রেজাউল কারীম আবরার: ভারত উপমহাদেশে ইসলামের প্রচার প্রসারে আকাবির দেওবন্দের অবদান স্বীকৃত। বৃটিশদের বিরুদ্ধে রক্তের নাজরানা পেশ করেছিলেন দেওবন্দের আলেমরাই! সে হিসাবে দেওবন্দকে ওভারটেক করে উপমহাদেশের ইতিহাস পূর্ণতা পাবেনা! দেওবন্দ কি? দেওবন্দের কি ফিকির? এবিষয়টি আমাদের আকাবিররা স্পষ্ট করে গিয়েছেন। এখানে আমি কয়েকজন আকাবিরের বক্তব্য পেশ করছি।
দারুল উলূম দেওবন্দের সূর্য সন্তান মাওলানা মানযুর নুমানী রহ. রাসূলগণ কবরে জীবিত এবিষয়ে একটি কিতাব লিখেছেন “মাসা্লাতু হায়াতিন নাবী” নামে। সে কিতাবের শেষে তিনি দেওবন্দের বৈশিষ্ট সম্পর্কে আলাচনা করতে গিয়ে লিখেন:
“দারুল উলূম এবং আকাবিরে দেওবন্দ হল একটি শিরোনাম। বসুধার সকল উত্তম পন্থা, উত্তম ফিকির এবং প্রত্যেক উত্তম বস্তু হল দেওবন্দিয়ত”। (মাসাআলাতু হায়াতিন নাবী, পৃষ্টা নং, ১৩০)
১৪০০ হিজরীতে দারুল উলূম দেওবন্দের শতবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্টিত হয়েছিল। সেখানে মুফাক্কিরে ইসলাম আল্লামা সায়্যিদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. একটি যুগান্তকারী বক্তব্য পেশ করেছিলেন। সে ভাষণে তিনি দেওবন্দের বৈশিষ্ট নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন: দেওবন্দের বৈশিষ্ট হল চারটি।
“এক: এ দরসগাহের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট হল সে মতনৈক্যকে পিছনে ফেলে তাওহীদ এবং সুন্নতের উপর নিজের দৃষ্টি রাখবে।আর এটা এমন ওয়রাছাত এবং আমানত, যা শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী, শাহ ইসমাইল শহীদ এবং সায়্যিদ আহমদ শহীদ এর ওসীলায় এ প্রতিষ্টান পেয়েছে এবং এখন পর্যন্ত শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে আছে।
দুই: সুন্নাতের অনুসরণের জযবা এবং ফিকির থাকতে হবে।
তিন: আল্লাহর সাথে সম্পর্ক তৈরী করার ফিকির, যিকির এবং গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার জযবা থাকতে হবে।
চার: আল্লাহর কালেমা বুলন্দীর জযবা থাকতে হবে এবং চেষ্টা করতে হবে। এ চারটি শিরোনাম যার মধ্যে থাকবে, সে দেওবন্দি। যদি এর মধ্যে কোন একটি কমে যায়, তাহলে সে পূর্ণ দেওবন্দি নয়”। (কারওয়ানে জিন্দেগী, ৩/৩১০-৩১১)
এপ্রসঙ্গে কারী তায়্যিব সাহবে রহ. এর বক্তব্য অবশ্যই বেশ চমৎকার । তিনি বলেন: উলামায়ে দেওবন্দের গুণ হল ‘দিলে দরদমন্দ, ফিকরে আরজুমন্দ, যবানে হুশমন্দ’। অর্থাৎ তারা হবেন দরদী হৃদয়, সমুন্নত চিন্তা এবং সুপ্রাজ্ঞ ভাষার অধিকারী”।
এবিষয়ে শায়খুল ইসলাম তাকী উসমানী দা.বা. এর ছোট রেসালা “আকাবিরে দেওবন্দ কিয়া তে” অবশ্যই পাঠ করার মত একটি বই। আমাদের আকাবিরদের জীবনের বাকেঁবাঁকে ঘটে যাওয়া ঘটনা পড়ে চোখে অশ্রু চলে আসে! বুক ফুলিয়ে বলতে পারি যে, এরাই আমাদের পিতৃ পুরুষ। আমরা তাদের উত্তরসুরী।
.
কয়েকদিন পরপর নতুন ইস্যু সৃষ্টি হয় আর আমাদের কামড়াকামড়ি বাড়তে থাকে। মাসতিনেক আগে স্বঘোষিত এক গবেষক আল্লামা নুর হুসাইন কাসেমী দা.বা.কে জাহান্নামী বলে ফেইসবুকে পোষ্ট করেছিলেন! ওনি নাকি আগে জানতেননা আলেমরা জাহান্নামী হয় কি করে? কাসেমী এবং মাওলানা আব্দুর রকীবকে দেখে বুঝতে পেরেছিলেন! স্বাভাবিকভাবে ঐ বিষয় নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছিল ফেইসবুকে!
নতুন করে আবার শুরু হয়েছে দেওবন্দিয়াত নিয়ে টানা হেচড়া! কে দেওবন্দি, কে দেওবন্দি নয়? এবিষয় নিয়ে লড়াই জমে উঠছে ধীরে ধীরে। এখানে একটা কথা বলে রাখি, ভারত এবং পাকিস্তান স্বাধীন হেওয়া পিছনে জমিয়তের অবদান সুস্পষ্ট। জমিয়তকে ওভারটেক করে উপমহাদেশে ইসলামী রাজনীতির ইতিহাস লেখা অসম্ভব। রাজনীতির ক্ষেত্রে শায়খুল ইসলাম আল্লামা হুসাইন আহমদ মাদানী এবং আল্লামা শাব্বির আহমদ উসমানী আমাদের প্রতিকৃত! সুতরাং আপনি যে দলই করুন, অথবা রাজনীতি না করুন, জমিয়তের অবদান অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।
আমরা যেমনভাবে আকাবিরের রেখে যাওয়া জমিয়তকে ভালবাসি, তেমনিভাবে পীর সাহেব চরমোনাই রহ. এর গঠিত ‘ইসলামী আন্দোলন’কেও হক মনে করি। তাদের দ্বারাও খেদমত হচ্ছে। আমাদের উস্তাদদের থেকে আমরা এটাই শিখেছি যে, হকের পক্ষে যারাই কাজ করছেন, তাদের সমর্থন করা। কারণ হক এটা ‘কদরে মুশতারাক’।
কিন্তু বর্তমানে আমাদের মানসিকতা হল, আমি শুধুই দ্বীনের কাজ করছি। আর বাকী সকলে বসে বসে ঘোড়ার ডিম পাড়ছে! আমার দল বা নেতার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললেই আমরা হিতাহিত জ্ঞান হারিযে ফেলি। মক্কা, মদীনার মত পবিত্র স্থানে বসে যে লিখেছে, তার উপর হামলে পড়ি! ব্যাস, শুরু হয়ে গেল মল্লযুদ্ধ! যখন উভয় দল রণভঙ্গ দেয়, ততক্ষণে শয়তান তার উদ্দেশ্যে সফল হয়ে বিজয়ের হাসি হাসে! হায়রে গবেষকরা, কবে তোমাদের বোধদয় হবে!!!