মুসা আল হাফিজ
কবি, কলামিস্ট ও গবেষক
কওমি শব্দে বিকল্প পৃথিবী
শিরোনামে কওমি মাদরাসা কথাটি না আনলেও পারতাম। ‘কওমি মাদরাসা’ বলতে যা বুঝাতে চাই তার জন্যে ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থা কথাটি ব্যবহার করা যেতো। এতে সমুদ্রকে সমুদ্রের জায়গায় রেখে পর্যবেক্ষণ করা যেতো। কওমি শব্দটা দয়িে সমুদ্রকে ছোট এক জায়গায় ঢুকিয়ে দিলাম। এখন পাঠককে নদীর ভেতরে সমুদ্র আবিস্কার করতে হবে। কাজটি কষ্টের, সন্দেহ নেই। আমি কিন্তু ‘কওমি মাদরাসা’ কথাটি এনে এ রকম কোনো কষ্টের দিকে পাঠককে নিয়ে যাচ্ছি না।
কারণ, ‘কওমি মাদরাসা’ শব্দ জোড়া মূলত ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থার মেজাজ ও প্রকৃতির প্রতিনিধিত্ব করছে। ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থা বলার সাথে সাথেই এর উৎস চিহ্নিত হয়। এর উৎস তো ওহীর আলোকধারা আর এর গতিমুখ যদিও বৃহত্তর অর্থে সমস্ত মানবতার দিকে, কিন্তু বিশেষ ও প্রকৃত অর্থে কওম ও মিল্লাতের দিকে। সেখানেই এর লালন ও চর্চা, সেখানেই এর বিকাশ। অপরদিকে কওমি মাদরাসা বললে এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা বুঝায় যা ইসলামের আলোকে পরিচালিত, ইসলামের জন্য পরিচালিত এবং ইসলামের মাধ্যমে গুরুত্ব অর্জনকারী ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত হবে। কওম একে সহযোগিতা করবে ইসলামের জন্যে, এটি বেঁচে থাকবে ইসলামের জীবনী শক্তি নিয়ে।
কওম শব্দটাকে তার ক্যানভাসে দেখলে যে বিশালতা লক্ষ করা যায় তা বিশেষ কোনো শিক্ষাধারার প্রতিনিধিত্ব করছে না; বরং জাতিসত্তার আত্মপরিচয় ও জীবনীশক্তির এক স্মারক যেনো এ শব্দটি। এ শব্দের মর্মমূলে আছে ব্যাপক চেতনাবোধ, যার সুগভীর তাৎপর্য ও প্রভাব একটি মৃতপ্রায় জাতির অসাড় অস্থিত্বে প্রাণের বিদ্যুৎ প্রবাহ জাগানোর সামর্থ রাখে।
কওমি মাদরাসা যখন বলি, তখন এমন এক শিক্ষাধারার চিত্র ভেসে ওঠে, যা মুসলিম জাতির জীবন সমস্যার ইসলামভিত্তিক সমাধানে সক্রিয়তার পথ ধরে বিশ্ব সভ্যতায় ওহী নির্দেশিত সত্য ও সভ্যতার বিকাশ দানে সচেষ্ট। এই সচেষ্টতাকে ধারন করতে পারে না রাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ কিংবা স্বৈরতন্ত্রের কাছে আত্মসমর্পিত কোনো সরকার। কওমি মাদরাসার সারসত্য তারা লালন করে না। এটা লালনের কামনা যেমন তাদের নেই, তেমনি কামনা থাকলেও মতাদর্শগত বৈপরিত্বের কারণে এটা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
তারা মূলত বস্তবাদী জীবন দর্শনের অনুগামী এবং ভোগবাদী মানসিকতার নির্দেশনা মেনেই সমাজ ও রাষ্ট্রকে পরিচালনা করতে চায়। মানবতার জীবন সমস্যার ওহীভিত্তিক সমাধানের তাৎপর্য অনুধাবন ও এর অনুসৃতির ব্যাপারে তাদের চেতনা হয় পক্ষঘাতগ্রস্থ। আর কওমি বলে পরিচিত যে শিক্ষাধারা, তা মূলত জীবন সমস্যার ওহীভিত্তিক সমাধান ব্যক্ত ও বিশ্লেষণ করতে চায় এবং এর অনুসরণের পরিবেশ নিশ্চিত করতে চায়। ফলত শাসনব্যবস্থা যতদিন ওহী নির্দেশিত না হবে, ততদিন কওমি বলে পরিচিত শিক্ষা ধারার বাগডোর সরকারের হাতে যাবার কোনো উচতি কারণ নেই। সরকার যদি বাগডোর হতে নিতে চায়, তাহলে সে ডুববে। আর কওমি মাদরাসা যদি তা তুলে দিতে চায়, তাহলে এ ব্যবস্থাটি ডুববে।
স্বাতন্ত্রের মাটি, দাঁড়াবার জায়গা
বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় বস্তবাদী জাহেলিয়াতের মুঠোয় ঢুকে গেলে এ শিক্ষাধারার প্রাণস্পন্দন যে থেমে যাবে, এ নিয়ে বিভ্রান্তির শিকার ব্যক্তি ছাড়া আর কেউই আশা করি সন্দেহ করবেন না। মতবাদ হিসেবে নাস্তিক্যবাদ, বস্তুবাদ, ভোগবাদের সাথে এ ধারার লড়াই অবশ্যম্ভাবী। অতএব দেশে দেশে এ সব মতবাদের প্রতিভূত হিসেবে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী চাইবে এ শিক্ষাধারাকে নাই করে দিতে। যদি দেখা যায় তারা এটা তারা চাচ্ছে না, তাহলে বুঝতে হবে এ শিক্ষাধারা তার দায়িত্ব পালনে ক্রটি করছে। কিংবা জাহেলিয়াতের প্রতিভূরা তাদের প্রতিপক্ষ সম্পর্কে কর্তব্যকে ভুলে গেছে। কিন্তু আমরা দেখছি এর কোনোটাই হচ্ছে না। কওমি মাদরাসা আক্রান্ত হচ্ছে এবং জাহেলিয়াত এর স্বকীয় অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে কওমি মাদরাসা বস্তুবাদ শাসিত এই পৃথিবীতে বিকল্প সত্যের প্রতিনিধিত্ব করছে।
অতএব বিশ্ব ব্যবস্থায় কওমি মাদরাসা বিশেষ এক তাৎপর্যের ভূগোল রচনা করছে, স্বাতন্ত্রের এক মিনার হিসেবে মাথা উচিয়ে আছে। এই স্বাতন্ত্রের কারণ এও যে মুসলিম জাতিসত্তার নিজস্বতা ও প্রাণশক্তি লালন করার দায়িত্ব পালনে সে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর এ দায়িত্ববোধের স্বারক হিসেবে এ শিক্ষাধারা নজি নামের সাথে কওমি শব্দটাকে অবিচ্ছিন্ন করে নিয়েছে। সে এর লালন ও বিকাশে প্রয়াসী এবং মুসলিম জাতিসত্তার আত্মপরিচয়ের সবগুলো পালককে যে কোনো মূল্যে অবিকৃতভাবে অক্ষুন্ন রাখতে সে আপোষহীন। তার শিক্ষা এই আপোষহীনতার শর্ত তৈরী করে। তার দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রবাহিত হয় একটি জাতিগোষ্ঠির নি:শ্বাস ও বিশ্বাসের স্রোতধারা। একটি শিক্ষাব্যবস্থা এমনতরো দায়িত্ব পালন করতে পারে, আজকের পৃথিবীতে কওমি মাদরাসা না থাকলে এমনটি ভাবাই যেতো না। গোটা পৃথিবীতেই বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থা মূলত বস্তুবাদী মানস গঠন ও ভোগবাদী জীবনপন্থার পৃষ্ঠপোষকতা করছে। এগুলো প্রণীত হয়েছে এমন এক জাতিগোষ্ঠির হাতে, যারা গোটা পৃথিবীকে নিজেদের শিকারক্ষেত্র মনে করে। এ শিক্ষাধারার বুনিয়াদ তৈরী হয় এমন এক সময়ে, যখন প্রত্যক্ষভাবে তারা গোটা বিশ্বকে পদানত করে রেখেছে এবং অধিকাংশ মানুষকে দাসানুদাস হিসেবে নিজেদের প্রজা বানিয়ে রেখেছে। তারা মানুষের জীবন ও অন্যান্য জন্তুর জীবনে পার্থক্য কী তা জানতো না।
এক সালাহ উদ্দীন আইয়ুবী রাহ. মিসর, দামেশক, মেসেল, বায়তুল মুকাদ্দাসের প্রত্যন্ত এলাকায় অসংখ্য মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। সিরিয়ায় প্রতিষ্ঠা করেন ১৪টি বড় বড় জামেয়া। দামেশকে ছয়টি, হলবে চারটি, মহাতে দুটি, হেমসে একটি, বা’লাবাক্বে একটি জামেয়া তিনি প্রতিষ্ঠা করেন
মানুষকে বুদ্ধিমান এক জন্তু হিসেবে চিন্তা করে এদেরকে যে ধারায় শিক্ষা দিলে নিজেদের শাসন- শোষণ নিরাপদ থাকে, সেই ধারারই শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে। নিজেদের জন্য রেখেছে এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা, যাতে বুদ্ধিমান জন্তু হিসেবে তারা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারে এবং অন্য সবাইকে অধীন করে রাখার সব ধরনের কৌশল আয়ত্ব করতে পারে। প্রথম বিশ্ব ও তৃতীয় বিশ্বে এ শিক্ষাধারাই নানাভাবে পরিমার্জিত হয়ে আজো অব্যাহত। কিন্তু তা যেমন মানুষের মানবিক সত্তার কোনো প্রতিনিধিত্ব করছে না, তেমনি জাতিগোষ্ঠি সমূহের জীবনীশক্তিকেও ধারণ করতে পারছে না। কওমি বলে পরিচিত শিক্ষাধারা এর প্রতিকূলে মানুষের মানবিক সত্তাকেই বিকশিত করা এবং মুসলিম মিল্লাতের মুসলিম হিসেবে যে প্রাণস্পন্দন কাম্য, তাকে শিক্ষাব্যবস্থায় ধ্বণিত করতে চায়। এবং এই কাজটা করতে পারা না পারার উপর বিশ্বসভ্যতায় তার সত্যিকার র্দাশনকি ভূমিকা নির্ভরশীল বলে বিশ্বাস করে। কওমি মাদরাসা বিশ্বসভ্যতায় যতটা শিক্ষাধারার মাধ্যমে, তার চেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে চায় কর্মধারার মাধ্যমে। এই চাওয়াটা নিছক আক্ষরিক চাওয়া নয়, বরং এটা এক মৌলিক দায়িত্ব, যা তাকে আঞ্জাম দিতেই হবে। দায়িত্ব আঞ্জাম দিতে পারলেই সে কওম ও মিল্লাতের প্রতিনিধিত্ব করলো, নতুবা দাবি সম্বলিত ‘কওমি’ নামটির কোনো গুরুত্ব থাকে না। দাঁড়াবার জায়গা বিধ্বস্ত হয়ে যায়।
কওমিয়্যাত: অনিবার্য উত্তরাধিকার
এটাতো স্পষ্ট যে বিগত দুই শতাব্দী পূর্বে বারোটি শতাব্দী এই শিক্ষাধারা কওম ও মিল্লাতের জীবনবোধ নির্মাণ ও কর্মধারার শুদ্ধির দায়িত্ব পালন করেছে। প্রতিনিধিত্ব করেছে জাতিসত্তার। রাসূলে পাক সা. কর্তৃক সূচিত এ শিক্ষাধারার সম্পর্ক একদিকে আল্লাহর সাথে, অপরদিকে মানুষ ও মিল্লাতের সাথে। রাসূল সা. স্বয়ং এর গণচরিত্র ও গণসম্পৃক্ততার নমুনা স্থাপন করছেনে। তিনি তাকে এমন চরিত্রে স্থাপন করেছে, যা নিছক পঠন পাঠনের গন্ডিতে আবদ্ধ না থেকে মানুষ ও মিল্লাতের জীবনযাত্রার বাগডোর হাতে নিতে চায়। অনুসারীদের জন্য এ শিক্ষাধারার সাথে সম্পৃক্ততাকে তিনি বাধ্যবাধকতার বিষয় হিসেবে দেখিয়েছেন। এ সাথে ন্যুনতম প্রাথমিক সংযোগ ছাড়া গতিশীল মুসলিম জীবন অকল্পনীয়। প্রত্যেক মুসলমানকে অবশ্যই ইসলামি শিক্ষার সাথে কোনো না কোনোভাবে সম্পর্কিত হতে হবে। নতুবা ইসলামের সাথে তার সম্পর্ক দুর্বল হতে থাকবে এবং বিচ্ছিন্নও হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক।
এই শক্ষিাধারা কওম ও মিল্লাতের দ্বীন ও দুনিয়াকে রাঙাবার কাজ করেছে শতাব্দীর পর শতাব্দী। কিন্তু কওমি শব্দটি নিজের নামের সাথে যুক্ত করেনি। যুক্ত করলো তখন, যখন ঐতিহাসিক প্রয়োজন সামনে এলো। ভারত উপমহাদেশে দখলদারদের চাপিয়ে দেয়া শিক্ষাব্যবস্থা চালু হলো। তার বিকল্পে নিজের স্বাতন্ত্ররে প্রচার, মানুষের স্বাধীনতা হরণকারী শক্তির প্রতিপক্ষে অবস্থানের প্রত্যয় এবং গণসম্পৃক্ততা ও জাতিসত্তার প্রতি স্বীয় অঙ্গীকারের প্রতীক হিসেবে কওমি নামটাকে ব্যানার হিসেবে সামনে আনা হলো। এ সময় গণসম্পৃক্ততা, গণসহযোগিতা ও গণস্থরে এর অধিষ্টানের বিষয়টি নতুন করে স্পষ্ট করলওে এর আগে গণসাহায্যের ব্যাপারটি ছিলো না, এমন নয়।
এ শিক্ষাধারা বরাবরই রাজশক্তির ছায়াকে এড়িয়ে নয়; বরং অবজ্ঞা করে সামনে এগিয়েছে। খারাপ শাসকদের দৌরাত্ম থেকে একে মুক্ত রাখতে ইসলামি ব্যক্তিত্বরা জীবনের সবকিছু দিয়ে একে আগলে রেখেছেন। জনগণের কাফলোকে সঙ্গী করে এর অনন্য বৈশিষ্ট্য ও বিশেষত্বসমূহকে পাহারা দিয়েছেন। যতদিন খিলাফাহ আলা মিন হাজিন নবুওয়া প্রতিষ্ঠিত ছিলো, ততদিন এর প্রয়োজন পড়েনি। কেননা, সে সময় খলীফাতুল মুসলিমীন মুসলিমদের শিক্ষা ব্যবস্থার তত্ত্বাবধান করবেন। এ ছাড়া অবশিষ্ট সময়কালে মাদরাসা শক্ষিার দায়ভার স্কন্ধে বহন করেছেন ওলামা হযরত এবং কওম ও মিল্লাত। মুসলিম সভ্যতার সমৃদ্ধির সময়ে মাদরাসার বিস্তৃতি ছিলো অবাক করার মতো। শাসক কিংবা সরকারী কর্তা ব্যক্তিরা এ সব মাদরাসায় সহযোগিতাকে গৌরব মনে করতেন। এ কথা অবান্তর যে, শাসকরা অস্যংখ্য মাদরাসা তৈরী করেছেন, পরিচালনা করেছেন, যা তার কওমিয়্যতকে ব্যাহত করে। কারণ শাসকরা মাদরাসা বানাতে পারতেন, অনুদান দিতে পারতেন, কিন্তু মাদরাসাগুলো স্বাধীন নীতিতেই পরিচালিত হতো। যখন দেখা যেতো এ নীতিমালার উপরে শাসকশক্তির হস্তক্ষেপ চলছে, তখন মাদরাসাকে হয়তো পৃথক করা হতো, অথবা মাদরাসা থকেে উলামা হযরাত পৃথক হওয়ার চিন্তা করতেন।
ইসলামের ইতিহাসে এমন বহু সংখ্যক সম্রাটের নাম ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, যরা মুসলিম বিশ্বের প্রতিটি শহরে বড় বড় মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এক সালাহ উদ্দীন আইয়ুবী রাহ. মিসর, দামেশক, মেসেল, বায়তুল মুকাদ্দাসের প্রত্যন্ত এলাকায় অসংখ্য মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। সিরিয়ায় প্রতিষ্ঠা করেন ১৪টি বড় বড় জামেয়া। দামেশকে ছয়টি, হলবে চারটি, মহাতে দুটি, হেমসে একটি, বা’লাবাক্বে একটি জামেয়া তিনি প্রতিষ্ঠা করেন।
কওমিয়্যাত বাস্তবিকভাবে জীবন্ত হয়ে উঠেছিলো। এই সব মাদরাসাই জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখার লালন ও চর্চা করতো। মানুষের জ্ঞানগত সমস্ত চাহিদা পূরণ করতো। মাদরাসাগুলো এ অঙ্গীকার প্রচার করতো যে, তারা মানবতার দারিদ্র দূর করবে
(সেগুলো ছিলো সত্যিকার জামেয়া। এখন তো মক্তবের নামের আগেও জামেয়া লাগানো হচ্ছে। সত্যিকার জামেয়া ছিলো বলেই গোটা দামেশকের প্রয়োজন পূরণে ছয়টি প্রতিষ্ঠানই যথেষ্ট ছিল। এর আগে দামেশকে আরো চারটি জামেয়া ছিলো। দশটি জামেয়া গোটা দামেশকে ইলমের বিপ্লব সৃষ্টি করেছিল। এখন শতটি দিয়েও কাজের কাজ হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না, তা অন্য কোথাও, অন্য কোনো দিন আলোচনার ইচ্ছা রইলো। )
সাধারণ মাদরাসা দামেশকে ছিলো বিপুল সংখ্যক। আবাসিক সুবধা সম্বলিত মাদরাসাই ছিলো চারশোর অধিক। দূর দূরান্ত থেকে ছাত্ররা এসে এমন মাদরাসায় শিক্ষা গ্রহণ করতো। কোনো পর্যটক যদি দামেশকে এক বছর অবস্থানের জন্য আসতো প্রত্যেক মাদরাসায় এক রাতের বেশি অবস্থানের সুযোগ তার হতো না। কারণ দামেশকে মাদরাসার সংখ্যা ছিলো অনেক বেশি। প্রতি মাদরাসায় এক রাত করে অবস্থান করে বছর শেষ হয়ে যেতো। মাদরাসার এই সংখ্যাগত বপিুলতা অবদানের ক্ষেত্রে কী ব্যাপকতার দাবী রাখে, তা বুঝাবার জন্যে মাত্র একটি শহর থেকে মাদরাসাগুলোর সংখ্যাগত অনুমান পেশ করলাম।
এই সব মাদরাসা জনগণের সাহায্যে চলতো। সেলজুক উজিরে আজম নিজামুল মুলক ইরাক ও খোরাসানের প্রতিটি শহরে একটি করে উচ্চতর মাদরাসা স্থাপন করলেও সেগুলোর উপর তার কোনো আধিপত্য ছিলো না। প্রতিষ্টানগুলো স্বাধীন নীতিতেই চলতো। জনগণের মধ্যে মাদরাসার জন্য জমি ওয়াকফ করার প্রতিযোগিতা চলতো। ওয়াকফ সম্পত্তির কারণে মাদরাসাগুলোর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা মজবুত থাকতো। কিন্তু জনগণ নিজের জায়গা জমি এমনকি বাসভবন ও মাদরাসাকে দান করে ধন্য হতেন। দামেশকে ওয়াকফের প্রাচুর্য এতোই ছিলো যে, ইমাম নবভী রাহ. সারা জীবন দামেশকে উৎপন্ন কোনো ফল খাননি। কারণ, দামেশকের অধিকাংশ এলাকাই ছিলো ওয়াকফ করা। অত্যাচারি লোকেরা সে সব আত্মসাৎ করেছিলো । জনগণের জীবনযাত্রার সাথে অবিচ্ছেদ্য হয়ে উঠেছিলো।
এবং কওমিয়্যাত বাস্তবিকভাবে জীবন্ত হয়ে উঠেছিলো। এই সব মাদরাসাই জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখার লালন ও চর্চা করতো। মানুষের জ্ঞানগত সমস্ত চাহিদা পূরণ করতো। মাদরাসাগুলো এ অঙ্গীকার প্রচার করতো যে, তারা মানবতার দারিদ্র দূর করবে। জীবন ও জগতের ক্ষতস্থানসমূহের চিকিৎসা করবে।
[চলবে]
আওয়ার ইসলামের সৌজন্যে