সোমবার, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সকাল ১০:২১
Home / অনুসন্ধান / খতিবে ইসলাম মাওলানা আতাউর রহমান খান

খতিবে ইসলাম মাওলানা আতাউর রহমান খান

%e0%a6%96%e0%a6%be%e0%a6%a8-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%acআমাদের আকাবির-৩৩

খ্যাতিমান আলেমে দীন, সাবেক সংসদ সদস্য, বহুমুখী প্রতিভার সমন্বিত ব্যক্তিত্ব মাওলানা আতাউর রহমান খান রহ.। তিনি ৩০ জুলাই ২০০৮ ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। তিনি একাধারে একজন জাতীয় পর্যায়ের বিশিষ্ট আলেম, রাজনীতিবিদ, সফল বাগ্মী, চিন্তাশীল লেখক, আদর্শ সমাজসেবক, শিক্ষানুরাগী এবং সুতীক্ষ্ন চিন্তার অধিকারী ব্যাপক সমাদৃত সংগঠক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। কর্মজীবনে ইসলাম, দেশ ও জাতির কল্যাণার্থে বহুমুখী দায়িত্ব ও খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন।

কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ার প্রায় শুরু থেকে তিনি এরসঙ্গে জড়িত ছিলেন। দীর্ঘ ৪২ বছর পর্যন্ত তিনি এর বিভিন্ন দায়িত্বে থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে খ্যাতির শীর্ষে তুলে আনতে বিরাট ভূমিকা রাখেন। ১৯৯১ সালে কিশোরগঞ্জ সদর আসন থেকে তিনি বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।  তার আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু মাওলানা আতহার আলী রহ.-এর মুখপাত্র ও ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে স্বাধীনতাপূর্ব বাংলাদেশের রাজনীতিতে অসামান্য ভূমিকা পালন করেছেন। এছাড়াও ছিলেন বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের দীর্ঘকালীন মহাসচিব, ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নসের সদস্য, জাতীয় শরীয়া কাউন্সিলের সদস্য, জামিয়া ইমদাদিয়ার ভাইস প্রিসিপাল, জামিয়া ফারুকিয়া কিশোরগঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা প্রিসিপাল, ঢাকার ফরিদাবাদ ও মিরপুর ৬নং মাদরাসার প্রিসিপাল। জেলা শহরে অবস্থান করেও বহু ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ের নেতৃত্বের আসন তিনি অলংকৃত করেছেন। ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক যেকোনো ইস্যুতে তার সরব উপস্থিতি থাকত।

মাওলানা আতাউর রহমান খান ১৯৪৩ সালের ১ মার্চ কিশোরগঞ্জের ইটনা থানাধীন হাতকাবিলা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মাওলানা আহমদ আলী খান রহ. ছিলেন আল্লামা আতহার আলীর প্রধান খলিফা এবং জামিয়া ইমদাদিয়ার আজীবন প্রিন্সিপাল। পারিবারিকভাবেই মাওলানা খান রহ. ধর্মীয় চেতনার ধারক ছিলেন। প্রায় শুরু থেকেই তিনি কিশোরগঞ্জের প্রধান দীনি প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইমদাদিয়ায় লেখাপড়া করেন এবং এখান থেকেই দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স সমমান) সমাপ্ত করেন।

তুখোড় মেধার অধিকারী হওয়ায় মাওলানা খান তার ছাত্রজীবনের প্রতিটি ধাপ অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। যোগ্য ও বিশিষ্ট শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে তিনি গড়ে ওঠেন। জামিয়া ইমদাদিয়ায় শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে তার কর্ম জীবনের সূচনা। পাশাপাশি আতহার আলী রহ.-এর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য পেয়ে তিনি নেজামে ইসলাম পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এ দেশের স্বাধীনতা ও স্বাধিকার আন্দোলনেও তিনি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। আতহার আলী রহ.-এর ইন্তেকালের পর বিভিন্ন কারণে নেজামে ইসলাম পার্টি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লে তিনি রাজনীতি থেকে অনেকটা দূরে সরে যান। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির টিকিটে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে পুনরায় রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন।

রাজনৈতিক জীবনে তিনি ইসলাম ও জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। সংসদ সদস্য থাকাকালে তার নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক জনকল্যাণমুলক কাজ করে এলাকবাসীর কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। মাওলানা আতাউর রহমান খানের বর্ণাঢ্য জীবনে বহুমুখী প্রতিভা ও গুণের এক অনন্য সমাবেশ ঘটেছিল। এ ধরনের নানামুখী প্রতিভার অধিকারী আলেম এ সমাজে বিরল। ব্যক্তিত্ব ও যোগ্যতার যে বিকাশ তিনি ঘটিয়েছেন এবং সবার কাছে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করার যে নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছেন তার নজির খুব কম। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয়-প্রতিটি পর্যায়ে ভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও স্বতন্ত্র গুণের অধিকারী ছিলেন।

তার সুবিশাল সত্তার সামগ্রিক মুল্যায়ন করা যে কারো পক্ষে সম্ভব নয়। ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি অসাধারণ কিছু গুণে গুণান্বিত ছিলেন। তার সঙ্গে যারা মিশেছেন তারা জানেন, তিনি কত সাদাসিধে, ত্যাগী, নিরহঙ্কার, দয়ার্দ্র, বন্ধুবৎসল, আমুদে ব্যক্তি ছিলেন। দু’ঠোটের ফাঁকে স্নিগ্ধ হাসির ঝিলিক লেগে থাকত সবসময়। নিতান্ত একজন সাধারণ মানুষও তার কাছে ভিড়ে ঘনিষ্ঠভাবে কথা বলতে পারত। প্রয়োজনতাড়িত, অভাবগ্রস্ত যেকোনো মানুষ তার কাছে গিয়ে আশ্বাস কিংবা সান্ত্বনার পরশ পেত। এজন্য তার বাসভবন নূর মঞ্জিলের বৈঠকখানা উন্মুক্ত থাকত সবসময়, সবার জন্য। বক্তৃতার মঞ্চে তার যুক্তিগ্রাহ্য, তাৎপর্যময় আবেদনপুর্ণ বক্তৃতা সবাইকে আকৃষ্ট করত। পরিমাণে কম হলেও লেখনিতে তার কলমের ধার ছিল অসামান্য। সমার্থবোধক শব্দের যোজনা এবং বাক্যের যথোপযুক্ত প্রয়োগ বক্তৃতা ও লেখনি উভয় ক্ষেত্রে শ্রোতা-পাঠককে আন্দোলিত করে। সামাজিকভাবেও তিনি ছিলেন অতুলনীয় কিছু গুণের অধিকারী। সমাজবিমুখ হিসেবে আলেমদের যে সাধারণ একটা বদনাম রয়েছে, তিনি তা অনেকটা অসত্য প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সমাজের মূল স্রোতধারার সঙ্গে মিশে তাদের হয়ে কাজ করার কারণে প্রত্যেকের কাছে তিনি ছিলেন সমানভাবে সমাদৃত। এজন্য সমাজের ব্যাপক সমর্থন ও ভালোবাসার প্রস্রবণে তিনি সিক্ত হয়েছেন।

তিনি সাধারণ মানুষের কতটুকু আপনজন ছিলেন এর কিছুটা প্রমাণ মেলে তার জানাজায় লক্ষাধিক লোকের উপস্থিতি ও শোকের মাতম দ্বারা। নেতৃত্বের আসনে, রাজনৈতিক ময়দানে তার কৃতিত্বের কথা তার শত্রুরাও অস্বীকার করতে পারবে না। বুদ্ধিবৃত্তিক ময়দানে ওলামায়েকেরামের কর্মকৌশল সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা তার বক্তব্যে-লেখনিতে পাওয়া যেত। মুজাহিদে মিল্লাত আতহার আলী রহ.-এর চিন্তাধারা বাস্তবায়নে তিনি জীবনভর সাধনা চালিয়ে গেছেন। প্রকৃতিগতভাবেই তার মধ্যে ইশকে রাসূল সা.-এর প্রাবল্য ছিল। তার প্রায় সব আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল সিরাত। এজন্য আল্লাহপাক হয়তো তাকে কবুল করেছেন। পবিত্র লাইলাতুল মিরাজে, জিকিরের অবস্থায় তিনি মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুমিনের আধ্যাত্মিক মিরাজে গমন করেছেন। পরপারে যাওয়ার আগে রেখে গেছেন ৫ ছেলে ও ২ মেয়ে। ১. মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী ২. মুফতি ওলিয়ুর রহমান খান আল আযহারী ৩. মাওলানা ড. খলিলুর রহমান খান আযহারী ৪. মাওলানা রেজওয়ানুর রহমান খান বিএ ৫. মাওলানা শিল্পী মুহিবুর রহমান খান (মুহিব খান)।

আতাউর রহমান খান রহ. প্রকৃত অর্থেই ওয়ারিসে নবীর একজন বাস্তব প্রতিচ্ছবি ছিলেন। তার মহান ব্যক্তিত্বের বিভা, গুণাবলীর সৌরভ, বৈশিষ্ট্যের স্ফুরণ, আদর্শের গভীরতা ও অবদানের ব্যাপ্তি অনুমান করা বা ছুঁয়ে দেখা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করুক। আমিন!

সূত্র : কওমীনিউজ.কম

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

আল্লামা আহমদ শফীকে কি আসলেই তিলে তিলে হত্যা করা হয়ছে?

আল্লামা শফী সাহেবের মৃত্যু নিয়ে ওনার খাদেম  শফীর সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০। ...