শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ দুপুর ১:১০
Home / কওমি অঙ্গন / কওমি সংস্কার স্বীকৃতি আটকাতে বেফাক হেফাজতের ঠান্ডা লড়াই – অভিযোগ তৃণমূল আলেম উলামার

কওমি সংস্কার স্বীকৃতি আটকাতে বেফাক হেফাজতের ঠান্ডা লড়াই – অভিযোগ তৃণমূল আলেম উলামার

বিভিন্ন মিডিয়ার হেড লাইন – স্বীকৃতির পক্ষে ঐক্যবদ্ধ কওমি আলেমরা, কোণঠাসা হেফাজত ও বেফাক!14454684_533270213550659_1086091105_n

মাদ্রাসার স্বকীয়তা বজায় রেখে সনদের স্বীকৃতি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন কওমিপন্থী আলেমরা। অন্যদিকে কওমি আলেম-ওলামাদের ঐক্যের মুখে স্বীকৃতির বিরোধিতা করে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে হেফাজতে ইসলাম ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক)। সর্বশেষ ২০১৩ সালে সরকার উদ্যোগ নিলেও হেফাজত ও বেফাকের বিরোধিতার কারণে আলোর মুখ দেখেনি কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি। তাই  হেফাজত ও বেফাককে বাদ দিয়েই স্বীকৃতির পক্ষে সরকারের কাছে দাবি তুলে ধরতে চেষ্টা করছেন কওমিপন্থী আলেমরা।  সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, কওমি মাদ্রাসার সনদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির বিষয়টি বর্তমানে কওমি অঙ্গনে আলোচিত বিষয়। শোলাকিয়ার ঈদগাহের খতিব মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ১১ আগস্ট কওমি সনদের স্বীকৃতি দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি তোলেন আলেমরা। সেই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্বাস দেন, কওমি সনদের স্বীকৃতির পক্ষে সবাই একমত হলে, অথবা যারা আগ্রহী, তারা একমত  হলে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস প্রদানের পর থেকেই নতুন করে আলোচনায় আসে কওমি সনদের স্বীকৃতির বিষয়টি। স্বকীয়তা, দেওবন্দের মূলনীতি, সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত থাকলে স্বীকৃতি নিতে আপত্তি নেই অধিকাংশ কওমিপন্থী আলেমদের। কওমি সনদের স্বীকৃতির বিরোধিতা না করে দেশের শীর্ষ আলেমদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ। দেশের বিভিন্ন স্থানের কওমি মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টরা বৈঠক করে স্বীকৃতির দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন।

এদিকে কওমি আলেমদের ঐক্যের মুখে স্বীকৃতির বিরোধিতা করে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে হেফাজতে ইসলাম ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক)। আগামী ১৭ অক্টোবর দেশের সকল মাদ্রাসা বোর্ড ও কওমি মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টদের নিজেরদের পক্ষে রাখতে একটি কনভেনশন করার প্রস্তুতিও নিচ্ছে বেফাক।

হেফাজত ও বেফাক সূত্রে জানা গেছে, হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমাদ শফী একই সঙ্গে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক) এর সভাপতি এবং চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক। হেফাজতে ইসলামের অনুসারী অধিংকাশ কওমি মাদ্রাসা বোর্ড বেফাক সংশ্লিষ্ট। ফলে হেফাজত ও বেফাক কওমি সনদের স্বীকৃতি নিয়ে অভিন্ন অবস্থানে রয়েছে।

জানা গেছে, গত ২২ আগস্ট হাটহাজারী মাদ্রাসায় কওমি সনদের স্বীকৃতি নিয়ে আল্লামা শাহ আহমাদ শফীর সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে হেফাজত ও বেফাকের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিএনপি-জামাত জোটভুক্ত হেফাজত নেতারা সনদের স্বীকৃতির পক্ষে অবস্থান না নিতে আল্লামা আহমাদ শফীকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে স্বীকৃতি নিলে ‘মাদ্রাসাগুলোর স্বকীয়তা’ থাকবে না বলেও অনেক হেফাজত নেতা আল্লামা শফীকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। বৈঠকে উপস্থিত এক হেফাজত নেতা জানান, কারও কারও বিরোধিতা থাকলেও কেউ কেউ স্বীকৃতির পক্ষে মত দেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লামা শফী আপাতত এ বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রেখে স্বীকৃতির পক্ষে, বা  বিরোধিতা করে কোনও কর্মসূচি বা বিবৃতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন।

ওই বৈঠকের পর হেফাজতের পক্ষে সংগঠনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব জুনাইদ বাবু নগরী জানান, ‘শিক্ষনীতি বাতিল না হলে কওমি সনদের স্বীকৃতি নেওয়া হবে না।’ বেফাকের নেতারাও শিক্ষানীতি ও শিক্ষা আইন বাতিলের দাবি জানান। যদিও ২০১৩ সালের ২৭ অক্টোবর হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবু নগরী ‘কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা আইন-২০১৩ পাস হলে দেশে লাখ লাখ লাশ পড়বে’ বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। একই সুরে সেই বছর ৩ নভেম্বর  বাংলাদেশ কওমি শিক্ষা বোর্ডের (বেফাক) মহাসচিব মাওলানা আবদুল জব্বার ‘লাখ লাখ লাশ পড়বে’ বলে হুঁশিয়ার দেন। হেফাজতের বিরোধিতার কারণে ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর মন্ত্রীসভার বৈঠকে ‘বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৩’-এর খসড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিবেচিত বিষয়ের তালিকা থেকে প্রত্যাহার করে নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, স্বীকৃতির দাবিতে কওমি আলেমরা আন্দোলন করেছেন দীর্ঘ দিন ধরে। সর্বশেষ ২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়। সেই কমিশনের চেয়ারম্যান মনোনীত হন হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমাদ শফী। সেই কমিশন এক বছর পর্যন্ত আলোচনা, পর্যালোচনা ও জনমত যাচাই করে ২০১৩ সাল ১২ এপ্রিল একটি রিপোর্ট সরকারের কাছে জমা দেয়। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই সরকার আগের খসড়া আইনটি বাতিল করে। কওমি মাদ্রাসার স্বকীয়তা অক্ষুণ্ন রেখে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়। এরপরই এই কমিশন বিলুপ্ত হয়। কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রথম খসড়ায় দারুল উলুম দেওবন্দের ৮টি ভিত্তি সংযোজিত না হওয়ায়, এই  কর্তৃপক্ষ গঠনের বিরোধিতা করেন হেফাজতের আমীর আহমাদ শফী এবং কওমি আলেমরা।

তবে এ পর্যন্ত কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ গঠনের ৮টি খসড়া তৈরি হয়েছে। সর্বশেষ খসড়ায় দেওবন্দের ৮টি ভিত্তিতে মাদ্রাসার স্বাধীনতা ও স্বকীয়তা বিষয় সংযোজিত হয়েছে। এই সংশোধনীর আলোকেই স্বীকৃতির বিষয়টি চূড়ান্ত করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, হেফাজতের অনেক নেতা বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটভুক্ত দলেরও নেতা। এই নেতারা রাজনৈতিক কারণে স্বীকৃতির বিরোধিতা করছেন। ‘কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ’ আইন পাস হলে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার স্বকীয়তা এবং বর্তমান আলেমরা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হারাবেন বলেও অপপ্রচার করছেন তারা। এছাড়া বেফাকের একক ক্ষমতা হ্রাস ও আহমদ শফী ‘কওমি মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ’-এ একক নিয়ন্ত্রণ নাও থাকতে পারে এই শঙ্কায়ও বিরোধিতা করছে বেফাক।

জানা গেছে, বর্তমানে হেফাজত ও বেফাক  সনদের স্বীকৃতির জন্য শিক্ষনীতি-২০১০ বাতিলের দাবি জানাচ্ছে।  যদিও এই শিক্ষা আইন ২০১০ সালের।  সরকার ২০১২ সালে  কওমি মাদ্রসা শিক্ষা কমিশন গঠন করলে সেই সময়ে হেফাজত ও বেফাক নেতারা কমিশনের নেতৃত্বে থাকার জন্য কমিশন পুনঃঘটনের সুপারিশ করেন। সেই সময়ে শিক্ষানীতি নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলেনি তারা। ২০১২ সালের জুনে বেফাকের নামে কওমি মাদ্রাসা সনদের স্বীকৃতি, গঠিত কমিশনের সদস্য সচিব পদে রদবদল, বেফাকের দেওয়া সব সদস্য কমিশনভুক্ত করাসহ ৮ দফা বাস্তবায়নের দাবি জানায় কওমি মাদ্রাসা বোর্ড বেফাকের মজলিসে শূরা। ২০ দিনের মধ্যে এসব দাবি বাস্তবায়ন না করলে কমিশন থেকে সরে দাঁড়ানোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। বেফাকের  ৮ দফা দাবির  মধ্যে শিক্ষা আইন বাতিলের দাবি ছিল না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কওমি আলেম এ প্রসঙ্গে  বলেন, বেফাক ও হেফাজতের  কয়েকজন নেতার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। বেফাক ও হেফাজতের  যারা বিরোধিতা করছেন, তারা  বিএনপি-জামায়াত জোটের  সঙ্গে  যুক্ত । আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে  কওমি মাদ্রাসা স্বীকৃতি পেলে এসব রাজনৈতিক নেতার প্রভাব কমে যেতে পারে, এজন্যই তারা বিরোধিতা করছেন। শিক্ষানীতি হয়েছে ২০১০ সালে। সে সময়ে  বেফাক শিক্ষানীতি বাতিল বা সংশোধনের দাবি না তুলে পদ-পদবীর জন্য সুপারিশ করেছিল। এখন তারা শিক্ষানীতির কথা বলছে। মূলত এসব নেতা স্বীকৃতি ঠেকাতে একেক সময় একেক কথা বলে বিরোধিতা করছেন। আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে ভুল বুঝিয়ে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহারের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

স্বীকৃতির পক্ষে মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি নিয়ে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছেন। সারাদেশের বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা স্বীকৃতির পক্ষে মত দিচ্ছেন।  প্রধানমন্ত্রীও স্বীকৃতির পক্ষে কথা বলেছেন। ফলে এখন স্বীকৃতি আদায়ে কোনও বাধা নেই। আমরা আশা করছি, সরকার দ্রুত স্বীকৃতি দেবে।’

গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসা বোর্ডের মহাসচিব মুফতি রুহুল আমিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর আমরা আশাবাদী। রাজনীতির ফাঁদে পড়ে কওমি সনদের স্বীকৃতি আটকে ছিল। আমরা চাই, স্বীকৃতির পক্ষে সবাই একমত হোক। স্বীকৃতির জন্য আমাদের প্রবীণ আলেমরা অনেক কষ্ট করেছেন।’

এ প্রসঙ্গে হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘হেফাজত সনদের স্বীকৃতির বিপক্ষে নয়। কেউ কেউ হেফাজতের নামে অপপ্রচার চালাচ্ছে। হেফাজত সনদের স্বীকৃতি চায়, তবে কওমি মাদ্রাসার স্বকীয়তা বজায় রেখে। বর্তমান শিক্ষানীতি বহাল থাকলে কওমি মাদ্রাসার স্বকীয়তা হুমকির মুখে পড়বে। সনদের স্বীকৃতির বিরোধিতা নয়, স্বীকৃতি দেওয়ার প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করেছে হেফাজত। মাদ্রাসাগুলোর স্বকীয়তা বজায় রাখা ও সরকারের প্রভাবমুক্ত থাকবে, এমন নিশ্চয়তার জন্য হেফাজত আন্দোলন করছে। সরকার যদি হেফাজতের দাবি মেনে নেয় তবে আমরাও বুঝবো স্বীকৃতির পেছনে কোনও কূটকৌশল নেই।’

বেফাকের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল জব্বার বলেন, ‘বেফাক ও কওমি আলেমদের সঙ্গে আলোচনা না করে কিসের ভিত্তিতে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে, তা পরিষ্কার নয়। সরকার কওমি মাদ্রাসা নিয়ে কেন এত উৎসুক। স্বীকৃতির নামে কোনওভাবেই হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না। আমরা স্বীকৃতির জন্য কিছু প্রস্তাব দিয়েছি, সেগুলো বাস্তবায়ন হলে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। ’

সুত্র-অনলাইন মিডিয়া

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...