সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ : মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশের ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল গতকাল । নীরবে নিভৃতেই কেটেছে। নেই কোন সেমিনার বা আলোচনা সভা। সারা বছরের মতোই আমরা ছিলাম তাঁকে ভুলে। কিন্তু তিনি সেই মহান বীর যিনি পাকিস্তান পার্লামেন্টে প্রথম বাংলায় বক্তৃতাকারী সিংহপুরুষ। একুশে ফেব্রুয়ারি হত্যাকান্ডের প্রথম প্রতিবাদকারী। আওয়ামীলীগের একটানা দশ বছরের সভাপতি।
তর্কাবগীশ ছিলেন একজন আজীবন সংগ্রামী মানুষ। একাধারে জাতীয় নেতা, বৃট্রিশ ববিরোধী আযাদী আন্দোলনের রক্তসিড়ি খ্যাত সলঙ্গা বিদ্রোহের মহানায়ক, ঋণসালিশী বোর্ড প্রবতর্নের পথিকৃৎ, বর্গা আন্দোলনের অবিসংবাদিত কান্ডারী, হিন্দু জালেম জমিদার খেদাও আন্দোলনের পুরোধা। মহান ভাষা আন্দোলনের প্রাণপুরুষ, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বৃটিশবিরোধী আন্দোলনের বীরযোদ্ধা, দেশ ও জাতির প্রয়োজনে অকুতোভয় যোদ্ধা এবং আজীবন গণমানুষের নেতা। তিনিই প্রথম পাকিস্তান পার্লামেন্টে বাংলায় বক্তৃতাকারী বীর। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে প্রকাশ্য প্রতিবাদ করে একুশে ফেব্রুয়ারী পূর্ব পাকিস্তান গন পরিষদের সভা থেকে সদলবল অকাউট করেন । ১৯৫৬-১৯৬৭ সাল পর্যন্ত একটানা দশ বছর মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কাবগীশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন।
তাঁকে কেন ভুলে গেল আওয়ামী লীগ। ভুলে গেল দলটির নেতাকর্মিরা। কারন, তিনি মাওলানা।
কেন তাকে ভুলে গেলেন আলেমরা। কেন মাদরাসার পাঠ্য বইয়ে স্কুল কলেজের মতো তাঁর জীবনী অনুপস্থিত। কারন, তিনি আওয়ামী লীগার।
হায় বাংলাদেশ!! বাঙ্গালী চরিত্র নিয়ে বহুভাষাবিদ পন্ডিত জ্ঞানতাপস ড. সৈয়দ মুজতবা আলী ঠিকই লিখেছেন “বাঙ্গালী মুসলমান ধনে কাঙ্গাল না হলেও মনে বড় কাঙ্গাল।”
ক্ষমা করো মাওলানা তর্কবাগীশ। আমরা বড় নিমকহারাম। এখনো আমরা আমাদের চিন্তার দৈন্যতা কাটিয়ে উঠতে পারি নি। কিন্তু এদেশের মানুষের চিন্তা চেতনাকে জাগাতে আজীবন তুমি ছিল মহান সংগ্রামী। আজোও আমরা ঘুমন্ত চেতনাহীন আশীশ আর আফিমের নেশায়।
লেখক : চিকিৎসক, গবেষক,গ্রন্থপ্রণেতা।