জুলফিকার মাহমুদী:
আল্লামা মাহমূদুল হাসান সাহেবের দেয়া সংশোধনীর সারাংশ ৷
১. কওমী মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ এফিলিয়েটিং ক্ষমতা সম্পন্ন একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ হবে।
২. দারুল উলুম দেওবন্দের ৮টি মূলনীতিই হবে কওমী মাদরাসা পরিচালনার মূলনীতি।
৩. এই কর্তৃপক্ষই নেসাবে তা’লীম বা পাঠ্যসূচী নির্ধারণ করবে। এতে সরকারের কোন হস্তক্ষেপ থাকবে না।
৪. কওমী শিক্ষা কর্তৃপক্ষ এফিলিয়েটিং অথরিটি হিসাবে কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে ডিগ্রী ও এমএ-র সার্টিফিকেট প্রদান করবে।
৫. অন্যান্য বোর্ডসমূহ প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক তথা ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত সার্টিফিকেট প্রদান করবে।
৬. যে সমস্ত মাদরাসা বোর্ডের অধিভুক্ত হবে না তারা পূর্বের ন্যায় স্বাধীন থাকবে।
৭. কওমী মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও সচিবসহ সকল সদস্য হবেন কওমী শিক্ষায় শিক্ষিত শীর্ষস্থানীয় উলামা মাশায়েখগণ।
৮. সমস্ত বোর্ডের সভাপতি / সচিব পদাধিকার বলে এই কর্তৃপক্ষের সদস্য হবেন।
৯. বোর্ডসমূহের বাহির থেকে ৭ জন শীর্ষস্থানীয় কওমী আলেম এই কর্তৃপক্ষের সদস্য হবেন।
১০. মহিলা কওমী মাদরাসার ১ জন প্রতিনিধি এই কর্তৃপক্ষের সদস্য হবেন।
১১. এই কর্তৃপক্ষের সুপারিশে কওমী ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠিত হবে।
এই সংশোধনীর উপকারিতা
১. মাদরাসা সমূহের ভিত্তি মজবূত হবে। কোন সরকারের পক্ষে মাদরাসা বন্ধ করার সুযোগ থাকবে না।
২. জেনারেল ও আলিয়া এ দুটি শিক্ষাধারা বর্তমানে সরকারীভাবে স্বীকৃত রয়েছে। কওমী শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন পাশ হলে প্রচলিত কওমী শিক্ষাধারাও সরকারী ভাবে স্বীকৃত তৃতীয় আরেকটি স¦তন্ত্র শিক্ষাধারা হিসেবে গন্য হবে।
৩. মাদরাসাসমূহকে জঙ্গীর উৎস বলার আইনগত কোন সুযোগ থাকবে না।
৪. শিক্ষক ছাত্রদেরকে জঙ্গী বা মৌলবাদী বলার কোন আইনী ভিত্তি থাকবে না।
৫. পাঠ্যসূচীর পার্থক্য শেষ হবে। একই পাঠ্যসূচী হওয়ার কারণে যোগ্যতা অর্জনে প্রতিযোগিতা ও উন্নতির পথ সুগম হবে।
৬. ছাত্রদের জন্য উচ্চশিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
৭. বিদেশী ছাত্রদের কওমী শিক্ষার জন্য বাংলাদেশে আসার পথ সুগম হবে,যা এদেশের জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয়।
৮. আঞ্চলিক বোর্ডসমূহ আরো গতিশীল হবে। এর অস্তিত্ব সুদৃঢ় হবে এবং গুরুত্ব বৃদ্ধি পাবে।
৯. পাঠ্যসূচী ও আঞ্চলিক বোর্ডের অনৈক্য দূর হয়ে সমস্ত মাদরাসা ও বোর্ডসমূহের মধ্যে কঠোর ঐক্য সৃষ্টি হবে। ঐক্যের সুবাদে তালীম,তরবিয়ত ও দ্বীনী কর্মকান্ডের প্রচার প্রসারে এক নতুন অধ্যায় সৃষ্টি হবে।
১০. অনৈক্যের গ্লানী থেকে মুক্ত হয়ে ঐক্য শক্তি নিয়ে শত্রুদেরকে প্রতিহত করা সহজতর হবে।
১১. সংকীর্ন রাজনীতির খেলোয়াড়দের ছোবল থেকে মাদরাসা, নিরীহ ছাত্র-শিক্ষক এবং উলামাগণ মুক্তি পাবে।
১২. দারুল উলুম দেওবন্দের আট মূলনীতির বিধিবদ্ধতার কারনে মাদরাসার কমিটিসমূহ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রভাব মুক্ত হবে এবং কওমী চিন্তাধারার নয়-এ ধরনের সদস্য কমিটিতে না নেয়ার আইনী যৌক্তিকতা লাভ হবে।
১৩. মাদরাসা, কমিটি ও ছাত্র-শিক্ষকগন আতংক মুক্ত একটি নিরাপদ, সুশৃংখল ও শান্তিপূর্ন পরিবেশে দ্বীনী শিক্ষা ও ইসলামী কর্মকান্ড আঞ্জাম দিতে সক্ষম হবে।
১৪. কওমী ছাত্র-শিক্ষক ও উলামা মাশায়েখদের কর্মক্ষেত্র প্রসারিত হবে এবং জাতীয় পর্যায়ে সর্বক্ষেত্রে জনসেবায় অবদান রাখার পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষা-সংস্কৃতির ব্যাপক প্রচার-প্রসার ও প্রচলনের পথ সুগম হবে।
১৫. স্বাধীনভাবে মক্তব, মাদরাসা,মসজিদ ও খানকাহ প্রতিষ্ঠার আইনগত অধিকার লাভ হবে।
১৬. যারা এই স্বীকৃতির অন্তর্ভুক্ত হতে না চায় তারাও স্বাধীনভাবে তাদের কর্মকান্ড আঞ্জাম দেয়ার অধিকার লাভ করবে এবং যে কোন সময়ে অন্তর্ভূক্তির সুযোগ পাবে।
১৭. সকল মাদরাসা থেকে একই মানের সনদ পাওয়া যাবে,এর জন্য দূরবর্তি কোন প্রতিষ্ঠানে যেতে হবেনা,বরং নিজগ্রামের মাদরাসায় পড়ালেখা করেও একই মানের সনদ পাওয়া যাবে।
১৮. কওমী মাদরাসায় প্রদেয় অনুদানের অর্থ সরকারী ট্যাক্স মুক্ত হবে।
১৯. কওমী মাদরাসা সমূহ বৈদেশিক অনুদান গ্রহণের আইনী অধিকার লাভ করবে।
মুবারক ভাইর কলম থেকে নেয়া ৷