মঙ্গলবার, ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১১:৪২
Home / খিলাফাহ / রাজনীতির বাজারে আমি সিয়াসত খুঁজিয়া ফিরি

রাজনীতির বাজারে আমি সিয়াসত খুঁজিয়া ফিরি

রশীদ জামীল ::

rashid-jamil”বক্তব্য পরে শুনব। আগে বলুন আপনার পরনে নতুন জামা দু’টি এল কোত্থেকে? রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে আমরা পেলাম একটি করে। আপনি দু’টি নিলেন কোন অধিকারে?”

জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছেন খলিফাতুল মুসলিমীন উমর ইবনুল খাত্তাব। দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানালো সাধারণ একলোক। জবাব দিন। জবাব দিতে না পারলে আপনার খুতবা শুনব না।

খলিফা জবাব দেবার আগেই দাঁড়িয়ে গেলেন খলিফা পুত্র আব্দুল্লাহ। ‘আমার বাবা আপনাদের মত একটি জামা-ই নিয়েছেন। আজ জুমার নামাজ পড়ানোর জন্য আমি আমার অংশে পাওয়া নতুন জামাটি আমার বাবাকে পরতে দিয়েছি। তাকিয়ে দেখুন আমার পরনে সেই পুরনো জামা-ই আছে এখনো।
লোকটি বসে পড়ল। এবার খুতবা দিন।

দুই
উমরের মত জাদরেল একজন শাসক, যার সামনে বনের বাঘও দাঁড়াবার সাহস পেত না, সেই উমরের সামনে অভিযোগের আঙুল উচিয়ে দাঁড়িয়ে যাবার অধিকার পেত গ্রামের সাধারণ মানুষও। এটা ছিল তাদের ইসলাম। আর এ যুগে যদি বড় কোনো আলেমের কথা বা কাজের মুয়াদ্দবানা সমালোচনাও করা হয়, সেটা হয়ে যায় বেয়াদবি! হয়ে যায় গোস্তাখি! বলাহয় দেখো ‘কতবড় নাদান! হযরতজির কথার জবাবে কথা বলে’!
কেনো?
এটা কোন ইসলাম?
এটা কোন গ্রহের ইসলাম?

আম্বিয়ায়ে কেরাম তো বটেই, আমরা জানি সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে সমালোচনা করা যাবে না। বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কঠোরভাবে নিষেধ করে গেছেন। ‘খবরদার! আমার পরে আমার সাহাবিদের নিয়ে সমালোচনা করো না’। কিন্তু ‘আমার পরে উম্মতের উলামায়ে কেরামকে নিয়ে কোন সমালোচনা করা যাবে না’- এমন কোন কথা নবীজী কোথাও বলে গেছেন বলে আমার জানা নেই। কারো জানা আছে? থাকার কথা না।

তিন
রাস্তায় দৌড়াচ্ছিল পিচ্চি এক ছেলে। ইমামে আযম আবুহানিফা সে দিকেই যাচ্ছিলেন। বললেন, ‘বাবারে, সতর্কতার সাথে চল। পা ফসকে পড়ে যেতে পার। দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে’! ছেলেটি বলল, ‘ইমাম সাহেব, আমারচে’ বরং আপনাকেই বেশি সতর্কতার সাথে পা ফেলা উচিত। আমার পা ফসকালে তো আমি একা ধ্বংস হব আর আপনার পা ফসকালে পুরো জাতি ধ্বংস হবে’।

উলামায়ে কেরাম আমাদের মাথার তাজ। তাদেরকে আমরা বিচ্ছুত মনে করি না। তারমানে এই না যে, আমরা তাদেরকে ভুলত্রুটির উর্ধে ভাবি। সমসাময়িক যে কোনো ব্যাপারে তাঁরা যখন মতামত দেবেন, সেটা তাদের ইজতিহাদি মতামত হবে। সঙ্গতকারণেই ভিন্নমত আসতে পারে। আর ভিন্নমত মানেই যে বিরোধিতা নয়, এটাও যারা বুঝেন না, তাদের উচিত আমাজনে চলে যাওয়া। মনে রাখতে হবে তাদের একটি ভুল মানে উন্মতের পেরেশানি।

আরেকটি ব্যপারেও আমাদেরকে বিব্রত হতে হয়। সেটাহল সবকিছুতে চোখবন্ধ একাত্ত। অথচ, একটা আল্লাহর আ’দত, একটা হল কুদরত। পৃথিবী চলে আল্লাহর আ’দতি নেযামে, কুদরতে নয়। সুতরাং সবকিছুতে কুদরতানা কথাবার্তা বলার কোনো কারণ ছিল না।

চার
ওরাসাতুল আম্বিয়াদের মধ্যে নবীওয়ালা আখলাকের অনুপাত নিয়ে কথা বলবার অধিকার সকল মুসলমানের থাকা উচিত। ফহমিক স্বেচ্ছাচার, অহমিক নিমগ্নতা, আত্মকেন্দ্রিক অহমিকা, আত্মভোলা বুযুর্গি আর অতিন্দ্রীয় বিকেন্দ্রিকতা নিয়ে বিক্ষিপ্তভাবে কথা হয়। বিন্যাস্তাকারে কথা বলা দরকার। জাতিকে বিভ্রান্তি থেকে বাঁচানোই নয় শুধু, রক্ষার জন্যও।

উলামায়ে কেরাম যেহেতু নবী বা সাহাবি না, সে জন্যে তাদের কর্মকাণ্ড ভুলের উর্ধে হওয়ার কোন কারণ নাই। আমরা যদি সবকিছুতে ‘জি হুজুর, জি হুজুর’ বলে যাই, তাহলে সামনে আরো কঠিন দুর্দিনের সামনা করতে হবে। সুতরাং, কারো ভাবা-ভাবি আর মনে করা-করির দিকে চেয়ে থেকে মুসলিহতের তসবিহ জপার মানে হয় না। আমরা আমাদের কথা বলব। অবশ্যই বলা দরকার। শুধু খেয়াল রাখব কথা যেনো আদবের সীমাটা না ডিঙায়, ব্যস।

পাঁচ
ইসলামের দু’টি পরিভাষা, ইলহাদ এবং বিদ’আত। ইলহাদ মানে মৌলিক মানদণ্ডে নিক্তির নিম্নগামিতা। বিদ’আত হল দ্বীনিয়াতে স্বেচ্ছা সংযুক্তি তথা প্রান্তসীমা ডিঙানো। সহজ উদাহরণ দিই।

‘কবরের পাড়ে গিয়ে সালাম দিলেও নবীজি শুনেন না’, এটা ইলহাদ নামক বিচ্ছুতি। ঘরে বসে সালাম দিলে নবীজি সেটাও সরাসরি শুনে ফেলেন, এটা বিদ’আত নামের বিভ্রান্তি। আর, কবর পাড়ে গিয়ে সালাম দিলে নবী সরাসরি শুনেন, দূরে থেকে দিলে পৌছে দেয়াহয়, এটা হল প্রকৃত অবস্থা। এই অবস্থার অন্য নাম সিরাতে মুস্তাক্বীম।

উলামায়ে কেরাম শ্রদ্ধার পাত্র। তাদেরকে সম্মান করতে হবে। তবে তাদেরকে তাদের অবস্থানেই রাখতে হবে। সাধারণ মানুষের কাতারে নামিয়ে আনা যাবে না আবার নবীগণের কাতারেও নিয়ে যাওয়া যাবে না। নো ইলহাদ, নো বিদ’আত।

ছয়
কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি ইস্যুতে টপ টু বটম কামড়া-কামড়ি এখন পরিষ্কার। সুতরাং ইসতে’আরা-তাশবিহ’র ভাষায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলে আর লাভ কি। যা বলার, সরাসরিই বলা যায়।

আল্লামা আহমদ শফী এই সময়ে বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ আলেম, সন্দেহ নাই। তিনি হাটহাজারি মাদরাসার সম্মানিত মুহতামিম। তিনি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার চেয়ারম্যান। তাঁর যে কোনো আদেশই আমাদের শিরোধার্য হওয়া উচিত। তবে কথা আছে।

কথাহল,

ক,
আল্লামা আহমদ শফী যুগের অন্যতম বুযুর্গ। কিন্তু তারমানে এই না যে, সব বিষয়েই তিনি পারদর্শী। একটি স্মার্টফোন উনার হাতে তুলে দিলে এটার ফাংশন তাঁর শততম অধঃস্তন এক ছাত্র যেটুকু বুঝবে, আমার মনে হয় না তিনি সেটুকুও বুঝবেন।
অথবা
উনাকে যদি বলাহয়, হযরত, বাংলালিংক এর সীম রেজিস্ট্রেশন করাহয়, কওমি মাদরাসা নিবন্ধিত হলে বাংলালিংক-এর কাতারে নেমে যাবে, তাহলে সম্ভাবনা আছে তিনি জিজ্ঞেস করে ফেলতে পারেন, সীম জিনিষটা কী? বাংলালিংক কারে কয়?

এই না বোঝাকে তাঁর জানার সীমাবদ্ধতা ভাবলে সেটা হবে আরেক মুর্খতা। এসব ছোটখাটো ব্যাপার জানার জন্য হাজার হাজার ছাত্র আছে তাঁর।

এটাও জরুরিও না যে, বড়দের সবকিছু জানতেই হবে। বিশ্বনবীর কাছে নও মুসলিমরা এসে বলল, আমরা নরগাছের ফুল নিয়ে মাদী গাছে বেঁধে দেই, এতে ফলন বেশি হয়। এখন কী করব বলেন।
নবী বললেন, ঘঁষাঘঁষির দরকার নাই। আল্লাহ যা দেওয়ার এমনিতেই দেবেন।
তাঁরা সে বছর আর ঘঁষাঘঁষির করল না। দেখাগেল ফলনও কম হয়েছে। জানাল নবীকে। সহিহ মুসলিম শরিফের বর্ণনা মতে বিশ্বনবী তখন বলেছিলেন, أنتم اعلم بامور دنياكم (আনতুম আ’লামু বে-উমূরে দুনইয়াকুম) অর্থাত, ‘জাগতিক কর্মকাণ্ড তোমরাই আমারচে’ ভালো বুঝবে’। আমি তোমাদেরকে দুনিয়া নয়, দ্বীন শেখাতে এসছি।

বলবার চেষ্টা করছি বড় হলেই যে তাকে সব জানতে হয়, এমন কোনো কথা নাই। আর না জানাও তাঁর কমজুরি বা অযোগ্যতা হয় না।

স্বীকৃতি, স্বকীয়তা, সরকারের ইনটেনশন, বেফাকের অবস্থান, অন্যান্য বোর্ডের মানসিকতা, সনদ নিয়ে রাজনীতি, কর্তৃত্বের কূটনৈতিক কূটচাল, ছাত্রদের চাওয়া, সময়ের হাওয়া…কেউ যদি বলে আল্লামা আহমদ শফী প্রতিদিন এগুলোর আপডেট নিচ্ছেন এবং সেগুলো নিয়ে ভাবছেন, তাহলে সেটাহবে তাঁর প্রতি এক বুহতানুন আযীম।

খ,
২০১৩ থেকে নিয়ে আজ অব্দি শাহ আহমদ শফীর নামে যত কথা বাজারে এসেছে, ঢাকা থেকে, চিটোগং থেকে, অথবা বিভিন্ন বক্তার মাইক্রোফোনে, সেগুলোর কোন কথা আহমদ শফীর নিজের কথা আর কোন কথা তাঁর নামে ব্র্যান্ডিং করে বাজারে ছাড়া, সেটা নিয়ে অনেকেই প্রকাশ্য সন্দেহ পোষণ করে থাকেন। এই সন্দেহকে এককথায় ‘অমূলক’ বলে উড়িয়ে দিতে চাইলে দেশের শীর্ষ আলেমদের কাউকে না কাউকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করতে হবে। কারণ, কথাগুলো তারাই বাজারে ছাড়ছেন।

গ,
আল্লামা আহমদ শফী বেফাকুল মাদারিসের চেয়ারম্যান। এই হিসাবে তিনি বোর্ডটির প্রধান কর্তাব্যক্তি। কিন্তু বেফাকের সকল কর্মকাণ্ড উনার উপস্থিতিতে বা সিদ্ধান্তের আলোকেই হয়ে থাকে, কেউ কি আছেন যিনি এই দাবি করতে রাজি হবেন?

মনে হয় না। কারণ, তাহলে বেফাকের সকল বক্তব্য, যাবতীয় কথাবার্তা যেমন, ‘লক্ষ লাশের হুমকি, স্বীকৃতি চাই না, স্বীকৃতি চাই, বেফাকের নেতৃত্বে হলে মানি, দেওবন্দের আদলে হলে রাজি…ধরণের ছন্নছাড়া কথাবার্তার দায় উনার উপরই গিয়ে বর্তাবে। এখন কাজ করবেন ইনি, কথা বলবেন উনি আর দায় নিতে হবে আহমদ শফীকে, তাতো হতে পারে না।

এই যদিহয় অবস্থা, তাহলে বেফাকের গঠনমূলক সমালোচনাকে কেনো টেনে-হিচড়ে আহমদ শফীর সমালোচনার নাম দেওয়া হয়? কেনো বেফাক এবং আহমদ শফীকে এক বানিয়ে ফেলে বেফাক বিতর্ক আহমদ শফীর কাঁধে তুলে দেওয়া হয়! আল্লামা আহমদ শফী এদেশের সকল কওমি আলেমের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র। কেনো তাকে বিতর্কের অবস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়!

সাত
১৭ তারিখ বেফাকের সম্মেলন হল। বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া পজিটিভ প্রাপ্তি কতটা কী, সেটা সময়ই বলে দেবে। আমরা অপেক্ষা করছি। তারপর বেফাকের সিনিয়ার সহ সভাপতি মাওলানা আনওয়ার শাহ আরেকটি সম্মেলন করলেন। তিনি আহবান জানালেন ‘বেফাককে কলুষমুক্ত’ করার। আমরা অপেক্ষা করছি। আমরা আসলেই জানি না বেফাকের ভেতরে কলুষের প্রকৃতি বা পরিমাণ কেমন! জানতেও চাই না। শুধু চাই মুক্ত হোক।(যদি থাকে!)
আমরা মনেকরি, বেফাক যদি সত্যিই আন্তরিকতার প্রমাণ রাখতে চায়, তাহলে সব বাদ দিয়ে সবাইকে নিয়ে বসুক। অতীতে কে কী করেছেন, সেটা ঘাটাঘাটির কেঁচু খুড়তে লাগলে কাতারে কাতারে সাপ বেরুনো আরম্ভ করবে। যারাই কওমির সিনিয়ার আলেম, তাদের নিয়েই বসা হোক। আল্লাহকে হাযির-নাযির রেখে শতভাগ এখলাসের নিয়তে বসা হোক। বসা হোক এই মানসিকতা নিয়ে যে, সম্মিলিত সিদ্ধান্ত যাই হবে, আমি মেনে নেব। দায়িত্বটা যে কোনো বোর্ড বা যে কোনো বড় আলেমই নিতে পারেন। বেফাকের নাম উচ্চারণ করছি বেফাক বড় এবং কেন্দ্রীয় বোর্ড বলে।

আট
আমরা মনেকরি বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাইকে ছাড় দেয়ার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সবচে’ বেশি ছাড় বেফাককেই দিতে হবে। কারণ, বেফাক শীর্ষ বোর্ড। আর যেহেতু আল্লাহর বিশেষ কুদরতে কোনো ঘটনা না ঘটলে বাংলাদেশের কওমি মাদরাসা বোর্ডগুলো নিজেদের বিলুপ্ত ঘোষণা করে কোনো একটি বিশেষ বোর্ডের অধীনে চলে আসার আপাতদৃষ্ট কোনো সম্ভাবনাই নাই, তাই পথ এখন একটাই খোলা আছে। আর সেটিহল-
আগাম কোনো শর্ত ছাড়া সববোর্ডের চেয়ারম্যান, মহাসচিব পর্যায়ের একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক। সেই বৈঠকের বৈশিষ্ঠ্য হবে-
ক, চেয়ারম্যান,মহাসচিবের বাইরের কেউ সেখানে থাকবেন না।
খ, আলোচনা সরাসরি ব্রডকাস্ট হবে না।
গ, বৈঠক শেষে সকলের স্বাক্ষর করা সম্বলিত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

নয়
প্রসঙ্গের একটু ডান দিক থেকে ঘুরে আসি। গতকাল দেখলাম আমার খুব কাছের একজন লেখক বন্ধু সাহেবযাদাদের উপর ক্ষেপেছেন। তিনি আল্লামা সাঈদ পালনপুরিকে কোট করে বলেছেন, উম্মতের জন্য দাজ্জালের ফেৎনা থেকেও সাহেবযাদা’ নামের ফেৎনা বেশি ভয়ঙ্গকর!

আমি যদি বুঝতে ভুল না বুঝে থাকি, তাহলে লেখকের উদ্দিষ্টের কেন্দ্রে ছিলেন বেফাকের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা আতহার আলীর সাহেবযাদা মাওলানা আনওয়ার শাহ এবং কিশোরগঞ্জের উলামা সম্মেলনে উপস্থিত হওয়া বেফাকের সাবেক সভাপতি আল্লামা নূর উদ্দিন আহমদ গহরপুরির সাহেবযাদা জামিয়া গহরপুরের মুহতামিম মাওলানা মুসলেহুদ্দীন রাজু এবং প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবীবু্র রহমানের সাহেবযাদা জামেয়া মাদানিয়া কাজিরবাজারের ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা সামিউর রহমান মুসা। আরো কেউও ছিলেন কিনা, আমি বুঝতে পারছি না।

আল্লামা পালনপুরির বক্তব্য তিনি আমি কোনো মন্তব্য করব না। কারণ, সেই মাহফিলে আমি উপস্থিত ছিলাম না বলে জানি না কথাগুলো কোন প্রসঙ্গে ছিল। আগের কথা পরের কথা কী ছিল। তাছাড়া উনার মত মানুষ কোন দৃষ্টিভঙ্গি মাথায় রেখে কথাগুলো বলেছিলেন(অবশ্য আদৌ যদি সেভাবেই বলে থাকেন, যেভাবে তাঁকে উদ্ধৃত করা হয়েছে।) সেটা না জেনে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

আমি শুধু আমার বন্ধুকে মনে করিয়ে দিতে চাই, এই সময়ে আমরা আমাদের ঐতিহ্যের নামে যে স্লোগান দিচ্ছি, সেটাও কিন্তু সাহেবযাদাকেন্দ্রিক। সাইয়্যিদ হোসাইন আহমদ মানাদিকে আমরা দেখিনি। আমরা আমাদের মাদানি হিশেবে যাদের পেয়েছি, তাঁরা হলেন সাইয়্যিদ আস’আদ মাদানি, আরশাদ মাদানি এবং মাহমুদ মাদানি। তাঁরাও কিন্তু সাহেবযাদা। আমার বন্ধু যে প্রতিষ্ঠানের উস্তাদ, সেই প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপালও আরেকজন প্রখ্যাত আলেমের সন্তান, মানে আরেকজন সাহেবযাদা। তাহলে ‘সাহেবযাদা’ বলে ধাক্কা দিলে ধাক্কাটা ঠিক কোথায় গিয়ে লাগে?

দশ
বেফাক রাজনীতিমুক্ত হওয়া উচিত কি না, সেটা নিয়েও বিতর্ক হচ্ছে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব থাকলে সেটার প্রভাব যে পড়েই, সন্দেহ নাই। আবার লোম বাছতে শুরু করলে কম্ভলও আর থাকে না, এটাও ঠিক। উভয় দিক মাথায় রেখে কীভাবে কী করা যায়, ঠিক করার দায়িত্ব তাদের উপরই থাকুক, যারা রাজনীতিও করেন, আবার বিভিন্ন বোর্ডের নেতৃত্বেও আছেন।

কেউ যেনো এসে ‘ইসলামী সিয়াসতও যে একটি ইবাদত’, এই জ্ঞান বিতরণ না করেন। আমরা সেটা জানি। বিশ্বাসও করি। তবে আরেকটি কথা হয়ত আপনারা জানেন না, আমরা সেটাও জানি। আর কথাটি হল হাকিম মুহাম্মাদ আখতার রাহমাতুল্লাহি আলাইহির। তিনি বলেছিলেন তাঁর খলিফা মাওলানা আসগর হোসাইন সাহেবকে। মাওলানা আসগর হোসাইন আমাকে। কথাটি হল,

”মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানি রাজনীতি করতেন, তাহাজ্জুদও পড়তেন। এখনকার উলামাও রাজনীতি করেন তাহাজ্জুদও পড়েন। কিন্তু মাওলানা মাদানির রাজনীতি ছিল তাহাজ্জুদের সমপর্যায়ের, আর এখনকার তাহাজ্জুদ চলেগেছে রাজনীতির পর্যায়ে। মাওলানা মাদানি তাহাজ্জুদ পড়তেন যার জন্য, রাজনীতিটাও তাঁর জন্যই করতেন। আর এখন …”

মনে পড়ে হাফেজ্জি হুজুরকে। তওবার রাজনীতি’র ডাক দিয়েছিলেন তিনি। বাংলাদেশে প্রমাণ হয়েছে ইসলামী রাজনীতির একটাই চরিত্র হতে পারে, সেটা হবে ‘তওবার রাজনীতি’।

শুরু হউক তওবার রাজনীতি।
প্রথম তওবা আল্লাহর কাছে।
পরেরটা জাতির কাছে।

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...