সৈয়দ আনোয়ার আব্দুল্লাহ:
বাংলাদেশে ইসলামি অঙ্গনে শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা ও শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য কিংবা কেন মনীষাকে তার কর্মের স্বীকৃতি দেয়া বা মূল্যায়ন করা খুব একটা হয় না। মাওলানা মুহিদ্দীন খানের মতো বিশ্ববরেণ্য কিংবদন্তিরর মনীষাকে আমাদের সময়ে পেয়েও আমরা জাতীয়ভাবে একটি সংবর্ধনা দিতে পারি নি। জাতীর সামনে, তুলে ধরতে পারি নাই। আধুনিক তরুণ প্রজন্মের সাথে তাঁকে পরিচয় করিয়ে দিতে পারি নাই। জাতি হিসাবে এটা ববর লজ্জার বিষয়। বরং আমরা আমাদের মনীষাদের হেয় করতে কোন কেন ক্ষেত্রে অগ্রগামী।
গত কয়েক দিন আগে মুহিউদ্দীন খানের অন্তরঙ্গ বন্ধু বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান ইতিহাস গবেষক, বর্ষীয়ান সাহিত্যিক সৈয়দ আব্দুল্লাহকে একটি সংবর্ধনা দেয়া হয়। সংবর্ধনা অনুষ্টানে প্রধান আলোচক ছিলেন, বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও ইসলামি চিন্তাবিদ শাহ নজরুল ইসলাম। তিনি তাঁর বক্তৃতায় কাউকে মূল্যায়ন করার ব্যাপারে ইসলাম কি বলে এবং কারো সংবর্ধনার অনুষ্টান করা শরীয়তে জায়েজ কি না এব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন। যা নিচে হুবহু তুলে ধরা হল।
‘আমাকে একজন আলেম প্রশ্ন করলেন, সংবর্ধনা দেয়া শরীয়তে জায়েজ কি না? কারন রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম নিষেধ করেছেন। প্রশ্নটি প্রথম শুনে আমার কাছেো কিছুটা জটিল মনে হয়েছিল। পরে চিন্তা করে দেখলাম বিষয়টি জটিল নয়। খুবই সহজ। মানুষকে তাঁর য্যোগ্যতার মর্যাদা দেয়া, তাঁর কর্মের স্বীকৃতি দেয়া বা তাকে মূল্যায়ন করা,অথবা তাকে মূল্যায়িত করার মধ্য দিয়ে তার গুনাবলীকে উম্মাহর সামনে তুলে ধরা নিষেধ নয়, বরং তা উত্তম। ইসলাম ও শরীয়ত এটাকে কেবল বৈধই বলেনি, সাথে সাথে এমন কাজের ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে। কারো সামনে প্রসংশা করা আর কারো কর্ম ও গুনাবলীর ব্যাপারে তাকে উৎসাহিত করা এক বিষয় নয়।
আমরা যদি মানব জাতীর ইতিহাসের দিকে তাকাই, নবী জীবনের দিকে চোখ রাখি, আমরা যদি কোরআনকে স্টাডি করি তাহলে, কর্মের স্বীকৃতি প্রদানের বহু তথ্য আমাদের চোখের সামনে বেশে উঠেছে। আল্লাহ পাক সয়ং রাসুল ও সাহাবাদের কর্মের, গুনাবলীর, কাজের প্রসংশা কোরআন পাকে বহু আয়াতে করেছেন, যাতে তারা তাদের কাজের প্রতি আরো ইৎসাহিত হতে পারেন।
আল্লাহ পাক প্রথ মানব হয়রত আদম (আ) কে সৃষ্টি করে তাঁর মধ্য যেসব গুনাবলী দিলেন, তা প্রকাশ করলেন ফেরেস্তাদের সামনে। আদমের শ্রষ্টত্বের মূল্যায়ন করে আল্লাহ তায়ালা ফেরেস্তাদের মাধ্যমে তাঁকে স্যালুট করালেন। এটা ছিল আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আদমকে সংবর্ধনা।
যখন রাসুল ইসলাম প্রচার শুরু করলেন, তখন কবি কাব বিন আশরাফ, আবু রাফেঈ তখন নবীজির বিরোধীতা করে কাব্য রচনা করতে থাকলে, রাসুল (সা) এর পক্ষে হাতে গুনা ক’জন সাহাবী তাদের কবিতার জবাব কাব্যের মাধ্যমে দিতে থাকলেন। তাদেন একজন রাসুলের সভা কবি হাসান বিন সাবিত ( রায়ি)। রাসুল তার কবিতা শুনে মুগ্ধ হয়ে কবিকে উৎসাহিত করতে গায়ের চাদর খুলে পড়িয়ে দিলেন। তাকে রাসুল নিজের মিম্বরে বসিয়ে বিরল সম্মানে ভূষিত করলেন। তার কবিতার মূল্যায়ন করতে গিয়ে বললেন, হাস্সান যখন কবিতা লিখেন তখন জিব্রাইল আমিন এসে তাকে সাহায্য করেন। তার কবিতার ছন্দ মিলিয়ে দেন। এটা ছিল রাসুল কতৃক একজন সাহাবীকে সংবর্ধনা।
রাসুল (সা) যখন মক্কা থেকে মদীনা গেলেন। তখন ইয়াসরীব (মদীনার) নারী পুরুষ শিশুরা তাঁকে স্বাগতম জানাতে এগিয়ে এলো। তারা তাকে সংবর্ধিত করে গাইল, তারলায়াল বাদরু আলাইনা..। এটা ছিল সাহাবদের পক্ষ থেকে রাসুলকে দেয়া একটি সংবর্ধনা।
রাসুল (সা) এর কাজের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে আল্লাহ তায়ালা নবীকে মেরাজে নিয়ে গিয়ে সংবর্ধিত করলেন। পুরস্কৃত করলেন। কোরআনে যা বর্ণনা করা হয়েছে। বায়তুল মোকাদ্দসে সকল নবীদের একত্র করে বিরল সম্মানে ভুষিত করলেন। এ
নবীদেরদ্বারা শেষ্ট মানবকে মূল্যায়িত করলেন।
ইতিহাস বলে ইমাম বোখারী যখন বোখারাতে ফিরে এলেন তখন এক লক্ষ পঁচিশ হাজার ঘোর সওয়ার তাকে সংবর্ধনা দিতে এগিয়ে গিয়েছিল।
হয়রত শাহ জালাল রহ পর্যটক ইবনে বতুতাকে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন। তার জন্য দামি খাবার দাবার ও উপটোকন দিয়ে মূল্যায়িত করেছিলেন। সঙ্গিদের বলেছিলেন, তিনি আমার একজন মহান মেহমান। তাকে তোমরা মূল্যায়ন করবে, সম্মান জানাবে। তাই ইসলামের ইতিহাস প্রমান করে কাউকে সংবর্ধনা দেয়া, মূল্যায়ন করা, কাজের স্বীকৃতি দেয়া উত্তম ও সওয়াবের কাজ। যার মাধ্যমে সমাজে আরো ভাল কাজের জন্য মানুষ উৎসাহিত হবে। কল্যানধারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরবে