এহতেশামুল হক ক্বাসিমী ::
তাজবীদ শাস্ত্র নিয়ে আগেকার যুগের আলেম-উলামা যতটুকু খিদমাত আঞ্জাম দিয়েছেন এবং নিয়মনীতি বজায় রেখে তারা যেভাবে কুরআন তেলাওয়াত করেছেন ও করিয়েছেন তা সত্যিই বর্ণনাতীত। কিন্তু হাল যামানার চিত্র সম্পূর্ণ এর বিপরীত না হলেও সুখকরতো অবশ্যই নয়। কারণ দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আজ মাদারিসে কওমিয়াতেও তাজবীদ শাস্ত্রে যতটুকু গুরুত্ব দেওয়ার কথা ছিলো ততটুকু দেয়া হচ্ছে না। দারুল উলূম দেওবন্দের আদর্শ ও সিলেবাস থেকে বাংলাদেশের মাদারিসে ইসলামিয়া যেনো ক্রমশ ছিটকে পড়ছে। ফন্নে তাজবীদের উপর দারুল উলূম দেওবন্দ যে পরিমাণ গুরুত্বারূপ করে থাকে, ঠিক সে পরিমাণ বাংলাদেশের কওমী অঙ্গনে গুরুত্ব প্রদান করলে সকল তালিবলু ইলমের তেলাওয়াত বিশুদ্ধ হয়ে উঠতো।
তাজবীদ শাস্ত্রে চলনসই মাহারত এবং বিশুদ্ধ তেলাওয়াত ছাড়া কোনো ফাযিলকেই সনদ প্রদান করে না দারুল উলূম দেওবন্দ। অপরদিকে আমাদের দেশের মাদরাসাগুলো থেকে অন্তত ৫০% ফাযিল বিশুদ্ধ তেলাওয়াত ছাড়াই মাওলানার সনদ পেয়ে থাকে। এই ফিফটি% এর মধ্যে এমন অনেককেই পাওয়া যাবে, যাদের পেছনে নামাযই সহীহ হবে না। কারণ, তাদের আকসারের তেলাওয়াতে লাহনে জ্বলীর প্রাদুর্ভাব থাকে খুব বেশি। আর লাহনে জ্বলী থাকলে নামায শুদ্ধ না হওয়াটাই স্বাভাবিক।
দুই.
একসময় মাদরাসাগুলোতে ফান্নে তাজবীদ খুবই গুরুত্বের সাথে পাঠদান করা হতো। তাজবীদের বিভিন্ন কিতাব সিলেবাসেরও অন্তর্ভূক্ত ছিলো। মাদরাসাসমূহের সূতিকাগার দারুল উলূম দেওবন্দে এই শাস্ত্রকে এখনো অনেক গুরুত্ব দেওয় হয়। যা আগেই উল্লেখ করেছি। কিন্তু বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন নামকা ওয়াস্তে তাজবীদ আছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো, হিফজুল কুরআন মাদরাসা যখন থেকেই বাংলাদেশে বাড়তে লাগলো এবং হাফেজে কুআনের সংখ্যা ক্রমশঃ বৃদ্ধি পেলো তখন কিতাব বিভাগে ফন্নে তাজবীদের গুরুত্ব হৃাস পেতে থাকলো। এতে ফলাফল যা হবার তাই হলো। ক্লাসের ননহাফিজ সিংহভাগ ছাত্রের কপাল পুড়লো। তাদের অধিকাংশের কুরআান তেলাওয়াত মনগড়া ও অশুদ্ধ তরীকায় রুপ নিলো। আমখাস সবার নামাজ ফাসিদ হতে শুরু করলো। তখন প্রয়োজন দেখা দিলো বিকল্প ব্যবস্থার।
অপরদিকে কেজি দেড়কেজি টাইপের স্কুলগুলো যখন কচুরীপনার ন্যায় বাড়তে লাগলো এবং মসজিদের ইমাম সাহেবানদের নামের পেছনে পেশ ইমাম ও খতীবের লেবেল লেগে গেলো তখন গ্রাম-গঞ্জের ও শহর বন্দরের সাবাহী মাকতাবগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ হতে লাগলো। ফলাফল কী দাড়ালো? মুসলমানের ঘরে জন্ম নিয়েও ছেলে-মেয়েরা কুরআন শিখা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়লো। প্রয়োজন দেখা দিলো বিকল্প পরিকল্পনার।
এহেন অশুভ পরিস্থিতি অবলোকন করেই অশুদ্ধ তেলাওয়াতের মহামারি থেকে দেশ, জাতি ও ধর্মকে রক্ষা করার মহান ব্রত নিয়ে কাওমী অঙ্গন থেকে এগিয়ে আসলেন উস্তাযে মুহতারাম হযরত ভানুগাছী হুজুর রাহঃ। ত্রাণকর্তার রুপে আবির্ভূত হলেন তিনি। নতুন মিশন নিয়ে হাজির হলেন জাতির দরবারে। রমজানিয়া কুরআান শিক্ষা কোর্স চালু করলেন। প্রতিষ্ঠা করলেন আঞ্জুমানে তালীমুল কুরআন।
ফলে নতুন দিগন্ত উন্মেচিত হলো তাজবীদ শাস্ত্রের। অশুদ্ধ তেলাওয়াত থেকে মুক্তির সন্ধান পেলো ধর্মপ্রাণ মুসলমান। অল্প দিনেই আঞ্জুমানের উদরে জন্ম নিলো একাধিক বোর্ড ও শত শত শাখা প্রশাখা। ছড়িয়ে পড়লো তার খিদমাত দেশের প্রতিটি অঞ্চলে। অতঃপর দেশ থেকে দেশান্তরে। হাজারো কেন্দ্রের সুরমূর্চনায় এখন বিমোহিত থাকে প্রতিটি পবিত্র রমজান। তাই বলা যায়, হিজরী ষোড়শো শতাব্দীর অনন্য দান আঞ্জুমানে তালীমুল কুরআন।