মুহাম্মাদ সাজিদ করিম : ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে খ্যাতিমান ও সফল এডমিরাল, যাকে সমুদ্রের সাইফুল্লাহ বলা যায়, তিনি ছিলেন ১৬শ শতাব্দীতে সুলতান সুলায়মান আল কানুনির নৌ-বাহিনী প্রধান খায়রুদ্দীন বারবারোসা। ইসলামে সমুদ্রে পরিচালিত জিহাদের আলাদা মর্যাদা আছে। কিন্তু ভূমিতে অনেক সাফল্য ও গৌরবগাঁথার অধিকারী হলেও ইসলামের শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ইসলামী নৌবাহিনী সাফল্যের সংখ্যা খুবই কম। ইতিহাসে একবার মাত্র মুসলিম নৌবাহিনী খ্রিষ্টানদের সম্মিলিত নৌ-শক্তিকে টপকে শীর্ষে যেতে সক্ষম হয়েছিল। এ সম্মান এসেছিল আল্লাহর অনুগ্রহে বারবারোসার হাত ধরে। তার অধীনে মুসলিম নৌবাহিনী ছিল ভূমধ্য সাগরের একক পরাশক্তি।
সমুদ্রে তার যাত্রা শুরু হয় তার বড় ভাইয়ের হাত ধরে যিনি নিজেও একজন লিজেন্ডারি ক্যাপ্টেন ছিলেন। খ্রিষ্টানদের সাথে এক যুদ্ধে তার ভাইয়ের শাহাদাতের পর তিনি আলজিয়ার্সের গভর্নর হন। সুলতান সুলাইমান আল কানুনি তাকে সমগ্র উত্তর আফ্রিকার গভর্নর ও উসমানীয় নৌবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেন। তার নেতৃত্বে মুসলিম নৌবাহিনী ভূমধ্যসাগরে প্রায় সকল ইউরোপীয় বন্দর ও দ্বীপে হামলা চালিয়ে তাদের জীবন বিষিয়ে দেয়। তার এ হামলাগুলোর শুধু নাম উল্লেখ করলেও কয়েক পাতা লিখতে হবে। এ হামলা ইউরোপকে এতই বিপর্যস্ত করে দিয়েছিল যে তারা শেষ পর্যন্ত পোপকে অনুরোধ করতে বাধ্য হয় বারবারোসার বিরুদ্ধে একটা নৌ-ক্রুসেড ঘোষণা করার জন্য। ১৫৩৮ সালে পোপ তৃতীয় পলের আহ্বানে খ্রিষ্টান নৌবাহিনীর একটি ‘হলি লীগ’ গঠিত হয়। কিন্তু সেপ্টেম্বরে প্রেভেজার যুদ্ধে খ্রিষ্টানদের সম্মিলিত নৌ-বাহিনী বারবারোসা নিকট শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করে।
বারবারোসার আক্রমণের প্রধানতম লক্ষ্যবস্তু ছিল স্পেন। যখন খ্রিষ্টানেরা গ্রানাডা দখল করে গণহত্যা চালায় ও মুসলিমদের গণ-নির্বাসন দেয়, সে সময় তিনি ছোট ছিলেন। কিন্তু এর প্রতিশোধের কথা তিনি কখনও ভুলে যাননি। তার সময়ে খ্রিষ্টানরা বাকী থাকা মুসলিমদের উপর চরম নির্যাতন চালাচ্ছিল। বারবারোসা একবার স্পেনের এক বন্দরে হামলা করে প্রায় ৭০,০০০ ‘মরিস্কো’কে উদ্ধার করে উত্তর আফ্রিকায় নিয়ে আসেন। তার জীবদ্দশায় তিনি ও তার বাহিনী কয়েক লক্ষ মুসলিমকে স্পেনের খ্রিষ্টানদের জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করার হাত থেকে উদ্ধার করেন। আন্দালুস পুনরুদ্ধারের জন্য তিনি অসংখ্যবার স্পেনে হামলা করে এর উপকূলীয় শহরগুলো বিজয় করেন। যদিও এ অর্জন পরবর্তীতে মুসলিমেরা ধরে রাখতে পারেনি। ১৫৪৫ সালে তিনি অবসরে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজধানী ইস্তাম্বুলে আসেন। সেখানে কিছুদিন থেকে অস্থির হয়ে আবার জীবনের শেষ অভিযানে বের স্পেনের বন্দরগুলোতে বোমাবর্ষণ করে ফিরে আসেন।
আল্লাহর এই নির্ভীক সেনা ৪ জুলাই, ১৫৪৬ সালের এই দিনে ইস্তাম্বুলে ইন্তেকাল করেন। সে বছর এটি ছিল ২৬ রামাদানের দিবাগত লাইলাতুল কদরের রাত।