বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১১:৪৭
Home / অনুসন্ধান / মুসলিম স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন খেরুয়া মসজিদ

মুসলিম স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন খেরুয়া মসজিদ

mosque-innerবেলাল হোসেন : তিন গম্বুজ বিশিষ্ট খেরুয়া মসজিদ। সুলতানি আমলের নির্মাণ শৈলীর সঙ্গে যথেষ্ট মিল রয়েছে এসব গম্বুজের। নকশাবিহীন গম্বুজগুলো যেন উপড় করে বসানো। দেখতে অনেকটা বাটির মতো। কুঁড়ে ঘর আদলে নির্মিত ছাদের কার্নিশের দু’ধার সামান্য বাঁকানো।

মসজিদের উত্তর-দক্ষিণ দেয়ালে রয়েছে একটি করে দরজা। তিনটি দরজা সামনে। মাঝেরটি আকারে বেশ বড়। এ দরজার দু’পাশে দেয়ালে বসানো রয়েছে দু’টো শিলালিপি। চারকোণে চারটি অষ্টভুজ মিনার। পশ্চিম দেয়ালে ভেতরের রয়েছে আয়তকার তিনটি মেহরাম। আকারের দিক দিয়ে মাঝেরটি তুলনামূলক বড়।

এ মসজিদ ১৫৮২ খ্রিষ্টাব্দে জওহর আলী খান কাকশালের ছেলে নবাব মির্জা মুরাদ খান নির্মাণ করেছিলেন বলে মসজিদের দেয়ালে লিপিবদ্ধ শিলালিপি থেকে জানা যায়।

মসজিদের নির্মাণ শৈলী ও ছায়াঘেরা পরিবেশ দেশ-বিদেশের পর্যটকদের ভীষণভাবে আকর্ষণ করে।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের খন্দকার টোলা গ্রামে মুসলিম স্থাপত্যের এক অপূর্ব নিদর্শন হয়ে আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে মসজিদটি।

বগুড়া শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথা থেকে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক ধরে প্রায় ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে শেরপুর উপজেলা শহর। এখান থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটারের পথ। শহরের ধুনট মোড় থেকে মাজার গেট হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমে গেলেই দেখা মিলবে এই মসজিদটির।

মাজার গেটে প্রবেশ পথে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের লাগানো একটি দিক নির্দেশনামূলক সাইনবোর্ড চোখে পড়বে। মসজিদটি কিছুটা গ্রামের ভেতর। তাই পাকা সড়ক বাদে সামান্য মেঠো পথ পাড়ি দিতে হবে।

মসজিদের সামনে রয়েছে একটি কবর। পুরো চত্বর যেন কার্পেটের মতো সবুজ ঘাসে বিছানো। চারপাশে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা। মসজিদটি দেখাশোনার জন্য একজন তত্ত্বাবধায়ক রয়েছেন। সার্বক্ষণিক দেখভাল করাই তার কাজ। সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে মসজিদ প্রাঙ্গণ। এখানে নিয়মিত নামাজও আদায় করা হয়। সব মিলিয়ে চমৎকার ছায়াযুক্ত সুন্দর পরিবেশ অবস্থিত মসজিদটি যে কাউকে আকর্ষণ করবে।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, ১৬ শতকের শেষ দিকের কথা। সময়টি ছিলো বারো ভূঁইয়া ও মোঘলবিরোধী বিপ্লবের সংকটকালীন মুহূর্ত। কাকশাল বিদ্রোহীদের শক্ত ঘাঁটি ছিল শেরপুর মোর্চা বারো ভূঁইয়া ছাড়াও আফগান বিদ্রোহীদের নেতা মাসুম খান কাবুলীল সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে কাকশাল বিদ্রোহীরা। আর তখনই মূলত খেরুয়া মসজিদ নির্মাণ করা হয়।

মোগল যুগের শুরুতে নির্মিত হওয়ায় এই মসজিদটির গুরুত্ব আলাদ। কেননা তৎকালীন বাংলার রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে মসজিদটি।

মসজিদের উত্তর-দক্ষিণের দৈর্ঘ্য ১৭ দশমিক ৩৪ মিটার। পূর্ব-পশ্চিমের প্রস্থ ৭ দশমিক ৫ মিটার। ভেতরের দৈর্ঘ্য ১৩ দশমিক ৭২ মিটার ও প্রস্থ ৩ দশমিক ৮ মিটার। খেরুয়া মসজিদের নির্মাণ শৈলীতে বৈচিত্র্য আনতে ছোট খিলনাকৃত প্যানেলের সারি রয়েছে বাঁকানো কার্নিশের নিচ দিয়ে। সামনের দেয়ালে মাঝের বড় দরজার দু’পাশে বসানো রয়েছে দু’টো শিলালিপি খণ্ড।

একটি শিলালিপি বর্তমানে দেয়াল স্থাপিত রয়েছে। আরেকটি পাকিস্তানের করাচি জাদুঘর সংরক্ষিত রয়েছে। মসজিদের মেহরাবগুলো বন্দি আয়তকার ফ্রেমে। এছাড়া মসজিদে কিছু পোড়ামাটির অলংকার ছিলো। যা এখন চোখে পড়ে না।

তত্ত্বাবধায়ক আব্দুস সামাদ বাংলানিউজকে জানান, মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর সংরক্ষণের দায়িত্ব নেওয়ার পর চারদিকে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। এখানকার পরিবেশ সুন্দর আকর্ষণীয় করতে তুলতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা লাগানো হয়েছে। সেগুলো সার্বক্ষণিক পরিচর্যা করা হয়। পাশাপাশি মসজিদ প্রাঙ্গণ রাখা হয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।

নিয়মিত মসজিদটি দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থানসহ বিদেশি পর্যটকরা আসেন। তারা মসজিদটি দেখে ভীষণ মুগ্ধ হন বলেও জানান তিনি।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

আল্লামা আহমদ শফীকে কি আসলেই তিলে তিলে হত্যা করা হয়ছে?

আল্লামা শফী সাহেবের মৃত্যু নিয়ে ওনার খাদেম  শফীর সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০। ...