মৌলভীবাজার প্রতিনিধি :: ‘‘মানুষ মানুষের জন্য’’ এই প্রবাদটি আবারো সত্যে প্রমাণিত হলো সম্প্রতি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রুপসপুর গ্রামের ৮ জনের মর্মান্তিক সড়ক র্দুঘটনায় নিহতদের ক্ষেত্রে। সমাজে এখনো কিছু মানুষ আছেন যারা অসহায় মানুষের কল্যাণে ব্যয় করেন জানমাল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন আল্লাহর বান্দারা অকাতরে দান করেন এমন মহৎ প্রাণের সংখ্যা নগন্য হলেও পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছেন। সামাজিক অবক্ষয়ের এই চূড়ান্ত পর্যায়েও এমন যুবক শ্রেণি রয়েছেন যারা সমাজের মোড় পাল্টিয়ে দিতে পারেন।
বলছিলাম কয়েকজন তরুণ আলেমের মানবতাবোধ জাগ্রত হওয়া এবং তাদের মহতি উদ্যোগে অভাবনীয় সাফল্যের কথা।
টগবগে তরুণ আলেম মাওলানা আবু সুফিয়ান নিজাম সবেমাত্র মাওলানা, মুফতি ডিগ্রী অর্জন করে মা-বাবার মুখে হাসি ফোঁটাতে নতুন সংসার বিনির্মাণে বাবা, ভাই, মামা, দাদা, চাচাসহ ৯ জন নিকটাত্মীয়কে সাথে নিয়ে শ্বশুর বাড়ীতে যাত্রা করেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, গত ১৬ সেপ্টেম্বর বি-বাড়ীয়ার কাছে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় বরসহ ৮ জনই প্রাণ হারান। তাদের মধ্যে ২ জন ছিলেন আলেম। বর আবু সুফিয়ান এবং মাওলানা সাইদুর রহমান। এই নিহত ৮ জনের অধিকাংশই নিতান্তই দিনমজুর। মাওলানা সাইদুর রহমান ৫ ও ৮ বছরের দুটি শিশুসন্তান রেখে গেছেন। এসব সর্বস্ব হারানো পরিবারের অসহায়ত্বের কথা বিবেচনায় অনেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে মানবিক সাহায্যের হাত প্রসারিত করেছেন।
সিলেট আম্বরখানা জামে মসজিদের ইমাম হাফিয মাওলানা মুফতি শায়খ জিয়া রাহমান, বোখারা মিডিয়ার পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, কমলগঞ্জের মাওলানা লুৎফুর রহমান জাকারিয়া তাফাদার, মাওলানা খালেদ বিন শাওকী, কাতিব মিডিয়ার পরিচালক মাওলানা ক্বারী ইনাম বিন সিদ্দিক, মাওলানা রফিকুল ইসলাম জাকারিয়া, কে আই ফোরদাউস প্রমুখ নিহত মাওলানা সাইদুর রহমানের স্ত্রী-সন্তান এবং মাওলানা আবু সুফিয়ানের মা-ভাই, আবু সফিয়ানের নিহত চাচা ও মামার অসহায় পরিবারের মানবিক সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য ফেসবুকে একটি ইভেন্ট খোলা হলে আশাতীত সাড়া পাওয়া যায়। আলহামদুল্লিাহ অভাবনীয় সহযোগিতা, পরামর্শ এবং আশ্বাসও পেয়েছি।
গত ৮ অক্টোবর শনিবার ‘‘আঞ্জুমান ইভেন্ট’’ প্রায় দুই লক্ষ টাকা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের নিকট পৌঁছানোর জন্য একটি টিম কমলগঞ্জের রুপষপুর গ্রামে যান। তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে মতবিনিময় করে ৫ টি পরিবারের মধ্যে নগদ ৫ হাজার করে টাকা, সাইদুর রহমানের বিধবা স্ত্রী-সন্তানদের জন্য গৃহ নির্মাণ বাবদ ১ লাখ ২০ হাজার টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়। তাছাড়া বিবাহযোগ্য ৩টি মেয়ের বিবাহ খরচ বাবদ ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। এছাড়াও আরও প্রয়োজনমত সাধ্যানুযায়ী কিছু অর্থসহায়তার আশ্বাস প্রদান করেন এবং নিহত আবু সুফিয়ানের আতহ রায়হানের চিকিৎসার খোঁজখবর নেওয়া হয়।
ইভেন্ট টিমের পক্ষ থেকে এসময় উপস্তিত ছিলেন, হাফিয মাওলানা মুফতি জিয়া রাহমান, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, মাওলানা রফিকুল ইসলাম জাকারিয়া, মাওলানা ক্বারী হাফেয ওলীউর রহমান, মাওলানা ইনাম বিন সিদ্দিক, মাওলানা লুৎফুর রহমান জাকারিয়া, আলহাজ্ব মাওলানা জিয়া উদ্দিন ইউসুফ, মাওলানা রুহুর আমীন নগরী, মাওলানা খালেদ বিন শাওক্বী ও আনওয়ারুল কারীম মুস্তাজাব । অর্থ বিতরণকালে উপস্তিত ছিলেন, মুন্সিবাজার ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড মেম্বার জাহেদুল হক জাহিদ, কাশিনাথ আলাউদ্দীন হাইস্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক লুৎফুর রহমান, হাজি মুফিজ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক নাজমুল ইসলাম, নিহত সাইদুর রহমানের পিতা আব্দুল মজিদ, নিহত দুরুদের ছেলে হোসেন মোহাম্মদ, হাফিজ ফারুক আহমদ, মাওলানা আমীরুল ইসলাম, মাওলানা জয়নাল আবেদীন ও মিনার মিয়া প্রমুখ৷
তিনটি বিয়েতে ৫০ হাজার টাকা করে দেড় লাখ টাকা দেওয়া হবে। আবু সুফিয়ান ভাইয়ের নিহত মামা দুরুদ মিয়ার ঘরের একটি বেড়া নির্মাণ বাবত ৪০ হাজার টাকার মত লাগবে। আমাদের হাতে এখন নব্বই হাজার টাকার মত আছে। তাইলে দরকার আরও এক লাখ টাকা।
ইভেন্ট সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন।