কমাশিসা ঢাকা ডেস্ক: বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষার সনদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আবারও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়া পর্যালোচনা করে সুপারিশ দেওয়ার জন্য আলেম-ওলামাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বাংলানিউজকে বলেন, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি দাবির প্রেক্ষিতে এ উদ্যোগ। এই কমিটির মূল উদ্দেশ্য হলো, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা সনদের স্বীকৃতির ব্যাপারে মতামত দেওয়া।
ইকরা বাংলাদেশের পরিচালক ও শোলাকিয়া ঈদগা মাঠের খতিব মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদকে আহ্বায়ক করে নয় সদস্যের কমিটিতে দেশের খ্যাতনামা আলেম, মাদ্রাসার প্রধান এবং ইসলামিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে কমিটির কার্যপরিধি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৩’র খসড়াটি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় মতামত বা সুপারিশ পেশ করবে।
আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে শিক্ষাসচিবের কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, বেসরকারিভাবে পরিচালিত এসব কওমি মাদ্রাসা মূলত ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসার পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে থাকে। সাধারণ শিক্ষার সনদের স্বীকৃতি থাকায় এবং তারা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ পেলেও বঞ্চিত হয়ে আসছে কওমির লাখ লাখ শিক্ষার্থী। অষ্টম বেতন কাঠামোতে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়া এবং কওমির শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে থাকায় নতুন করে তাদের সনদের স্বীকৃতির দাবি উঠেছে।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, দেশে সরকার নিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসাগুলো শিক্ষা বোর্ডের অধীন আলিয়া মাদ্রাসার বাইরে ২৫ হাজারের বেশি কওমি মাদ্রাসা রয়েছে। তবে এসব মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যার সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান নেই।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কওমি মাদরাসার শিক্ষা ব্যবস্থাপনা, শিক্ষাদানের বিষয় এবং কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা সনদের সরকারি স্বীকৃতি দেওয়ার লক্ষ্যে সুপারিশমালা প্রণয়নের জন্য ২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল ১৭ সদস্যের ‘বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন’ গঠন করা হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ওই কমিটিতে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলামের আমির আহমেদ শফিকে প্রধান করা হয়েছিল। এই কমিটিতে কো-চেয়ারম্যান ছিলেন নতুন কমিটির প্রধান ফরিদ উদ্দীন মাসউদ।
এ কমিশনের সুপারিশের আলোকে ‘বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ’ প্রতিষ্ঠাকল্পে ‘বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৩’ এর খসড়ার প্রস্তুত করা হয়।
শিক্ষাসচিব মো. সোহরাব হোসাইনের সই করা আদেশে বলা হয়েছে, উক্ত আইনের খসড়াটি বর্তমান সময়ের আলোকে অধিকতর উপযোগীকরণের লক্ষ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক সুপারিশ বা মতামত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দাখিলের জন্য এই কমিটি গঠন করা হলো।
শিক্ষামন্ত্রী বাংলানিউজকে বলেন, কমিটি গঠনের মূল উদ্দেশ্য, কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি, এটা তারাও প্রয়োজনবোধ করছে। কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা সনদের স্বীকৃতি পেলে বিভিন্ন চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবে, এতে তারাই উপকৃত হবে।
‘আগের খসড়া নিয়ে আমরা অনেক কাজ করেছিলাম, তাতে কওমি মাদ্রাসার সুপারিশগুলো সন্নিবেশিত করা হয়েছিল। এখন আইনে আর কোনো পরিবর্তন বা নতুন কোনো কিছু সংযোজন-বিয়োজনের প্রয়োজন রয়েছে কিনা, তার জন্য এই কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে।’
কমিটির সদস্যরা হলেন- চট্টগ্রামের জামেয়া দারুল মা’আরিফ’র মহাপরিচালক মাওলানা সুলতান যওক নদভী ও পটিয়া মাদ্রাসার মহাপরিচালক মাওলানা আবদুল হালিম বোখারী, কিশোরগঞ্জের জামেয়া ইমদাদিয়ার মুহতামিম মাওলানা আনোয়ার শাহ, সিলেট খাদিমনগরের দক্ষিণকাছ হোসাইনিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার শায়খুল হাদীস মাওলানা আব্দুল বাসেত বরকতপুরি, ঢাকার ফরিদাবাদ মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, বসুন্ধরার ইসলামিক রিসার্স সেন্টারের সিনিয়র মোহাদ্দিস মুফতি এনামুল হক, খুলনার জামিয়া মাদানীয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা ইমদদুল্লাহ কাশেমী।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার মহাপরিচালক মুফতি রুহুল আমিনকে সদস্য সচিব করা হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদ্রাসা অনুবিভাগ কমিটিকে সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবে বলে আদেশে বলা হয়েছে। কমিটি প্রয়োজনে আরও সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে।
সুত্র: বাংলানিউজ২৪