজিদে গেলে মসজিদের বারান্দায় রাখা কুরআন শরীফ রাখার জায়গাটিতে তিনি আগুন দেখতে পেয়ে লোকজনকে ডাকেন। কে বা কারা লাগিয়েছে এ ব্যাপারে কেউ কিছু বলতে পারে না।
ভাঙ্গাপুল মসজিদের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল তিনটার দিকে এক লোক মসজিদের মেহরাবের ভেতর দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখে চিৎকার করে লোক জড়ো করেন। লোকজন এসে দ্রুত আগন নিভান। এখানেও কারা আগুন লাগিয়েছে এ ব্যাপারে কেউ কিছু জানতে পারে নি। অন্যান্য মসজিদের তূলনায় এ মসজিদের ক্ষতির পরিমাণ বেশি। অনেকগুলো কুরআন শরীফ, কুরআন শরীফ রাখার সেলফ, মিম্বর, ফ্যান, মসজিদের মাইকের মেশিন, এবং আরো কিছু জিনিস আগুনে দগ্ধ হয়েছে।
ধুলিয়াখালের কাছে আমতলী মসজিদেও আগুন লাগানো হয়েছে ভেতরে সেখানেও অনেকগুলো কুরআন শরীফ আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনটা মসজিদই রাস্তার পাশ ঘেঁষে। তিন মসজিদেই আগুন দেওয়া হয়েছে একই সময়ে- তিনটা থেকে সাড়ে তিনটা ভেতরে। এবং তিনো মসজিদেই বিভিন্ন জায়গায় রাখা কুরআন শরীফগুলো এক জায়গায় এনে জড়ো করে আগুন দেওয়া হয়েছে।
মসজিদ তিনটি ঘুরে দেখা গেছে মসজিদগুলোর সামনে প্রচুর মানুষের জটলা। তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এবং এ ঘটনার সুষ্ঠু কার্যকরি তদন্ত এবং অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
সন্ধ্যার পরপর প্রশাসনের লোকজন তিনটি মসজিদই পরিদর্শণ করেন। ভাঙ্গারপুলের মসজিদের সামনে তারা বলেন এ ঘটনা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। এটা কোন পাগলের কাজ হতে পারে না। কারণ একই সময় তিন মসজিদে পরিকল্পনা করে কোন পাগল এ কাজ করবে এটা অবিশ্বাস্য। আবার এখানকার পরিবেশ পরিস্থিতির বাস্তবতার দ্বারা এটা পরিস্কার যে কোন হিন্দুও এ কাজ করবে না। এটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য সম্পূর্ণ য়ড়যন্ত্রমূলক একটা কাজ। আপনারা শান্ত থাকুন। আমরা এর কঠোর ব্যবস্থা নেবো।
প্রত্যক্ষদর্শী মাওলানা এনামুল হক জানান, গত দুয়েকদিন আগে ভাদৈ মসজিদের ইমাম সাহেব পাগল বেশের ২২-২৫ বছরের এক যুবককে কুরআন শরীফের পাতা ছেঁড়ার কাজে হাতে নাতে ধরেন। তার হাতে একটা ব্যাগ ছিল। ব্যাগ ফেলে যুবকটি অটো রিকশায় উঠে দ্রুত পালিয়ে যায়। আজ প্রশাসন সে ব্যাগ জব্দ করেছেন। মাওলানা এনামুল হক বলেন আমি নিজে এ ব্যাগ দেখেছি। এর ভেতরে একটি সাদা কাপড় ছিল। সে সময় সবাই একে পাগলের কাণ্ড বলে ধরে নিলেও এখন এ ঘটনাগুলোর পর সেই ঘটনাটির নতুন তাৎপর্য দেখা দিয়েছে। বোঝা যাচ্ছে যুবকটি আসলে পাগল ছিলো না। আজকের ঘটনাটি অবশ্যই পাগলের কাজ হতে পারে না। এটা ষড়যন্ত্রমূলক একটি কাজ।
হবিগনজ সদরের বহুলা গ্রামের দারুল ইরশাদ ওয়াদ দা‘ওয়াহ আল ইসলামিয়া মাদরাসার নায়েবে মুহতামিম মাওলানা নাজমুল হুদা চৌধুরী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, আমরা এ ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। প্রশাসনের কাছে আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক সঠিক বিচার চাই।