যে সব পশুর কোরবানি জায়েজ :
ছাগল, পাঁঠা, খাসি, ভেড়া, দুম্বা, গাভী, ষাঁড়, বলদ, মহিষ, উট এই কয় প্রকার গৃহপালিত পশু কোরবানি করা জায়েজ আছে। এ ছাড়া হরিণ ইত্যাদি হালাল বন্য জন্তুর (নীল গাই, বন্য ছাগল এ জাতীয় পশু) দ্বারা কোরবানি আদায় হবে না।
মাসয়ালা : যদি কোরবানির পশু হারিয়ে যায় ও তৎপরিবর্তে অন্য একটি ক্রয় করে, এরপর প্রথম পশুটিও পাওয়া যায়, এমতাবস্থায় যদি ক্রেতার ওপর কোরবানি ওয়াজিব থাকে, তবে একটি পশু কোরবানি করা ওয়াজিব হবে। যদি ক্রেতার ওপর কোরবানি ওয়াজিব না থাকে, তবে উভয় পশু কোরবানি করা তার জন্য ওয়াজিব।
পশুর বয়স : ছাগল পূর্ণ এক বছরের কম হলে কোরবানি জায়েজ হবে না। গরু, মহিষ দুই বছরের কম হলে জায়েজ হবে না। উট পাঁচ বছরের কম হলে জায়েজ হবে না। দুম্বা এবং ভেড়ার হুকুম ছাগলের মতো; কিন্তু ছয় মাসের বেশি বয়সের দুম্বার বাচ্চা যদি এরূপ মোটা তাজা হয় যে, এক বছরের দুম্বার মধ্যে ছেড়ে দিলে চেনা যায় না, তবে সেরূপ দুম্বার বাচ্চা কোরবানি জায়েজ আছে। কিন্তু ছাগলের বাচ্চা যদি এরূপ মোটাতাজাও হয় তবুও এক বছর পূর্ণ না হলে কোরবানি জায়েজ হবে না।
ত্রুটিযুক্ত পশুর কোরবানি : যে পশুর দু’টি চোখ অন্ধ, অথবা একটি চোখ পূর্ণ অন্ধ বা একটি চোখের তিন ভাগের এক ভাগ বা আরো বেশি দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে গেছে, সে জন্তুর কোরবানি জায়েজ নয়। অনুরূপভাবে যে পশুর একটি কানের বা লেজের এক-তৃতীয়াংশ বা তদপেক্ষা বেশি কেটে গিয়েছে সে পশু দ্বারা কোরবানি জায়েয নয়।
মাসয়ালা : যে পশু এমন খোঁড়া যে, মাত্র তিন পায়ের ওপর ভর দিয়ে চলে, চতুর্থ পা মাটিতে লাগেই না, অথবা মাটিতে লাগে বটে, কিন্তু তার ওপর ভর দিতে পারে না, এরূপ পশু দ্বারা কোরবানি জায়েজ নয়। আর যদি খোঁড়া পায়ের ওপর ভর দিয়ে খুঁড়িয়ে চলে, তবে সে পশুর কোরবানি জায়েজ আছে।
মাসয়ালা : যে পশুর একটি দাঁতও নেই, সে পশু দ্বারা কোরবানি জায়েজ নেই। আর যতগুলো দাঁত পড়ে গেছে তা অপেক্ষা যদি অধিকসংখ্যক দাঁত বাকি থাকে, তবে কোরবানি জায়েজ আছে।
মাসয়ালা : যে পশুর কান জন্ম থেকে নেই, তার কোরবানি জায়েজ নেই। কান হয়েছে কিন্তু অতি ছোট; তার দ্বারা কোরবানি জায়েজ আছে।
মাসয়ালা : যে পশুর শিং ওঠেইনি বা শিং উঠেছিল, কিন্তু কিছু ভেঙে গেছে তার দ্বারা কোরবানি জায়েজ আছে। অবশ্য যদি একেবারে মূল থেকে ভেঙে যায়, তার দ্বারা কোরবানি জায়েজ নেই।
মাসয়ালা : যে পশুকে খাসি বানানো হয়েছে তার দ্বারা কোরবানি জায়েজ আছে। এভাবে যে পশুর গায়ে বা কাঁধে দাদ বা খুজলি হয়েছে তার দ্বারা কোরবানি জায়েজ আছে। অবশ্য খুজলির কারণে যদি পশু একেবারে কৃশ বা দুর্বল হয়ে যায় তার দ্বারা কোরবানি জায়েজ নেই।
মাসয়ালা : ভালো পশু ক্রয় করার পর যদি এমন কোনো দোষ এসে পড়ে যে কারণে কোরবানি জায়েজ হয় না, এমতাবস্থায় ক্রেতার অবস্থা যদি এমন হয় যে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব, তাহলে ওই পশুটি রেখে অন্য একটি পশু কিনে কোরবানি করতে হবে। অবশ্য যার ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়, নিজেই আগ্রহ করে কোরবানি করার জন্য কিনেছে, সে ওই পশুটিই কোরবানি করে দেবে। অন্য আরেকটি কেনার দরকার নেই।
মাসয়ালা : গর্ভবতী পশু কোরবানি করা জায়েজ আছে। যদি পেটের বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায়, তবে সে বাচ্চাও জবাই করে দেবে।
কোরবানি কাজে নিয়োজিতদের পারিশ্রমিক : কোরবানির পশু জবাইকারী ও গোশত প্রস্তুতকারীর পারিশ্রমিক পৃথকভাবে দেবে, কোরবানির গোশত, চামড়া, মাথা বা পায়া দ্বারা দেবে না। তবে উক্ত কোরবানির গোশত তাদেরকে কোনো বদলা ছাড়া দান করা বা দাওয়াত করে খাওয়াতে পারবে।
কোরবানির দড়ি : কোরবানির পশুর গায়ে যদি দড়ি বা কোনো পোশাক থাকে তাহলে তা গরিবদেরকে দিয়ে দেবে, নিজে ব্যবহার করবে না।
চুরিকৃত পশু দ্বারা কোরবানি : জেনে-শুনে চোরাই বা ছিনতাইকৃত পশু দ্বারা কোরবানি শুদ্ধ হবে না। তাই সস্তা মূল্যে এমন পশু পেয়ে চোর বা ছিনতাইকারীর কাছ থেকে ক্রয় করবেন না। বাজার থেকে কোরবানির পশু ক্রয় করে এনে জবাই করার পরও যদি জানা যায়- এটা চুরির পশু; তাহলে অন্য আরেকটি কোরবানি করতে হবে।
মনে রাখতে হবে, কোরবানি একটি ইবাদত। আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম। অন্য ব্যক্তির মালিকানাধীন পশু জবাই দ্বারা ইবাদত বৈধ হবে না। নিজের মালিকানাধীন পশু দিয়ে কোরবানি করতে হবে। চুরির পশুটি যে চোরের কাছ থেকে ক্রয় করা হয়েছে, সে নিজেই তো প্রাণীটির মালিক নয়, তাহলে সে অন্যকে কিভাবে মালিক বানাবে? সুত্রঃ বাংলানিউজ২৪