আল্লামা আহমদ শফীর সঙ্গে মাওলানা নদভীর দীর্ঘ বৈঠক
কওমী অঙ্গনে বিরাজমান সংকট নিরসন ও কওমী সনদ স্বীকৃতি বিষয়ক সমস্যা সমাধানে আল্লামা আহমদ শফী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শিগগিরই আনুষ্ঠানিক চিঠি দিচ্ছেন বলে কওমী নিউজকে বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী জানান।
দেশের শীর্ষ উলামায়ে কিরামের কিছু গুরুত্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও বড় বড় কিছু উদ্যোগের সর্বশেষ আপডেট জানাতে এবং এতে আল্লামা আহমদ শফীর নির্দেশনা, মতামত, ও উপদেশ গ্রহণের জন্য শীর্ষ উলামায়ে কিরামের পক্ষ থেকে শনিবার (৫ নভেম্বর) হাটহাজারী পাঠানো হয় একটি প্রতিনিধি দল। বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) বেফাক অফিসে বাদ ফজর থেকে যুহর পর্যন্ত শীর্ষ উলামায়ে কিরামের দীর্ঘ বৈঠকে এ প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। এসময় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আল্লামা আশরাফ আলী, মুফতি মুহাম্মাদ ওয়াক্কাস, মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, মাওলানা আবদুল হামিদ (পীর সাহেব মধুপুর), মাওলানা নুর হোসাইন কাসেমী, মুফতি আবদুল মালেক, মাওলানা নুরুল ইসলাম, মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী, মুফতি ফয়জুল্লাহ, মুফতি নুরুল আমিন, মাওলানা মহফুযুল হক, মাওলানা সালমান ও মাওলানা মনিরুজ্জামান প্রমুখ। প্রথমে এতে খিলগাঁও মাখজানুল উলূমের মুহতামিম মাওলানা নুরুল ইসলাম ও বাংলাদেশ উলামা মাশায়েখ সমন্বয় কেন্দ্রের মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভীর যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। মাওলানা নুরুল ইসলাম শারীরিক কারণে যেতে না পারায় গিয়েছেন ফরিদাবাদ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আবদুল কুদ্দুস ও মাওলানা নদভী।
কওমী নিউজের সঙ্গে সাক্ষাতকারে মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী এ প্রসঙ্গে বলেন, গত সপ্তাহে বেফাক অফিসে এক পর্যালোচনা বৈঠকে রাজধানীর শীর্ষ আলেমগণ একটি বিষয়ে মুজাকারা করার জন্য আমাদেরকে চট্টগ্রাম যেতে বলেন। আমরা শনিবার সকালের ফ্লাইটে যাই এবং রাতের ফ্লাইটে ফিরে আসি। মাওলানা নুরুল ইসলাম সাহেব আকষ্মিকভাবে জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় ফরিদাবাদের মুহতামিম সাহেব হুজুর অসুস্থ শরীর নিয়েও খুব কষ্ট করে যান। দুপুর থেকে সন্ধা পর্যন্ত দেশের শীর্ষ মুরব্বি ও মুসলিম জনতার অভিভাবক আল্লামা আহমদ শফী সাহেব-এর সাথে আমাদের বৈঠক চলে। মাওলানা আবদুল কুদ্দুস সাহেব হুজুরের খলিফা ও অত্যন্ত আস্থাভাজন হওয়ায় বৈঠক অত্যন্ত ফলপ্রসু হয়। আল্লামা আহমদ শফী সাহেব ব্যক্তিগতভাবে আমাকে খুব স্নেহ করেন। আমি তাকে কওমী অঙ্গনের অনৈক্য, হতাশা ও সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি নিয়ে বিশদ বর্ণনা দেই, হযরত তখন একে একে প্রতিটি বিষয়ে তার ইলহামী ও সুচিন্তিত মতামত প্রদান করেন। ভবিষ্যতের পথনির্দেশ দেন। তার সামগ্রিক ইচ্ছা ও পরিকল্পনার বিষয়েও বহু খোলমেলা বক্তব্য প্রদাব করেন। এরমধ্যে হেফাজত ও বেফাক সংক্রান্ত যত মতামত ও পথনির্দেশ তা নির্দিষ্ট ফোরামে যথসময়ে প্রকাশ করা হবে। যে সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে এ প্রতিনিধি দল গিয়েছিল সে বিষয়ে হযরত তার পরামর্শ ও মতামত দিয়েছেন। এটিও শীর্ষ আলেমদের পরবর্তী পর্যালোচনা সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে পেশ করা হবে। দীর্ঘ বৈঠক ও আলোচনার যে অংশ আমার ব্যক্তিগত প্রশ্নের জবাবে কিংবা অনানুষ্ঠানিক আলাপচারিতায় হযরত বলেছেন তার মধ্যে রয়েছে কওমী অঙ্গনের হতাশা কেটে যাওয়ার সুস্পষ্ট ইংগিত।
বেফাক নিয়ে যত কথা বাজারে চালু রয়েছে এসবের উপযুক্ত সুরাহা হযরত করবেন। বেফাকভূক্ত উলামা ও মাদারিসে দীনিয়ার যতরকম প্রশ্ন, দুঃখ, বেদনা, মান, অভিমান এ সবেরও দ্রুত অবসান হবে। তাবলীগ জামাতের দিল্লি নেজামুদ্দীন মারকাজ ও ঢাকার কাকরাইলকে ঘিরে যে উদ্বেগ বিশ্বব্যাপী চলছে, এ নিয়ে বাংলাদেশের শীর্ষ আলেমদের করণীয় সম্পর্কে হযরত সুন্দর পথনির্দেশ দান করেছেন। বেফাকের সাথে অন্য ৪ বোর্ডের যে সমস্যা চলছে তা নিরসনে হযরত উত্তম সুরাহা প্রস্তাব করেছেন। হেফাজতের ভবিষ্যত কর্মপন্থা ও সহসাই একটি বিশ্বমুসলিম স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিশাল ও ব্যাপক একটি কর্মসূচি ঘোষণার চিন্তাভাবনা নিয়েও একান্ত আলাপে তিনি কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে কওমী আলেমদের বৈঠক, হযরতের পত্র পৌঁছানো থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও অন্যান সরকারী সূত্রের সাথে আলেমদের আচরণ কী হবে তা নিয়েও হযরত সুনিদিষ্ট নির্দেশনা দান করেন।
কওমী মদরাসা নিয়ে তার বক্তব্য সম্বলিত দীর্ঘ পত্র তিনি নিজ প্যাডে প্রিন্ট করিয়ে দস্তখত ও সীলমোহর মেরে যথাসময় তা প্রধানমন্ত্রীর নিকট পৌঁছানোর জন্য নির্দেশ দেন। বিভিন্ন ভাবনায় তৈরী বেশ কিছু প্রতিবেদন ও পত্রাবলি আমাকে দিয়ে পড়িয়ে মনযোগসহ শুনেন এবং সংশোধনী দেন। একটি পত্রে সামান্য ভাষাগত পরিবর্তন আনতে বলে তিনি তাতে সম্মিতিসূচক অনুস্বক্ষর করেন।
এক্সক্লুসিভ কিছু আধ্যাত্মিক নির্দেশনা ও আলোকপাত দিয়ে আমার জীবনের সেরা একটি সন্ধাকে তিনি স্মরণীয় করে রেখেছেন। চা-নাশতা, দুপুরের খানা ও হযরতের ব্যক্তিগত স্নেহময় আচার ব্যবহারে আমরা মুগ্ধ। অতীতের প্রতি সাক্ষাতের মতই এবারও হযরত ছিলেন প্রণোচ্ছল, উদার। হযরতের সাহেবজাদা মাওলানা আনাস মাদানী, হাজী ইউনুস রহ.-এর সাহেবজাদা মাওলানা মোজাম্মেল, মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহী এবং হযরতের প্রেস সচিব মাওলানা মনির আহমদ ছাড়াও খাদেম ও শিক্ষার্থীদের অভ্যর্থনা, আদর, আপ্যায়ন এবং আন্তরিকতা ভোলার মত নয়। তবে অন্য দশটি সাক্ষাতের চেয়ে এবারকার সাক্ষাৎটি ছিলসম্পূর্ণ ভিন্ন। এত দীর্ঘ সময় হযরতকে কাছে পাওয়া এবং হযরতের প্রিয়ভাজন মাওলানা আবদুল কুদ্দুস সাহেবের সান্নিধ্যে হযরতকে প্রাণখুলে কাছে থেকে দেখা , কথা বলা, কিছুক্ষণ খেদমত করার এ সৌভাগ্যের কোন তুলনা হয়না।
সূত্র : কওমী নিউজ